গল্পের নূরজাহান ভিন্ন প্রেক্ষাপট ও ঘোলা চোখ

গল্পের নূরজাহান ভিন্ন প্রেক্ষাপট ও ঘোলা চোখ
– ডা. আওলাদ হোসেন

নূরজাহান গল্পের নামটিই শুধু মনে আছে কাহিনী মনে নেই তবে একটি কথা স্পষ্ট যে নায়িকা নূরজাহানকে যখন ভিন পুরুষের সংগে বিয়ে দেয়া হয় এবং যথারীতি মুক্তি দেয়া হয় নূরজাহান অত্যন্ত আনন্দিত ও আহ্লাদিত হয়ে পূর্ব স্বামীর নিকট ফিরে আসে তখন নায়ক ১ রাত্রির বিচ্ছেদের কারনেই যৌবনের সেই দৌর্দন্ড প্রতাপকে হারিয়ে খোঁচা খোঁচা দাড়ি গোফ জালিয়ে বা গজিয়ে মাথায় উসখু খুসখু শ্বেত শুভ্র চুলে নত দেহে নয়ক মুখ তুলে চাইতে পারছিল না, শরীর কাঁপছিল আর মনে মনে বিড় বিড় করে কি যেন বলছিল। নায়িকা নূরজাহান বলছিল দেখ আমি আবার ফিরে এসেছি শুধু মাত্র ১টি রাত্রিইতো আমি আগের মতই আছি, আমার রূপ যৌবন জৌলুস ভরা যমুনা বা পদ্মার মতই টইটুম্বুর হয়ে দুকুল ভাসিয়ে প্লাবিত করে খরস্রোতা নদী বিপুল গর্জনে পার ভেঙ্গে সমুদ্রে গিয়ে মিশছে। তুমি একবার আমার তনু দেহের ক্ষীণ ক্ষিপ্রতা স্পর্শ করা মাত্রই বুঝতে পারবে তোমারও ধমনীতে বইছে পূর্ব পুরুষের শৌর্য বীর্যের ধারা প্রবাহমান গৌরবোজ্জ্বল টগবগে সিংহ সাবকের চাঞ্চল্যে ভরা রক্ত প্রবাহ পূর্ব ও পশ্চিমের মিলন মেলায়। চেয়ে দেখ সূর্য এখনও ডুবেনি। পাখিরা নীড়ে ফিরেনি। অন্ধকার হতে আরও অনেক বাকী। নূরজাহান এর পূর্বোক্ত স্বামী তখনও চক্ষু তুলে তাকাতে পারছে না বলতে পারছে না প্রিয়া তুমি ফিরে এসেছ আমি আবার যৌবন ফিরে পাবো। নূরজাহান (আলোকিত পৃথিবী)’র স্বামীর চক্ষে ঘোলা জল, নূরজাহানের দিকে তাকিয়ে ঘোলা দেখছে, এই মহিলাকে তো আমি চাইনি, সেতো আমার হারানো নূরজাহান নয়। গল্পের লেখক তার পর নূরজাহানের কি হলো তা আর হয়তো লেখার প্রয়োজন মনে করেনি কারণ হতে পারে ছোট গল্পের পরিনতিই এই শেষ হয়েও হোলনা শেষ অথচ যেটুকু তুলে ধরা প্রয়োজন ঠিক ততটুকুই তুলে ধরা হয়েছে অধিক আর কিছু লিখে লাভ নেই। অনেক পাঠকই বলবেন এতো একটি সাধারণ গল্প আর এরূপ ঘটনা মুসলমান সমাজে অহরহ হয়েই থাকে আর আল কুরআন পাঠ না করার কারণে এই অপবাদটি অনর্গল চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে যার হুকুম আল্লাহ পাক দেননি। উপরন্ত এই গল্পে গ্রাম্য টাউট নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য দূর্ণাম রটিয়ে প্রচার প্রমান করে ছেরেছে যা নায়িকাকে মুক্তি দেয়া হয়েছে এবং ভিন পুরুষের সংগে ১ রাত্রের জন্য বিয়ে দিতেই হবে এবং গ্রাম্য শালিসে তাই করাও হয়েছে এবং পরে মুক্তিও দেয়া হয়েছে, অসুবিধা কোথায়? অসুবিধা হচ্ছে যা আল কুরআনে আদেশ নেই, বলির পাঠা করা হয়েছে অজ্ঞতাকে, স্বার্থ সিদ্ধির জন্যে। আমার লেখা এখানেই শেষ, জীবন বড় কঠিন। স্বাধীন, স্বাধীনতা ইত্যাদি নিয়ে রাজধানীর কলামিষ্টরাই ভয়ের চোটে লেখা শেষ দেন পাঠকদের কে বুঝে নেয়ার জন্য অর্থাৎ লেখক আর লেখতে সাহস পান নাই। এটাই বাস্তব। যখন আমার আপন জন, বন্ধুবান্ধব পরিচিত অপরিচিত জন লেবাছ পাল্টিয়ে সম্মুখে এসে একগাল হাসি