একরাম হত্যায় ৩৯ জনের ফাঁসি খালাস ১৬

আইন-আদালত ডেস্ক । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

বহুল আলোচিত ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি একরামুল হক একরাম হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। রায়ে ৩৯ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও ১৬ জনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। ফেনীর জেলা ও দায়রা জজ আমিনুল হক এ রায় ঘোষণা করেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আদেল, পৌর কমিশনার আবদুল্লাহিল মাহমুদ শিবলু, ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদ চৌধুরীও রয়েছেন। মামলার প্রধান আসামি বিএনপি নেতা মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী মিনার ও জেলা যুবলীগ নেতা জিয়াউল আলম মিস্টারসহ ১৬ জনকে খালাস দেওয়া হয়েছে।

২০১৪ সালের ২০ মে প্রকাশ্য দিবালোকে শহরের একাডেমি এলাকায় একরামকে গুলি করে, কুপিয়ে ও গাড়িসহ পুড়িয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। হত্যার ঘটনায় জড়িত অভিযোগে একের পর এক হত্যাকারীরা গ্রেফতার হতে থাকলে উন্মোচিত হয় ঘটনার নেপথ্য কাহিনী। বেরিয়ে আসে সরকারদলীয় অন্তঃকোন্দলের কারণে হত্যা করা হয় একরামকে। হত্যার সঙ্গে রাঘব-বোয়ালদের নাম বেরিয়ে এলে আত্মগোপনে যান হত্যাকারীরা। হত্যার পর ফুঁসে ওঠেন এলাকাবাসী। হরতাল-অবরোধ-বিক্ষোভসহ মাসব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন তারা। একরাম হত্যার ঘটনায় তার বড় ভাই রেজাউল হক জসিম বাদী হয়ে বিএনপি নেতা মাহতাব উদ্দিন আহম্মেদ চৌধুরী মিনারের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৩০-৩৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। হত্যার ১০০ দিন পর ২০১৪ সালের ২৮ আগস্ট মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ ৫৬ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন। আদালত আড়াই মাস পর ওই বছরের ১২ নভেম্বর আলোচিত এ হত্যা মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করে। অভিযোগপত্র দাখিলের ১৬ মাস পর ২০১৭ সালের ১৫ মার্চ আদালত মামলার চার্জ-ফ্রেম গঠন করে। পরে সাক্ষ্য গ্রহণের মাধ্যমে বিচারকাজ শুরু হয়। আদালত মামলার বাদী রেজাউল হক জসিম, একরামের ছোট ভাই এহসানুল হক, নিহতের স্ত্রী তাসমিন আক্তার, গাড়িচালক আবদুল্লাহ আল মামুনসহ ৫০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছে। মামলার অভিযোগপত্রে পুলিশ ৫৯ জনকে সাক্ষী করেছিল। এর মধ্যে সাধারণ সাক্ষী রয়েছেন ২৮ জন। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ১৬ জন হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। হত্যায় ব্যবহৃত একাধিক চাপাতি ও পাঁচটি পিস্তলের মধ্যে উদ্ধার হয়েছে মাত্র দুটি পিস্তল ও কয়েকটি চাপাতি। এ মামলায় বর্তমানে গ্রেফতার আছেন ৩৬ জন। মামলার শুরু থেকে পলাতক রয়েছেন ১০ জন। জামিন নিয়ে পলাতক রয়েছেন নয়জন। রুটি সোহেল নামে একজন জামিনে থাকা অবস্থায় র‌্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন। মামলার আসামিপক্ষের আইনজীবী আহসান কবির বেঙ্গল বলেন, ‘এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাব। আমরা ন্যায়বিচার পাইনি।’ সরকারপক্ষের আইনজীবী হাফেজ আহম্মদ বলেন, ‘রায় প্রত্যাশিত। আমরা সন্তুষ্ট।’ একরামের পরিবারের কাউকে আদালত ভবন এলাকায় পাওয়া যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!