ধারাবাহিক অর্গানন অব মেডিসিন

ধারাবাহিক অর্গানন অব মেডিসিন
ডা. এস.হ্যানিম্যান
সূত্রের ব্যাখ্যা-ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য
ডা. আওলাদ হোসেন
(রোগী লিপি)

ডা. এস. হ্যানিম্যান হোমিওপ্যাথির জনক। এই আবিষ্কার একদিনে
হয় নাই এবং এর সংগে ২১৯টি সূত্র জড়িত। মূল কথার সংগে অনেক
কথা জড়িত। একাধারে পড়তে পারলে ভাল হয়। তবে কিছু কথা মনে রাখতে হয়।

(১) রোগ দেহের ভিতরেই থাকে প্রকাশ পায় না। দেহের বাহির দিয়ে
রোগও অদৃশ্যভাবে ঘুরাফেরা করতে থাকে। রোগকে ডেকে আনবে বলে
susceptibility, তারপর আছে গরধংস, ওষুধ জাগীর থাকে ভেষজে। ভেষজ কি? কত প্রকার/লক্ষণ সমষ্টি সোরা, সিথিলাস, সাইকোসিস Influx, Outflux, dynamic, Confund অদৃশ্য, ইত্যাদি সম্বন্ধে নতুন নতুন ব্যাখ্যা দিয়েছেন যার বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হবে। প্রথমে রোগীলিপি
সম্বন্ধে শিখে নিতে হবে। এ কাজটি অত্যন্ত কঠিন এবং মূল কাজটাই শিক্ষাটি না পাওয়াতে হোমিওপ্যাথির সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। সূত্রের ৮৩ থেকে ১০৪ পর্যন্ত রোগী লিপি। ৮৩- সাধারণ নির্দেশনা দেয়া হলো:-
সব লিখে নিবেন:-
সূত্র-৮৪, রোগী তার রোগ যন্ত্রণার ইতিহাস বর্ণনা করে; তার আশপাশের
লোকেরা তাকে যা অভিযোগ করতে শুনে তা তারা বলে, সে কিরুপ আচরণ করে এবং তারা রোগীর মধ্যে যা দেখে সবই বলে। চিকিৎসক দেখেন, শুনেন এবং তার অন্যান্য ইন্দ্রিয় দ্বারা রোগীর পরিবর্তিত এবং অস্বাভাবিক বৈশিষ্ঠ্য যা আছে তা নির্ণয় করেন। তিনি নির্ভুলভাবে সব লিখবেন এবং রোগীর বন্ধুরা যেভাবে যা বলে ঠিক সেইভাবেই। নিজেকে নীরব রেখে তিনি তাদেরকে সবই বলতে দিবেন যা তাদের বলার আছে এবং তাদেরকে হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকবেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা অন্য বিষয়ে চলে যায়। পরীক্ষার শুরুতে চিকিৎসক তাদের উপদেশ দিবেন ধীরে-ধীরে কথা বলার জন্য যাতে বক্তা যা বলে তার গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো তিনি লিখে নিতে পারেন।

সূত্র-৮৫ সারিতে পৃথকভাবে লিখতে হবে:- রোগী অথবা তার বন্ধুদের দ্বারা বর্ণিত প্রত্যেকটি নতুন বিষয় তিনি নতুন সারিতে সুবিন্যস্ত হয়। এভাবে তিনি যেকোন লক্ষণের সাথে নতুন কিছু যোগ করতে পারবেন, যা সর্বপ্রথম খুব অস্পষ্ঠভাবে বলা হয়েছে, কিন্তু পরে আরো স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

