জিলহজ মাসের বিশেষ আমল

ইসলামি ডেস্কঃ মানুষের সৃষ্টি যেহেতু ইবাদত ও আমলের জন্য, তাই মুসলমানের জীবনকাঠামো বিভিন্ন ইবাদতের ফ্রেমে বাঁধাই করা হয়েছে। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ। সাপ্তাহিক জুমার নামাজ। মাসের মধ্যবর্তী তিন দিন নফল রোজা। মাসব্যাপী বার্ষিক রমজানের রোজা। এরপর আসে জিলহজের প্রথম দশক। হাদিসের ভাষ্যমতে, জিলহজের প্রথম ১০ দিন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম দিন। তাই এ দিনগুলোতে ইবাদত ও আমলের প্রতি সবিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

কোরআনের আলোকে জিলহজের ১০ দিন

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘(হে ইব্রাহিম!) তুমি মানুষের মধ্যে হজের ঘোষণা প্রচার করো। তারা দূর-দূরান্ত থেকে তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং সব ধরনের কৃশকায় উটের পিঠে সওয়ার হয়ে। যাতে তারা তাদের কল্যাণের স্থানগুলোতে পৌঁছতে পারে এবং যাতে নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে, তাঁর দেওয়া চতুষ্পদ জন্তু জবেহ করার সময়।’ (সুরা : হজ, আয়াত : ২৭, ২৮) ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, ‘এ আয়াতে নির্দিষ্ট দিন থেকে জিলহজের প্রথম দশকই উদ্দেশ্য। (তাফসিরে ইবনে কাসির : তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা-২৩৯) জিলহজের প্রথম দশকের মর্যাদা, মাহাত্ম্য ও শ্রেষ্ঠত্ব বোঝাতে আল্লাহ তাআলা এ দিনগুলোর কসম খেয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘শপথ প্রভাতের। শপথ দশ রাতের।’ (সুরা : ফাজর, আয়াত : ১-২) সব তাফসিরবিদের মতে এখানে ‘দশ রাত’ বলতে জিলহজের প্রথম দশকই বোঝানো হয়েছে। (তাফসিরে ইবনে কাসির, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা : ৫৩৫)

হাদিসের আলোকে জিলহজের ফজিলত

হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে জিলহজের প্রথম দশকের নেক আমলের চেয়ে অন্য কোনো দিনের আমলই উত্তম নয়।’ সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও এই দশকের আমলের চেয়ে উত্তম নয়?’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও এর চেয়ে উত্তম নয়, তবে ওই ব্যক্তি ছাড়া, যে তার সর্বস্ব নিয়ে জিহাদে অংশগ্রহণ করল এবং কিছুই নিয়ে ফিরে এলো না।’ (বুখারি, হাদিস : ৯৬৯) অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহর কাছে জিলহজের প্রথম দশকের নেক আমলের চেয়ে অধিক প্রিয় অন্য কোনো দিনের আমল নেই। এ দিনগুলোর এক দিনের রোজা এক বছরের রোজার সমতুল্য এবং এক রাতের ইবাদত শবেকদরের ইবাদততুল্য।’ (তিরমিজি : ১/১৫৮)

জিলহজের প্রথম ১০ দিনের আমল

জিলহজের চাঁদ উদিত হওয়ার পরপরই মুসলিম উম্মাহর জন্য কিছু আমল করা সুন্নত। আমলগুলো হলো—‘তাহলিল তথা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’ অধিক হারে পড়া। তাকবির পড়া। বেশি বেশি জিকির করা। প্রথম আট দিন রোজা রাখা। বিশেষত আরাফার দিন রোজা রাখা। কিয়ামুল লাইল তথা রাত্রি জাগরণ করা। কারণ প্রতিটি রাতের বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা শবেকদরের ইবাদতের সওয়াব দেবেন।

চুল, নখ ইত্যাদি না কাটা। সদকা তথা দান-খয়রাত করা। তাওবা করা। বিশেষ করে আরাফার দিন আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। কেননা সেদিন আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের এত বেশি ক্ষমা করেন, যা বছরের অন্য কোনো দিন করেন না। ১০ জিলহজ কোরবানি করা। যদি কোনো কারণে সেদিন কোরবানি করা সম্ভব না হয়, তাহলে ১১ ও ১২তম তারিখ সূর্যাস্তের আগেই কোরবানি করা যাবে। উল্লেখ্য, ওপরে বর্ণিত আমলগুলোর মধ্যে জিলহজের চাঁদ উদিত হওয়ার পরপরই তিনটি কাজ করা সুন্নত।

এক. কোরবানির পশু জবেহ না করা পর্যন্ত নখ, চুল ইত্যাদি না কাটা।

দুই. ১০ তারিখের আগ পর্যন্ত রোজা রাখা। তিন. রাতে যথাসম্ভব জিকির ইত্যাদি নফল ইবাদত করা। তিনটি কাজ করা ওয়াজিব, এক. সামর্থ্যবান লোকের জন্য কোরবানি করা। দুই. ঈদের নামাজ পড়া।

তিন. ৯ জিলহজের ফজর থেকে ১৩ জিলহজের আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর একবার ‘তাকবিরে তাশরিক’ পাঠ করা। তাকবিরে তাশরিক হলো—‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!