সেলিনা জাহান প্রিয়ার ধারাবাহিক গল্প: ‘অ-মানব’-নবম পর্ব

‘অ-মানব’-নবম পর্ব
——————– সেলিনা জাহান প্রিয়া
মিলি ঘুম থেকে উঠে কিছু টাকা হাতে নিয়ে পাগলের কথা মত গণক মহিলার কাছে ।

গণক মহিলা মহিলা জানে মিলি বিভিন্ন সময় তাঁর কাছে অনেক কিছু জানতে আসে ।
মিলি বলল – খালাম্মা ভাল আছেন ।
—- আরে মিলি যে আসো আসো । আল্লাহর কি ইচ্ছা তোমার কথা বলতে বলতে চলে আসলা ।
—- আমার কথা কেন খালাম্মা ।
—- তোমার বাসায় নাকি একজন পাগল জাগা দিয়েছিল ।
—- হ্যা , তাই তো আপনার কাছে আসলাম । একটু গণনা করে দেখেন তো আসলে মামলা কি?
—- তাহালে মিলি একটু বসও । ওজু করে এসে বলল ।মিলি চিন্তা কর না- বলছি । চোখ বন্ধ করে
বলতে লাগলো । মিলি আগে সালামি দাও । মিলি ৫০০ টাকা দিল । বল মিলি কিজান্তে চাও ?
—- খালাম্মা । আমার বাসার পাগল টা ভাল না কি কোন মতলব আছে ।
—- চোখ বন্ধ করে তজবি হাত উপর করে বলছে । ছেলেটা পাগল । তবে মাথা ভাল হলে কিছু
খারাপ
হবে । তবে মাথা ভাল হবে না।
—- পাগল ছেলেটা কি লিখা পড়া জানে ।
—- আরে না মিলি কিছুই জানে না।
—- আচ্ছা খালাম্মা আর একটা কথা আমার স্বামী আর আমি কি সন্তানের মুখ দেখতে পারব ।
—- মিলি মা সব কপাল । তোমার সাথে একটা যে মানুষ টার বিয়ে হয়েছে । সে কোন দিন বাবা
হতে
পারবে না। আমার গণনা । ভুল হতে পারে না। তোমার যে বয়স মা। তুমি এই স্বামী ছেরে আর
তো বিয়ে ও করবে না। যদি স্বামী ছেরে বিয়ে কর । নতুন সংসারে বাচ্চা হতে পারে । আমার গণনা
ভুল হতে পারে না। মিলি মা আর কিছু জানতে চাও ।
—- না খালাম্মা আর কিছু না। মনে মনে মিলি বলে । স্বামী ছাড়তে পারব না। ৩৫ বছর বয়সে
স্বামী ছারলে মানুষ কি বলবে ? মিলি গণক খালার বাসা থেকে রাস্তায় আসতেই দেখা তুতুলের
সাথে
কি তুতুল বিকালে বাসায় আসো । জী মিলি খালা আমি আসব । আমাকে একটা কর্ক কিনে দিবে
ব্যাট খেলব । ঠিক আছে তুতুল এসো । বাড়ির পাশের দোকানদার মিলি কে দেখে বলল – আপা
আমার বউ কে আপনার একদিন ডাক্তারের কাচ্ছে নিয়ে যেতে হবে । মিলি বলল – ঠিক আছে আমার কাছে আসতে বল । আমি কথা বলে নিবে । মিলি কে এলাকার সবাই যে কোন কাজে ডাকে ।।
পাগলের জন্য সকালের খাবার নিয়ে জোছনা ছাদে এসে দেখে পাগল রোদের মধ্য বসে আছে । জোছনা বলল– পাগল ভাই আসেন খাবেন ।
— দিনের বেলায় জোছনা দেখা যায় !
— আপনে যে কি বলেন ভাই জান ? আমি কি চাঁদ যে রাতে উঠবো ।
— হ্যা ঠিক তো । জোছনা !
—আচ্ছা পাগল ভাই আপনি পায়ে জুতা পরেন না কেন ?
— পাগল বলে জুতা পড়ি না ।
— না । আপনি মিছা কথা বলছেন ।
—- সত্য কোনটা জোছনা ?
— সেইটা আপনে ভাল জানেন ।
—- পাগল একটু হেসে বলল জোছনা মানুষ অনেক সত্য জানে শুধু স্বার্থের নেশায় সে সত্য
গোপন
করে । তারা মনে করে সত্য গোপন করলে তা কেউ জানবে না। কিন্তু এটা জানে না । সত্য
আলোর মত যা প্রকাশিত হবে । তুমি অনেক ছোট বুঝবে না। আর গত কাল তুমি ঘরে একা
বসে
যে চিন্তা করেছ এটা করবে না। কারন তুমি ছোট আর সত্য জানতে অনেক সময় বড় হতে
হয় ।।
—- আচ্ছা পাগল ভাই আমার বাবা মা কি আসবে ।
—- অপেক্ষা কর আসবে ।
জোছনা ছাদ থেকে নেমে চলে যায় । পাশের বাড়ির রেজিয়া জানালা দিয়ে দেখ পাগল কি করে। পাগল মনে মনে হাসে । পাগলের হাসি দেখে রেজিয়া বলে পাগলের সুখ মনে মনে তাই সে একা একা হাসে ।।

