সেলিনা জাহান প্রিয়ার ধারাবাহিক গল্প অ-মানব-তৃতীয় পর্ব

 

অ-মানব-তৃতীয় পর্ব
——————– সেলিনা জাহান প্রিয়া

শীত খুব বেশী সবাই ঠাণ্ডায় একদম কাচুমচু কিন্তু সামছু পুলিশ দেখছে পাগল দিকে
মাথা নিচু করে বসে আছে । পাসের টেবিলে থানার রাইটার রফিক মিয়া পাগলকে বলল
— এত ভাব ধরে লাভ নাই । ওসি সাব জাকে জামাই আদর করে খাওয়ায় তাদের
সাথে জামাই আদর করে । শীতের দিন গায়ে একটা ছালা দাও। অনেক দিন ধরে
ওসি সাহেবের কেরাটি দেখি না।
— সুমাছু বলল পাগল ভাই রাইটার সাবের কথায় ভয় পেয়েন না । রাইটার ভাই
একটু মজা করছে ।
— পাগল চুপ করে বসে আছে । এর মধ্য একটা ছেলে পাগল এর কাছে এসে বলল
ভাই আপনার জন্য চা নিয়ে আসি । ছেলেটা থানার মধ্য টুকটাক কাজ করে ।
পাগল বলল শীতের দিনে আদা চা খুব মজা । তুমি আমার জন্য আদা চা নিয়ে এসো ।
রাইটার বলল পাগলে আদা চা চিনে । জাতে মাতাল তালে ঠিক । শ্যালার বেটা ওসি
আসলে টের পাইবা । আজকের দুর্ঘটনার জন্য তুমিই দায়ি ।।
— পাগল এবার রাইটার রফিকের মুখে দিকে তাকিয়ে বলল আমি কি বলেছি যে আমি পাগল । আর আপনি কি করে জানেন ওসি সাব কখন কি করে করবে । তাহালে কি ওসি সাহবের সকল কাজ গতিবিধি আপনি লক্ষ্য রাখেন । এটা তো খুব খারাপ অন্য মানুষের কাজের বিষয় আপনার গোয়েন্দা গিরি করা । রাইটার সাহেব
আপনি আমাকে অনুসরণ করতে গিয়ে এক ফাইলের কাজ অন্য ফাইলে করছেন ।
সময় থাকতে নিজেকে সামলান ।।
এর মধ্য ওসি সাব রুমে এসেই ডাক দিল রাইটার রফিক কে ফাইল নিয়ে আসতে । সকালে এটা আদালতে পাঠাতে হবে । ফাইল দেখে ওসি সাহেব রফিক সাহেবে নাকে
মধ্য ছুড়ে মারল । মিঃ রফিক কিসের মধ্য কি লিখেছেন । আপনি করেন কি একটা কাজ দিলেও ঠিক মত করতে পারেন না। সুক্কুর মিয়ার মত আপনাকে আজ ক্লোজ করতে হবে দেখি । যান ফাইল ঠিক করে রাতেই আমাকে দেখান । ডিউটি অফিসার কে ডাকেন ? লাসের গাড়ি নিয়ে যেন সামছু যায় ঢাকা মেডিক্যালে ।
ওসি সাহেবের মন মেজাজ খুব খারাপ । একদিকে থানার চাপ অন্য দিকে তাঁর বউ আসছে না রাগ করে । ওসি সাব আবার হোটেলর খবার খেতে পারে না।
শান্ত হয়ে ওসি চেয়ারে বসে বার বার বউ কে ফোন করছে ।
— হ্যালো সারমিন কি কর ?
— আমার খবর কি প্রতি মিনিটে নিতে হয় । আমি কি ভি আই পি নাকি?
— আরে রাগ কর কেন । সারা দিন ফোনে পাই না ।
— আমাকে ফোনে পাও না। ভাল । আমি তো চোর ডাকত পুলিশের ফোন পেলেই
কেটে দেই । দেখ তোমাকে বলে দিচ্ছি আমি তোমার সাথে সংসার করব না।তুমি
সারা দিন কি কর আমি জানি । পুলিশ মানুষের বউ লাগে না । বুঝলে ?
এই কথা বলে ওসি সাহেবের স্ত্রী ফোন কেটে দেয় । ওসি সাহেব একাই একটু হাসল ।
ডিউটি ফিসার এসে বলল স্যার সামছু তো লাশ নিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল গেল । আর একটা পাগল কে আমার কাছে রেখে গেল । বলল আপনার মেহেমান ।।
— ও আচ্ছা ওকে ছেরে দাও । যেতে বলল । আর বলে দাও সবাই কে যেন কোন
পাগল টাগল না ধরে ।
— জী স্যার ।।
ডিউটি অফিসার আবার ওসি সাহবের রুমে এসে স্যার ।
— কি হল আবার
— স্যার ঐ পাগল টা বলল আপনার সাথে দেখা না করে যাবে না। আমি স্যার ধমক দিলাম । আমাকে বলে – আমি কি শিশু বাচ্চা না কি অপরাধী যে ভয় পাব । আমাকে দেখা করতে দাও ।
স্যার অদ্ভুত মানুষ । বলল আমার মাকে ফোন দিতে । আমি বললাম কেন । বলল আগে ফোন দাও ।