সূত্র-৮৬ প্রশ্নের ধরণ, বর্ণনাকারী স্বেচ্ছায় যা বলে তা বলা শেষ হলে
চিকিৎসক প্রত্যেকটি নির্দিষ্ট লক্ষণের দিকে ফিরে যাবেন এবং লক্ষণটি সম্পর্কে নিুোক্তপ্রণালীতে আরো বেশি ঠিক ঠিক তথ্য বের করবেন। যে লক্ষণগুলো তার কাছে বলা হয়েছে তা তিনি একটি একটি করে পাঠ করবেন এবং তাদের প্রত্যেকটি সম্পর্কে তিনি আর সুনির্দিষ্ট তথ্য অনুসন্ধান করবেন;যেমন- কোন সময়ে এ লক্ষণটি দেখা দেয়? রোগী
এ যাবৎ যে ঔষধ সেবন করতেছিল তার আগে কি লক্ষণটি ছিল? নাকি ঔষধ সেবনকালে দেখা দিয়েছে ? নাকি ঔষধ বন্ধ করার কিছুদিন পর দেখা দিয়েছে? কি প্রকারের ব্যথা? প্রকৃত অনুভূতি কী? এ স্থানেই কি
তা হয়েছিল? ঠিক জায়গাটা কোথায়? ব্যথা কি থেমে থেমে এবং আপনিতেই বিভিন্ন সময়ে হয়? নাকি অবিরাম ব্যথা? ব্যথা কতক্ষণ
থাকে? দিন অথবা রাতের কোন্ধসঢ়; সময়ে হয় এবং দেহের কোন অবস্থায় তা বৃদ্ধি পায় অথবা সম্পূর্ণ বিরাম হয়? এ-ঘটনা বা ঐ ঘটনার প্রকৃত বৈশিষ্ট্য কী ছিল? অথবা উল্লেখিত ঘটনা সরলভাবে কি বর্ণিত
হয়েছে?

সূত্র: ৮৭ প্রশ্ন হ্যা অথবা না হবে না- এবং এভাবে চিকিৎসক প্রত্যেকটি নির্দিষ্ট বিবরণ সম্পর্কে ঠিক ঠিক তথ্য পাবেন, কিন্তু তার প্রশ্ন কখনো এমন হওয়া যাবে না যে তার রোগীর কাছে উত্তর নির্ণায়ক হয়ে যায়, যাতে তার শুধু হ্যাঁ অথবা ‘না’ উত্তর দিতে হয়।

তাহলে সে হ্যাঁ অথবা না বলে কিছু অসত্য, অর্ধসত্য অথবা যথাযথভাবে
সত্য নয় এমন উত্তর দিতে বিপথগামী হবে, হয়তো অলসতাবশত অথবা
প্রশ্নকারীকে সন্তুষ্ট করার জন্য, যার অনিবার্য ফল হবে রোগের ভ্রান্ত
চিত্রণ এবং অনুপযুক্ত চিকিৎসা।

সূত্র-৮৮ রোগী উল্লেখ না করলে জিজ্ঞাসা করতে হবে:- যদি স্বেচ্ছা-
বর্ণিত বিবরণে কতিপয় বিষয় সম্পর্কে অথবা দেহের ক্রিয়াকলাপ অথবা
তার মানসিক অবস্থা কিছুই উল্লেখ করা না হয়ে থাকে তাহলে এসব অঙ্গ
ও তাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অথবা তার স্বভাব ও মানসিক অবস্থা
সম্পর্কে চিকিৎসক।

পাদটীকা -৮৮, কিভাবে রোগীকে প্রশ্ন করতে হবে তার কিছু নমুনা উক্ত
পাদটীকায় দেয়া হয়েছে। উদাহরণসরুপ- তার মালের বৈশিষ্ট্য কি? সে কিভাবে প্রস্রাব করে? তার দিন-রাত নিদ্রা কেমন? তার স্বভাব,তার স্মৃতিশক্তির অবস্থা কি?

তার আরো জিজ্ঞাসা করবেন; কিন্তু তা করার সময় তিনি শুধু সাধারণ শব্দসমষ্টি ব্যবহার করবেন, যাতে তার তথ্যপ্রদানকারী এ-সব বিষয় সম্পর্কে বিশেষ আনুপুর্বিক আলোচনায় প্রবেশ করতে বাধ্য

