আজ জেমস এর জন্মদিন

ফারুক মাহফুজ আনাম জেমস এর জন্ম ১৯৬৪ সালের ২রা অক্টোবর। শিল্পী জেমস কিছুটা অন্তর্মুখী হলেও ছেলেবেলায় ভীষণ দুরন্ত ছিলেন। একসময়ে গানের ব্যাপারে ভীষণ আগ্রহী হলে বাবা মোজাম্মেল হক কিংবা মা জাহানারা খাতুন কেউই চাননি যে তাদের ছেলে গানের দলে যুক্ত হোক। বাবা চাইতেন তার ছেলেও তার মতো সরকারি উঁচু পদে কর্মরত হবে। শেষপর্যন্ত গানের টানে অভিমান করে বাড়ি ছেড়ে বের হয়ে আসেন জেমস, ঠাঁই নেন চট্টগ্রামের আজিজ বোর্ডিংয়ে।

আজিজ বোর্ডিং থেকেই সঙ্গীতের ভুবনে পুরোপুরি জড়িয়ে যান জেমস, বন্ধুদের নিয়ে ভেঙে যাওয়া ব্যান্ড দল ফিলিংসকে আবারো নতুনভাবে গঠন করেন। প্রথমদিকে মূলত ইংরেজি গানগুলোর কভারই করতেন তারা, কিন্তু একসময় মৌলিক গানের উপরে জোর দেন। ব্যান্ড দলের মৌলিক গানের অ্যালবাম করার জন্য ১৯৮৬ সালে চট্টগ্রাম ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন জেমস ও তার বন্ধুরা। ১৯৮৭ সালে বের করেন নিজেদের প্রথম অ্যালবাম ‘স্টেশন রোড’। এই অ্যালবামের সবগুলো গানের সুর জেমস নিজেই করেছিলেন। ব্যবসায়িক সফলতা না পেলেও নিজের মৌলিক কন্ঠ দিয়ে তাক লাগিয়ে দেন এই শিল্পী।

১৯৮৮ সালে বের হয় জেমসের প্রথম একক অ্যালবাম ‘অনন্যা’। তিনি প্রথম আলোড়ন তোলেন ‘জেল থেকে বলছি’ ফিলিংসের দ্বিতীয় অ্যালবাম এর মাধ্যমে। ফাঁসির এক আসামীর শেষ দিনগুলো নিয়ে অসাধারণ এক গান ছিল জেল থেকে বলছি গানটি। এই একটি গানের মাধ্যমে সারাদেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়ে যান তিনি।

১৯৯৬ সালে নগর বাউল নামে অ্যালবাম বের করে ফিলিংস। ১৯৯৭ সালে বের হওয়া ‘দুখিনী দুঃখ করো না’ একক অ্যালবামটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। অ্যালবামে “সুলতানা বিবিয়ানা”, “তুমি যদিও নদী হও” ও “দুখিনী দুঃখ করো না” এই তিনটি গান অস্বাভাবিক রকমের জনপ্রিয়তা লাভ করে।

১৯৯৮ সালে নিজের ব্যান্ড দলের সাথে বের করেন ‘লেইস ফিতা লেইস’ অ্যালবামটি। এই অ্যালবামের পরে ফিলিংস নামটি ছেড়ে নগর বাউল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে দলটি। এই অ্যালবামের টাইটেল ট্র্যাকের সাথে ‘পথের বাপ’ গানটি তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করে।

১৯৯৯ সালে বের হয় তার চতুর্থ একক অ্যালবাম ‘ঠিক আছে বন্ধু’। এই অ্যালবামের সবচেয়ে জনপ্রিয় গান এপিটাফ। এছাড়া মীরাবাঈ গানটিও ভীষণ জনপ্রিয়তা লাভ করে।

এদিকে ব্যান্ড অ্যালবাম ও একক অ্যালবাম বের করার পাশাপাশি মিক্সড অ্যালবামেও কাজ করা শুরু করেন এবং প্রিন্স মাহমুদের সাথে কাজ শুরু করেন তিনি। প্রিন্স মাহমুদের কথা ও সুরে ‘মা’ নামের কালজয়ী একটি গান করেন জেমস। পরের বছরে প্রিন্স মাহমুদের সাথে আরো একটি হৃদয়স্পর্শী গান উপহার দেন জেমস, নাম ‘বাবা’। এরপর জেমসের জনপ্রিয়তা এতটাই উঁচুতে উঠে যায় যে ভক্তরা ভালোবেসে তাকে ‘গুরু’ বলে ডাকতে শুরু করে।

