কথা রাখলেন টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায়, ১৩৬ জনকে চাকরি দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন

মো. রাশেদ খান মেনন (রাসেল), টাঙ্গাইল, বিশেষ প্রতিনিধি । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

কথা রাখলেন টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার জনাব সঞ্জিত কুমার রায়, বিপিএম। শতভাগ স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে টাঙ্গাইল জেলায় পুলিশ কনস্টবল নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন। টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায়, বিপিএম মাত্র ১০০/- টাকায় ১৩৬ জনকে পুলিশে চাকরি দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। গত ০১ জুলাই ২০১৯ খ্রিঃ তারিখ এ নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়ে বিভিন্ন ধাপে শতভাগ স্বচ্ছতার সাথে যাচাই বাছাই করে যোগ্য এবং মেধাবী প্রার্থীদের নির্বাচিত করা হয়।

দেশের অন্য জেলার মত টাঙ্গাইলেও পুলিশ কনস্টবল নিয়োগের জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়ার পর প্রায় ৭০০০ (সাত হাজার) নারী ও পুরুষ প্রার্থী লাইনে দাড়ায়। এদের মধ্যে প্রাথমিক বাছাই শেষে শারীরিক মাপ ও শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে ৭৩৩ জন প্রার্থীকে লিখিত পরীক্ষার জন্য মনোনীত করা হয়। গত ০২ জুলাই ২০১৯ খ্রিঃ তারিখ অনুষ্ঠিত লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নে ২৫৩ জন প্রার্থী কৃতকার্য হয়। সবশেষে শিক্ষানবিশ পুলিশ কনস্টবল (টিআরসি) হিসেবে চূড়ান্ত নিয়োগ পান ১৩৬ জন। এদের মধ্যে সাধারণ পুরুষ-৮১ জন, সাধারণ নারী-২৭ জন, পুরুষ মুক্তি-১৫ জন, নারী মুক্তি-০৫ জন, পুলিশ পোষ্য পুরুষ-০৫ জন, পুলিশ পোষ্য নারী-০১ জন ও ক্ষুদ্র নৃ গোষ্টি পুরুষ-০২ জন।

নিয়োগ পাওয়া গোপালপুর থানার রুনা খাতুন একজন ভ্যান চালকের মেয়ে। তার পিতা মোঃ রফিকুল ইসলাম গোপালপুর থানাধীন সূতী বলাটা গ্রামের বাসিন্দা। সে ভ্যান চালিয়ে এবং মাঝে মধ্যে স্থানীয় বাজারে কলা বিক্রয় করে জীবিকা নির্বাহ করে। রুনার মা অভিরন বেগম পূর্বে অন্যের বাসায় কাজ করতেন। বর্তমানে কিছুটা অসুস্থ্য হওয়ায় এখন কাজ করতে পারেন না। রুনার পিতা-মাতা অতি কষ্টে সংসার চালিয়ে স্থানীয়দের আর্থিক সহায়তায় তাকে পড়াশোনা করাতেন। রুনার একমাত্র ছোট ভাই রবিউল আওয়াল (১১) স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্র।

রুনা জানায়১০০/- টাকায় যে তার চাকরি হবে তা সে জীবনে কল্পনাও করতে পারেনি। ভ্যান চালকের মেয়ে বলে টাকার অভাবে লেখাপড়া করা তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। চাকরিটা তার খুব দরকার ছিল। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের খবর পেয়ে স্থানীয় ফটোকপির দোকান থেকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি সংগ্রহ করে ব্যাংক চালানসহ মোট ১১০/- টাকা খরচ করে। সে তার ছোট ভাইয়ের লেখাপড়ার জন্য ১,০০০/- টাকা বেতনে কেজি স্কুলে চাকরি করত। সে পরিবারের বড় সন্তান হওয়ায় এবং পিতা-মাতা অসুস্থ হওয়ায় পরিবারের দেখা শোনা ও ছোট ভাইয়ের লেখাপড়ার দায়িত্ব নিতে চায় সে। সে সৎভাবে চাকরি করে দেশ ও জনগণের সেবা করতে চায়। ১১০/- টাকায় চাকরি পেয়ে সে পুলিশ সুপার মহোদয়কে ধন্যবাদ জানান এবং কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল জেলার পুলিশ সুপার জনাব সঞ্জিত কুমার রায়, বিপিএম বলেন,পুলিশ কনস্টবল নিয়োগের প্রায় এক মাস পূর্ব থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা, লিফলেট বিতরণ এবং জেলার বিভিন্ন স্থানে ব্যানার টানানো হয়েছে। এবার আর্থিক লেনদেনসহ সব অনিয়ম ও সুপারিশ পরিহার করে সুষ্ঠুভাবে পুলিশ কনস্টবল নিয়োগের বিষয়টি সম্পন্ন করতে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়। পুলিশ কনস্টবল ভর্তি নিয়ে কড়া নির্দেশনা ছিল মাননীয় আইজিপি মহোদয় এবং ডিআইজি, ঢাকা রেঞ্জ মহোদয়ের। ভর্তি শুরুর আগেই ঘোষণা দিয়েছিলাম “যোগ্যতা আছে যার চাকরি হবে তার, শতভাগ মেধা ও যোগ্যতা ভিত্তিক নিয়োগই টাঙ্গাইল জেলা পুলিশের অঙ্গীকার”।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!