সেলিনা জাহান প্রিয়ার গল্প: ‘অ-মানব’-(৪৫ তম পর্ব)

 

অ-মানব-৪৫-তম-পর্ব

———————-  সেলিনা জাহান প্রিয়া

 

সারা গ্রামের মানুষের মাঝে হই চই পড়ে গেছে । আজগর আলি ফিরে এসেছে । সাথে একটা মেয়ে মানুষ নিয়ে আসছে । সবাই দল বল নিয়ে যাচ্ছে আজগর আলি কে দেখতে । কিন্তু আজগর আলির ছেলেরা তাঁকে বাড়িতে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। চেয়ারম্যানের কাছে একজন এসে বলল – চেয়ারম্যান খবর পাইছ নি । আমাদের গ্রামের আজগর আলি ফেরত এসেছে । চেয়ারম্যান বলল
——–খুবোই ভাল কথা ছেলেরা তো অনেক চিন্তা করতে ছিল ।
——- কিন্তু চেয়ারম্যান সেই ছেলেরা তো এখন তাঁকে বাড়িতে জাগা দিচ্ছে না।
——- এত খুবোই খারাপ কথা । তা বাড়িতে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না কেন ?
——– কেমনে দিবে ? সাথে যে একটা সুন্দর মহিলা নিয়ে এসেছে ।
——– বলিস কি ? চোখে দেখেনা । আবার মেয়ে মানুষ নিয়ে এসেছে ?
——- হ গো চেয়ারম্যান । বুড়া কানা হলে কি হবে ? মনে এখনো পিরিতের রং আছে ।
——– আচ্ছা আমি দেখছি- তুমি যাও ।
চেয়ারম্যান কেনু কে ডেকে বলল কিরে অ-মানব কোথায় ? কেনু বলল মামা অ-মানব বড় আজব লোক । একেক সময় একেক কথা বলে । আমারে বলল তুমি যাও আমি পরে আসব । সে আপনার মায়ের কাছে চলে গেল । বলল আপনার মাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে ।
——– বলিস কি ?
——– আরে মামা সে সত্যি সত্যি আপাব্র মাকে নিয়ে একটা রিক্সা নিয়ে সদরে ডাকাতের কাছে গেল । সাথে বাতেন আছে । আপনি চিন্তা কইরেন না।
——– তোর মামী কিছু বলল না।
——– মামী বলল কেনু তোমার যাওয়া লাগবে না। বাতেন আর মা কে নিয়ে যাক আর আমি যেন আপনার সাথে থাকি ।
——- আচ্ছা তুই একটু আজগর আলির বাড়িতে যা । দেখ কি হয়েছে । আমাকে এসে বলল ।
—— জী মামা আমি যাচ্ছি । আপনে কোন চিন্তা করবেন না। তবে কি সমস্যায় যাচ্ছি ?
——- আরে কি সমস্যা গেলেই দেখবি ? তাড়াতাড়ি যা । কেনু মিয়া আজগর আলির বাড়ির দিকে রওনা দিল । পথে দেখা ডাক্তারের সাথে, ডাক্তার বলল কি রে কেনু আমার শ্যালক অ-মানব কোথায় ? কেনু বলল ডাক্তার সে বিরাট কাজের মানুষ । সে আমাদের চেয়ারম্যান মামার মাকে নিয়ে সদরে ডাক্তারের কাছে গেছে। বলিস কি ? খালা তো কারো কথা শুনে না। আরে ডাক্তার মামা । ঐ বেটা জাদু জানে । নানীরে একদম কাছে নিয়ে আসছে । নানি এখন ঐ বেটা অ-মানব যা বলে তাই শুনে । ডাক্তার বলল ভাল তো । তাও যাও কই ? আরে মামা আর বইলেন না । চেয়ারম্যান মামা আজগর আলির বাড়িতে পাঠাইছে । তাদের খবর নিতে । আচ্ছা মামা আমি যাই । কিছু কি ভুত অ-মানব কে বলতে হবে ? আরে না কিছুই বলতে হবে না।বাজারে আসলে দেখা হবে ? ঠিক আছে মামা আমি যাই । কেনু আজগর আলির বাড়িতে এসে তো মহা অবাক এত মানুষ কেন?
