আউটসোর্সিংয়ে ২য় বাংলাদেশ

অনলাইন ডেক্স । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

বৈশ্বিক ডিজিটাইজেশন ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সুবাদে বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশ। অনলাইন অর্থনীতির প্রসার ঘটছে এ দেশেও, বিশেষ করে ডিজিটাল আউটসোর্সিংয়ে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেশ হয়ে উঠছে এখন বাংলাদেশ। সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ‘হাউ দ্য ডিজিটাল ইকোনমি ইজ শেপিং এ নিউ বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক নিবন্ধে বাংলাদেশের আউটসোর্সিং সাফল্যের চিত্র তুলে ধরা হয়।

নিবন্ধে বলা হয়, একটি দেশের অর্থনৈতিক ডিজিটাইজেশন শুধু পণ্য ও সেবার উদ্ভাবনই বাড়ায় না, সেই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ বাজারে বিপুল কর্মসংস্থান তৈরি করে ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে জোরালো করে। কম খরচ ও ঝুঁকি বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়াসহ উন্নত বিশ্বের অনেক বড় বড় কম্পানি এখন বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে আইটি আউটসোর্সিং করছে। এতে বাংলাদেশ হয়ে উঠছে ফ্রিল্যান্সিং কর্মসংস্থানের একটি বড় উৎস।

ফ্রিল্যান্সিং কাজের মধ্যে কম্পিউটার প্রগ্রামিং থেকে শুরু করে ওয়েব ডিজাইন, কর প্রতিবেদন প্রস্তুতকরণ ও অনুসন্ধান ইঞ্জিন ওপটিমাইজেশনসহ অনেক কাজই রয়েছে। তথ্য-প্রযুক্তিভিত্তিক এসব কাজ উদীয়মান দেশগুলোতে কর্মসংস্থানের বিপুল সুযোগ তৈরি করেছে, যা আগে ছিল না। ফলে বাকি বিশ্বকে আউটসোর্সিং সেবা দেওয়ার দিক থেকে বিশ্বের শীর্ষস্থানে রয়েছে এখন এশিয়া।

ফ্রিল্যান্সিং কাজের ক্ষেত্রে একজন মানুষ প্রথাগত চাকরির চেয়ে অনেক বেশি স্বাধীনতা ও সুবিধা পেয়ে থাকে। যেকোনো স্থান থেকে যেকোনো সময় কাজ করা যায়, রাস্তার জ্যাম পেরিয়ে অফিসে যেতে হয় না, নিজের বাসাতেই কাজ করা যায়। ক্লায়েন্ট বা প্রকল্প নিজের পছন্দমতো নেওয়া যায় এবং বৈশ্বিক বাজারে প্রবেশ করা যায়। ফলে বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং হয়ে উঠেছে অনেক বাংলাদেশির জন্য পছন্দের ক্যারিয়ার।

বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ডিজিটাইজেশন উদ্যোগের ফলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে মোবাইল ইন্টারনেটের পাশাপাশি ব্রডব্যান্ড সেবাও ছড়িয়ে পড়ছে। এতে এ দেশের তরুণ-তরুণীদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং অনেক সহজ হয়ে গেছে। অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউটের (ওআইআই) তথ্য অনুযায়ী, অনলাইন শ্রমিক সরবরাহে বাংলাদেশ হয়ে উঠেছে এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ দেশ। বর্তমানে এ দেশের নিবন্ধিত ফ্রিল্যান্সার রয়েছে ছয় লাখ ৫০ হাজার। এর মধ্যে প্রায় পাঁচ লাখ নিয়মিত কাজ করছে। বাংলাদেশের আইসিটি ডিভিশনের তথ্য অনুযায়ী তারা বার্ষিক ১০ কোটি ডলার আয় করছে।

অনলাইন শ্রমিক সরবরাহে বিশ্বের শীর্ষ দেশ ভারত, বৈশ্বিক ফ্রিল্যান্সার শ্রমিকের ২৪ শতাংশই ভারতের, দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সার বিশ্বের ১৬ শতাংশ। তৃতীয় অবস্থানে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের ফ্রিল্যান্সার ১২ শতাংশ। একেক দেশ একেক ধরনের আউটসোর্সিং কাজে গুরুত্ব দিচ্ছে। যেমন ভারতের ফ্রিল্যান্সাররা প্রযুক্তি ও সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টে বেশি কাজ করছে, অন্যদিকে বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সাররা বিক্রয় ও বাজারজাতকরণ সেবায় এগিয়ে।

ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের চার কোটি ৪০ লাখ তরুণের প্রতি ১০ জনের একজন বেকার। প্রতিবছরই বিশ্ববিদ্যালয় পেরোনো হাজার হাজার শিক্ষার্থী পছন্দমতো চাকরি না পেয়ে বেকার বসে আছে। ফলে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তবে খুব সহজেই আইটি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার সুযোগ রয়েছে তাদের সামনে।

বাংলাদেশে এখন অনেক শিক্ষিত নারীকে সংসারের দায়িত্ব নিয়ে চাকরি ছেড়ে দিতে হয়। তাদের জন্যও ফ্রিল্যান্সিং দারুণ সুযোগ। ঘরে বসেই কাজের সুযোগ থাকায় বাংলাদেশের নারীরা তাদের প্রথাগত সাংসারিক দায়িত্বের গণ্ডি পেরিয়ে ফ্রিল্যান্সিংকে ক্যারিয়ার সংকটের সমাধান হিসেবে দেখছে। গবেষণা বলছে, বাংলাদেশের নারীরা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে এখন পুরুষের চেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য। আর নারীদের অংশগ্রহণে এই খাত আরো শক্তিশালী হয়ে উঠছে।

তথ্য-প্রযুক্তি সেবা নিশ্চিতে সরকার প্রতি জেলায় আইসিটি পার্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে। এখানে শ্রমব্যয় কম থাকায় বিশ্বের আউটসোর্সিং বাজারে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান তৈরি করতে পেরেছে বাংলাদেশ। তবে এখনো বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে বাংলাদেশের। সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে বিদ্যুিবভ্রাট, এ ছাড়া ইন্টারনেট সেবার মান নিয়েও অভিযোগ রয়েছে। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের মূল্যও অনেক বেশি। প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকা ফ্রিল্যান্সারদের জন্য এটা অনেক বড় সমস্যা। ব্রডব্যান্ড সুবিধা থাকলেও অনেক সময় তা ধীরগতির হয়। আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে টাকার সহজ লেনদেনের ব্যবস্থা। বিশেষ করে বিদেশ থেকে টাকা নেওয়ার ক্ষেত্রে সহজ কোনো উপায় নেই। আর নারী ফ্রিল্যান্সারদের সংখ্যা আগের চেয়ে বৃদ্ধি পেলেও এখনো তা যথেষ্ট নয়।

তবে এসব সীমাবদ্ধতার বাইরে সম্ভাবনার জায়গাও কম নেই। এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ এমন একটি দেশ, যাদের বিশাল একটি তরুণ জনগোষ্ঠী আছে। ১৬ কোটি ৩০ লাখ মানুষের মধ্যে প্রায় ৬৫ শতাংশেরই বয়স ২৫ বছরের নিচে। এই বিশাল তরুণ ও শক্তিশালী জনসম্পদ এখনো এই ফ্রিল্যান্স বাজারের সম্ভাবনা নিয়ে পুরোপুরি অবগত নয়। বিগত বছরগুলোয় ফ্রিল্যান্সিং জনপ্রিয় হলেও এখনো বাংলাদেশের হাজার হাজার তরুণের জন্য এটা নিয়ে উপযুক্ত প্রশিক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!