বাংলা সন ও পঞ্জিকার ইতিহাস

বাংলা সন ও পঞ্জিকার ইতিহাস
– মাহবুব এইচ শাহীন

সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে আমরা প্রবেশ করতে চলেছি নতুন এক বছরে ১৪২৪ সন। ১৪ এপ্রিলের এই দিনটিতে শুধু বাংলাদেশের মানুষই না, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও আসামের মানুষও নববর্ষ উদযাপন করছে। সেই সঙ্গে নতুন বছরের আনন্দে মেতে উঠেছে শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ডের মানুষও।

বাংলা নববর্ষের উৎসব এখন বাংলা বর্ষপঞ্জির বৈশাখ মাসের প্রথম দিনে অনুষ্ঠিত হয়। বহু আগে নববর্ষ যে অন্য সময়ে হতো তার কিছু প্রমাণ পাওয়া যায়। যোগেশচন্দ্র বিদ্যানিধি ফাল্গুনী পূর্ণিমার তিথিতে নববর্ষের কথা উল্লেখ করেছেন। মধ্যযুগের কবি মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর কবিতায় অগ্রহায়ণ বন্দিত হয়েছে এই ভাষায়, ‘ধন্য অগ্রহায়ণ মাস, ধন্য অগ্রহায়ণ মাস। বিফল জনমতার, নাই যার চাষ।’ কবির অগ্রহায়ণ বন্দনার কারণ যতদূর জানা যায়, তখন অগ্রহায়ণ মাসে নববর্ষ ছিল। তবে কখন কীভাবে বৈশাখ মাসে নববর্ষ উদযাপন শুরু হলো তা জানা যায় না। কিন্তু মুকুন্দরামের সময়ে অগ্রহায়ণ মাসে যদি নববর্ষ হয়ে থাকে তাহলে ভারতচন্দ্রের সময়ে যে বৈশাখে নববর্ষ হয়ে গেছে তার প্রমাণ আছে তাঁরই কবিতায় : ‘বৈশাখে এ দেশে বড় সুখের সময়। নানা ফুল গন্ধে মন্দ গন্ধবহ হয়।’ তাছাড়া বাংলার নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ এবং আলীবদ্দী খাঁ বৈশাখের প্রথম দিনে পুণ্যাহ করতেন। এ দেশের কবিদের কবিতা ও গানে নববর্ষের নানা আবহ ফুটে উঠেছে।

ইংরেজি ‘ক্যালেন্ডার’ শব্দটি মূলে ল্যাটিন শব্দজাত। যত দূর জানা যায়, এর ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হলো : ‘হিসাব-বই’। অন্যদিকে ইংরেজি আলমানাক শব্দটি আরবি ভাষা থেকে এসেছে বলে অনুমিত হয়। ‘আলমানাক’ যে অর্থ প্রকাশ করে তার বাংলা অর্থ করলে ‘পঞ্জিকা’ বলা যেতে পারে। ক্যালেন্ডার বলি, আর আলমানাক বলি–দুয়েরই জন্মস্থান প্রাচীন মিসর। পৃথিবীর সর্বপ্রাচীন পঞ্জিকা মিসরে প্রস্তুত হয়েছিল বলে পঞ্জিকাকে মিসরীয় সভ্যতার অবদান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। মিসরীয়রাই প্রায় ৬ হাজার বছর আগে চান্দ্র হিসাবের ভুল চিহ্নিত করে সৌর পদ্ধতির গণনা শুরু করে। নীলনদ-তীরবর্তী এই বাসিন্দারা অত আগে প্রায় ৩৬৫ দিনে বছরের হিসাবের খুব কাছাকাছি পৌঁছে (The Calender : Devid Erwing Duncan : Fourth Estate, London, 1998)। এখানে খুব তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো কৃষির সঙ্গে পঞ্জিকার অপরিহার্য সম্পর্ক। মিসরকে নীলনদের দান বলেছেন বিশ্বের প্রথম ঐতিহাসিক হেরোডেটাস। নীলনদের একদিকে সবুজ কৃষিক্ষেত্র, অন্যদিকে ধূসর মরুভূমি। নীলনদ না থাকলে মিসর কৃষি সভ্যতার জননীস্বরূপ হতে পারত না। অন্যদিকে পাশ্চাত্যের সমুদ্রতীরবর্তী রোমে রোমান ক্যালেন্ডার (ইংরেজি ক্যালেন্ডার কথাটি ভূল। কারণ ওই ক্যালেন্ডারের সঙ্গে রোমের ক্যাথলিক ধর্মের সম্পর্ক ছিল–প্রটেস্টান্ট ইংরেজরা তাই ওই ক্যালেন্ডার ১৭০ বছর পর্যন্ত গ্রহণ করে নি) বা জুলিয়ান ক্যালেন্ডার চালু হয়ে তা পঞ্চদশ শতক পর্যন্ত বহাল থাকে। পরে সে ক্যালেন্ডারের ভুলভ্রান্তি শুধরে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার চালু হয়। সে ক্যালেন্ডার এখন সারা পৃথিবীতে ব্যাপকভাবে চালু হয়ে গেছে।

