চমকপ্রদ ও ব্যয়বহুল ২০১গম্বুজ বিশিষ্ট জামে মসজিদ

 

মো: সেলিম হোসেন

টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলাধীন পাথালিয়া’য় নির্মিত হচ্ছে বিশ্বের দ্বিতীয় উচ্চতম মিনারযুক্ত, সর্বাধিক সংখ্যক গম্বুজ বিশিষ্ট  চমকপ্রদ ও ব্যয়বহুল ২০১গম্বুজ বিশিষ্ট জামে মসজিদ কমপ্লেক্স । বিশ্বের বুকে আলোড়ন সৃষ্টিকারি সৌন্দর্যময় কারুকাজে সুসজ্জিত চমকপ্রদ মহান আল্লাহ্‌’র এ মহিমান্বিত ঘরটি বাংলার ইতিহাসের পাতায় অনন্তকালের শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখতে এটি নির্মিত হচ্ছে  উপজেলার নগদাশিমলা ইউনিয়নের দক্ষিণ পাথালিয়া গ্রামে। টাঙ্গাইল জেলা শহর থেকে ৩৫কিলোমিটার দূরে ও গোপালপুর উপজেলা থেকে প্রায় ১০কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে নৈসর্গিক প্রাকৃতিক শোভামন্ডিত ছায়া সুনিবির পরিবেশ ও মায়া-মমতায় ঘেরা ছোট্র একটি গ্রাম ‘পাথালিয়া’। এ গ্রামেই ঝিনাই নদীর তীরে নির্মিত হচ্ছে পৃথিবীর মানচিত্রে বিরল সৃষ্টির কালজয়ী বাংলার ঐতিহাসিক “২০১গম্বুজ বিশিষ্ট দক্ষিণ পাথালিয়া জামে মসজিদ কমপ্লেক্স”। পৃথিবীর বুকে সুন্দরতম, সর্বাধিক আলোচিত ও আকর্ষণীয় বৃহৎ মসজিদ গুলোর মধ্যে এটি সর্বোচ্চ রেকর্ড সৃষ্টিকারী আলোচিত ঐতিহাসিক মসজিদ হিসেবে সুপরিচিতি লাভ করবে। মহান আল্লাহর এ স্বর্গীয় ঘরটি বাংলাদেশকে বিশ্ব মানচিত্রে নতুন করে সুপরিচিত করে তুলতে সহায়ক হবে এবং প্রচুর দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আগমন ঘটবে বলে মনে করা হচ্ছে ।

mosque6

বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ রফিকুল ইসলাম কল্যাণ ট্রাস্ট এর উদ্যোগে নির্মাণাধীন এ মসজিদের পাশেই আজান প্রচারের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ইটের তৈরী “বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃরফিকুল ইসলাম মিনার”। যার উচ্চতা হবে ৪৫১ ফুট বা ৫৭ তলার সমপরিমাণ। ইতিহাস থেকে জানা যায়, বর্তমানে বিশ্বের সবচাইতে উঁচু ইটের তৈরি মিনারটি হচ্ছে ভারতের দিল্লিতে অবস্থিত কুতুব মিনার। যার উচ্চতা ৭৩ মিটার বা ২৪০ফুট এবং এর সিঁড়ি রয়েছে ৩৭৯টি। সুলতান মোহাম্মদ ঘুড়ির সেনাপতি ও প্রতিনিধি কুতুবউদ্দিন আইবেক ১১৯২ খ্রিস্টাব্দে চৌহান রাজা পৃথ্বিরাজকে তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধে পরাজিত করেন এবং বিজয় স্মরণীয় করে রাখতে এ মিনার তৈরি করেছিলেন। এটি তাজমহলের চেয়েও বেশি পর্যটক পরিদর্শন করেন। আর বিশ্বের সর্বোচ্চ মিনারটি মরক্কোর কাসাব্লাংকায় দ্বিতীয় হাসান মসজিদে অবস্থিত। এর উচ্চতা ২১০ মিটার (৬৮৯ ফুট) বা ৬০তলা ভবনের সমান।  তবে এটি ইটের তৈরি নয়।

