“ঈশ্বর আল্লাহ তেরে নাম, সবকো সুমতি দে ভগবান”

“ঈশ্বর আল্লাহ তেরে নাম, সবকো সুমতি দে ভগবান”
রণেশ মৈত্র (একুশে পদক প্রাপ্ত সাংবাদিক)
সভাপতিম-লীর সদস্য, ঐক্য ন্যাপ

ভবিষ্যতের খবর তো জানি না-ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা নই বলে তা বলতেও পারবো না। বর্তমানটা তো দেখছি ভালভাবেই তার বিভীষিকা মনকে অনেকাংশেই উদ্বেগাকুল করে তুলছে যে কোন দেশপ্রেমিক বাঙালির। কিন্তু এমনটি তো হওয়ার কথা ছিল না-একটি মৌলবাদী উত্থান-সাম্প্রদায়িকতার বিষদাঁত পুনরায় মাথাচঁড়া দিয়ে ওঠে। না, এগুলি প্রত্যাশিত ছিল না আদৌ-অন্তত: আমাদের শত সংগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মুক্তিযুদ্ধের মত সশস্ত্র লড়াইএ সংগ্রামের ঐতিহাসিক বিজয় অর্জনকারী এই স্বাধীন মাতৃভূমিতে। জোর করে অন্তর দিয়ে বলতে পারছি কৈ “এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে না কো তুমি-সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি”? তবুও দেহের সমগ্র শক্তি উজার করে দিয়ে এবং মনপ্রাণ ঢেলে দিয়ে, সকল আন্তরিকতার পরশ বুলিয়ে অতীতের মতই দৃঢ়তার সাথেই বলছি, “জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গদপি গরীয়সী” অর্থাৎ জননী ও জন্মভূমি স্বর্গের চাইতেও পবিত্র। কিন্তু প্রশ্ন তো থেকেই যায়-তবুও কেন তা হলে আমাদের মাতৃভূমির এমন এক বিপর্য্যস্ত চেহারা আজ আমাদের দেখতে হচ্ছে স-করুন দৃষ্টিতে। মুক্তিযুদ্ধের ৪৮ বছর পারেও কেন প্রত্যক্ষ করতে হচ্ছে আমাদের গৌরবম-িত দেশটি ক্রমশ্চয়ই পেছনের দিকে হাঁটতে শুরু করেছে এক অন্ধকারাচ্ছন্ন গন্তব্যের দিকে? তাহলে কি আমাদের গৌরবোজ্জ্বল অতীতকে আমরা সঠিকভাবে বুঝে উঠতে পারিনি-নাকি তখন আমরা বা আমাদের পূর্বসূরিরা এমন কোন কিছু করেছিলেন-যার পরিণতিতে আজকের এমন একটি বর্তমান গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে?
সেই কবে মৃত্যু বরণ করেছিলেন তৎকালীন বিশ্বজয়ী নেতা, ভারতবর্সেও স্বধীনতা সংগ্রাম ও সাম্প্রদায়িকতা ও বর্ণবাদ-বিরোধী আন্দোলনের অপ্রতিদ্বন্দ্বী অগ্রদূত মোহন দাস করম চাঁদ গান্ধী। তিনি ছিলেন “মাহাত্মা গান্ধী” হিসেবে দেশ বিদেশে পরিচিত-আর দেশের অভ্যন্তরেও “বাপুজী” বা “গান্ধীজী” হিসেবে। না, তাঁর কোন স্বাভাবিক মৃত্যু ঘটে নি-তাঁকে হত্যা করা হয়েছিলো প্রকাশ্য দিবালোকে-পিস্তলের গুলিতে হাজার হাজার মানুষের মধ্যে-কাপুরুষের মত অতর্কিতে। গান্ধীজীকে হত্যা করেছিলো নাথুরাম গডসে নামক একজন উগ্র মৌলবাদী সংগঠন, হিন্দু মহাসভায় লেলিয়ে দেওয়া কর্মী। বাংলাদেশের বিরাজমান প্রেক্ষাপটে মহাত্মা গান্ধীর এই নির্মম হত্যালীলা এবং তার কারণাদিসহ একদিকে গান্ধীজীকে নতুন করে ভাবা-অপরদিকে মৌলবাদীদের নিষ্ঠুর পশুত্বকে ঠিকমত উপলব্ধি করা বাংলাদেশ সহ গোটা উপমহাদেশের জন্যই নতুন করে প্রাসঙ্গিকতা অর্জন করেছে। সাম্প্রদায়িক দ্বিজাতিতত্বের ভিত্তিকে মেনে নিয়ে বৃটিশ শাসন বিরোধী, অসাম্প্রদায়িকতা, ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী দল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ১৯৪৭ সালের ১৪ আগষ্ট “মুসলমানদের স্বাধীন আবাসভূমি” হিসেবে পাকিস্তান নামকঅপর একটি স্বাধীন সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের উদ্ভবকে মেনে নিয়েছিলো। অখ- ভারতবর্ষ ঐ দিন বিভক্ত হলো-দুটি পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যূদয় ঘটলো দুটি পৃথক জাতীয় পতাকা দুদেশে উত্তোলন হলো। পাকিস্তান নামক নবীন রাষ্ট্রটি ছিলো মুসলিম লীগের দাবী। তা পূরণ হলো-বিনা লড়াইএ-ব্রিটিশ সা¤্রাজ্যবাদের সামান্যতম বিরোধিতা না করে। ইংরেজরাও চেয়েছিল এ ধরণের বিভক্ত ভারতবর্ষই যাতে দুটি দেশের সম্পর্ক কদাপি মধুর বা সৎ প্রতিবেশী সুলভ না হয়-যাতে তাদের মধ্যে সদা সর্বদা বিরোধ লেগেই থাকে-যুদ্ধ প্রস্তুতি এবং সাম্প্রদায়িক হানাহানি নিয়ে। যাতে রাষ্ট্র দুটি ব্যস্ত থাকে এবং তার ফলে তারা যেন সদা-সর্বদা বিদেশের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকে তাদের উন্নয়নের জন্যে তাদের সামরিক সাজ-সরঞ্জামের জন্যে এবং সর্বোপরি নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্যে।