আমরা বলেছি, কৃষির সঙ্গে পঞ্জিকার সম্পর্ক নিবিড় ও অপরিহার্য। উদাহরণস্বরূপ আমরা মিসরীয় ক্যালেন্ডার এবং ইউরোপের জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের কথা বলব। মিসরীয় সভ্যতায় বিশ্বের প্রথম যে ক্যালেন্ডার তৈরি হয় তাতে কৃষি উৎপাদন পদ্ধতির প্রভাবই ছিল প্রধান। কারণ কৃষি ঋতুনির্ভর। বছরের নির্দিষ্ট সময়ে ফসলের বীজ সংগ্রহ, বীজ বপন, ফসলের পরিচর্যা ফসল কাটা, সবকিছুই সময়মতো করা চাই। তাই চন্দ্র ক্যালেন্ডার কৃষির জন্য উপযোগী নয়। চন্দ্র ক্যালেন্ডারে বছরে সাড়ে ১০ দিনের হেরফের হয়। তাই চন্দ্র ক্যালেন্ডার (হিজরি ইত্যাদি) অনুসরণ করলে এ বছরে যখন ফসল বোনা হবে, তিন বছর পরে তা এক মাস পিছিয়ে যাবে। কৃষি উৎপাদন ও তার ব্যবস্থাপনায় তাই চন্দ্র ক্যালেন্ডারের পরিবর্তে সৌর ক্যালেন্ডার প্রচলন হয়। মিসরীয় ক্যালেন্ডারেই এ সংশোধন করা হয়। বহু পরে (১৫৫২) ইউরোপের জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের ত্রুটি দূর করে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার চন্দ্র ও সূর্যের আবর্তনের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা হয়। ফলে জাগতিক কর্মকান্ড সূর্যের আবর্তননির্ভর বা ঋতুনির্ভর আর ধর্মীয় উৎসবাদি চন্দ্রকলার হ্রাসবৃদ্ধির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। আসলে পঞ্জিকার মধ্যেও আমাদের সমাজ জীবনের ধর্মীয় এবং ধর্মনিরপেক্ষ দুই সত্তাই একত্রে অবস্থান করাতে পঞ্জিকা জীবনের পূর্ণতারও প্রতীক।

তবে বাংলার মানুষ কীভাবে একটি দিনপঞ্জি পেল, তা নিয়ে রয়েছে বিতর্ক। এ নিয়ে তিনটি মত প্রচলিত আছে। একদল মনে করেন, রাজা শশাঙ্ক প্রথমবাংলা দিনপঞ্জির প্রবর্তন করেছিলেন। অপর একদল মনে করেন, মোঘল সম্রাট আকবর বাংলা সন গণনার প্রচলন ঘটান। তৃতীয় আরেক দল মনে করেন, হোসেন শাহী আমলের সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ নিজ রাজ্যে বাংলা ক্যালেন্ডার প্রথম ব্যবহার করেন।

