রোহিঙ্গাদের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে ভাসান চর

 

অনলাইন ডেস্ক  কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

মিয়ানমার থেকে গণহত্যা ও নির্যাতনের মুখে আসা লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে সাময়িক আশ্রয় দিলেও তাদেরকে স্থায়ীভাবে পুনর্বাসনের কথা ভাবছে সরকার। নোয়াখালীর অদূরে জেগে ওঠা ‘ভাসান চরে’ তাদেরকে পুনর্বাসন করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ওয়াশিংটনে সফররত প্রধানমন্ত্রী ভয়েস অব আমেরিকার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, চরটি জালিয়ার চর, ঠ্যাঙ্গার চর নামে পরিচিত হলেও তিনি ‘ভাসান চর’ নামটা পছন্দ করেছেন। এই নামেই চরটির নামকরণ করা হবে এবং সেখানেই অসহায় রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন করা হবে।

প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের বিষয়টি এখন অনেকটাই চূড়ান্ত। ইতোমধ্যে চরটিতে কাজ শুরু করেছে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার লোকেরা। চরটি বসবাসের উপযোগী করে তোলার পর সেখানে নেয়া হতে পারে রোহিঙ্গাদের।

গত কয়েক দিনে নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে এসেছে প্রায় সাড়ে চার লাখ রোহিঙ্গা। এর আগেও প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা বিভিন্ন সময় বাংলাদেশে আসে এবং কক্সবাজারের শরণার্থী ক্যাম্পে অবস্থান করছে। ‘ভাসান চরে’ তাদের সবার পুনর্বাসনের ব্যবস্থা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

হাতিয়া উপজেলার মূল ভূখণ্ড থেকে ২০ কিলোমিটার পূর্বে মেঘনা নদীপথ পার হলে ভাসান চরের অবস্থান। বর্তমানে ওই চরটির আয়তন প্রায় ৩৩০ বর্গকিলোমিটার অর্থাৎ হাতিয়া মূল ভূখণ্ডের আয়তনের প্রায় সমান। এছাড়া দ্বীপটির চতুর্দিকে প্রতি বছর গড়ে ৩৫/৪০ বর্গকিলোমিটার ভূমি জেগে উঠছে।

স্থানীয়রা জানায়, ১৯৯০ সালের দিকে স্থানীয় জেলেরা এখানে একটি ডুবোচরের অস্তিত্ব খুঁজে পায়। পরবর্তী পাঁচ বছরের মধ্যে ডুবোচরটির আয়তন বৃদ্ধির পাশাপাশি একই সময় দক্ষিণে আরও একটি নতুন চর জেগে ওঠে। স্থানীয় জেলেদের কাছে এটি ‘গাঙ্গুরিয়ার চর’ নামে পরিচিত।

ভাসান চর (ঠেঙ্গারচর) এর তিন কিলোমিটার পশ্চিমে অর্থাৎ হাতিয়া মূল ভূখণ্ডের পূর্ব দিকে ‘ইসলাম চর’ নামক একটি চর তিন দশক পূর্বে জেগে উঠে। ৪০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ওই চরটি বিলীন হয়ে বর্তমানে ১৫ বর্গকিলোমিটারে এসে ঠেকেছে। ভাসান চরের পূর্বদিকে সন্দ্বীপ উপজেলা এবং উত্তরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর (রিচার্জ সেন্টার) প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্বর্ণদ্বীপের অবস্থান। বিশেষ করে এর দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব এবং উত্তর দিকে প্রচুর ভূমি জাগছে। বিশাল চরটিতে মহিষের কয়েকটি বাথান রয়েছে।

এছাড়া বঙ্গোপসাগরের মৎস শিকারীরা এখানে সাময়িক বিশ্রাম নেয়। হাতিয়া মূল ভূখণ্ড থেকে ট্রলারযোগে ভাসান চর যেতে সময় লাগে প্রায় সোয়া এক ঘণ্টা। কয়েক বছর আগে স্থানীয় বন বিভাগ এখানে বনায়ন শুরু করে। ফলে ভাসান চরে বিভিন্ন অংশে গাছ-গাছালিতে ভরে গেছে। একসময় এই চরসহ পুরো উপকূলীয় অঞ্চল জলদস্যু ও বনদস্যু অধ্যুষিত থাকলেও এখন দৃশ্যপট পাল্টেছে। বিশেষ করে হাতিয়ার ‘জাহাইজ্যার চর’ বর্তমান স্বর্ণদ্বীপে সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পাশাপাশি নৌ-বাহিনী ও কোস্টগার্ডের তৎপরতার সুবাদে আইনশৃঙ্খলা সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে।

গত কয়েক মাস আগে প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন, হাতিয়ার সাবেক এমপি ও আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আলী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, ইউএনও, পৌর মেয়র ও ওসিসহ কর্মকর্তারা ভাসান চর পরিদর্শন করেন। এসময় তারা ভাসান চরের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন। ইতিমধ্যে চরটির অভ্যন্তরে হেলিপ্যাড ও অভ্যন্তরীণ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে এবং সেখানে নৌ-বাহিনী মোতাযেন রয়েছে। এই চরে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের পদক্ষেপ হিসেবে চরের চতুর্দিকে বেঁড়িবাঁধ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। পরবর্তী সময়ে এখানে সড়ক ও অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!