ফাঁসির আগে সাদ্দামের মর্মস্পর্শী জীবন, শোনালেন রক্ষী

অনলাইন ডেস্ক  কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

তিন দশক তেলসমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরাক শাসন করেন প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন। প্রবল প্রতাপশালী এই নেতা সেই সময় ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করলেও, চরম নিষ্ঠুরতারও অভিযোগ আনা হয় তাঁর বিরুদ্ধে। আর সেই অভিযোগের কারণ দেখিয়েই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবাধীন সরকার ঈদের আগের রাতে সাদ্দাম হোসেনকে ফাঁসিতে ঝুলায়।

ফাঁসির আগে ইরাকের রাজধানী বাগদাদের একটি কারাগারে বন্দি ছিলেন ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম। জীবনের শেষ কয়েকদিন কেমন কাটিয়েছিলেন সাদ্দাম, তা জানান সেই সময় তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক আমেরিকান কারারক্ষী।

উইল বার্ডেনওয়ারপার নামে ওই কারারক্ষী সাদ্দাম হোসেনের জীবনের শেষ কয়েকদিনের অজানা কিছু ঘটনা নিয়ে লিখেছেন ‘দ্য প্রিজনার ইন হিজ প্যালেস : সাদ্দাম হোসেন, হিজ আমেরিকান গার্ডস অ্যান্ড হোয়াট হিস্টোরি লিভস আনটোল্ড’ নামে একটি বই।

সেই বই ধরেই একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান। আর সেখানেই উঠে এসেছে এক সময়ের মার্কিনমিত্র (উপসাগরীয় যুদ্ধের আগের দিনগুলোতে) সাদ্দাম হোসেনের জীবনের শেষ দিনগুলোর অজানা কাহিনী।

কারারক্ষীর ওই বইতে বলা হয়, ফাঁসির আগের দিনগুলোতে সাদ্দাম হোসেন কেক খেতে খুব পছন্দ করতেন। রেডিওতে শুনতেন মার্কিন গায়িকা ম্যারি জে ব্লিজের গান। এ ছাড়া টেলিভিশনে ‘সিসেম স্ট্রিট’ নামে শিশুদের একটি অনুষ্ঠান বেশ উপভোগ করতেন।

সাদ্দাম হোসেন সকালের নাস্তায় ডিম, কেক ও তাজা ফল খেতেন। তবে ডিমের বিষয়ে নাকি খুবই খুঁতখুঁতে ছিলেন তিনি। ডিম ভাজি সামান্য ছেড়া-ফাটা হলেই ফিরিয়ে দিতেন তিনি।

কারারক্ষী উইল বইতে লেখেন, কারাগারে সাদ্দামের ব্যায়াম করার জন্য একটি নড়বড়ে ‘এক্সাসাইজ বাইক’ ছিল। তিনি সেটিকে খুবই পছন্দ করতেন। আদর করে টাট্টু ঘোড়া বলে ডাকতেন ব্যায়ামের ওই যন্ত্রটিকে। সাদ্দামের কারাগারে এ ধরনের জীবনযাপন দেখে বেশ অবাক হতেন কারাগারের কর্মকর্তারা।

সাদ্দাম হোসেন কারাগারের বন্দিদের হাতে গড়া বাগান খুবই পছন্দ করতেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে ওই বইতে। বাগানের ঝোপঝাড়গুলোকেও তিনি সুন্দর ফুলের মতো ভাবতেন।

সাদ্দামের ছেলে উদে হোসেনের কথাও বলেছেন লেখক। উদে তাঁর কাজ-কর্মের জন্য খুবই কুখ্যাত ছিলেন। কারারক্ষীরা যখন নিজেদের সন্তানদের নিয়ে কথা বলতেন তখন সাদ্দাম শোনাতেন উদের কথা। তিনি কারারক্ষীদের বলেন, ‘আমি একদিন উদের ওপর খুব রেগে যাই। তাই আমি তাঁর সব গাড়ি পুড়িয়ে ফেলি।’ গাড়িগুলোর মধ্যে রোলস-রয়েস, ফেরারি ও পোরশের মতো বিলাসবহুল গাড়িও ছিল বলে জানান সাদ্দাম।

সাদ্দামকে এক রকম ভালোবেসেই ফেলেছিলেন তাঁর পাহারায় থাকা ১২ আমেরিকান কারারক্ষী। আর তাই যুক্তরাষ্ট্রের শত্রু হওয়া সত্ত্বেও ইরাকের সাবেক এই প্রেসিডেন্টের ফাঁসির দিন খুবই কষ্ট পেয়েছিলেন তাঁরা।

এ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে অ্যাডাম রজারসন নামে একজন লেখককে বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছিল আমি পরিবারের একজন সদস্যকে হারিয়েছি। নিজেকে খুনি মনে হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, আমার আপন কাউকে খুন করেছি।’

ফাঁসির পর সাদ্দামের মৃতদেহ বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন লোকজন মৃতদেহে আঘাত করা শুরু করে। এতে হতভম্ভ হয়ে পড়েন ওই ১২ কারারক্ষী। এক রক্ষী এগিয়ে যান তাদের থামাতে। কিন্তু অন্যরা তাঁকে থামিয়ে দেন।

তবে এমনিতেই সাদ্দামকে ভালোবাসেনি তাঁরা। এর পেছনেও আছে অনেক গল্প। একদিন নাকি এক নার্স এসে সাদ্দামকে জানান তাঁর ভাই মারা গেছেন। তখন সাদ্দাম বেশ আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তিনি জানান, কোনোদিন যদি তাঁর হাতে টাকা আসে, তাহলে তাঁর (নার্সের) ভাইয়ের সন্তানের সব দায়িত্ব নেবেন তিনি।

সাদ্দাম হোসেনকে ২০০৬ সালে মৃত্যুদণ্ড দেয় ইরাকের আদালত। তাঁর বিরুদ্ধে বিরোধীপক্ষের ১৪৮ জনের হত্যাসহ শাসনকালে নিষ্ঠুরতা ও ত্রাস ছড়ানোর অভিযোগ আনা হয়।
উৎসঃ এনটিভি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!