একদিকে হিজরি সনের সঙ্গে সামঞ্জস্যতা, অন্যদিকে প্রাচীন সংস্কৃত জ্যোতির্বিজ্ঞানের সঙ্গে মিল থাকা এ মতভেদের কারণ বলে মনে করেন অনেকে। এর মধ্যে আবার ইংরেজি গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের সঙ্গেও খানিকটা সামঞ্জস্যতা বিতর্কটিকে আরও উস্কে দিয়েছে। ইংরেজি ও বাংলা দিনপঞ্জির মধ্যবর্তী সময়ের পার্থক্য ৫৯৩/৫৯৪ বছর। এখানে উল্লেখ্য, হিজরি তারিখের পরিবর্তন হয় রাতের আকাশে চন্দ্রের আবির্ভাবের সঙ্গে। নতুন চাঁদ মানে নতুন আরবি মাস। অন্যদিকে রাত বারোটা বাজামাত্র ইংরেজি তারিখ পরিবর্তিত হয়। আর বাংলা দিনপঞ্জিতে তারিখ পরিবর্তিত হয় সূর্যোদয়ের সঙ্গে।

প্রথম দলের অভিমতের পেছনে শক্ত যুক্তি হলো, রাজা শশাঙ্ক ৫৯৪ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গাব্দের প্রচলন করেন। ফলে গ্রেগরিয়ান ক্যালন্ডারের চেয়ে বঙ্গাব্দের বর্ষপঞ্জি পিছিয়ে আছে ৫৯৩/৫৯৪ বছর। যদি ইংরেজি বর্ষের প্রথম দিন অর্থাৎ ১ জানুয়ারি পহেলা বৈশাখের আগে ধরা হয়, তাহলে বাংলা বর্ষপঞ্জি ইংরেজির চেয়ে পিছিয়ে আছে ৫৯৪ বছর। আর যদি পহেলা বৈশাখকে আগে ধরা হয়, তাহলে ইংরেজি বর্ষের চেয়ে বঙ্গাব্দ পিছিয়ে আছে ৫৯৩ বছর।

ধারণা করা হয়, ‘সূর্য সিদ্ধান্তের’ ওপর ভিত্তি করেই ৫৯৪ খ্রিস্টাব্দের ১২ অথবা ১৪ এপ্রিল প্রণয়ন করা হয় বাংলা বর্ষপঞ্জির। ইংরেজি সালের সঙ্গে বঙ্গাব্দের সময় ব্যবধানের ক্ষেত্রে এই যুক্তি অত্যন্ত শক্ত বলেই গণ্য হয় ইতিহাসবিদদের কাছে। উল্লেখ্য, সূর্য সিদ্ধান্ত হচ্ছে সংস্কৃত জ্যেতির্বিজ্ঞানের বিভিন্ন গ্রন্থে উল্লেখিত একটি বিষয়। রাজা শশাঙ্ককে কৃতিত্ব দেওয়া ইতিহাসবিদগণ মনে করেন, সম্রাট আকবর তাঁর প্রচলন করা দিনপঞ্জির উন্নয়ন সাধন করে পুনর্প্রচলন করেছেন মাত্র। সেই সঙ্গে তিনি তা ছড়িয়ে দিয়েছেন ভারতবর্ষজুড়ে।

বঙ্গাব্দের ব্যাপারে দ্বিতীয় মতটি হলো, এই বর্ষপঞ্জি প্রবর্তন করেন হোসেন শাহী আমলের সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ। কৃষি প্রধান ভারতীয় উপমহাদেশে দিনের হিসাব চাঁদের চেয়ে সূর্যের পরিক্রমার ওপর ভিত্তি করে হলেই শাসক ও শাসিতের জন্য সুবিধাজনক বলে আরবি হিজরি সালের সাথে সমন্বয় করে তিনি বাংলা সনের প্রবর্তন করেন বলে মনে করা হয়। তবে এ ব্যাপারে তার পক্ষে শক্ত কোনও যুক্তি তেমন কেউ উপস্থাপন করতে পারেন না।

রাজা শশাঙ্কের সঙ্গে তুমুল বিতর্কে অত্যন্ত শক্ত অবস্থানে রয়েছেন সম্রাট আকবর। তবে বাংলা বর্ষপঞ্জির উন্নয়ন ও তা ছড়িয়ে দেওয়ার পেছনে মোঘল সম্রাট আকবরের অবদানের ব্যাপারে কারও কোনও দ্বিমত নেই। বাংলা অঞ্চলে কর আদায় সহজতর করার লক্ষ্যেই তিনি এ কাজ করেন বলে জানা যায়। সেসময় বাংলা দিনপঞ্জিকে ডাকা হত ‘তারিখ-ই-ইলাহী’ নামে। চন্দ্র বর্ষ হিসাবে পরিচালিত আরবি ক্যালেন্ডার ভারতীয় অঞ্চলে চাষাবাদের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না বলেই সম্রাট আকবর এই কাজটি করেছিলেন। অসময়ে কর প্রদান করতে গিয়ে বেহাল দশায় পড়তে হতো দরিদ্র কৃষককে। কেউ কেউ মনে করেন, সম্রাট আকবরকে দিনপঞ্জি প্রণয়নের এই পরিকল্পনা দিয়েছিলেন তার মন্ত্রী টোডর মল।

