সেলিনা জাহান প্রিয়ার ধারাবাহিক গল্প – ‘অ-মানব’ এগারতম পর্ব

 

‘অ- মানব’ এগারতম পর্ব
————————- সেলিনা জাহান প্রিয়া

 

সন্ধ্যা সময় পাগল মানুষটার জন্য জোছনা চা নাস্তা নিয়ে ছাদে এসেছে। পাগলের দিকে চেয়ে বলে এত পানি ও তেলের খালি বোতল কেন কাটছেন। পাগল জোছনাকে বলল- তুমি এত হাসি খুশি কেন।
—- পাগল ভাই জানেন আমার মা বাবা আসছে। এই যে আপনার জন্য পুলি পিঠা নিয়ে
আসলাম। মায়র হাতের পিঠা কি যে মজা। আমি একাই অনেক পিঠা খেয়েছি।
—- তা তোমার বাবা মা ভাল আছে।
—– ভাল তো দেখা যায়। আমার বাবা তো তেমন কোন কাজ করে না। তাই মায়ের সাথে
প্রায় একটু ঝগড়া হয়। তবে আমার বাবা মিলি মামী রে খুব ভয় পায়।
—– জোছনা আসলে তোমার বাবা তাকে ভয় পায় না। সম্মান করে। আমাদের গ্রামের
মানুষ শহরের মানুষের চেয়ে অনেক বুদ্ধিমান।
—- কেমনে বুদ্ধি মান পাগল ভাই।
—- গ্রামের মানুষ শাকসবজি মাছ মাংস খায় একদম তাজা আর ঐ খানে অক্সিজেন হল
সীসা মুক্ত । মানুষ বেশীর ভাগ কাজ করে পরিশ্রম করে । তাই তাদের মন ও শরীর
শহরের মানুষের চেয়ে ভাল । বোকা মানুষ গুলো শহরে পড়ে থাকে ।।
—- আপনার কথার আগা মাথা কিছুই বুঝি না পাগল ভাই ।। এখন এত গুলো বোতল কেন
কাটলেন । আবার দেখি কিছু টিনের পট ও কেটেছেন ।
—- জোছনা কাজ শেষ হলে দেখবে । তোমার বাবাকে বলবে এক বস্তা ভাল মাটি এনে দিতে ।
পাগল বোতল কেটেই যাচ্ছে । জোছনা নাস্তা রেখে চলে গেল সিঁড়ি দিয়ে ।
—————————————————–
মিলি ফোনের অপেক্ষা করছে । কখন থানা থেকে ফোন আসবে । মিলির মা মিলির কাছে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে । জোছনা আর তার মা রান্না নিয়ে ব্যস্থ । জোছনার বাবা টি ভি দেখছে । সবাই কেমন জানি চুপচাপ । বাসা একদম নিরব । আজিজ মিয়া বাসায় এসে দেখে সবার মন খারাপ । মিলি কে বলে — কি হয়েছে । তোমাদের পাগল কি ডাকাতি করে পালাল নাকি ।
মিলি স্বামীর দিকে খুব মায়ার দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
—- ডাকাত যে কে আজো তা জানি না ।
—- তা তোমার পাগল কোথায় ? পালাইছে না কি ?
—- পালাই নাই । জামা কাপড় জুতো এনেছে ?
—- ওহ ! সময় পাই নাই । ভাবলাম তোমার পাগল আছে কি না!!
—- দেখ তুমি এখন যাবে এবং সব কিছু কিনে নিয়ে আসবে ।
আর জোছনা শুন তোর বাবা কে বলল ছাদ থেকে ওকে নিয়ে সেলুনে যেতে । মাথার চুল দাড়ি ঠিক করে নিয়ে আসতে । মার কাছ থেকে টাকা নিয়ে যেতে বল । আর তুমি
ওর সব কিছু ভাল দেখে কিনিও । আজিজি মিয়া ঘরে চা খেয়ে সবার দিকে এক নজর দেখল । কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। তাই জোছনা কে বলল – সবাই এত মন মরা কেন ? জোছনা বলল –
বলা যাবে না। মামী ও পাগল ভাইয়ের নিষেধ । আজিজ মিয়া কিছুই বুঝে উঠতে পারলো না। মিলি
তার মায়ের সাথে বসে কথা বলছে । জোছনার বাবা পাশের একটা রুমে খাট বিছাচ্ছে । আজিজ মিয়া বলল তোমারা কি ঢাকায় থেকে জাবা নাকি । জোছনার বাপ বলল – না ভাই জান । আপা বলল তাই করছি । আপার নাকি কে আসবে । আজিজ মিয়া মিলির কাছে জানতে চায় আবার কে আসবে । মিলি রাগের চোখে বলে আজিজ তুমি যাও তো । যখন কেউ আসবে তখন দেখতে পাবে । আমাকে শুধু শুধু বিরক্ত কর না তো । আজিজ মিয়া কিছু না বলে চলে যায় । মিলি নতুন ঘরটা ভাল করে দেখে নিজেই নিজের চোখে পানি মুছে । জোছনা মিলির কাছে এসে কাঁদতে থাকে । মিলি জোছনা কে বলে ফোন যেন আমি ছাড়া কেউ না ধরে ।।
————————————————————————
