টাঙ্গাইলে বিলুপ্তির পথে মৃৎ শিল্প/ভিন্ন পেশায় চলে যাচ্ছে কুমাররা

মো. রাশেদ খান মেনন (রাসেল), টাঙ্গাইল, বিশেষ প্রতিনিধি । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

আমাদের দেশের ঐতিহ্য মৃৎ শিল্প। টাঙ্গাইলে বিলুপ্তির পথে মৃৎ শিল্প। অভাবের তাড়নায় ভিন্ন পেশায় চলে যাচ্ছে মৃৎ শিল্পের কারিগর কুমাররা। একেকটি শিল্পের বিস্তারের পেছনে রয়েছে একেকটি জাতির অবদান। তেমনি একটি শিল্প হচ্ছে মৃৎ শিল্প। “মৃৎ শিল্প” শব্দটি “মৃৎ” এবং “শিল্প” এই দুই শব্দের মিলিত রুপ। মৃৎ শব্দের অর্থ মৃত্তিকা বা মাটি আর শিল্প বলতে এখানে সুন্দর ও সৃষ্টিশীল বস্তুকে বুঝানো হয়েছে। এ জন্যই মাটি দিয়ে তৈরি সব শিল্প কর্মকেই মৃৎ শিল্প বলা হয়। যারা মাটি নিয়ে কাজ করে পেশায় তাদের কুমার বা পাল বলা হয়।

প্রাচীনকাল থেকে বংশনুক্রমে গড়ে উঠা গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইলের মৃৎ শিল্প আজ বিলুপ্তির পথে। দিন দিন যে ভাবে বিলপ্ত হয়ে যাচ্ছে তাতে কুমাররা পেশা নিয়ে বেশ চিন্তিত। তারপরও দেশে এমন এলাকা বা গ্রাম আছে যেখানে এখনো বাংলার ঐতিহ্য তারা ধরে রেখেছে।

টাঙ্গাইলের পৌর এলাকার এনায়েতপুর পালপাড়া, মগড়া ইউনিয়নের ছোট বাশালিয়া, কালিহাতী গোপালপুর উপজেলার পালপাড়া, নাগরপুর উপজেলার গয়হাটা এবং সহবতপুর ইউনিয়নে তেমনি বেশ কয়েকটি গ্রাম রয়েছে। যাহা পাল পাড়া হিসেবে পরিচিত। টাঙ্গাইলের এই পাল পাড়াগুলোতে প্রায় ৫০০টি পরিবার রয়েছে। শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা কম হলেও কর্মঠ মানুষের সংখ্যাই বেশি। পাড়ার সবাই হিন্দু ধর্মালম্বী। বাড়ির ভিতর ঢুকে দেখা গেল, ছোট উঠান জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কাদামাটির তৈরি হাঁড়ি, পাতিল, কড়াঁই, কলস, দইয়ের পাতিল,পায়খানা তৈরির পাটসহ নানা রকমের পাত্র। আধুনিকতার স্রোতে বাংলার প্রাচীন এই শিল্প আজ হারিয়ে যাওয়ার পথে। বর্তমান সভ্যতার সাথে পেরে উঠছেনা এই মাটির কারিগররা। আগে মাটির বাসন কসন সহ বিভিন্ন মাটির দ্রব্যাদি ব্যবহার হলেও মেলামাইন, এ্যালুমুনিয়াম ও প্লাস্টিকের ব্যাপক ব্যবহারের ফলে এসব আজ কালের গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। আধুনিকতার নির্মম স্পর্শে এই শিল্পের কদর দিন দিন কমে যাচ্ছে। এই শিল্পের সাথে জড়িত ব্যক্তিরা আজ অসহায় ও নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। তারা হারাতে বসেছে তাদের নিপুণ শৈল্পীক গুনাবলী। এতকিছুর পরও অনেকে শত কষ্টের মাঝেও বাপ-দাদার ঐতিহ্য ধরে রাখার নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

কথা হয় এনায়েতপুর পাল পাড়ার সঞ্জিত পালের (৪০) সাথে। তিনি বলেন, মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নের সাথে সাথে ঐতিহ্যবাহী মাটির দ্রব্যাদি মূল্যহীন হয়ে পড়েছে। তবে গ্রাম গঞ্জের বিভিন্ন মেলায় ও পূজা পার্বনে এখনো রকমারি খেলাপাতির প্রচুর চাহিদা রয়েছে। কালিহাতীর রিতেশ পাল (৬০) বলেন, এ ব্যবসা ধরে রাখ আমাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। কারণ যে শ্রম ,সময় ও পূজি লাগে সে তুলনায় আমরা দাম পাই না। তাই এ পেশা ছেড়ে দিতে হচ্ছে। গোপালপুরের খুশি মোহন পাল (৪৫) বলেন, কোন ব্যাংক বা এনজিও আমাদের এ পেশায় ঋণ দিচ্ছে না। ছেলে মেয়েদের লেখা পড়া করানো কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়ছে। তাই এ পেশা ছেড়ে দিয়ে লাভ জনক পেশা খুঁজতে হচ্ছে।

তবে তারা বাপ দাদার রেখে যাওয়া এ পেশা কে বাঁচিয়ে রাখতে চান এবং সেই সাথে বাংলার ঐতিহ্য এই মৃৎ শিল্পকে বাঁচাতে সরকারি সহায়তা কামনা করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!