সূত্র-৮৯ আরও জানতে চাইতে হবে:- যখন রোগীর (ভানকৃত ব্যাধি ছাড়া
অন্যসব ব্যাধিতে রোগীর অনুভূতিসমূহের বিবরণের জন্য তার উপর
আমাদের বেশি নির্ভর করতে হয়) দেয়া এবং অনুসন্ধানে প্রাপ্ত এ-সব
বিবরণ দ্বারা প্রয়োজনীয় তথ্য পরিবেশন হয়ে যায় এবং রোগের মোটামুটি যথার্থ চিত্র অঙ্কিত হয়, তখন চিকিৎসক দায়মুক্ত হলেন, এবং (যদি তিনি মনে করেন পিপাসা কেমন স্বাদ অনুভব হয়? কি প্রকার খাদ্য ও পানীয় বেশি পছন্দ? কি প্রকার খাদ্য ও পানীয় তার বেশি অপছন্দ হয়? এ-সব খাদ্যের স্বাদ স্বাভাবিক নাকি অস্বাভাবিক মনে হয়? পানাহারের পর সে কেমন অনুভব করে? মাথা, বাহু অথবা পেট সম্পর্কে তার কিছু বদনাম আছে কি? যে প্রয়োজনীয় সব তথ্য সংগৃহীত হয় নি) তাহলে তিনি আরো সূক্ষ, আরো বিশিষ্ট প্রশ্ন করতে বাধ্য।

পাদটীকা-৮৯, উদাহরণস্বরুপ, কতক্ষণ পর পর বাহ্য হয়? মালের প্রকৃত
বৈশিষ্ট্য? সাদাটে বাহ্য কি শুধু মল, নাকি শ্লেষ্মা যুক্ত? বাহ্যের সময় কি ব্যথা করে? ব্যথার বৈশিষ্ট্য কী এবং কোথায় ব্যথা করে? মুখের খারাপ
স্বাদ কি প্রকার, দূগন্ধ, তিতা, টক ইত্যাদি? খাওয়ার আগে, পরে, আহারকালে? দিনের কোন্ধসঢ়; সময় খুব বেশি বোধ হয়? যা উদগিরণ হয় তার স্বাদ? প্রস্রাব ত্যাগ করার সময় ঘোলা, নাকি প্রস্রাব শেষে দাড়ানোর পর ঘোলা হয়? প্রস্রাব যখন প্রথম বের হয় তখন এর রং কী?

তলানির রং কী? সে নিদ্রাকালে কেমন আচরণ করে? সে কি ঘ্যানঘ্যান
করে গোঙায়, কথা বলে, কেঁদে উঠে? নিদ্রাকালে চমকে উঠে? নিশ্বাস
গ্রহনকালে নাকি ত্যাগ করার সময় নাক ডাকে? সে কি চিৎ হয়ে শয়ন
করে, অথবা কোন পাশে শয়ন করে? সে কি ভাল করে ঢেকে শয়ন করে নাকি তার উপর কাপড় রাখতে পারে না? সে কি সহজে জাগে অথবা সে কি খুব ভালভাবে ঘুমায়? ঘুম থেকে জাগার পরমুহুর্তে কেমন লাগে? কোন লক্ষণ কিভাবে সংঘটিত হয়? কি কারণে লক্ষণটি প্রতিবার সংঘটিত হয়?

এটি কি বসা অবস্থায়, শয়ন অবস্থায়, দাড়ানো অবস্থায় নাকি সঞ্চালনকালে হয়? শুধু কি খালি পেটে, অথবা সকালে, অথবা সন্ধ্যায়,
অথবা খাওয়ার পর, অথবা কখন সাধারণ উপস্থিত হয়? কখন শীত করে? একি শুধু শীত-শীত ভাব? অথবা একই সময়ে কি সে প্রকৃতই শীতল হয়েছিল?

তাহলে তার কোন অঙ্গে শীতলতা? অথবা যখন শীত করে তখন কি শরীরে হাত দিলে গরম লাগে? কম্পন ছাড়াই কি শীত অনুভব? মুখের আরক্তিমতা ছাড়াই কি সে উত্তপ্ত হয়েছিল? তার অঙ্গসমূহ কি স্পর্শে উত্তপ্ত ছিল?

অথবা সে যখন উত্তাপের কথা বলে তখন কি স্পর্শে গরম লাগে না? শীত কতক্ষণ স্থায়ী হয়? তাপ অবস্থা কতক্ষণ থাকে? কখন পিপাসা হয়-শীতে?