আজিজ মিয়ার মনটা ভাল না । কিন্তু তার মনের মধ্য ভয়টা এখনো শেষ হয় নাই । ছাদে যেতে পারছে না । না জানি মিলি কিছু বলে । যাই হোক তবু সে ছাদে গেল পাগলের মতিগতি বুঝার জন্য । পাগল ছাদের এক কোনে পাগল দাড়িয়ে । আজিজ মিয়া পাগলকে বলল- কি পাগল মামু ভাল আছ না কি?
—– পাগল ঘাড় ফিরিয়ে একটা হাসি দিয়ে বলল , আজ পর্যন্ত কোন পাগল বলে নাই সে খারাপ
আছে ।
একমাত্র পাগলেই কোন দিন মন্দ থেকে না ।
—–আসলে তুমি কে ?
—- আমি কে এটাই জানার চেষ্টা করছি !
—- পাগল মামু তোমার কি কোন নাম নাই ।
—- রাস্তার কত জন পাগল তার নাম বলতে পারে ।
—- দেখ আমি একটা ব্যাপারে তোমার কাছে এসেছি ?
—– পাগলের কাছে কি কোন জ্ঞান থাকে । যদি জ্ঞানেই থাকত আমার তাহলে কি কেউ আমায়
পাগল
ডাকত !
—– দেখ আমি জানি তুমি পাগল না । কারন পাগল রা যুক্তি দিয়ে কথা বলে না।
—– হ্যা আমি পাগল না তবে আমি মানুষ ও না ।
—- তুমি পাগল ও না মানুষ ও না তাহালে তুমি কে ?
—- দেখুন আপনি কি আমাকে জানতে এসেছেন । নাকি আপনার সম্মান বাচাতে এসেছেন তা
পরিষ্কার করুন ?
—- হ্যাঁ আমার সম্মান বাচাতে এসেছি ।
—- দেখুন এটাই উত্তম । তাই হউক ।
—– তাহালে আমার স্ত্রী কে তুমি বলবে না ।
—- পিছনে মিলি খালা আসছে । আজিজি চেয়ে দেখে । মিলি ছাদের কর্নারে দিকে আসছে ।আজিজ
মিয়া এমন একটা ভাব ধরল যে পাগল কে খুব ভালবাসা দিচ্ছে । মিলি বলল স্বামী কে –
—– এই তুমি ছাদে কি কর । আজ অফিস নাই তোমার ।
—– অফিস আছে তবে ফোনে বলেছি আসতে একটু দেরি হবে
—– যাও তুমি অফিসে যাই । আসার সময় ওর জন্য দুইটা প্যান্ট আর দুইটা টি সার্ট নিয়ে আসবে ।
—– আচ্ছা ঠিক আছে । তা তোমার পাগলের চুল দাড়ি যে অবস্তা ।
— এটা নিয়ে তোমার ভাবতে হবে না। তুমি যাও । আজিজ মিয়া চলে যায় । মিলি বলে এই
মানুষটা সহজে ছাদে আসে না । নিশ্চয় কোন মতলবে । বুঝতে পারছ । মনে হয় অমাকে
ঘুস দিতে এসেছিল । আমাকে দেখে পালাইছে ।
—– না মিলি খালা তেমন মনে হয় না। আচ্ছা গণক মহিলার কাছে গিয়েছিলেন ।
—– হ্যা সকালে গিয়েছিলাম । ৫০০ টাকা দিয়ে জানে আসলাম ।
—- কি আপনাকে আবার বিয়ে করতে বলেছে ?
—- হ্যাঁ ঠিক তুমি জানলে কি ভাবে ?
—– গণক রা মানুষের মনের দুর্বলতা নিয়ে খেলে । দুনিয়ার প্রতিটা মানুষ । কোন না কোন ভাবে
কষ্টে আছে । কারন মানুষ কে স্রষ্টা পরীক্ষা মূলক প্রাণী হিসাবে দুনিয়ায় পাঠাইছে । তাই