কেনু কে দেখে আজগর আলির ছোট ছেলে আলম বলল
—– আরে কেনু তুমি আইসা ভাল করেছে । সমাজে আর মুখ দেখাই কি ভাবে ? আমার বাবা এই বুড়া বয়সে কোথায় থেকে একটা মহিলা নিয়ে আসছে । আর সারা গ্রামের মানুষ আমাদের নিয়ে হাসি মশকরা করছে ।
—— কেনু একটু মন খারাপ করে বলল খুবোই চিন্তার বিষয় । আর ভাল করে জানতে হবে বিষয় টা কি ? আর এই মহিলা কি হয় ?
—– আরে জানবা কি ভাবে ? সে তো কিছু বলছে না। আসার পর থেকে ঐ লাঠি আর ব্যাগ নিয়ে বড় ঘরে ঐ মহিলা সহ দখল নিতে চায় । চোখে দেখে না।আর আমাদের কত চিন্তায় ফেলে হারিয়ে গেল । আর ফিরে এল একটা মাইয়া মানুষ নিয়ে ।
আজগর আলি বড় অন্য দুই ছেলে আর ছেলের বউ বলছে এই মহিলা সহ এই বাড়িতে থাকতে দিবো না। কেনু বলল- আরে সবাই থামেন চেয়ারম্যান আমাকে পাঠাইছে । বিষয় টা জানতে হবে আগে ঐ মহিলা কি হয় । তোমারা চুপ কর আমি জানি বিষয়টা- কেনু মিয়া আজগর আলিকে সালাম দিয়ে বলল নানা শরীর টা ভাল ।
——- ভাল মন্দ তোমার কি দরকার মিয়া । আমি কি তোমার খাই না পড়ি ?
——- আরে নানা রাগ করলে কি সমাধান হবে নে ?
——- কেনু মিয়া কিসের সমাধান করবে ? আমার বাড়িতে আমাকে ঢুকতে দেয় না। আমি কি কিছু বুঝতে পাড়ি না। আর মাত্র এক ঘণ্টা দেখব , পরে থানায় যাব।
——- কেনু বলল তুমি চোখে দেখ না নানা তা কেমনে থানায় যাব ।
——- কি কও কেনু মিয়া আমি চোখে দেখি না। এখন আমি সব চোখে দেখি । এই কথা শুনে তিন ছেলে অবাক । বড় ছেলে বলে বাবা তুমি কেন মিছা কথা বল । বাড়িতে আসার পর তো দেখলাম তুমি কালা চশমা পড়ে আছো ।কালো চসমা তো একমাত্র কানা মানুষেই পড়ে ।
—— আজগর আলি বলল চুপ থাক । আগের দিন বাঘে খাইছে। এই কেনু মিয়া আমারে আমারে পরীক্ষা কর। দেখ আমি কানা না কি ভাল ।
গ্রামের মানুষ সারা বাড়ি ভীর করে আছে । আজগর আলির সামনে কেউ যায় না।
———কেনু বলল ঠিক আছে নানা আগে পরীক্ষা হউক । বলত আমার হাতে কয়টা
আঙুল ?
——– হারামজাদা আমার হাতে মাইর খাও নাই তো । তোমার বাপরে একটা ঘুশি দিছিলাম । ছয় মাস চাপা ব্যাথা করছিল । হাত দুইটা পিছনে রেখে বল- কয়টা আঙুল । তোমার গেঞ্জির মধ্যে লিখা বাংলাদেশ আমার গর্ব ।
——- কেনু মিয়া সহ সবাই অবাক হয়ে গেল । আজগর আলি মনে মনে বলল এখন একটা চাল খেলতে হবে তখন গ্রামের মানুষ আমার পক্ষে চলে আসবে । তাই একটু চালাকি করে বলল শুনেন গ্রামের মানুষ সবাই কে বলছি আমি কানা মানুষ ছিলাম চোখে দেখি নাই । রাস্তায় পড়ে ছিলাম । এই মহিলা আমারে রাস্তা থেকে পেয়ে ডাক্তার দেখিয়ে চোখ ভাল করেছে । এখন আপনারা বলেন আমার ছেলেরা যেই কাজ করে নাই । সেই কাজ এই মহিলা করেছে । যে আমার জীবনে এত উপকার করলো তাঁকে কি আমি রাস্তায় ফেলে আসতে পাড়ি। আপনারই দেখেন আমার জন্য এই মহিলা কাদতে কাদতে চোখ ফুলিয়ে ফেলছে । আজগর আলির কথা শুনে সবাই বলল – আপনি ভাল কাজ করেছেন ।
——- কেনু বলল নানা আমার সাথে আসো তো একটু একা একা কথা বলি ?
