পথে পথে বাধা, ফেনীতে খালেদার গাড়িবহরে হামলা-ভাঙচুর।

সকাল ১০টা ৪০ মিনিটের দিকে রাজধানীর গুলশানের বাসভবন থেকে রোহিঙ্গাদের দেখতে আজ শনিবার কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা হন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সঙ্গে ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ।

খালেদা জিয়ার গাড়িবহরের আগে যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের অগ্রবর্তী দল আছে।

রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে যোগ দেন মহানগরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।

কুমিল্লায় আছেন দলের স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। ফেনীতে আছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। চট্টগ্রামে আছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান। কক্সবাজারে অবস্থান করছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও নজরুল ইসলাম খান।

মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়া আজ দুপুরে ফেনীতে যাত্রাবিরতি করবেন। রাতে চট্টগ্রামে রাতযাপন করবেন। কাল রোববার তিনি কক্সবাজারে পৌঁছাবেন। পরদিন উখিয়ায় কয়েকটি শরণার্থীশিবিরে তাঁর ত্রাণ তৎপরতায় অংশ নেওয়ার কথা।

তিনি আরও বলেন, ‘সফর যাতে নির্বিঘ্ন হয়, সে জন্য আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে সহযোগিতা চেয়েছে। আইজিপি আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন।’

পথে পথে বাধা, ফেনীতে খালেদার গাড়িবহরে হামলা-ভাঙচুর

k-4বেলা একটার দিকে কুমিল্লায় খালেদা জিয়াকে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য আসা বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করেন যুবলীগ ও ছাত্রলীগের স্থানীয় কর্মীরা। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। খালেদা জিয়ার গাড়িবহর বিকেল চারটার দিকে ওই স্থান অতিক্রম করে।

এরপর বিএনপি চেয়ারপারসনের গাড়িবহর ফেনীর ফতেপুর রেলক্রসিং অতিক্রম করার পরপরই অতর্কিতে হামলা চালানো হয়। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জন দুর্বৃত্ত লাঠিসোঁটা নিয়ে গাড়িবহরে হামলা চালায়। কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। এ সময় বিএনপির দলীয় পোস্টার ও স্টিকার লাগানো বেশ কিছু গাড়ির কাচ ভেঙে ফেলা হয়। প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা বলেন, আওয়ামী লীগের স্থানীয় মেয়র হাজী আলাউদ্দিনের মালিকানাধীন স্টার লাইন পেট্রল পাম্পের কাছ থেকেই গাড়িবহরে হামলা করা শুরু হয়। দুর্বৃত্তরা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে হামলা চালায় বলে অভিযোগ করেছেন প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা। তাদের কারও কারও হাতে আগ্নেয়াস্ত্রও দেখা গেছে।

k-8খালেদা জিয়ার গাড়িবহরের সঙ্গে থাকা সাংবাদিকদের গাড়িতেও হামলা চালানো হয়। এ সময় ডিবিসি, একাত্তর, বৈশাখী, একুশে টিভি, যমুনা, এটিএন নিউজ ও চ্যানেল আইসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এছাড়া প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের একটি মাইক্রোবাসও হামলামুখে পড়ে।

k-10একাত্তর টিভির আলোকচিত্রী আলম হোসনে, সিনিয়র প্রতিবেদক শফিক আহমেদ গুরুতর আহত হয়েছেন। বৈশাখী টিভির সিনিয়র রিপোর্টার গোলাম মোর্শেদও আহত হন। এছাড়া কালের কণ্ঠ, নয়া দিগন্ত, যুগান্তর, যায়যায়দিন, সংগ্রাম, জিটিভি, আমাদের সময়সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা হামলার শিকার হন এবং এই হামলায় আরও বেশ কয়েকজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন।

সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার পরও কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী মারধরের শিকার হন। একাত্তর টিভির এক কর্মী ভিডিও ধারণ করতে গেলে তিনিও মারধরের শিকার হন।

k-6

এদিকে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আজ বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কক্সবাজার যাওয়ার বিষয়টি পূর্বনির্ধারিত। রাস্তায় যেন কোনো সমস্যা না হয়, সে জন্য স্থানীয় প্রশাসনের কাছে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছিল। এরপরও পথিমধ্যে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। প্রশাসনের কাছে সহযোগিতা চেয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

তিনি আরও বলেন, ফেনীতে সড়কে গাছ কেটে রাখা হয়েছে, চান্দিনার কুটুম্বপুর ও মুনিতলা এলাকায় আওয়ামী লীগের ‘সন্ত্রাসীরা’ খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা করেছে। চট্টগ্রামের মিরসরাই এলাকায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর আওয়ামী লীগের লোকেরা হামলা চালিয়েছেন।

রিজভী দাবি করেন, বিএনপির জনপ্রিয়তায় শঙ্কিত হয়ে সরকার ও ক্ষমতাসীন দল এই হামলা করেছে। বিএনপি নেত্রীকে দেখতে পথে মানুষের যে ঢল নামে, সেই ঢল থামাতে সরকার-সমর্থকেরা ‘নিম্ন রুচির’ পরিচয় দিয়েছেন। এসব হামলা ও বাধা দিয়ে বিএনপির জনপ্রিয়তা কমানো যাবে না। আজ সকালে কক্সবাজার যাওয়ার উদ্দেশে খালেদা জিয়া যখন তাঁর বাসভবন থেকে বের হচ্ছিলেন, তখন কয়েকটি টেলিভিশন সরাসরি সম্প্রচার করছিল। এই সম্প্রচার সরকারের নির্দেশে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে দাবি করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘কয়েকটি টেলিভিশন বিএনপি নেত্রীর বাসভবনের ওখানে লাইভ (সরাসরি) দেখাচ্ছিল। সেখানে সেই সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হয়। এটা আসলে সরকারের নির্দেশেই টেলিভিশন চ্যানেল কর্তৃপক্ষ লাইভ দেখানো বন্ধ করেছে, সরকারের হুমকিতেই এটা বন্ধ হয়েছে।’