দিয়ে উপস্থিত হয় তখন সেই হাসিটির মত চেয়ে থাকার মত ধূসর ও ফিকে হয়ে আসে এবং এই গল্পের সংগে তার কোন মিল খুঁজে পাওয়া যায় কিনা, নীল আকাশের বুকে চিলেরা উড়ে উড়ে ঠিকানা খুঁজে পেতে বা ঠাঁই নিতে চায় কিনা আর ক্ষুধিত পাষানের সেই তফাৎ যাও, তফাৎ যাও বলে মেহের আলীর চিৎকার ধ্বনি শুনতে পাওয়া যায়কি না ইত্যাদির সমীকরণ মেলাতে পারা যায় কিনা অথবা নূরজাহানকে ফিরে পেয়েও বলেকিনা তোমাকে আর চাইনা আমার এ চক্ষু ঘোলা হয়ে এসেছে আমি ঘোলা দেখছি। এটা ইমোশন, এর কোন মূল্য নেই, কোন মূল্যও আশা করা যায়না। বাস্তববাদীরা বলতে পারে ছিন্ন পাতায় সাজাই তরনী কিন্তু বাস্তব বড় কঠিন এবং নির্মম। ৯ মাসের গর্ভবতীরা মিয়ানমার পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে এসে গর্ভের সন্তানেক সুরক্ষিত স্থানে আশ্রয় নেয় এটা যেমন বাস্তব, আল্লাহর হুকুমও তেমনই কঠিন, কঠোর এবং বাস্তব। দীর্ঘ দিন ধরে আল-কুরআনের আলোকে অনেক লেখাই ইনতিজারে লিখে শেষ দিয়েছি, কলামিষ্টদের মতো বলতে ইচ্ছে করে আপনারা যারা চিন্তাবিদ তারা বুঝে নিবেন এবং ক্ষমা করবেন ইত্যাদি নাটক বা আমার লেখাটি। একজন খ্যাত বাঙালি সাহিত্যিকের ক্ষুদ্র এই লেখা গল্পকে উপজীব্য করে যা ভিন্ন প্রেক্ষিত নাম দিয়ে ভবিষ্যতের জন্য লিখে রাখা কারণ বর্তমান ভবিষ্যৎকে বুঝতে পারে না, ভবিষ্যৎ বুঝতে পারে বিগত ইতিহাস বা স্মৃতি চিহ্ন। এখানে ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনশিপ টেনে আনা যায় তা আমার কাম্য নয়। আমি ব্যাসিককে তুলে ধরার জন্য লিখেছি। এতে কারো কোন লাভ হয়েছে কি না বলতে পারবনা। তবে মৃত্যুর আগ মূহুর্তে যদি কেউ সত্যের সন্ধান পান আর ধনসম্পদ সব আল্লাহর নামে ওয়াকফ করে দিয়ে পরিত্রানের পথ খুঁজেন, অথবা মক্কা মদিনায় ভ্রমণ করেন, তাতে ব্যক্তিগত লাভ হতে পারে কিন্তু রাষ্ট্রের কোন লাভ হবে না। কারণ ঠাঁই নাই ঠাঁই ছোট সে তরী। আল্লাহ পাক রসূলে পাক (সা:) কে মক্কা থেকে জেরুজালেম এবং উর্ধ্বাকাশ ভ্রমণ করান এক রাত্রে এবং তাঁর নিদর্শন সমূহ দেখান কিন্তু আল্লাহ পাক দেখা দেননি এবং রাসূলে পাক (সা:) ও দেখতে চান নি। তাহলে এই ভ্রমণের অর্থ কি? এর কারণ হচ্ছে ১। একটি বস্তুবাদের অবয়বে ঢাকা অপর জন অদৃশ্য (গায়েব)। দেখতে হলে একটি অপরটিতে কনভার্ট হতে হবে। যেমন আল্লাহকে মানুষের রূপ ধারণ করতে হবে যা অসম্ভব এবং হলে আল্লাহর অদৃশ্যের বৈশিষ্ট্য থাকবে না। রাসূলকে (সা:) আল্লাহর অদৃশ্যরূপ ধারণ করতে হতো কিন্তু তা সম্ভব না, তাহলে স্রষ্টা ও সৃষ্টি একাকার হয়ে যেতো এবং তিনি যে বর্ণনা দিতেন তা বস্তুবাদী মানুষের পক্ষে ধারণ করা সম্ভব হতো না। আমি অপর একটি লেখায় লিখেছি যে, যা দৃশ্যমান তাই সৃষ্ট। অতএব আল্লাহকে যতই দেখতে চাই ততই তা অদৃশ্যমান হয়ে যায়। এর অধিক জানতে চাওয়া নিষেধ। এটা ব্যাসিক জ্ঞান, যা মুসলমানেরা জানে না, বুঝেনা, মানেনা। তারাও ভিন্ন জাতির মতো জীবন যাপন করে। যা বস্তুবাদী এবং সত্যের লেশ মাত্রও নেই। দ্বিতীয় ব্যাসিক আইডিয়া