এই উদ্দেশ্য, অর্থাৎ ভারতবর্ষকে খ-িত করে বিবদমান রাষ্ট্রের জন্ম দিয়ে এবং পরবর্তীতে তাদের মধ্যে নানাবিধ ঝগড়া বিবাদ বাধিয়ে রেখে ইংরেজরা তাদের প্রভুত্ব এবং প্রভাব উভয় রাষ্ট্রের উপরই বজায় রাখতে সক্ষম হবে ভেবে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য মুসলিম লীগের ধর্মান্ত্রিত রাজনীতি এবং কংগ্রেসের মধ্যেকার কট্টর হিন্দুত্ববাদী অংশের নেতৃত্বের মাধ্যমে ভারতবর্ষের নানাস্থানে যেমন উত্তর ভারত, বিহার, পাঞ্জাব ও বাংলায় চল্লিশের দশকে দফায় দফায় ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করে লক্ষ লক্ষ হিন্দু-মুসলমান নর-নারী-শিশু হত্যা, উভয় সম্প্রদায়ের হাজার হাজার নারী একে অপরের দ্বারা ধর্ষণ, লুটপাট, ব্যাপক অগ্নিসংযোগ প্রভৃতির মাধ্যমে এমন একটি ভয়াবহ পরিবেশ রচনা করা হলো যার ফলে একনিষ্ঠ অসাম্প্রদায়িক নেতা মহাত্ম গান্ধীসহ গংগ্রেসের আরও অনেক অসাম্প্রদায়িক নেতা এবং পরবর্তীতে ভারতের কমিউনিষ্ট পার্টিও মনে করেছিলেন যে দ্বিজাতিতত্বেও ভিত্তিতে হলেও, ধর্মের ভিত্তিতে হলেও, ভারত বিভাগ এবং দুটি প্রথক রাষ্ট্র সৃষ্টি করা তথা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার দাবী মেনে নেওয়া ছাড়া এই ক্রমবর্ধমান দাঙ্গা, প্রাণহানি ও সামস্প্রদায়িক হাত থেকে রেহাই পাওার আর কান বিকল্প নেই। এমন কি, তারা এও ধরে নিয়েছিলেন, দুটি পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমেই একদিকে যেমন বৃটিশ সা¤্রাজ্যবাদের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে, তেমনি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও সাম্প্রদায়িক বিষবাস্পের হাত থেকেও রেহাই পাওয়া যাবে। কংগ্রেস, মুসলিম লীগ বা শেষতক ভারতের কমিউনিষ্ট পার্টিই বা কেন শান্তিকামী-কল্যাণকামী তৎকালীন কোটি কোটি মানুষও সম্ভবত: এমনটিই ধারণা করেছিলেন। কিন্তু মওলানা আবুল কালাম আজাদ, সীমান্ত গান্ধী খান আবদুল গফফার খান, কিষাণ চন্দর, সহ বহু রাজনৈতিক নেতা ও বুদ্ধিজীবী তখন এই সিদ্ধান্তের চরম বিরেধিতা করে বলেছিলেন সাম্প্রদায়িক পদক্ষেপ দিয়ে সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধের সিদ্ধান্ত অবাস্তব ও আত্মঘাতি।