পথে পথে শোডাউন

k-5খালেদা জিয়ার যাত্রাপথে নেতা-কর্মীদের ঢল ছিল চোখে পড়ার মতো। কমপক্ষে দুইডজন স্পটে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতারা ব্যাপক শোডাউন করেছেন। বেগম খালেদা জিয়াকে একনজড় দেখার জন্য সাধারণ মানুষও এতে শরীক হন। হাজার হাজার নেতা-কর্মী প্ল্যাকার্ড উচিয়ে, মাথায় ব্যান্ড বেধে শ্লোগানের তালে তালে পথে পথে তাদের নেত্রীকে শুভেচ্ছা জানান। খালেদা জিয়া গাড়ির ভেতর থেকে হাত নেড়ে শুভেচ্ছার জবাব দেন।

k-3বিভিন্ন স্থানে পুলিশি বাধার খবর পাওয়া গেলেও শেষ পর্যন্ত কোনো কিছুই নেতা-কর্মীদের রুখতে পারেনি। খালেদা জিয়ার এ সফরকে কেন্দ্র করে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে ব্যাপক প্রাণচাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে।

যাত্রাপথে রাজধানীর নয়া পল্টন, মতিঝিল, হাটখোলা, যাত্রবাড়ি, কাঁচপুর ব্রিজ মোড়, সোনারগাঁও মোড়, মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া, ভবেরচর, কুমিল্লার দাউদকান্দি, ইলিয়টগঞ্জ, নিমসার, চান্দিনা, ময়নামতি সেনানিবাস মোড়, কুমিল্লার বিশ্বরোড, চৌদ্দগ্রামের মিঞাবাজার, ফেনীর মহিপালসহ বিভিন্ন স্থানে হাজার হাজার নেতা-কর্মী মহাসড়কের দুই পাশে দাঁড়িয়ে খালেদা জিয়াকে শুভেচ্ছা জানায়। বিএনপি চেয়ারপারসন গাড়ির ভেতর থেকে হাত নেড়ে নেতা-কর্মীদের শুভেচ্ছার জবাব দেন। এসব জায়গায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের প্রতিকৃতির পাশাপাশি সংসদীয় নির্বাচনী এলাকার সম্ভাব্য প্রার্থী নেতা-কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে শোডাউন করে।

ঢাকার যাত্রাবাড়িতে সালাহউদ্দিন আহমেদ ও নবীউল্লাহ নবী, শনির আখড়ায় রতন চেয়ারম্যান, চিটাগাং রোডে নারায়ণগঞ্জের শাহ আলম, মো. গিয়াসউদ্দিন, অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, আতাউর রহমান আঙ্গুর, অধ্যাপক রেজাউল করীম, বদরুজ্জামান খসরু, তৈমুর আলম খন্দকার, মোস্তাফিজুর রহমান ভুঁইয়া দীপু, নজরুল ইসলাম আজাদ, মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় আবদুল হাই, কামরুজ্জামান রতন, মীর সরফত আলী সপু, কুমিল্লার দাউকান্দিতে খন্দকার মোশাররফ হোসেন, খন্দকার মারুফ হোসেন, হোমনায় অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, দেবীদ্বারে আবদুল আউয়াল খান, ব্রাহ্মনপাড়ায় সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ, আলেখার চরে হাজি আমিনুর রশীদ ইয়াসিন, বিশ্বরোডে কুমিল্লার সিটি মেয়র মনিরুল হক সাক্কু, চৈতি আবুল কালাম, মোবাশ্বের আলম ভুঁইয়া, মোরতাজুল করীম বাদরু, চৌদ্দগ্রামের মিঞাবাজারে কামরুল হুদা, ফেনী সদরে রেহানা আখতার রানু, ভিপি জয়নাল তাদের সমর্থকদের নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনকে শুভেচ্ছা জানান। কুমিল্লার মুরাদনগরের সাবেক এমপি শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদের হাজার হাজার নেতা-কর্মী-সমর্থক ইলিয়টগঞ্জে খালেদা জিয়াকে শুভেচ্ছা জানায়।

ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কে বিভিন্ন স্থানে হাজার হাজার নেতা-কর্মীর ও সাধারণ মানুষ ঢল নামে। ফলে ওই সবস্থানে ব্যাপক যানজটেরও সৃষ্টি হয়। ঢাকার চট্টগ্রাম সড়কে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর কাঁচপুর ব্রিজের আগেই ব্যাপক যানজটের মুখ পড়ে। ঘণ্টা খানেক তার গাড়ি বসেছিলো। এসময়ে তার নিরাপত্তা কর্মীরা গাড়িটি ঘিরে রাখে।

জানা যায়, চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে রাত কাটিয়ে আগামীকাল রোববার বেলা ১১টায় সড়ক পথে কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা হবেন বিএনপি নেত্রী। সেখানে সার্কিট হাউজে রাত কাটিয়ে সোমবার উখিয়ার বালুখালী, বোয়ালমারা ও জামতলী রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণের পরিকল্পনা রয়েছে তার।

k-9


-মাহবুব এইচ শাহীন/প্রকাশক ও সম্পাদক/কাগজ২৪

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!