——- আজগর আলি বলল কি কথা বল। এখন চোখে দেখি কানে ও শুনি।
——- কেনু বলল আজগর আলিকে যদি কিছু টাকা খরচ করেন তাহলে চেয়ারম্যান দিয়ে আপনার ছেলেদের শক্ত বিচার করে আপনাকে আপনার বাড়িতে দখল বুঝিয়ে দিয়ে যাব ।
——আজগর আলি কেনুর পিঠে থাপ্পড় দিয়ে বলে নাতি তাই কর , কিন্তু আমি আর একটা কাজ করতে হবে নাতি ।
—— আরে নানা তুমি যাই বল তাই ।
—— হুজুর এনে ঐ মহিলার সাথে আমার বিয়ে করাতে হবে ।
—— আরে নানা এখনো বিয়ে কর নাই ।
——- নাতি সময় পাই নাই । ভাবলাম গ্রামে এসে ছেলে নাতি মেয়ে সবাই কে নিয়ে বিয়ে করব । আচ্ছা নাতি আর একটা কথা বলি।
—— বল নানা ।
—— এই গ্রামে একজন মানুষ আছে তাঁর নাম হল অ-মানব তারে আমার একটু দরকার ।
—– আরে নানা বল কি ? তুমিও তারে চিন । খাইছে আমারে । তুমি নানা একটু আরাম করে বস আমি দেখি কি করা যায় । নানা টাকা যা দিবা কিন্তু গোপনে ঐ অ-মানব যেন না জানে ।
—— আরে নাতি কাজ করে দাও । টাকা কোন সমস্যা না । আমি আজগর আলি কথায় কাজে এক ।।
কেনু বলল ওকে নানা আমি দেখছি । কেনু আলম আর তিন ভাইকে ঘরে নিয়া বলল দেখ তোমার বাবা যদি সব কিছু ঐ মহিলা কে দিয়া দেয় । তখন কি করবা , আর তোমাদের বাজারের সাথের জমি কিন্তু গেদু মাহাজনের খুব পছন্দ । আর বড় রাস্তার জমি তে আমাদের চেয়ারম্যান একটা স মিল করতে চায় , তখন কিন্তু তোমাদের আম ছালা সব যাবে । বড় জনের বউ বলে কেনু ভাই কি করা যায় । আলম বলল কেনু
একটা ভাল কিছু করে দাও । কেনু একটু চুপ করে বলে তোমরা তিন ভাই আমারে কত দিবা বল । আমি তোমার বাবারে বিচারে এমন সাইজ করব যে তোমাদের কথা তোমার বাবা মানতেই হবে ।
———- আলম বলল কেনু তুমিই বল । তোমার জন্য কি করব ?
———– কি আর করবা তিন ভাই মিলে ৭৫ হাজার টাকা দিবা । যদি রাজি থাক তাহলে আমি চেয়ারম্যান কে মানিয়ে তোমাদের বাড়িতে নিয়ে আসি । তিন ভাই কিছু ক্ষণ চিন্তা করে বলল ঠিক আছে কেনু তুমি তাই কর কিন্তু বাবার কাছ থেকে জমি আমদের তিন ভাইয়ের নামে লিখে লিখে দিতে হবে কিন্তু ।
———– কেনু বলে আরে তোমরা বেশি বুঝ । তোমাদের নামে জমি না দিলে তো সব জমি ঐ মহিলা কে লিখে দিবে।
————–বড় ভাই আর ভাবী বলল কেনু দেরি কর না। যা করার তাড়াতাড়ি কর।
—————-কেনু বলল তাহলে আমি যাই । আমার কথার বাহিরে কিছু কর না কেউ পড়ে কোন সমস্যা হলে কিন্তু আমি নাই ।
কেনু আজগর আলি কে বলল নানা সন্ধ্যায় বিচার হবে এখন তুমি নানি কে নিয়ে বাড়ির ভিতরে আসো । কেনু আজগর আলি কে তাঁর ঘরে ঢুকিয়ে দিয়ে বলল কই ভাবিরা তাদের খাবার কিছু দেন । আজগর আলি বলল না খাবার লাগবে না। বিচারের পরেই তাদের খাবার খাব কি না চিন্তা করব ? ঘরে প্রবেশ করেই আজগর আলি একটা পুরাতন আলমারি আছে তাঁর চাবি মহিলাকে দিয়ে বলল এটা আঁচলে বেঁধে রাখ । ক্ষমতা তাকেই বলে যেই টুকু প্রয়োগ করা যায় ।
