নতুন কমিটির অপেক্ষায় ছাত্রদল

 

অনলাইন ডেস্ক  কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী সংগঠন গুলোর মধ্যে অন্যতম হল জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। তাই মেয়াদোত্তীর্ণ এই সংগঠনের নতুন কমিটি গঠন নিয়ে বিভিন্ন সময়ে দাবি উঠলেও তা কার্যকর করা হয়নি। তবে বিএনপি চেয়ারপারসনের লন্ডন সফর কে কেন্দ্র করে আবারো উজ্জীবিত হেয়ে উঠেছেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।

তাদের ধারনা, লন্ডনে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান আছেন। বেগম জিয়া চিকিৎসার পাশাপাশি সাংগঠনিক যে সব বিষয় নিয়ে তার সাথে আলাপ করবেন তার মধ্যে ছাত্র দলের কমিটি অন্যতম। তারই ধারাবাহিকতায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দেশে ফিরেই এই কমিটি ঘোষণা করবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন তারা। আর নতুন এই কমিটিতে স্থান পেতে নানমুখী লবিং-তদবির চালাচ্ছে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা।

বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত বছর ১৪ই অক্টোবর। ১লা জানুয়ারি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ছাত্রদলের নতুন কমিটি ঘোষণা করা সংগঠনটির রেওয়াজ। গত কয়েক বছর ধরে এর ব্যতিক্রম ঘটছে।

বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল নেতা জানান, সম্ভাব্য পদপ্রার্থীদের তালিকা যাচাই-বাছাই চলছে। পদপ্রার্থীদের আমলনামাসহ তাদের একটি তালিকা লন্ডনে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছেও পাঠানো হয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক করে অপেক্ষাকৃত কম বয়সী নেতাদের সমন্বয়ে আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চের দিকে নতুন কমিটির ঘোষণা দেয়া হতে পারে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুজনই নতুন কমিটির সভাপতি হতে চান। কিন্তু সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তারা বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য হওয়ায় তাদের ছাত্ররাজনীতি আর দীর্ঘায়িত নাও হতে পারে। এছাড়া, প্রতিবারের মতো নতুন কমিটিতে শীর্ষ পদে আলোচনায় রয়েছেন সংগঠনের সিনিয়র ও মাঝারি সারির ডজনখানেক নেতা।

সভাপতি পদে অন্যদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন- বর্তমান সহ-সভাপতি নাজমুল হাসান, আলমগীর হাসান সোহান, মামুনুর রশীদ, সোহান, ইখতিয়ার রহমান কবির, মামুন বিল্লাহ, আবু আতিক আল হাসান মিন্টু, সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান ও সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার।

সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় থাকা তুলনামূলক তরুণ নেতাদের মধ্যে রয়েছেন- বর্তমান কমিটির যুগ্ম সম্পাদক কাজী মোকতার হোসেন, আসাদুজ্জামান আসাদ, মিয়া মো. রাসেল, মফিজুর রহমান আশিক, মেহবুব মাসুম শান্ত, হাসানুল বান্না, মুশফিকুর রহমান লেনিন, বায়েজিদ আরেফিন, মিজানুর রহমান সোহাগ, নুরুল হুদা বাবু, শামসুল আলম রানা, আবদুর রহিম সেতু, আবদুল করিম সরকার ও মির্জা ইয়াসিন আলী। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ পদের আলোচনায় রয়েছেন প্রচার সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূঁইয়া, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী ও সমাজসেবা সম্পাদক আবদুর রহিম প্রমুখ। তবে জোর গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে সিনিয়র জুনিয়র ও ত্যাগী নেতাদের সমন্বয়েই এই কমিটি গঠন করা হবে।