সে যাই হোক, অবশেষে দুটি পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্রর অভ্যুদয়ের মাধ্যমে স্বাধীনতা এলো, ইংরেজরা আমাদের দেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হলো। কিন্তু ঐ যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা, মানুষে মানুষে বিভাজন তার কি হলো? ভারত বিভাগ তো আমরা মেনেই নিয়েছি এবং তা জোড়া লাগানোর কোন প্রস্তাব আদৌ আমরা মানতে রাজিও নই। কিন্তু আমরা মনে প্রাণে কামনা করি, দৃঢ়তার সাথে দাবী করি, যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, উগ্র ধর্মান্ধতা প্রভৃতি প্রতিরোধের জন্য এবং সাম্প্রাদায়িকতার সমাধি রচনার জন্য সেদিন দুটি পৃথক রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিলো সেই আকাংখার, সেই প্রতিশ্রুতির পূর্ণ বাস্তবায়ন চাই।

এখন ফিরে আসি মহাত্মা গান্ধী প্রসঙ্গে। লক্ষ্য করা যায় প্রয়োজন, তিনি অভিহিত হলেন ভারতের “ঋধঃযবৎ ড়ভ ঃযব ঘধঃরড়হ” হিসেবে, কংগ্রেসে এবং গোটা ভারতবর্ষ সহ বিশ্বের একজন নন্দিত নেতা হিসাবে, সেই মহাত্মা গান্ধী নিহত হলেন ভারতবর্ষের মাটিতে প্রকাশ্য দিবালোকে এবং ভারতবর্ষের স্বাধীনতা অর্জনের (১৫ আগষ্ট ১৯৪৭) এর মাত্র ‘ছ’ মাসেরও কম সময়ের মধ্যে। গভীরভাবে ধর্ম বিশ্বাসী, এবং সকল ধর্মবিশ্বাস, ধর্ম ও ধর্ম বিশ্বাসীদের প্রতি অসাধারণ শ্রদ্ধাশীল, বর্ণবাদ, গোষ্ঠীবাদ এবং এমন কি ভোগবাদ-বিরোধী এই জননেতা প্রাণ হারালেন একজন “হিন্দুর” হাতেই।ঐ হিন্দু, যার নাম নামুরাম গজস, কিন্তু ব্যক্তি গান্ধীজীকে আদৌ অশ্রদ্ধা করতো না, বরং ছিলো তাঁর প্রতি গভীরভাবেই শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু সে ও তার দল হিন্দু মহাসভা ছিলো অসাম্প্রদায়িক আদর্শের এবং হিন্দু-মুসলমানের সৌহার্দের-সম্প্রীতির, ঘোরতর বিরোধী এবং সে কারণেই গান্ধীজী ছিলেন হিন্দু মহাসভা রাষ্ট্রীয় সেবক সংঘ (আর.এস.এস.) প্রভৃতি নামক উগ্র হিন্দু মৌলবাদী দলের আদর্শিক শত্রু। তাই তারা তাঁকে হটিয়ে দিলো এই পৃথিবী থেকে। প্রমাণিত হলো যে সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলির সাথে আপোষের মাধ্যমে যেমন সাম্প্রদায়িকতার আসন ঘটানো যায় না-তেমনি যায় না সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বন্ধ করতে। বরং এমন আপোষ আত্মঘাতী পরিণতিই ডেকে আনে-নির্মম সত্য হলো-তার প্রথম শিকারই হলেন মহাত্মা গান্ধী-যাঁকে নিয়ে আজও সভ্য দুনিয়ার উধৎধ অহংকারের সীমা-পরিসীমা নেই। শুধু তাই নয় এহেন আদর্শ বিসর্জনতুল আপোষের মাধ্যমে ঐ উগ্র মৌলবাদী শক্তিগুলি সাহস ও শক্তি সঞ্চয় করলো হিন্দু মহাসভা, রাষ্ট্রীয় সেবক সংঘ (আর.এস.এস.) সহ আরও আরও হিং¯্র মৌলবাদী দলের বিস্তার লাভ হলো এবং বিংশ শতাব্দীর শেষদিকে এসে তারা অন্যদের সাথে নিয়ে ভারত বর্ষের কেন্দ্রীয় সরকারের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাও দখল করেছিলো। আজও তারা ভারতের মাটিতে একটি অত্যন্ত শক্তিশালী এবং যথেষ্ট প্রভাব ও বিত্তশালী একটি দল। সর্বাপেক্ষা পরিতাপের বিষয়, মহাত্মা গান্ধীর জন্ম যে প্রদেশে সেই গুজরাটে অপ্রতিহতভাবে রাজত্ব করে চলেছে উগ্র সাম্প্রদায়িক এবং দাঙ্গার প্রশ্রয় দানকারী নেতা নরেন্দ্র মোদিও নেতৃত্বধীন এক প্রাদেশিক সরকার ।