অথবা এর আগে? অথবা পরে? পিপাসা কি রকম? পিপাসায় কি ধরনের
পানীয় পছন্দনীয়? ঘর্ম কখন হয়-তাপের শুরুতে, নাকি শেষে? অথবা তাপের কত ঘন্টা পর? কখন ঘুম আসে? কখন ঘুম ভাঙ্গে? ঘর্ম কি পরিমাণ হয়? ঘর্ম গরম নাকি ঠান্ডা? কোন অঙ্গে ঘর্ম হয়? ঘর্মের গন্ধ কেমন? শীত অবস্থার আগে অথবা পরে কেমন লাগে? তাপ অবস্থায় কেমন লাগে?

তাপের পর কেমন লাগে? ঘর্ম অবস্থার সময় অথবা পরে কেমন লাগে? মহিলাদের ক্ষেত্রে ঋতুস্রাব ও অন্যান্য স্রাবের বৈশিষ্ট্য লিখতে হবে, ইত্যাদি।

সূত্র-৯০ ডাঃ নিজে যা দেখবেন:- চিকিৎসক যখন রোগীর দেয়া এ
বিবরণগুলো লেখা শেষ করেন, তখন তিনি নিজে রোগীর মধ্যে যা দেখেন তা লিখবেন, এবং নিরুপন করবেন ঐ গুলোর কতোটা রোগীর বৈশিষ্ট্যপুর্ণ ছিল তার সুস্থ অবস্থায়।

পাদটীকা-যেমন-রোগী পর্যবেক্ষণকালে সে কেমন আচরণ করে- সে
বিষন্ন কিনা, ঝগড়াটে কিনা, হঠকারী কিনা, ক্রন্দনশীল কিনা, উদ্বিগ্ন কিনা, হতাশ, দুঃখিত, আশাবাদী অথবা শান্ত কিনা ইত্যাদি। সে তন্দ্রাচ্ছন্ন অথবা কোনভাবে তার বোধশক্তি দূর্বল কিনা অথবা ভাঙ্গা গলায়, অথবা নিুস্বরে অথবা অসংলগ্নভাবে কথা বলে কিনা। অথবা অন্য কোনভাবে সে কথা বলে। সাধারণত তার মুখের বর্ণ, চক্ষের বর্ণ, ত্বকের বর্ণ কি? তার চক্ষে, মুখে লাবণ্যতা এবং সজীবতা কেমন? জিহবা কেমন, শ্বাস-প্রশ্বাস কেমন, তার মুখের গন্ধ কেমন এবং তার শ্রবণশক্তি কেমন? তার চক্ষু তারকা কি প্রশস্ত নাকি সংকুচিত?

অন্ধকারে অথবা আলোতে কেমন হয় এবং কতটা পরিবর্তন হয়? নাড়ীর
বৈশিষ্ট্য কি? পেটের অবস্থা কি? দেহের বিভিন্ন অঙ্গের ত্বক ঘর্মাক্ত,
অথবা শীতল, অথবা শুষ্ক, অথবা স্বাভাবিক কিনা? সে তার ঘাড় পিছন
দিকে বাক্য করে শয়ন করে, মুখ আধবোজা অথবা সম্পূর্ণ খোলা রেখে শয়ন করে কি? শয়নকালে হাত মাথার উপরে রাখে, পিছনে রাখে অথবা কোন অবস্থায় রাখে? সে উঠার সময় কেমন করে? এবং চিকিৎসকের কাছে উল্লেখযোগ্য মনে হয় এমন সবকিছু অনুসন্ধান করবেন। নিজে রোগীর এ-সব বিশিষ্টতাগুলো ভালভাবে যাচাই করে নিবেন এবং সুস্থ অবস্থায় রোগীর এ-সব বিশিষ্টতা গুলোর মধ্যে কোন কোন বিশিষ্টতা অসাধারণ ছিল, অর্থাৎ অন্যদের তুলনায় অথবা স্বাভাবিক মাত্রার তুলণায় কতো কম বেশি মাত্রায় রোগীর মধ্যে পরিলক্ষিত ছিল-তা নিরুপন করে লিখবেন।

মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের স্বাভাবিক কার্যকলাপ ও অনুভূতির সাথে
সামঞ্জস্যহীন বিষয়গুলো সদৃশচিকিৎসাবিধানে লক্ষণরুপে গণ্য হয়। চলবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!