আজ শহীদ জেহাদের ২৮তম মৃত্যুবার্ষিকী

আজ শহীদ জেহাদের ২৮তম মৃত্যুবার্ষিকী
-মাহবুব এইচ শাহীন

মত্যুর আগে জেহাদের দৃপ্ত উচ্চারণ, আমি এসেছিলাম সামরিক স্বৈর সরকার উৎখাতের জন্য। আমি মৃত্যু পথযাত্রী। আমি তার পতন দেখে যেতে পারলাম না। আমার মৃত্যু তখনই স্বার্থক হবে ও আমার আত্মা শান্তি পাবে, যখন আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈর সরকারের পতন হবে।

কে. এম. নাজির উদ্দিন জেহাদ ১৯৬৯ সনের ৬ সেপ্টেম্বর সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলাধীন নবগ্রাম গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন । বাবা মৃত কে এম মাহমুদ এবং মা বছিরুনেচ্ছা । ১০ ভাই-বোনের মধ্যে জেহাদ নবম ।

নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময় জেহাদ স্থানীয় সরকারি আকবর আলী কলেজে বিএ শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন। জেহাদ ছাত্রদলের কলেজ শাখার সভাপতি ও উপজেলা শাখার সহ-সভাপতি ছিলেন । নব্বইয়ের ১০ অক্টোবর বিএনপিসহ সাত দলীয় জোট রাজধানীর পল্টনে মহাসমাবেশের ডাক দিলে অকুতোভয় ছাত্রনেতা জেহাদ নিজ এলাকা থেকে ৬০ জন ছাত্র নিয়ে যোগ দেন সমাবেশে ।

নব্বইয়ের দশকের স্বৈরাচারবিরোধী গণআন্দোলনের অন্যতম ছাত্রনেতা শহীদ নাজির উদ্দিন জেহাদ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসে এক অমর নাম । শহীদ জেহাদ নিজেকে উৎসর্গ করেছেন গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করতে । তার এই মহিমান্বিত আত্মদানের ফলেই স্বৈরশাসক এরশাদের পতন হয় । শুরু হয় সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা । নব্বইয়ের স্বৈরাচারী সরকারকে উৎখাত করে গণতন্ত্রের বিজয়ে তার অগ্রণী ভূমিকার জন্য জাতি হিসেবে আমরা গর্ববোধ করি । কিন্তু অগণতান্ত্রিক অপশক্তি নিষ্ক্রিয় হয়ে বসে নেই । তারা চক্রান্তের কুটীল খেলায় রাষ্ট্রীয় গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে । এই দুঃসময়ের নিষ্ঠুর দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সকল গণতান্ত্রিক শক্তিকে কঠিন সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করবে শহীদ জেহাদের আত্মদান । যে স্বপ্ন ও আশা নিয়ে শহীদ নাজির উদ্দিন জেহাদ সেদিন স্বৈরাচারীর বুলেট নিজের বুকে বরণ করে নিয়েছিলেন , সেই স্বপ্ন পূরণে রাষ্ট্র ও সমাজের সকল স্তরে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করাই হবে আমাদের মূল লক্ষ্য । আর তাতেই শহীদ নাজির উদ্দিন জেহাদের আত্মা শান্তি পাবে ।

রক্তঝরা ওই আন্দোলন ছিল বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনপ্রতিষ্ঠার । শহীদ নাজির উদ্দিন জেহাদ ঐ কর্মসূচিতে পুলিশের ব্যাপক লাঠিচার্জ সত্ত্বেও সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে বীরদর্পে অংশ নেন জেহাদ । একপর্যায়ে পুলিশ নির্বিচারে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করলে জেহাদ গুলিবিদ্ধ হয়ে শাহাদাত বরণ করেন । জেহাদের মৃত্যু স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যায় । ঐ দিন গঠিত হয় সর্বদলীয় ছাত্রঐক্য । তার রক্ত স্রোতের ধারা বেয়ে ওই বছরই সংঘটিত হয় গণঅভ্যুত্থান , পতন হয় স্বৈরশাসক এরশাদের ।

নবগ্রাম কবরস্থানে চির নিন্দ্রায় শায়িত আছেন শহীদ জেহাদ ।

সম্পদনায়- মাহবুব এইচ শাহীন/প্রকাশক ও সম্পাদক/কাগজ২৪

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!