তবে কি গান্ধীজী জনপ্রিয়তা হারিয়েছিলেন মাত্র ছয় মাসের মধ্যেই? না তা আদৌ সত্য নয়। মাহাত্মা সকল মহল কর্তৃক সেইভাবে নন্দিত কিন্তু তিনি মন্ত্রীত্ব বা কোন রাষ্ট্রীয় পদমর্য্যাদা গ্রহণ করেন নি। ছিলেন সাধারণ একজন। কোন সম্পত্তি তাঁর ছিল না, বিত্তও না, জৌলুষ না কিন্তু বিশ্বজনীন মানবতার পূজারী হিসেবে, অজেয় একজন মানবতাবাদী হিসেবে, তিনি বিশ্বব্যাপী ঈষনীয় ঠাঁই করে নিয়েছিলেন। লুই ফিসারের প্রখ্যাত বই Mahatma Gandhi-His Life and Ties G H ঐ প্রখ্যাত লেখক-সাংবাদিক লিখেছেন,,”Yet men with governments and armies behind them paid herbage to the little brown  man of  seventy light. The Indian authorities received 3,441 massages of sympathy, all unsoliated, from foreign countries.”Mahatma Gandhi was the spokesman for the conscience of all mankind. Pope pious, the Dalai Lana of Tibet, The Archbishop of Canterbury , the chief Robby of Louder, Chiang Kaishek. The president of France, indeed the political  heads of all unimportant  countries and most more ones publicity expressed their group of Gandhi’s passing (বঙ্গানুবাদ: তবুও সরকার অধিষ্ঠিত ব্যক্তিরা এবং তাঁদের পিছনে সমবেত বাহিনীরা ৭৮ বছর বয়স্ক এই ক্ষীণকায় পীতাঙ্গ ব্যক্তির মৃত্যুতে তাঁর বিদেহী আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছিলেন। ভারত সরকার পৃথিবীর প্রায় সকল দেশ থেকেই ৩,৪৪১ টি স্বত:স্ফুর্ত শোককামী পেয়েছিলেন। পোপ, তিব্বতের দালাই লামা, ক্যাস্টাববেরীর আর্চবিলপ, ল-নের চিফ রাফী, চীনের চিয়াংকাইসেক, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট সহ প্রায় সকল গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রেরই প্রধানরা এবং পৃথিবীর প্রায় সকল ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলির প্রধানরাও গান্ধীজীর মৃত্যুতে শোকবানী পাঠিয়েছিলেন। আলবার্ট আইনস্টাইন বলেছিলেন “In our time of utter moral decadence, he was the only states man of slaind for a higher human relationship in the political spkere. অর্থাৎ “আমাদের এই নৈতিক অবক্ষয়ের চরম লগ্নে, তিনিই (গান্ধী) দাঁড়িয়েছিলেন রাজনৈতিক পর্য্যায়ে উন্নত এক মানবিক সম্পর্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে।” তাঁর মৃত্যুতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ গভীর শোক প্রকাশ করে। সোভিয়েত রাশিয়ার প্রতিনিধি আঁদ্রে প্রোমিকো নিরাপত্তা পরিষদে বলেন, “Gandhi was one of the outstanding political leaders of India where name are always he pinked arth the straggles of the India people for their national liberation” অর্থাৎ “গান্ধীজী ছিলেন ভারতবর্ষের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে বিশিষ্ট একজন-যাঁর নাম চিরকাল ভারতের জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের সাথে সম্পৃক্ত থাকবে। জাতিসংঘ তাঁর মৃত্যুতে তার পতাকা অর্ধনমিত করে। লুই ফিসারে লিখেছেন, “Humanity lower its flay” অর্থাৎ “মানবতার তার পতাকা অর্ধনিমিত করেছিল।”

