শীঘ্রই দেশে ফিরতে চান ৪ বছর ধরে শিলংয়ে নির্বাসিত সাবেক মন্ত্রী- সালাহ উদ্দিন আহমদ

অনলাইন ডেক্স । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

বিগত ২০১৫ সালের ১০ মার্চ বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী সালাহ উদ্দিন আহমদকে ঢাকার উত্তরার একটি বাসা থেকে সাদা পোশাকধারী একদল লোক অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গিয়েছিল । ১০ মার্চ ২০১৯ সালাহ উদ্দিন আহমদের ভারতের শিলং এ নির্বাসিত জীবনের ৪ বছর পূর্ণ হল।

অপহরণকারীরা সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোক পরিচয় দিলেও সাবেক মন্ত্রী সালাহ্উদ্দিন আহমদ অপহরণের ঘটনাটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তখন অস্বীকার করেছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন নিখোঁজ ছিলেন তিনি। অপহরণের ৬২ দিন পর ভারতের শিলং পুলিশ তাঁকে শিলং এ উদ্ধার করে।

সাবেক মন্ত্রী সালাহ্উদ্দিন আহমদ ভারত পুলিশের দায়েরকৃত মামলায় ২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর খালাস পেয়েছেন এবং গেল ৪ বছর ধরে তিনি শিলং এ অবস্থান করছেন। আইনী জটিলতায় তিনি এখনো দেশে ফিরতে পারেননি।

জানাগেছে, সালাহ্উদ্দিন আহমদকে অপহরণের পূর্বে সাদা পোশাকধারীরা উত্তরার পুরো এলাকার লোকজন সরিয়ে দিয়ে এলাকাটি জনশূন্য করে। পরে তাঁকে গামছা দিয়ে চোখ বেধেঁ অপহরণ করে নিয়ে যায়।

এঘটনার পর সালাহ্উদ্দিন আহমদের স্ত্রী সাবেক সংসদ সদস্য হাসিনা আহমদ উত্তরা থানা ও গুলশান থানা পুলিশের সাথে যোগাযোগ করলে পুলিশ এব্যাপারে অবহিত নয় বলে জানিয়ে দেয়, এমনকি একটি জি ডি দিতে চাইলেও পুলিশ স্ত্রী হাসিনা আহমদের জি ডি গ্রহন করেনি।

এরপর হাসিনা আহমদ সাংবাদিক সম্মেলন করে ও প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্নস্থানে স্বারকলিপি প্রদান করেও সালাহ্উদ্দিন আহমদের হদিছ মিলেনি। কিন্তু সরকারের উচ্চ মহল, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসহ কেহ এ অপহরণের ঘটনা স্বীকার করেনি। হতাশ হয়ে পরেচিল তার পরিবারের লোকজনসহ দলীয় নতা কর্মী ও ভক্তরা।
এদিকে সালাহ্উদ্দিন আহমদের অপহরণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়াগুলো ব্যাপক সংবাদ প্রচার করে ঝড় তুলে।

গুম হওয়ার দীর্ঘ ৬২ দিন পর ২০১৫ সালের ১১ মে ভারতের শিলং রাজ্যে সালাহ্উদ্দিন আহমদের পাওয়া যায় বলে সংবাদ প্রচার হয়। সেই থেকেই সালাহ্উদ্দিন আহমদ ভারতের শিলং শহরে নির্বাসিত জীবণযাপন করছেন।

২০১৫ সালের ১১ মে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং শহরে একটি গাড়ী থেকে নামিয়ে দিয়ে তাঁকে মুক্তি দেয়া হয়। সাবেক মন্ত্রী সালাহ্উদ্দিন আহমদের ঘনিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ওই দিন কাকডাকা ভোরে একটি মাইক্রোবাস গাড়ী থেকে, সাদা পোশাকধারী একদল লোক শিলং শহরের গল্ফলিংক মাঠের পাশে রাস্তার উপর তাঁকে চোখ বাঁধা অবস্থায় নামিয়ে দিয়ে যায়। পরে সাবেক মন্ত্রী সালাহ্উদ্দিন আহমদ চোখের কাপড় খুলে সামনে হেঁটে লোকালয়ে গিয়ে একটি দোকানের সামনে বসে পড়ে।

সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষনিক পুলিশ এসে তাঁকে শিলং সদর থানায় নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে, তার শিলং পৌঁছার বিস্তারিত তথ্য জানতে পারে।

ভারতীয় একটি পাসপোর্ট এক্ট আইন মামলায় জড়িত হয়ে দীর্ঘ প্রায় চার বছর যাবৎ তিনি ভারতের শিলং এ অবস্থান করছেন এবং তিনি ঐ মামলায় খালাস পেয়ে সেখানে মুক্ত অবস্থায় জীবণযাপন করছেন।

বিগত ২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর শিলং আদালত সাবেক মন্ত্রী সালাহ্উদ্দিন আহমদকে মামলা থেকে খালাস দিয়ে আদালত শিলং পুলিশকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁকে অতি অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের কাছে হস্তান্তর করার জন্য। কিন্তু শিলং পুলিশ উক্ত চিঠি আমলে না নিয়ে সালাহ্উদ্দিন আহমদের হস্তান্তর প্রক্রিয়া স্থগিত রেখেছে। যে কারণে সাবেক মন্ত্রী সালাহ্উদ্দিন আহমদ বাংলাদেশের আসা বিলম্বিত হচ্ছে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ্উদ্দিন আহমদের ঘনিষ্ট সুত্রে জানা যায়, তিনি দেশে আসার জন্য আইনি লড়াই চালিয়ে খালাস পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন এবং তিনি আশা প্রকাশ করছেন, আগামী অল্পদিনের মধ্যে দেশে ফিরে আসতে পারবেন।

বিগত ১৫ সালের ১১ মার্চ ভারতের শিলং এ গুম অবস্থা থেকে মুক্ত হওয়ার পর আজ দীর্ঘ চার বছর যাবৎ সাবেক মন্ত্রী সালাহ্উদ্দিন আহমদ ভারতে অবস্থান করছেন। ভারতে অবস্থানকালে সালাহ্উদ্দিন আহমদের কিডনী, ঘাড় ও চর্ম রোগ এর সমস্যা দেখা দিলে তিনি একাধিকবার দিল্লী গিয়ে উন্নত চিকিৎসা নিয়েছেন। তিনি আদালতের অনুমতি নিয়ে প্রথমবার দিল্লী গিয়ে ঘাড়ে অস্ত্রোপাচার করেন দ্বিতীয়বার গিয়ে কিডনীতে অস্ত্রোপাচার করেছেন এবং তিনি এখন আপাতত সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছেন।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ্উদ্দিন আহমদ শিলং এ সানরাইজ নামে একটি গেস্ট হাউজে অবস্থান করে থাকেন। শিলং মেঘালয়ের রাজধানী, শিলং এর কেন্দ্রস্থল পুলিশ বাজার থেকে প্রায় ৩/৪ কিলোমিটার দুরে লাবান এলাকায় ওই গেস্ট হাউজ অবস্থিত।

তিনি নামাজ দোয়া, কোরআন তেলাওয়াত, হাদিস, পত্র পত্রিকা ও বই পড়ে মেঘালয়ের শিলং এ নির্বাসিত জীবণ কাটাচ্ছেন বলে জানান সালাহউদ্দিন আহমদের স্ত্রী সাবেক এমপি হাসিনা আহমদ। উৎসঃ ইনকিলাব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!