পাগল মানুষটা নিয়ে জোছনার বাপ সেলুনে গেছে । সেলুনের নাপিত বলে
এটা কারে নিয়ে আসছেন । এ দেখি দয়াল বাবা মজনু । প্রেমে কি ছিকা টেকা খাইছে নাকি । পাগল নাপিদের দিকে চেয়ে বলল
— তুমি মনে হয় প্রেমের ব্যাপারে মহা জ্ঞানী । নিজের চক্রায় তেল দাও ।
— আরে ভাই মাইন্ড করেন কে ।
—- মাইন্ড করি নাই । আমি মাইন্ড করলে তো তোমার খবর আছে ।
—- নাপিত হেসে বলে । কি খবর ভাই পাগল ।
— আমি মিলি খালা কে জেয়ে বলব তুমি আমাকে কি কি বলেছ । গালে স্নো মেখে
রাখো । থাপ্পড় খাওয়ার জন্য ।
— সরি ভাই । ভুল হয়েছে । মিলি খালা কে কিছু বলবেন না।
— না তুমি অনেক বেড়ে গেছ । এমন সময় দোকানের মালিক এসে নাপিত কে
দুই চর দেয় । আর বলে মিলি আপা যদি শুনে যে তুই তার মেহেমানের সাথে
এমন করিস । তাহালে মহল্লার সব পোলা পাইন তরে আমারে সাইজ করবে ।।
নাপিদের চুল কাঁটা শেষ হলে পাগল নাপিদের কানে কানে বলে – বাসায় যাওয়ার
সময় পাশের দোকান থেকে মহা জনের মেয়ের জন্য একটা বড় ফেয়ার অ্যান্ড লাভলী
কিনে নিয়ে যাবি । আর বলবি আমার চোখে দেখা সব চেয়ে সুন্দর মেয়ে তুমি ।
পাগল জোছনার বাপ কে সাথে নিয়ে রাস্তায় আসে শীতের রাতের আকাশ কে আরেক বার দেখে । জোছনার বাপ পাগকে বলে নাপিত কি বললেন । পাগল এক গাল হেসে
বলল কাল কে আপনি সকালে নাপিদের দোকানে যাবেন । দেখবেন আমি কি বলেছি ।
পাগল ছাদে ফিরে এলো । মিলি এসেই বলল –
—– আমাকে থানায় যেতে বলেছে এই মাত্র ফোন এলো । আমার বান্ধবির ভাই
ওদের থানায় নিয়ে এসেছে ।
—- পাগল আবার আকাশের দিকে তাকায় , একটু হাসে তার পড় মিলি কে বলে
যাও । কিন্তু আমার কথা কাউকে বল না । তাহলে কিন্তু আমার আবার
পালাতে হবে ।
— ঠিক আছে আমি থানায় যাচ্ছি । তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে । গরম পানি
লাগলে জোছনা কে বলিও । আর ঐ বাড়ির রেজিয়া কিছু বললে আমাকে বলিও ।
ওর সাথে কোন কথা বলিও না।
মিলি থানায় এসেই দেখে একটা খুব শান্ত মেয়ে । বাচ্চা কুলে নিয়ে বসে আছে । তাকে কেন থানায় আনা হয়েছে তাও সে জানে না। মিলি বাচ্চাটা কুলে নিয়ে বলল – তুমি কি আজিজ মিয়ার স্ত্রী । মেয়েটি মাথা নাড়া দিল । মিলি থানা থেকে বিদায় নিয়ে বাচ্চা ও বাচ্চার মাকে নিয়ে বাসায় আসে । মিলির মা বাচ্চা কে জড়িয়ে বুকে নেয় । জোছনা খুব খুশি । মিলি বাচ্চার মায়েকে বুকে জড়িয়ে বলে তুমি আমার বোন । কারো কোথায় দুঃখ নিবে না। আজ হইতে এই বাড়ী আর এই সংসার আমাদের । আজিজ মিয়া বাসায় এসে নিজেই খুব ভয় পেয়ে গেল । কিন্তু দেখল খুব স্বাভাবিক সবাই । মিলি বলল- যাও আমি তোমাকে আজ ঐ পাগলের জন্য মাপ করে দিলাম । আজিজ মিয়া ছাদে যায় পাগলকে সরি বলবে বলে । পাগল মানুষটা এত বড় একটা সমস্যা সমাধান করে দিল । আসলেই পাগলটা যাদু জানে ।। ছাদে এসে দেখে পাগল নাই ।
ছাদের ঘর খালি । আজিজ মিয়া জোছনা কে ডেকে বলে কি রে পাগলটা কোথায় । মিলি আসে । এসে দেখে ছাদে পাগল নাই । মিলি চেয়ে থাকে ছাদের চার পাশ । কি সুন্দর করে গাছ লাগানো । এত সুন্দর করে বোতল গুলো কেটে গাছ লাগাল । মনে হয় এটা অন্য ছাদ না অন্য কোন জায়গা । মিলি বলে অনেক রাত কোথায় গেল পাগলটা । রাত একটা বাজে পাগলটা হাঁটতে হাঁটতে চলে এসেছে কমলা পুর ।

চলমান————————-

অ-মানব-প্রথম পর্ব

অ-মানব-চতুর্থ পর্ব

অ-মানব-পঞ্চম পর্ব

অ-মানব- ষষ্ঠ পর্ব

অ-মানব-সপ্তম পর্ব

অ-মানব-অষ্টম পর্ব

অ-মানব-নবম পর্ব

অ-মানব-দশম পর্ব

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!