mosque2

মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম কল্যাণ ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের ভাই ‘নবগ্রাম দাখিল মাদ্রাসা’র সহকারী শিক্ষক মো. হুমায়ুন কবির শুরু থেকে সার্বক্ষণিক এ মসজিদের দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, নিজেদের তত্বাবধানে নির্মাণাধীন অবস্থাতেই বৃহৎ এ মসজিদে ইতিমধ্যে বছরের দুই ঈদের নামাজ আদায়, শবে বরাত ও শবে কদর উপলক্ষ্যে ওয়াজ ও দোয়া মাহফিল এর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রায় ১৫বিঘা জমির উপর নির্মাণাধীন এ কমপ্লেক্সে আরো থাকবে অত্যাধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা। মিহরাবের ২পাশে থাকবে লাশ রাখার জন্য হিমাগার। পূর্ণ শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত মসজিদটিতে ফ্যান লাগানো হবে সহস্রাধিক। মোট গম্বুজের সংখ্যা হবে ২০১টি। মসজিদের ছাদের মাঝখানে থাকবে ৮১ফুট উচ্চতার ১টি বড় গম্বুজ এবং চারদিকে থাকবে ১৭ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট ২০০টি গম্বুজ। মূল মসজিদের চার কোনায় ১০১ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট চারটি মিনার থাকবে। পাশাপাশি আরও ৪টি মিনার থাকবে ৮১ফুট করে উচ্চতা বিশিষ্ট। ১৪৪ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৪৪ফুট প্রস্থের দ্বিতল বিশিষ্ট মসজিদটিতে একসঙ্গে প্রায় ১৫ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। মসজিদের দেয়ালের টাইলসে অঙ্কিত থাকবে পূর্ণ পবিত্র কোরআন শরীফ। যে কেউ বসে বা দাঁড়িয়ে দেয়ালের অঙ্কিত কোরআন শরীফ পড়তে পারবেন। আর এ মসজিদটির প্রধান দরজা তৈরিতে ব্যবহার করা হবে ৫০ মন পিতল।  এর উত্তর ও দক্ষিণ পাশে নির্মাণ করা হচ্ছে আলাদা আলাদা ৫তলা বিশিষ্ট ভবন। সেখানে থাকবে দুঃস্থ মহিলাদের জন্য বিনামূল্যের হাসপাতাল, এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, দুঃস্থ মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারের পূণর্বাসনের ব্যবস্থা। উত্তর পশ্চিম পাশে নির্মিত ভবনে দেশি-বিদেশি মেহমানদের থাকা-খাওয়ার সু-ব্যবস্থা থাকবে। পশ্চিমে প্রবাহিত ঝিনাই নদী থেকে মসজিদ পর্যন্ত থাকবে সৌন্দর্যবর্ধন সিঁড়ি এবং পারাপারের জন্য নদীর উপর নির্মাণ করা হবে একটি সেতু । চারপাশে করা হবে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের বাগান।

হুমায়ুন কবীর আরো জানান, শহর থেকে খানিকটা দূরে মা-মাটি আর মানুষের নিঃস্বার্থ ভালোবাসায় সিক্ত পাথালিয়া গ্রামের ঝিনাই নদীর তীরে অবস্থিত মনোরম পরিবেশে সুদৃশ্য এ মসজিদটির নির্মাণ খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা। মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসের ১৩ তারিখে। কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন পাথালিয়া গ্রামের সুযোগ্য কৃতি সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের মা রিজিয়া খাতুন। প্রায় ৪৫০ শতাংশ জায়গায় নির্মাণাধীন মসজিদের কাজ ইতোমধ্যেই অধিকাংশ শেষ হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, ২০১৬ সালের মধ্যে মসজিদের কাজ শেষ হবে এবং ২০১৭ সালের প্রথম দিকে পবিত্র কাবা শরিফের ইমামের ইমামতির মাধ্যমে মসজিদের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে।

নির্মাতাদের প্রত্যাশা, শৈল্পিক স্থাপনা হিসেবে এ মসজিদটি অনন্য বৈশিষ্ট্যের এক প্রতীক হয়ে দাঁড়াবে। মসজিদের দেশ বাংলাদেশকে বিশ্বে পরিচয় করিয়ে দিবে নতুন করে। ইতোমধ্যেই নির্মাণাধীন অবস্থায় মসজিদটি দেশি-বিদেশি পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অসংখ্য পর্যটক নির্মাণ কাজ দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন। এলাকার লোকজনের মধ্যে দেখা দিয়েছে প্রাণ-চঞ্চলতা।
এ মসজিদ তৈরির ব্যাপারে মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম কল্যাণ ট্রাষ্টের চেয়ারম্যান বাংলাদেশ ব্যাংক এমপ্লয়ীজ ফেডারেশনের সভাপতি (সিবিএ) বীর মুক্তযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বলেন, দেশের প্রয়োজনে ১৯৭১ সালে হানাদার বাহিনী মুক্ত করতে যুদ্ধ করেছি, পরাধীনতা থেকে মুক্ত করে এনেছি আমার প্রিয় মাতৃভুমি বাংলাদেশকে । দেশের ও মানবতার কল্যাণের জন্য সাধ্যমত সেই তরুণ বয়স থেকেই কাজ করে এসেছি, দীর্ঘ ৪৩ বৎসর যাবৎ সততার সহিত জনতা ব্যাংক লিমিটেড এর নির্বাচিত সিবিএ প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব পালন করে আসতেছি, এই বয়সে এসে আমার নতুন করে চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই, বাকী জীবনটুকু মহান আল্লাহতায়ালা ও মানব সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে চাই । আমি চাই না আমার মৃত্যুর সময় আমার ব্যাংক একাউন্টে একটি টাকাও জমা থাকুক, এ লক্ষ্যে মহান আল্লাহ্ পাকের নামে দুঃসাহসী উদ্যেগ হাতে নিয়েছি । সমস্ত প্রজেক্ট নির্মাণ কাজ শেষ করতে এবং সঠিকভাবে পরিচালনা করতে প্রায় ১০০ কোটি বাংলাদেশী টাকার দরকার হবে, আমার সাধ্য অনুযায়ী কল্যাণ ট্রাষ্টের মাধ্যমে সমস্ত প্রজেক্টের ৪০% এবং মসজিদের কাজ ৮০% সম্পন্ন করেছি, এই পর্যায়ে এসে আমার একার পক্ষে সকল কাজ সম্পন্ন করতে কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে, আমি দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করি মসজিদ আল্লাহর ঘর নির্মাণ করা সহ মানব কল্যানের জন্য সকলেই সহযোগিতার হাতকে প্রসারিত করে উক্ত প্রজেক্ট সম্পন্ন করতে এগিয়ে আসবেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম কল্যাণ ট্রাস্টের উদ্যেগে উক্ত প্রজেক্ট শুরু করলেও ইহা সম্পন্ন করার দায়িত্ব মুসলিম বিশ্বের সকল মানুষের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!