গরিবের ভাসমান হোটেলে ৮০ টাকায় রাত

অনলাইন ডেক্স । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

ভাসমান হোটেলে মাত্র ৮০ টাকায় রাত পার করছেন অনেকে। রাজধানীর বুকে স্বল্প আয়ের ব্যক্তিরা পুরান ঢাকার ওয়াইজঘাটের বুড়িগঙ্গা নদীতে চারটি ভাসমান হোটেলের অস্থায়ী বাসিন্দা। অনেকে বলছেন, জাদুর শহর ঢাকার আনাচে-কানাচে আবাসিক হোটেলের অভাব নেই। আগে এগুলো ওয়াইজঘাটে থাকলেও বর্তমান অবস্থান নবাববাড়িসংলগ্ন বাদামতলী মসজিদ ঘাটে।

১৯৭৬ সালে ঢাকায় প্রথম নির্মিত হয় ভাসমান ‘উজালা বোর্ডিং’। পরে আরও তিনটি হোটেল ও বোর্ডিং নির্মিত হয়। তবে হোটেলগুলো নদীতে হলেও সাধারণত ভেসে বেড়ায় না। রাত ১২টা পর্যন্ত এ হোটেলগুলোয় প্রবেশ করা যায়। পরদিন বেলা ১১টার মধ্যে ছেড়ে দিতে হয়। একেকটিতে রাত কাটানোর জন্য দিতে হয় একেক রকম ভাড়া। ঢাকায় এর চেয়ে সস্তা আবাসিক হোটেল আর নেই। ওয়াইজঘাটের এ ভাসমান হোটেলের সিঙ্গেল বা একক কেবিনের ভাড়া মোটে ৮০ টাকা। ডাবল বা দ্বৈত কেবিনের জন্য গুনতে হয় ১৫০ টাকা। প্রতিটি কক্ষেই আছে একটি খাট, বালিশ, কাঁথা ও ফ্যান। নিম্ন আয়ের মানুষের রাতযাপনে উপযোগী একটি স্থান এ ভাসমান হোটেল। সরেজমিন গিয়ে পাওয়া গেছে এসব তথ্য। বুড়িগঙ্গার ওয়াইজঘাটে দেখা গেছে চারটি ভাসমান হোটেল এখনো চালু আছে। এগুলো হলো ‘উমা উজালা’, ‘বুড়িগঙ্গা’, ‘শরীয়তপুর’ ও ‘ফরিদপুর মুসলিম’ হোটেল। নিম্ন আয়ের মানুষের রাতযাপনে এগুলো বেশ উপযোগী। বছর দশেক আগে বন্ধ হয়ে যায় এমন আরেক হোটেল ‘নাজমা’। আশির দশকে ভাসমান হোটেলগুলো বেশ জমজমাট ছিল। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা হিন্দু ব্যবসায়ীদের অনেকে রাতে থাকার জন্য বেছে নিতেন এগুলো। তবে করোনাভাইরাসের কারণে অনেকে গ্রামে চলে যাওয়ায় হোটেল ব্যবসায় কিছুটা মন্দা যাচ্ছে। ভাসমান হোটেলে এমন মানুষও পাওয়া যায় যারা প্রায় ৪০ বছর ধরে এভাবেই বসবাস করে আসছেন। ফরিদপুর হোটেলে এক বৃদ্ধ প্রায় ৪০ বছর ধরে আছেন। তার গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের পালং উপজেলার বিনোদপুর গ্রামে। মুক্তিযুদ্ধের পর কাজের সন্ধানে ঢাকায় আসেন তিনি। কাজ না পেয়ে সদরঘাট টার্মিনালে পান, বিড়ি-সিগারেট বিক্রি করে জীবন চালাচ্ছেন। এর পর থেকে এ হোটেলের নিয়মিত বাসিন্দা হয়ে যান। ফরিদপুর মুসলিম হোটেলের ম্যানেজার মোহাম্মদ আলীর গ্রামের বাড়ি ফরিদপুর। তাই ফরিদপুরের নামানুসারেই এর নাম ফরিদপুর মুসলিম হোটেল। তিনি জানান, ‘দুই বছর আগে এখানে থাকতে ৬০ টাকা দিতে হতো। বর্তমানে ৮০ টাকা দিতে হয়। আশির দশকে ওয়াইজঘাটের এসব ভাসমান হোটেলে খাবারের বিল পরিশোধ করলেই রাতে থাকা যেত। এসব হোটেলে থাকা ও মালামাল রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। ফলে যেসব লোক দিনে হকারি করে জীবন নির্বাহ করেন তারা রাতে তাদের মালামাল রেখে শান্তিতে ঘুমাতে পারেন। এসব হোটেলে ফেরিওয়ালা, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, হকার, ফল ব্যবসায়ীরাই বেশি থাকেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!