মানুষ কে জন্ম থেকে মৃত্য পর্যন্ত শুধু পরীক্ষা দিতে হচ্ছে ।
—– বাহ ! সুন্দর কথা । আচ্ছা পাগল ছেলে বলত ঐ মহিলা আমাকে বলল আমি আবার বিয়ে
করলে মা হব , এটা কি তো সে মিথ্যা বলেছে । ডাক্তার আমাকে বলেছে যে আমি কোন দিন
মা হতে পারব না ।
—– হ্যা খালা মনি এটাই সত্য । তবে আপনি মা ।
—– কি ভাবে আমি মা ? সবাই মা বলে তাই আমি মা ।
—– না ! আমি যদি একটা কথা বলি তাহালে কি মেনে নিবেন । আচ্ছা দেখুন আপনি না হয় মা হতে
পারবেন না। কিন্তু আপনার স্বামীর তো বাবা হবার অধিকার আছে ।
—- আরে পাগল আমি অনেক বার চেষ্টা করেছি । আজিজ কে বিয়ে করাতে ।
—- আজিজ মামা আপনাকে অনেক ভালবাসে । তাই না ।
—- হ্যা ভাল বাসে । কিন্তু আমার কোন কথা শুনে না।
—- আপনি কি মা ডাক শুনতে চান । যদি শুনতে চান তাহালে বলি ।
—– মিলির চোখে পানি টল টল করে ঝরছে । বল পাগল ! শুনি তোর কথা !
—– খালা মনি স্রষ্টা অনেক সময় অন্যের মধ্য দিয়ে তার প্রিয় মানুষ কে সুখি করে । হয়ত এটাই
তিনি ভাল জানেন । আমাদের জানা পরিবর্তন শীল । আর স্রষ্টার জানা অপরিবর্তন শীল ।
তাই স্রষ্টার প্রতি জিবনের প্রতি প্রেম আর ভালবাসা বিলিয়ে আপনি স্রষ্টার অংশ হয়ে মানুষের
কাজ করুন ।
—— মিলি বলল তুমি কি মানুষ না অন্য কিছু আমাকে বলত । জিবনে এত সুন্দর করে কেউ কোন
দিন বলে নাই
——- মিলি খালা আপনি ঘরে জান । আমি আপনাকে আপনার সন্তানের কাছে নিয়ে যাব ।
কিন্তু আপনি এই কথা কাউকে এখন বলবেন না ।
—– আমার সন্তানের কাছে । ঠিক বুঝলাম না ।
—– মিলি খালা । আজিজ মামার সন্তান কি আপনার সন্তান না ।
—- মানে আজিজ বিয়ে করেছে ।
—– হ্যা । কিন্তু ঐ মেয়েটা কে এখন সে মেনে নিচ্ছে না। কারন ঐ মেয়েটার আগে একটা বিয়ে হয়ে
ছিল । বিয়ের সময় মেয়েটা ঐ কথা লুকিয়ে রাখে । আগের স্বামী মামলা করে । কিন্ত পুলিশ
দেখল আগের স্বামী প্রতারক । তাই তার বউ এসে তাকে মুক্ত করে দিয়ে যায় । মিলি খালা
ছেলেটা অনেক সুন্দর মনে হয় তিন বছরের । আর মেয়েটা এখন কুল হারা ।
—– তুমি কি শুনালে আমাকে ? আমি ওদের আনতে যাব । তোমাকে নিয়ে । কাউকে বলব না।

চলমান———

অ-মানব-প্রথম পর্ব

অ-মানব-চতুর্থ পর্ব

অ-মানব-পঞ্চম পর্ব

অ-মানব- ষষ্ঠ পর্ব

অ-মানব-সপ্তম পর্ব

অ-মানব-অষ্টম পর্ব

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!