ছাত্রদল নেতাকর্মীরা জানান, বর্তমান কমিটির সভাপতি রাজিব আহসান মার্জিত এবং বিচক্ষণ নেতা হিসেবে ইতোমধ্যে নেতাকর্মীদের মাঝে আস্থার স্থান করে নিয়েছেন। অনেকের মতো আর্থিক কেলেঙ্কারিসহ অন্যান্য অনৈতিক কাজের সাথে তার নাম উঠে আসেনি। সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান মিন্টু বিগত আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে তার যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন। একইভাবে সিনিয়র সহ সভাপতি মামুন অর রশিদ মামুনের ক্ষেত্রেও।

add2সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার আন্দোলনের মাঠেই সময় ব্যায় করেছেন। এছাড়া সংগঠনের শীর্ষ পদ পেতে আলোচনায় এগিয়ে রয়েছেন সহ-সভাপতি আলমগীর হাসান সোহান। তিনি ২৭তম বিসিএস ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়েও রাজনীতির কারণে যোগদান করেননি। সারাদেশের নেতাকর্মীদের কাছে পরিচিত মুখ সহ সভাপতি নাজমুল হাসান। আন্দোলনের দৃশ্যমান-অদৃশ্যমান সকল ক্ষেত্রেই ছিলো তার সমান বিচরণ। শক্তিশালী সাংগঠনিক দক্ষতা দিয়ে বিগত দিনের আন্দোলনে কাজ করেছেন তিনি।

আন্দোলন ছাড়াও তিনি দলের জন্য বিভিন্ন সাংগঠনিক কাজে জড়িয়ে নিজের নাম আলোচনায় রেখেছেন। রাজধানীর প্রায় সকল আন্দোলনেই জড়িয়ে রয়েছেন সহ-সভাপতি ইখতিয়ার রহমান কবির। নিজের জীবন বাজি রেখে আন্দোলনের দৃশ্যমান-অদৃশ্যমান কাজে দক্ষতার ছাপ রেখেছেন। স্পষ্টবাদী এই নেতাও রয়েছেন দলের সিনিয়র নেতাদের সুদৃষ্টিতে।

ভদ্র-মার্জিত একজন ছাত্রনেতা সহ-সভাপতি আবু আতিক আল হাসান মিন্টু বিগত আন্দোলনে ফেসবুক নির্ভর রাজনীতি কিংবা তল্পিবাহকের রাজনীতির বাইরে থেকে এককভাবে কাজ করেছেন তিনি। নীরবে কাজ করে গেছেন যুগ্ম-সম্পাদক কাজী মোকতার। যে কোনো মিছিল-মিটিং-এ সবার আগে অবস্থান নেয়া এই ছাত্রদল নেতা তার সবটুকুই উজাড় করে দিয়েছেন দলের প্রয়োজনে। একইভাবে রয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও যুগ্ন সম্পাদক ওমর ফারুক মুন্নাও। তিনিও কাজ করেছেন নিরলসভাবে। আবার মফিজুর রহমান আশিকও গুমের শিকার হয়ে নির্যাতিত হয়েছিলেন।

দল গোছানোর অংশ হিসেবে ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর রাজীব আহসানকে সভাপতি ও মো. আকরামুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমোদন দেন খালেদা জিয়া। আংশিক ওই কমিটি ছিল ১৫৩ সদস্যের। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ছাত্রদলের কমিটি ১৫১ সদস্যের। ওই কমিটি ঘোষণার সময় বলা হয়েছিল, এবারের কেন্দ্রীয় কমিটি হবে ২০১ সদস্যের। তবে আংশিক ওই কমিটি ঘোষণার পর বড় ধরনের বিদ্রোহের মুখে পড়েছিল ছাত্রদল। বিদ্রোহীদের অনেকেই এবার পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন। ২০১৬ সালের ৬ই ফেব্রুয়ারি ৭৩৪ জন সদস্যকে নিয়ে বর্তমান কমিটি পূর্ণাঙ্গ রূপ পেলেও বাস্তবে সক্রিয় ছিলেন ২০-২৫ জন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!