ঈদের কাশ্মীরে স্বস্তিতে সরকার

আন্তর্জাতিক ডেক্স । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

কড়া পাহারায় মোটামুটি শান্তিতে ঈদ পালিত হলেও উৎসবের লেশটুকু ছিল না কাশ্মীরে।

শ্রীনগরের প্রধান মসজিদটি ছাড়া অন্য মসজিদগুলিতে আজ সকালে ঈদের নমাজের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। ঈদগা পরিষ্কার করে জমায়েতের বন্দোবস্তও করেছিল প্রশাসন। ১৪৪ ধারার মধ্যেই কয়েক হাজার মানুষ সেখানে নমাজ পড়ে আসেন। দাঙ্গা-রোধী পোশাক পরা রাইফেলধারী জওয়ানদের নজরদারিতে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা কখনও করমর্দন করে, কখনও আলিঙ্গন করে তাঁদের স্বাগত জানান। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সেই ছবি ও ভিডিও প্রচার করেছে। তবে নমাজিদের অভিব্যক্তির অস্বস্তি নজর এড়ায়নি।

পুরনো শহরের কয়েক জায়গায় নমাজের পরে ছোটখাটো বিক্ষোভ, সড়কে মোতায়েন আধাসেনাদের নিশানা করে পাথর ছোড়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা। কিন্তু কাঁদানে গ্যাস ও ছররা বন্দুকেই তা নিয়ন্ত্রণে এনেছে সিআরপি এবং পুলিশ। শৌরা এলাকায় কয়েকশো মহিলা ভারত-বিরোধী স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ দেখান। সেখানে ফেস্টুন হাতে কিছু শিশু-কিশোরকেও দেখা যায়। তবে জম্মু ও কাশ্মীরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি রোহিত কানসালের কথায়, ‘‘এ তো কাশ্মীরে নতুন নয়!’’ পুলিশকর্তারাও খুশি, বিক্ষোভ থামাতে একটিও বুলেট খরচ করতে হয়নি। স্বস্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকও। ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপের আগে থেকে কাশ্মীরিদের ঘরবন্দি করে বড়সড় বিক্ষোভ এড়ানো গিয়েছিল। ঈদের জন্য নিরাপত্তা ঢিলে হলে বিক্ষোভ মাত্রাছাড়া হতে পারে, এমন আশঙ্কা ছিলই। তবে দিন সাতেকের কার্ফুর ফাঁসে উপত্যকাবাসীর এখন পেটের দায়ই বড় দায় হয়ে উঠেছে। সেই ফাঁস আলগা হতে রসদ সংগ্রহেই ব্যস্ত থেকেছেন মানুষ।

উৎফুল্ল রাজ্যপাল সত্যপাল মালিকও। সাংবাদিকদের বললেন, ‘‘রাহুল গাঁধীকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। বিমান পাঠাব, দেখে যান কাশ্মীরের পরিস্থিতি।’’ জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালও আজ কপ্টার থেকে নজর রাখলেন উপত্যকার নানা এলাকায়। মাটিতে নেমে স্থানীয়দের সঙ্গে কথাও বলেন।

ঈদের নমাজের সময় পেরোতেই ফের কঠোর হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। শ্রীনগরের প্রাণকেন্দ্রে কাঁটাতারের ব্যারিকেড ওঠেনি। মোবাইল ও ইন্টারনেট সংযোগ ফেরেনি। বাইরে থাকা স্বজনদের গলা একটি বার শোনার জন্য সকালেও ‘হেল্পলাইন’ বুথে লম্বা লাইন। ছেলের ‘ঈদ মোবারক’ শুনে কেঁদে ভাসিয়েছেন মা। সংবাদমাধ্যম স্তব্ধ। যে দু-একটি সংবাদপত্র দেখা গিয়েছে, সেগুলিতে বিয়ের অনুষ্ঠান বাতিলেরই বিজ্ঞাপন। তবে দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, ওমর আবদুল্লা ও মেহবুবা মুফতির খবর আজ পেয়েছে কাশ্মীর। ঈদেও দু’জনের বসতবাড়ি ছিল সুনসান। অন্য ঈদে দুই বাড়ি গমগম করত অনুগামী, স্বজনদের সমাগম ও খাতিরদারিতে। গৃহবন্দি ফারুক আবদুল্লার সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি কাউকে। সরকারি অতিথি ভবন ‘হরি নিবাস’-এই রাখা হয়েছে ওমরকে। আর কয়েক কিলোমিটার দূরে চশমে শাহির অতিথি নিবাসে মেহবুবাকে। সরকারি মুখপাত্র জানান, ওমর ও মেহবুবার কাছে দু’জন মৌলবি পাঠানো হয়েছিল নমাজ পড়াতে।

ডোডা, রাজৌরি, রামবন, কিস্তোয়ারেও শান্তিতে ঈদ কেটেছে বলে সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে। জম্মুতে ভিন্ ধর্মের মানুষ মিষ্টিমুখ করান নমাজিদের। জম্মুর ঈদগায় দাঁড়িয়ে ইমাম দীন বলেন, ‘‘৩৭০ নিয়ে ভাবছিই না। চিন্তা কার্ফু কবে উঠবে। এক সপ্তাহ কাশ্মীরে পরিবারের খবর পাইনি!’’ সায় দিলেন জম্মুতে থেকে পড়াশোনা করা তরুণ খুরশিদ দারও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!