অ-মানব চেয়ারম্যানের মাকে ডাক্তার দেখিয়ে বাড়িতে নিয়ে এসেছে । চেয়ারম্যান বলল সাবাস হে অ-মানব। আজ সব মানব তোমার মত অ-মানবের নিকট হেরে গেলাম । আমার মা গত এক বছর ডাক্তার দেখাবে না বলে কসম খায় । কত জ্বর ব্যথা গেল কিন্তু ডাক্তার দেখায় নাই । অ-মানব বলল চেয়ারম্যান মানুষ সারা জীবন ভালবাসার কাঙাল । কিন্তু মানুষ যদি তাঁর মাকে ভাল করে বুঝত তাহলে সেই মানুষের
ভাল বাসার অবাব হত না। মা হল জমি । জমি না থাকলে এত গাছ পশু পক্ষী কোথায় দাঁড়াত । একবার গভীর ভাবে চিন্তা করবেন চেয়ারম্যান ।
———— চেয়ার ম্যান বলল তোমার কথা অতি মুল্যবান । আমি একটু বাজারে যাই।
———— অ-মানব বলল যে খানেই যান । যাবার সময় মাকে বলে যাবেন । আসার পড় মায়ের সাথে দেখা করবেন । মা যা বলে তাই সত্য মনে করবেন । কারন কোন মা তাঁর সন্তানের ক্ষতি চিন্তা করে না।
———- চেয়ারম্যান তাঁর মাকে বলল মা আমি একটু বাহিরে যাই । ছেলের চোখের দিকে চেয়ে বলল যাও বাবা , আমার এই ঔষধ নিয়ে আইসো । অনেক দিন পড় আজ মা তাঁকে কিছু আনতে দিল । চেয়ারম্যান অ-মানব কে বুকে জরিয়ে ধরে বলল ভাই আমি আজ অনেক খুশি । আমার মা অনেক দিন পড় আমার দিকে তাকালো । চেয়ারম্যান বাজারে দিকে রওনা দিল ।
চেয়ারম্যানের বউ অ-মানব কে ভাত খেতে দিয়ে বলল
———- আপনি নাকি মানুষের সব মনের কথা বলে দিতে পারেন । আর আপনি নাকি সাপ পালেন । যে আপনার কথা শুনে না । তাঁকে নাকি সাপে মেরে ফেলে । এই কথা শুনার পড় থেকে আমার খুব ভয় লাগছে । আমার শাশুড়ি আপনার কথা শুনে । তখনেই আপনাকে ভয় লাগতে লাগলো । আমার শাশুড়ি যে খারাপ মহিলা । তাঁকে আপনি শান্ত করে, বস করে ফেললেন ।
——— অ-মানব বলল আপনি খুব সুন্দর রান্না করেন । আপনার ঘর বাড়ি সব সুন্দর করে গুছিয়ে রাখেন । আমার খুব পছন্দ হয়েছে ভাবী ।
———– আরে আমি যেই কথা বলছি । সেটা বলেন ?
———– আপনি শুনলে খুব কষ্ট পাবেন । তাই বলতে চাই না।
———– না কষ্ট পাব না । আপনে বলেন ?
———– এত বছর হল আপনার বিয়ে হয়েছে বাচ্চা হয় না কেন ?
———— চেয়ারম্যানের বউ বলল আমি কি জানি । আল্লাহ জানে । আল্লাহ না দিলে আমি কি করব ।
————এই যে আপনি মিথ্যা মিথ্যা আল্লাহ্‌ কে দোষছেন এটা কি ঠিক ।
———– আপনি কি বলতে চান । আমি ইচ্ছা করে নেই না।
———– না তা কেন । আপনার বিয়ের আগে একটা অপারেশন হয়েছে । ডাক্তার বলেছে আপনার কোনদিন বাচ্চা হবে না । এটা আপনি জেনেও গোপন করে আছেন ।
———- হায় আল্লাহ্‌ । আপনে জানেন কি করে ?