— আপনাদের কথার কোন আগা মাথা পাই না। এক পাগল থানার সবাই কে পাগল করে ছাড়ছে মনে হয় । কই ডাকুন পাগল কে ।।
ওসি সাহেবের রুমে আসলো পাগল । ওসি সাব মানুষ আসলেই খুব ভাল । পাগলের দিকে বার বার তাকালো । ঠিক মনে করতে পারছে না কোথায় দেখেছে । তবে খুব চেনা মনে হয় । ওসি বলল হ্যা কি বলবেন – বলেন –
— স্যার কথার কোন শেষ নেই । সবাই নিজের কথা বলতে ব্যস্ত । আমি শুধু বলি যারা কথা বলতে
পারে না তাদের কথা।
— ওসি বলল দেখ ভাই আমার এত সময় নাই । কি বলবে তাড়াতাড়ি বলো ?
— স্যার আপনি আর আপনার বউ কে ফোন দিবেন না। ফোন করলে ফোন রিসিভ করবেন না।
আর আপনার রাইটার কে একটু ডাকেন ।
— রাইটার রফিক কে কেন ?
— স্যার ডাকেন কাল সকালে ভাবি চলে আসবে ।।
— এই ডাকেন তো রাইটার কে । বলল ওসি সাহেব ডিউটি অফিসার কে ?
পাগল মনে মনে হাসছে । কারন পাগলের সুখ নাকি মনে মনে । রাইটার রফিক এসে সালাম দিয়ে বলল-
— স্যার এক ঘণ্টা লাগবে ফাইল ঠিক হতে ।
— আরে ফাইল এর জন্য না। পাগল কি বলে শুনেন ।
— পাগলের দিকে রফিক মিয়া বলল কি বলবেন বলেন । আমি তো স্যারের বিষয় খারাপ কিছু বলি
নাই ।
— পাগল বলল – দেখুন যারা আগ বারিয়ে কথা বলে । বেশী কথা বলে । তাড়ই সমস্যা । আমি পাগল
না ভাল তা বড় কথা না। আমি মানুষ কিনা অমানুষ সেটাই বড় কথা। মিঃ রাইটার রফিক আপনি
আপনার ফোন দেখে ওসি সাহবের স্ত্রী কে একটা ফোন করুন ।
— আমি ফোন করবো কেন ।
— ওসি সাহবেব বলল এর মানে কি ?
— পাগল বলল ফোন করলেই পরিষ্কার হবে । কিন্তু আমি যা বলছি তাই বলতে হবে ।
— ওসি বলল মিঃ রফিক তাই বলেন ।।
— পাগল বলল ফোনে বলুন । ভাবি এত দিন আমি যা বলেছি সব ভুল । স্যার কোন মেয়ে মানুষ নিয়ে
থানায় আড্ডা দেয় না। আপনার কথা খুব চিন্তা করে । আসলে ওসি স্যারের উপর রাগ করে মিথ্যা বলেছি । কিন্তু আজ দেখলাম ওসি সাব খুবেই ভাল একজন মানুষ । আমার ভুল হয়েছে আমাকে মাপ করে দেন । টেলি ফোনের অপর প্রান্ত থেকে ওসি সাহেবের স্ত্রী বলছে ছিঃ রফিক ভাই আপনি এত খারাপ / আপনি আর কোন দিন আমাকে ফোন করবেন না। আপনার কথা বিশ্বাস করে আমি ওকে বার বার ভুল বুঝে আসছি । ফোন শেষ হইতেই ওসি সাহেব খুব জুরে রাইটার রফিকের গালে দুই টা চর বসিয়ে দিল ।
— পাগল বলল স্যার মারবেন না। প্রতিটা মানুষ তাঁর পরিবার থেকে কিছু অভ্যাস ভাইরাসের মত নিয়ে আসে । এদের মেরে ভাল করা যায় না। এদের শিক্ষা দিতে হয় চার পাশের পরিবেশ থেকে ।
ওসি সাহেবের ফোন বাজতে লাগলো । পাগল বলল স্যার ফোন রিসিভ করবেন না। চর খেয়ে রাইটার রফিক বোকার মত দাড়িয়ে আছে ।
পাগল থানা থেকে বের হয়ে সোজা রাস্তায় তখন রাত ১০ বাজে । সে তাঁর মত হাঁটছে । ওসি সাহেবের ফোনে ফোন আসতেই থাকে । কিন্তু ওসি সাব আর ফোন ধরে না । ডিউটি অফিসার অনেক দিন হল মায়ের সাথে কথা বলে না। বাড়ির সব নাম্বার সে লক করে রেখেছে । কারন তাঁর মা তাঁর নানা বাড়ির জমি বিক্রি করে সব টাকা তাঁর ছোট ভাই কে দিয়েছে । তাই নিয়ে কথা বলে না। পাগল যাওয়ার সময় বলে যায় । অফিসার কেউ কি সম্পদ নিয়ে সুখি হতে পারে । যে দিতে পারে সেই সুখি ।
কিন্তু অফিসার আর ফোন করে নাই । রাত একটায় ফোন এলো থানায় ডিউটি অফিসারের ফোন তাঁর বাড়ি থেকে……………………………

চলমান———————-

অ-মানব-প্রথম পর্ব

Shelina Jahan Priya's photo.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!