গোটা ভারতবর্ষ সেদিন শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েছিল। সারাটি দেশ জুড়ে অসংখ্য বিশাল বিশাল শোক সমাবেশ, সকল মন্দির, মসজিদ, গীর্জা, শুরুদুয়ার সহ সকল প্রার্থনালয়ে স্বত:স্ফূর্ত প্রাথনা সভা, দেশ জুড়ে গান্ধীজীর অতি প্রিয় রামধুন গীত, “ঈশ্বর আল্লাহ্ তেরে নাম, সবক কো সুমতি দে ভগবান” গীত হয়েছিল। বহু বাড়ীতে লাখো-কোটি মানুষ উপবাস থেকেছে, রোজা পালন করেছে ইত্যাদি।

আমার চোখের সামনে সেই দিনের পাবনার চেহারাটি মনে আছে। বেতার যোগে (তখন তো টেলিভিশন আসেনি) সাথে (সন্ধ্যার পর) সকল দোকান-পাট স্বত:¯ফূর্তভাবে বন্ধ হয়ে যায়, পরদিন পাবনা শহরের সকল স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষিত হয়, পূর্ণ হরতাল পালন করা হয় এবং হাজার হাজার মানুষের এক বিশাল শোক মিছিল সারা পাবনা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক পরিভ্রমণ করে। পাকিস্তানী শহর পাবনায় কেন, বাংলাদেশের পাবনাতেও এত বড় এবং স্বত:স্ফূর্ত শোক সবাবেশ আজতক আমি আর দেখি নি। পরে যেদিন গান্ধীজীর মৃত্যুতে নাগরিক শোক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় পাবনা টাউন হল ময়দানে তাও ছিল এক অনন্য সাধারণ শোক সমাবেশ। নির্মিত বিশেষ উঁচু মঞ্চে স্থাপিত গান্ধীজীর ছবি, দলমত নির্বিশেষে প্রতিনিধিত্বশীল সকল স্তরের মানুষের পুষ্পার্ঘ্য প্রদান, গীতা, কোরান, বাইবেলসহ সকল ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ, নেতৃবৃন্দের ভাষণ, শিল্পীদের পরিবেশিত রামধুন গীতি ও শোক সংগীত এক অবিস্বাশ্য দৃশ্য সকলকে কঁদিয়ে ছেড়েছিলো।

