নারায়ণগঞ্জে সাত খুন মামলায় হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে তারেক সাঈদ, নূর হোসেনসহ দণ্ডিতরা আপিল করলেন

আইন-আদালত ডেক্স । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের মামলায় দণ্ড বহাল রেখে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন র‍্যাব-১১-এর সাবেক অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, সাবেক কোম্পানি কমান্ডার মেজর (অব.) আরিফ হোসেন, লে. কমান্ডার (চাকরিচ্যুত) এম মাসুদ রানা ও সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা নূর হোসেন।

আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় দণ্ডিত আসামিদের পক্ষে পৃথক আপিল করা হয়েছে বলে আজ রোববার জানিয়েছেন তাঁদের আইনজীবীরা।

আলাচিত ওই মামলায় ২০১৬ বছরের ১৬ জানুয়ারি নিম্ন আদালতের দেওয়া রায়ে ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য হাইকোর্টে আসে। এ ছাড়া দণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে ২৮ আসামি হাইকোর্টে আপিল করেন। আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আপিলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্ট ২০১৭ সালের ২২ আগস্ট সাত খুন মামলায় ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় দেন। হাইকোর্টের রায়ে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া ১১ আসামির দণ্ড পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। গত বছরের ১৯ নভেম্বর হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়।

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে গত মাসে পৃথক দুটি আপিল করা হয়েছে বলে জানান তারেক সাঈদের আইনজীবী মাহবুবুর রহমান। রোববার তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আপিলে খালাস চাওয়া হয়েছে। প্রক্রিয়া শেষে আপিল শুনানির জন্য প্রস্তুত হবে। শুনানির জন্য প্রস্তুতের পর ক্রম অনুসারে তালিকায় এলে আপিলের ওপর শুনানি হবে।

ওই মামলায় মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে আরিফ হোসেন আপিল করেছেন বলে জানান তাঁর আইনজীবী এস এম শাহজাহান। নূর হোসেনের আইনজীবী এস আর এম লুৎফর রহমান আকন্দ রোববার প্রথম আলোকে বলেন, মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে নূর হোসেনও আপিল করেছেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি এম মাসুদ রানার আইনজীবী মো. ফরহাদ আব্বাস প্রথম আলোকে বলেন, গত ৭ ফেব্রুয়ারি মাসুদ রানা আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় পৃথক আপিল করেছেন। এ ছাড়া কারাগারে থাকা অন্য দণ্ডিত আসামিরাও হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন বলে জেনেছি।

ওই মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে ২৬ আসামির মৃত্যুদণ্ড হয়। হাইকোর্টের রায়ে ১৫ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। অপর ১১ আসামির দণ্ড পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা ১৫ আসামি হলেন : র‌্যাব-১১-এর সাবেক অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, সাবেক দুই কোম্পানি কমান্ডার মেজর (অব.) আরিফ হোসেন, লে. কমান্ডার (চাকরিচ্যুত) এম মাসুদ রানা, সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগের নেতা নূর হোসেন, ল্যান্স নায়েক বেলাল হোসেন, হাবিলদার মো. এমদাদুল হক, আরওজি-১ মো. আরিফ হোসেন, ল্যান্স নায়েক হিরা মিয়া, সিপাহি আবু তৈয়ব আলী, কনস্টেবল মো. শিহাব উদ্দিন, এসআই পূর্ণেন্দু বালা, সৈনিক আবদুল আলিম, সৈনিক মহিউদ্দিন মুনশি, সৈনিক আল আমিন ও সৈনিক তাজুল ইসলাম।

মৃত্যুদণ্ড পরিবর্তন হয়ে যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত ১১ আসামি হলেন : সৈনিক আসাদুজ্জামান নুর, সার্জেন্ট এনামুল কবির, নূর হোসেনের সহযোগী আলী মোহাম্মদ, মিজানুর রহমান, রহম আলী, আবুল বাশার, মোর্তুজা জামান, সেলিম, সানাউল্লাহ, শাহজাহান ও জামালউদ্দিন। এদের মধ্যে পলাতক পাঁচ আসামি হলেন : সৈনিক মহিউদ্দিন মুনশি, সৈনিক আল আমিন, সৈনিক তাজুল ইসলাম, নূর হোসেনের সহকারী সানাউল্লাহ সানা ও ম্যানেজার শাহজাহান। এ ছাড়া বিচারিক আদালতের রায় বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ৯ আসামির দণ্ড উচ্চ আদালতে বহাল থাকে বলে রাষ্ট্রপক্ষ জানিয়েছে।

পাঁচ বছর আগের সে দিনটি
২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের লিংক রোডের লামাপাড়া এলাকায় র‌্যাবের সদস্যরা চেকপোস্ট বসিয়ে কাউন্সিলর নজরুলের গাড়ি থামান। র‌্যাব গাড়ি থেকে নজরুল, তাঁর তিন সহযোগী ও গাড়িচালককে তুলে নিয়ে যায়। এ সময়ে ওই পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন আইনজীবী চন্দন সরকার। তিনি অপহরণের বিষয়টি দেখে ফেলায় তাঁকে ও তাঁর গাড়িচালককেও র‌্যাব তুলে নিয়ে যায়। পরে তাঁদের সবাইকে হত্যা করে ওই রাতেই পেট কেটে এবং ইটের বস্তা বেঁধে সবার লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ডুবিয়ে দেয়। ওই বছরের ৩০ এপ্রিল ছয়জন ও পরদিন একজনের লাশ ভেসে ওঠে। সাতজন হলেন : নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের তৎকালীন কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-২ নজরুল ইসলাম, তাঁর বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, নজরুলের গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তাঁর গাড়িচালক ইব্রাহিম। ওই ঘটনায় দুটি মামলা হয়, একটির বাদী নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম এবং অপরটির বাদী আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল। ওই দুই মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের পর আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর একসঙ্গে হাইকোর্টে শুনানি ও রায় হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!