হচ্ছে আল কোরআনে বলা হয়েছে মানুষকে আমি পুনরায় জীবীত করবো। এটাকে আমরা জানি কিন্তু মনে প্রাণে বা কার্যক্ষেত্রে বিশ্বাস করতে পারিনা। এর কারণ হচ্ছে শয়তান বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে আমাদেরকে পথভ্রষ্ঠ করে রেখেছে। এই শক্তি আল্লাহপাক তাকে দিয়েছেন। অতএব দেখা যায় যে কোরআনের শিক্ষাই একমাত্র পথ সেখানে বিরাট সৃষ্টি কর্মের মাঝে কোন ক্ষুদ্র প্রাণী যদি আল্লাহ পাককে অস্বীকার করে তাতে চন্দ্র সূর্যের উদয় অস্তের কোন নিয়মের ব্যত্যয় ঘটবে না। আরও অনেক প্রশ্ন আছে যার উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়। আমরা যা হারিয়েছি, অস্বীকার করছি, মত্যুকে কোন ক্রমেই কঠিন দিনকে স্মরণ করিয়ে দেয় ভাবতে রাজি নই। মৃতকে পুনরায় জীবিত করা হবেই এই কথাটি বিশ্বাস করানো খুবই কঠিন কাজ। আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি যাতে মৃত্যুর পর জীবিত হওয়া কথাটি হারিয়ে না যায় যে কোন পাপ করতে অন্তত এই সত্যটি সম্মুখে ভেসে ওঠে যে চন্দ্র সূর্য যেমন সত্য তেমনি মৃত্যুর পর পুনরায় ঘুম থেকে জেগে উঠানো হবে এবং বলা হবে এটাই আল্লাহর ওয়াদা এবং রাসূলগণের সত্য বাদিতা। আরও সাবধান করে দেয়া হয়েছে জিনার কাছেও যাওয়া যাবে না, অথচ জগতে যত অপকর্ম এই আদেশটি না মানার জন্য, তার পর এতিমের মাল আত্মসাত করা যাবে না, মাপে কম দেয়া যাবে না, এটা সর্বত্র প্রচলিত মাপে কম দেয়া যার পরিণতি ভাল হবে না। আরও আদেশ আছে সুদ, ঘুষ, গিবত ইত্যাদিতে কঠোরতা অবলম্বন করতে হবে, মুনাফেকি করা যাবে না, দাসদের যথাযথ মর্যাদা দিতে হবে, স্ত্রীলোকের উপর অন্যায় করা যাবে না সর্বোপরি আল্লাহর সঙ্গে শেরেকী করা যাবে না। আল্লাহর নাম শুধু কবরে শুইয়ে দেয়ার সময় “মিনহা খালাকনাকুম ওয়াফিহা নুইদুকুম ওয়ামিনহা নুখরেজুকুম তারাতান উখরা” বললেই দায়িত্ব পালন করা শেষ হবে না বরং অনন্ত জীবন ও যৌবনের দারপ্রান্তে পৌছে দেয়া হলো। পৃথিবীর প্রতিটি কাজ যেমন নিয়ম নীতির মধ্য দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে আমরা যদিও প্রাকৃতিক বলে সমস্ত অপকর্মকে ঢাকা দিতে চাই কিন্তু এই প্রকৃতির ও পরিচালক রয়েছেন যিনি সর্বত্র বিরাজিত এবং নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে পৃথিবী ধ্বংস সাধন করবেন এবং সেদিন প্রত্যেকটি বিষয়ের উপর প্রশ্ন করা হবে। দোষত্রুটি, ভালোমন্দ বর্তমান বিজ্ঞানের বদৌলতে সব কিছুর রেকর্ড, ভিডিও, ইন্টারনেট ইত্যাদির মাধ্যমে সবকিছু দেখা সম্ভব হচ্ছে, আল্লাহর বিধান আমরাই বাস্তবায়িত হতে দেখছি। আরও ২/৪ হাজার বছর পরে আল্লাহর প্রতিটি ওয়াদা দুনিয়াতেই ভবিষ্যত প্রযন্মেরা দেখে যেতে পারবে, আমাদের চোখ ঘোলা হয়ে এলেও পরকালে এই দৃষ্টিশক্তি প্রখর করে দেয়া হবে, কিভাবে সম্ভব তাও হয়তো বিজ্ঞান দেখিয়ে দেবে যেভাবে আবিস্কার বাড়ছে। কালের চক্রে দুই/চার হাজার বছর কিছুই না সেকেন্ডের ব্যাপার মাত্র।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!