তারাকান্দি-ভূঞাপুর সড়কের বাঁধ ভেঙ্গে ধেয়ে আসছে পানি

 

 

মো. সেলিম হোসেন, গোপালপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি  কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলার তারাকান্দি-গোপালপুর-ভুয়াপুর সড়কের বাঁধটি যমুনা নদীর পানির স্রোতে ভেঙে ধেয়ে আসছে পানি। ১৯৮৮ সালের ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় আবার ভাঙ্গন দেখা দেওয়ায় জামালপুর ও টাঙ্গাইলের মানুষদের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
গতকাল বুধবার রাত একটার দিকে উপজেলার আওনা ইউনিয়নের স্থল মধ্যপাড়া মসজিদ ও ঈদগাহ নিকটবর্তী তারাকান্দি-ভুয়াপুর সড়কের ১৫ থেকে ২০ মিটার অংশ ভেঙে যাওয়ায় বাঁধের পূর্ব পাশের গ্রামগুলো বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আরো শতাধিক গ্রাম তলিয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
গত তিন দিন ধরে জামালপুর ও টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড, সড়ক ও জনপথসহ স্থানীয় মানুষজন সড়কটির ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্ট গুলোতে বালির বস্তা ও জিও ব্যাগ ফেলে বাঁধ রক্ষা করার কাজ করছিলেন।
বাঁধটি ভেঙে যাওয়ার ফলে জামালপুর ও টাঙ্গাইল জেলার মানুষ পানি বন্ধি হয়ে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ঢাকা ও অন্যান্য জেলার সঙ্গে এই দুই জেলার মানুষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।
বাঁধটি রক্ষা করতে প্রশাসন ও স্থানীয়রা এসে বালির বস্তা ও জিও ব্যাগ ফেলে প্রতিরোধ মূলক কাজ শুরু করেছেন।

বাঁধ ভাঙ্গার খবর রাতেই ছড়িয়ে পড়ায় বিপদগ্রস্ত মানুষগুলো আতঙ্কে গভীর অন্ধকারে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে বাড়ি-ঘর বিমূখ হচ্ছেন। মসজিদের মাইকে সতর্কবাণী শুনাচ্ছেন। গবাদিপশু, নারী ও শিশুদের নিয়ে বিপাকে আছেন পানিবন্ধী এলাকার লাখো মানুষ।
এদিকে, প্রবল বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় টাঙ্গাইলের গোপালপুর ও ভূঞাপুরে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। এতে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে অর্ধশতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ভূঞাপুরে যমুনা নদীতে বিপদসীমার ১৩৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকেই গোপালপুর উপজেলার গুলিপেঁচা ও ভূঞাপুর উপজেলার চুকাইনগর, অর্জুনা ও কুঠিবয়ড়া পয়েন্টে মারাত্মকভাবে পানি প্রবেশ করছে। এতে ঝুঁকিতে রয়েছে তারাকান্দি- গোপালপুর -টাঙ্গাইল সড়ক। আর এ সড়ক ভেঙে গেলে উত্তর টাঙ্গাইলের গোপালপুর, ঘাটাইল, মধুপুর ও কালিহাতী এই চারটি উপজেলা নতুন করে বন্যার পানিতে তলিয়ে যাবে।

বন্যার পানিতে বসতবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় অনেকেই ঘরের মধ্যে উঁচু বাঁশের মাচা পেতে পরিবার পরিজন নিয়ে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে। হাজার হাজার মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পরিবার-পরিজন ও গবাদিপশু নিয়ে আত্মীয়স্বজনের বাড়ি, অন্যের উঁচু জমি ও বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে।

ভূঞাপুর-তারাকান্দি-টাঙ্গাইল সড়ক লিকেজ হয়ে কমপক্ষে ১০ পয়েন্ট দিয়ে পানি প্রবেশ করছে। সড়কের লিকেজ বন্ধ করতে মঙ্গলবার দুপুর থেকে কাজ করছে টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে যেকোন সময় সড়কটি ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভূঞাপুর ও গোপালপুর উপজেলা প্রশাসনসহ পানি উন্নয়ন বোর্ড পয়েন্ট গুলোর লিকেজ বন্ধ করতে বালি ও বালুভর্তি বস্তা দিয়ে বাঁধ দেওয়ার চেষ্টা করছে। তবে যমুনার পানি অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি ও লিকেজগুলো বড় আকার ধারণ করলে যে কোনো মুহুর্তে সড়কটি ভেঙে যেতে পারে। এতে তারাকান্দির সঙ্গে ঢাকা ও উত্তরবঙ্গসহ টাঙ্গাইল জেলার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাবে।
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী শাহজাহান সিরাজ জানান, তারাকান্দি- গোপালপুর-ভূঞাপুর-টাঙ্গাইল সড়কে বিভিন্ন পয়েন্টে লিকেজ দেখা দিয়েছে। সেগুলো বন্ধ করতে ওই সড়কের ১০টি পয়েন্টে কাজ চলমান রয়েছে।



  • কাগজ টুয়েন্টিফোর বিডি ডটকম এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!