দুই রাজার খেয়ালে ফ্রেবরুয়ারিতে দুই দিন কম

 

 

অনলাইন ডেস্ক  কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

আজ ২৯ ফ্রেবরুয়ারি, লিপ ইয়ার বা অধিবর্ষ। চার বছর পর পর বিশ্বব্যাপী প্রচলিত ‘ইংরেজি’ বর্ষপঞ্জিতে এ দিন আসে। অনেকের মনেই হয়তো প্রশ্ন আসে, বছরের অন্যান্য মাসগুলো ৩০ বা ৩১ দিনে হলেও ফ্রেবরুয়ারি মাসটি কেন ২৮ দিনে?

এ সম্পর্কে সবচেয়ে প্রাচীন ও প্রচলিত মতটি হলো, প্রাচীন গ্রিক সম্রাট নুমা পম্পেলিয়াস ফ্রেবরুয়ারি মাসকে ২৮ দিনের বলে ধার্য করেন। এর কারণ হলো প্রাচীন গ্রিকরা ১২ চন্দ্র ঘূর্ণন অনুসারে বছরের মাস হিসাব করত। আর খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রচলিত ধারণা ছিল, চাঁদ পৃথিবীকে ১২ বার ঘুরে আসতে সময় লাগে ৩৫৫ দিন। সেই হিসাবে নুমা পম্পেলিয়াসের ঘোষণা অনুযায়ী বছরের চারটি মাস ছিল ৩১ দিনে, সাতটি ২৯ দিনের আর ফ্রেবরুয়ারি ২৮ দিনের।

যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম ইনডিপেনডেন্টের সংবাদ অনুযায়ী, পৃথিবীর প্রায় সর্বত্রই ব্যবহৃত হওয়া এই বর্ষপঞ্জি ‘ইংরেজদের’ নামে পরিচিত হলেও আসলে এই  বর্ষপঞ্জিটি রোমানদের তৈরি। তবে এটি রোমানদেরও নিজস্ব উদ্ভাবন নয়। এই বর্ষপঞ্জিটি তারা ধার করেছিল গ্রিকদের কাছ থেকে।

প্রাচীন গ্রিকবাসীর নিজস্ব বছরের সময়কাল ছিল ৩০৪ দিনের এবং তা ছিল ১০ মাসে বিভক্ত। নিয়মানুযায়ী ওই বছরের সূচনা ধরা হতো মার্চ মাস থেকে। খ্রিস্টপূর্ব ৭০০ অব্দে রোম-সম্রাট নুমা পম্পিলিউস গ্রিক ক্যালেন্ডারের সঙ্গে বছরের ১১ ও ১২তম মাস হিসেবে যথাক্রমে জানুয়ারি ও ফ্রেবরুয়ারি যুক্ত করেন।

খাজনা আদায়সহ বিভিন্ন কাজে এই ১২ মাসের ক্যালেন্ডারটি আগের চেয়ে ভালো হলেও তাতে কিছু সমস্যা থেকে যাচ্ছিল। তবু দীর্ঘ দিন ওই ব্যবস্থাই বজায় ছিল।

অনেক দিন পর খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতকে রোম-সম্রাট জুলিয়াস সিজারের নির্দেশে ক্যালেন্ডারকে তারিখ অনুযায়ী সাজানো হলো এবং জানুয়ারি ও ফ্রেবরুয়ারি হলো বছরের প্রথম এবং দ্বিতীয় মাস।

সিজারের সময়কালে নির্মিত এই বর্ষপঞ্জিকে ‘জুলিয়ান ক্যালেন্ডারও’ বলা হয়ে থাকে। ইংরেজি ক্যালেন্ডার ইয়ারের প্রথম মাস জানুয়ারি। এই মাসটিকে বলা হয় নববর্ষের প্রবেশ দ্বার।

বছরের দ্বিতীয় মাস ‘ফ্রেবরুয়ারী’ এসেছে ল্যাটিন ‘ফ্রেবরুয়ারিয়াস’ (februarius) থেকে, যার অর্থ শুদ্ধ করা। তবে রোম-সম্রাট পম্পিলিউসের প্রবর্তন করা প্রাচীন রোমান ক্যালেন্ডারে ফ্রেবরুয়ারি বছরের শেষ মাস হিসেবে চিহ্নিত ছিল।

এই শেষ মাসে রোমানরা একটি শুদ্ধিকরণ বা পুরোনো বছরের যা কিছু খারাপ যত আবর্জনা ঝেড়ে ফেলে নতুন বছরকে আমন্ত্রণ করার উৎসব করত। অনেকটা বাংলা বছরের শেষ মাস চৈত্রের উৎসবের মতো। এই শুদ্ধিকরণ উৎসবের নাম থেকেই মাসটির নাম ‘ফ্রেবরুয়ারি’। প্রাচীন বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী খ্রিস্টপূর্বাব্দে থেকে শুরু করে খ্রিস্টাব্দের প্রথম শতক পর্যন্তও ফ্রেবরুয়ারি মাসের দিন সংখ্যা ছিল ৩০।

এদিকে জুলিয়াস সিজার নতুন বর্ষপঞ্জি করার সময় ফ্রেবরুয়ারি মাস থেকে এক দিন কেটে নিয়ে বছরের মাঝের দিকের একটি মাস ‘কুইন্টিলিস’ (quintilies)-এর সঙ্গে যুক্ত করেন। পরে ওই মাসটিকে সিজারের নামানুসারে ‘জুলাই’ নামে চিহ্নিত করা হয়।

সিজারের পরে দ্বিতীয় খ্রিস্টাব্দে আরেক রোম-সম্রাট অগাস্টাস ফ্রেবরুয়ারি থেকে আরো একটি দিন কেটে নিয়ে ‘সেক্সটিলিয়েস’ (sextilies) নামের মাসটির সঙ্গে জুড়ে দেন। সেই মাসটিও পরে সম্রাটের নামানুসারে ‘আগস্ট’ নামে চিহ্নিত হয়। ফলে ফেব্রুয়ারি মাসের দিন সংখ্যা কমে গিয়ে দাঁড়ায় ২৮।

এদিকে বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে অষ্টম শতকে যখন জানা গেল যে, পৃথিবীর বার্ষিক গতির সময়কাল ৩৬৫ দিন ৬ ঘণ্টা ২৪ মিনিট, তখন পুরো বছরকে ৩৬৫ দিনের হিসাবে মাস অনুযায়ী ভাগ করে নিলেও সমস্যা হলো অতিরিক্ত ৬ ঘণ্টা সময়কে নিয়ে। সেই সময়ে হিসাবপত্র করে স্থির করা হলো যে, ওই ৬ ঘণ্টাগুলোকে যোগ করে প্রতি চার বছর অন্তর একটি করে দিন বেশি ধরা হবে। এই অতিরিক্ত দিনটি যে বছর যোগ করা হবে তার নাম হবে ‘লিপ ইয়ার’।

এরই মধ্যেই দুই রোমান সম্রাট কর্তৃক দিন কেটে নেওয়ার ফলে ফ্রেবরুয়ারি মাসের দিন সংখ্যা কমে হয়েছিল ২৮। তাই অতিরিক্ত দিনটি যোগ করে দেওয়া হলো ফ্রেবরুয়ারি মাসের সঙ্গে। সেজন্য প্রতি চার বছর অন্তর ফ্রেবরুয়ারি মাসের দিন সংখ্যা হয় ২৯।

তথ্য-ইন্টারনেট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!