———– আমি বললাম না। আমি সব জানি ।
চেয়ারম্যানের বউ অ-মানের পায়ে ধরে বলে তুমি আমার ধর্মের ভাই লাগো । এই কথা চেয়ারম্যান আর তাঁর মায়ে জানলে কালকেই আমারে তালাক দিবে । জীবনে আমারে কেউ বিয়ে করবে না। এই কথা বলে চেয়ারম্যানের বউ কাদতে লাগলো । অ-মানব এখন বলল ভাবী ডাক্তার রা কি সৃষ্টিকর্তা । আমার পা ছারেন । আমাকে যখন ভাই ডেকেছেন । তাহলে কি আমি আমার বোনের সংসার ভাঙতে পাড়ি । আপনি বসুন ।
আমার জন্য একটু চা বানাবেন কিন্তু আমার কথা শেষ হলে । আমি আদা দিয়ে দুধ চা খেতে পছন্দ করি । ভাবী যে কথা বলছিলাম ডাক্তার রা সৃষ্টিকর্তা আপনি বলেন।
————- চোখের পানি মুছে বলল না ভাই ।
————– তাহলে আপনি কেন ডাক্তারের কথা বিশ্বাস করে সব সময় চিন্তা করেন আপনার বাচ্চা হবে না । ডাক্তার বলেছে আপনার মা হবার সম্ভাবনা কম। কিন্তু আপনার মামা বলেছে অপারেশনের পড়ে যে আপনি মা হতে পারবেন না। কিন্তু ডাক্তারের মুখের কথা আর আপনার মামার কথা এক না, ঠিক কিনা ভাবী ।
———– হ্যা , আমি তো এই ভাবে চিন্তা করি না।
———— আপনার বাচ্চা হচ্ছে না দেখে আপনার শাশুড়ি আপনার উপর মনে মনে রাগ । ঠিক সেই রাগের জন্য সব বিষয়ে আপনার সাথে ঝগড়া করে । আর আপনি আজকাল তাঁর ভাল মন্দ সব কথা মন থেকে খারাপ ভাবে নেন । শুনুন ভাবী ডাক্তারের কথা মন থেকে বাদ দেন । আজ থেকে সুন্দর চিন্তা করেন , রাগ মন থেকে বাদ দেন । একটা কথা বলি ভাবী আপনি আমাকে ৫০০টাকা দিলেন । আমি যদি সেই টাকা না নেই তাহলে সেই টাকা কার ?
———- কার আবার । সেই টাকা আমার । কারন আমার টাকা যদি না নেন তা আমার, এটা তো বোকাও বুঝবে ।
———– তাহলে ভাবী আপনার শাশুড়ি সারা দিন আপনাকে গাল মন্দ করল কিন্তু আপনি তা মনেই নিলেন না। তাহলে ঐ গাল মন্দ কার ।
————- যে গালি দিল তাঁর ।
————–এই তো ভাবী আপনে বুঝছেন । আজ থেকে মন খুলে হাসবেন । চেয়ারম্যানের একজন বোন মরা ভাগ্নি আছে না। ফুলজান নাম । তারে নিয়ে আসেন । আপনার কাজের উপকার হবে । শাশুড়ির দেকবাল হবে ।
————- ভাই যখন বলছে তাহলে কালকেই ফুলজানেরে নিয়া আসব । আচ্ছা ভাই আমার কি বাচ্চা হবে ৯ বছর হল বিয়ে হয়েছে ।
———— হ্যা ভাবী হবে । যাদের মন পরিষ্কার আল্লাহ্‌ তাঁকে সব কাজে সাহায্য করে । ডাক্তার তো বলছে হবার সম্ভাবনা কম । না তো আর করে নাই ।
———– ভাই তুমি গিয়ে একটু রেস্ট কর আমি তোমার জন্য আর আমার শাশুড়ির জন্য একটু চা করে আনি ।
————ভাবী আমার চায়ে আদা দিয়েন । আমি দুধ চায়ে আদা খাই । চেয়ারম্যান তাঁর অফিসে বসা কেনু এসে বলল – চেয়ারম্যান মামা আপনি দেখি এম পি হবার যোগ্যতা রাখেন । আমি ভাবতে পাড়ি না। গ্রামের তামাম খবর আপনি কিভাবে পান । আপনি কি জীন ভুত পালেন মামা ।
———– আরে যে কাজে গিয়েছিলি সেটা বল । খালি বেশি কথা ।
———– চেয়ারম্যান মামা অনেক জটিল মামলা । আজগর আলি হ্যাবে সুন্দর একটা মহিলা ভাগিয়ে নিয়ে আসছে ।
———– বলিস কি ঐ কানা আজগর আলি সুন্দর মহিলা ভাগিয়ে নিয়ে আসছে। ছুবাহান আল্লাহ্‌ । বলিস কি? এটা দেখি আজব খবর ।

চলমান———

অ-মানব-প্রথম পর্ব    অ-মানব-দ্বিতীয় পর্ব    অ-মানব-তৃতীয় পর্ব    অ-মানব-চতুর্থ পর্ব

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!