২০০০ সালের ডিসেম্বরে প্রিন্স মাহমুদের কথা ও সুরে ব্যান্ড সঙ্গীতের আরেক লিজেন্ড আইয়ুব বাচ্চুর সাথে ‘পিয়ানো’ নামের একটি ডুয়েট অ্যালবাম মুক্তি পায়। অ্যালবামটির অভাবনীয় সাফল্য জেমসের ক্যারিয়ারকে কিছুটা অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেয়, ব্যান্ড দলের সাথে অ্যালবাম করার পরিবর্তে প্রিন্স মাহমুদকে সাথে নিয়ে আইয়ুব বাচ্চুর সাথে ডুয়েট অ্যালবামের দিকে বেশি মনোযোগী হয়ে পড়েন তিনি।

২০০১ সালে মুক্তি পায় নগর বাউলের প্রথম অ্যালবাম ‘দুষ্টু ছেলের দল’। এই অ্যালবামের টাইটেল ট্র্যাক ছাড়াও বিজলী গানটিও ভীষণ জনপ্রিয় হয়। তবে নিজের ব্যান্ড দলের সাথে এটিই ছিল তার শেষ অ্যালবাম।

উপরে উল্লেখিত গানগুলো বাদেও প্রিন্স মাহমুদের সাথে অসংখ্য জনপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন জেমস। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ‘হতেও পারে এই দেখা শেষ দেখা’, ‘কিছু ভুল ছিল তোমার’, ‘গুরু ঘর বানাইলা কী দিয়া’, ‘পাপী’ ইত্যাদি। প্রিন্স মাহমুদ ছাড়াও আরো অনেক জনপ্রিয় গীতিকার ও সুরকারের সাথে কাজ করেছেন তিনি। লাকি আখন্দের সুরে ‘লিখতে পারি না কোনো গান’, কবি শামসুর রাহমানের কথায় ‘তারায় তারায়’, লতিফুল ইসলাম শিবলীর কথায় ‘জেল থেকে বলছি’ ও ‘পালাবে কোথায়’, মারজুক রাসেলের কথায় ‘এপিটাফ’ ও ‘প্রেম যমুনার কোলে’ এবং জুয়েল বাবুর সুরে ‘পদ্মপাতার জল’ আলাদাভাবে উল্লেখ করতেই হয়।

২০০৩ সালে জেমসের পঞ্চম একক অ্যালবাম আমি তোমাদেরই লোক মুক্তি পায়। এই অ্যালবামের ‘সেলাই দিদিমণি’ গানটি গার্মেন্টস কর্মীদের উৎসর্গ করে রচিত হয়।

২০০৫ সালে মুক্তি পায় জেমসের ষষ্ঠ একক অ্যালবাম জনতা এক্সপ্রেস।

২০০৬ সালে প্রীতমের সুরে হিন্দি ছায়াছবি গ্যাংস্টারে গান গেয়ে নতুন ইতিহাস গড়েন জেমস। তার গাওয়া ‘ভিগি ভিগি’ টানা একমাস টপচার্টের শীর্ষস্থান দখল করে রেখেছিলো। গানটির জনপ্রিয়তার কারণে আরো অনেক হিন্দি ছবিতে গান গাওয়ার প্রস্তাব তার কাছে আসতে থাকে। সেই বছরেই ও লামহে ছবিতে ‘চাল চালে’ নামের একটি গানেও গলা মেলান জেমস।

২০০৭ সালে জেমসের সপ্তম একক অ্যালবাম ‘তুফান’ মুক্তি পায়। পাইরেসির কারণে ২০০৭ সালের পর থেকেই জেমসের নতুন গান আসায় বিশাল এক ভাটা পড়ে যায়। জেমসের সর্বশেষ একক অ্যালবাম ‘কাল যমুনা’ বের হয়েছিলো ২০০৮ সালে। এরপর আর কোনো একক অ্যালবাম তার বের হয়নি। বিভিন্ন কনসার্ট আর মিউজিকাল শো-তে গান গেয়েই ব্যস্ত সময় পার করছেন জেমস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!