যা হোক গান্ধীজী তবে কেন এত মহান? সাম্প্রদায়িক দ্বিজাতিতত্বের এবং তার প্রণেতা অপশক্তিগুলির সাথে সমঝোতা সত্বেও? কারণগুলি হলো অহিংসা আন্দোলনের অপ্রতিদ্বন্দ্বী নেতা, হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খৃষ্টান অর্থাৎ ধর্ম সম্প্রদায় নির্বিশেষে সকল সম্প্রদায় ও জাতি গোষ্ঠীর সম অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সাহসী বিরোধিতাকারী, একই ধর্মের বিশ্বাসীদের মধ্যে নানা গ্রুপ ও সাম্প্রদায়িক বিভেদের বিরুদ্ধে সোচ্চার যেমন, ব্রাহ্মণ, কায়স্থ, বৈশ্য, নারী, পুরুষ এবং এ সকল প্রশ্নের তিনি আপোষহীন আন্দোলন সূচনাই শুধু করেন নি-জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কোন নিরাপত্তা বাহিনীর আশ্রয় না নিয়ে খালি পায় হেঁটে ছুটে গেছেন সকল দাঙ্গা-বিধ্বস্ত এলাকায়, ঘুরেছেন ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ী বাড়ী, ঐক্যবদ্ধ করেছেন ঐ সকল এলাকার সকল ধর্ম বিশ্বাসী মানুষকে দাঙ্গা ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, ঐক্যবদ্ধ হতে বাধ্য করেছেন জাতীয় নেতৃত্বকেও এবং বিলম্বে ঘটলে বহুবার তিনি আমৃত্যু অনশন শুরু করে দাঙ্গপীড়িত মানুষদের (সে হিন্দুই হোক, মুসলিমই হোক, বৌদ্ধ বা খৃষ্টানই হোক) পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন। এভাবে কোটি কোটি হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খৃষ্টান সহ গোটা মানবজাতির বিশ্বস্ততম নেতায় পরিণত হয়েছেন-তাঁদের মনের মনিকোঠায় তিনি স্থান করে নিয়েছেন এবং তাঁর এই অবস্থান আজও অক্লান। আমি তাঁর অফ্রিকায় বর্ণবাদ বিরোধী গৌরবমায় আন্দোলনের কথায় স্থানাভাবে আর গেলাম না।

এই নিবন্ধর মাধ্যমে গান্ধীজীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বাংলাদেশের বাস্তবতায় তাঁকে নতুন করে ভাবতে, তাঁর আপোষহীনতার ক্ষেত্রগুলি থেকে ইতিবাচক শিক্ষা এবং যেখানে তিনি সমঝোতা করেছিলেন আজও যে তার যে করুণ পরিণতি ঘটেছিলো এবং গোটা ভারতবর্ষ এবং আমাদের এই উপমহাদেশটি জুড়ে এখনও রক্তক্ষয়, দেশত্যাগ প্রভৃতি ঘটছে তা থেকেও শিক্ষা নিয়ে নিজ নিজ দেশে সাম্প্রদায়িকতা মৌলবাদ বিরোধী লড়াইতে সকল গণতান্ত্রিক ধর্ম নিরপেক্ষ শক্তির আপোষহীন সংগ্রাম শুরুর প্রয়োজনীয়তার প্রতি সংশ্লিষ্ট মহলগুলি তথা অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক মহলগুলির বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করছিল। বিশেষ করে আজ স্বাধীন বাংলাদেশেও যখন সাম্প্রদয়িকতা নতুন করে বিষাক্ত ফনা তুলেছে।

তাঁর প্রিয় রামধুন গীত “ঈশ্বর আল্লাহ্ তেরে নাম, সবকো সুমতি দে ভগবান”, আজও প্রেরণা জোগাক সকল কল্যাণকামী মানুষের মনে-আমাদের উপমহাদেশটিতে।


• প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। কাগজ২৪-এর সম্পাদকীয় নীতি/মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য কাগজ২৪ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!