সম্রাট আকবর ইরান থেকে আগত বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও জ্যোতির্বিদ আমির ফতুল্লাহ শিরাজীকে হিজরি চন্দ্র বর্ষপঞ্জীকে সৌর বর্ষপঞ্জিতে রূপান্তরিত করার দায়িত্ব প্রদান করেন।

সম্রাটের কাছ থেকে বর্ষপঞ্জি প্রণয়নের হুকুম আসামাত্র কাজে লেগে যান রাজসভার আমির ও রাজ জ্যোতিষি সুপরিচিত পণ্ডিত ফাতুল্লাহ সিরাজি। চন্দ্র বর্ষীয় ইসলামিক ক্যালেন্ডার ও সূর্য বর্ষীয় হিন্দু দিনপঞ্জির মধ্যে সমন্বয় সাধন করে তিনি বাংলা দিনপঞ্জি প্রস্তুত করেন। যদিও ইসলামিক ক্যালেন্ডারের সাথে সমন্বয় করা হয়েছিল, তবে বঙ্গাব্দের মাসগুলোর নাম নেওয়া হয়েছিল সংস্কৃত থেকে।

প্রাথমিকভাবে বাংলা সালের ক্যালেন্ডারের নামকরণ করা হয় ‘ফসলি সন’ হিসেবে। পরবর্তীতে এর নাম হয় ‘বঙ্গাব্দ’।  যদিও এই দিনপঞ্জি সম্রাট আকবর প্রবর্তন করেন ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ অথবা ১১ মার্চ (হিজরি ৯৯২ সনে) কিন্তু এর গণনা শুরু করা হয় ১৫৫৬ সাল (হিজরি ৯৬৩ সন) থেকে। এই বছরই পানিপথের যুদ্ধে তিনি সম্রাট হেমচন্দ্র বিক্রমাদিত্যকে পরাজিত করেছিলেন বলে তা স্মরণীয় করে রাখতেই এ কাজ করা হয় বলে মনে করেন কেউ কেউ। হিজরি সালের সাথে সমন্বয় করতে গিয়ে আরবি প্রথম মাস মুহাররম চলাকালে যে মাসটি চলছিল সে বছর, তাকেই বঙ্গাব্দের প্রথম মাস হিসেবে গ্রহণ করা হয়। আর সে হিসাবেই বৈশাখ হয় বাংলা সনের প্রথম মাস আর এই মাসের এক তারিখ হয় বছরের প্রথমদিন।

‘তারিখ-ই-ইলাহী’ দিনপঞ্জিতে প্রতিটা মাসের যেমন আলাদা নাম ছিল, প্রতিটা দিনেরও তেমনি একটা করে নাম ছিল। কিন্তু এত নাম মনে রাখা সাধারণ মানুষের জন্য বেশ ঝামেলাপূর্ণ ছিল। পরবর্তীতে এই সমস্যা থেকে উত্তরণে তাই সম্রাট শাহজাহান রোববারকে সপ্তাহের প্রথমদিন ধরে সাতদিনে এক সপ্তাহের প্রবর্তন করেন। জানা যায়, তিনি জ্যোতিষশাস্ত্র ঘেঁটে সৌরজগতের গ্রহগুলোর নামে নাম দেন সপ্তাহের দিনগুলোর। এদিকে, সম্রাট আকবরের সময়ে মাসগুলোর যে নাম দেওয়া হয়, তা পরবর্তীতে কোনও একসময় বদলে যায়।  মাসগুলোর নাম ঠিক কবে বদলে যায়, সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু জানা যায় না। এই পরিবর্তনের সময় বাংলা মাসগুলোর নাম সংস্কৃত জ্যোতিষশাস্ত্র থেকে নক্ষত্রের নামে নামকরণ করা হয়।

দিনপঞ্জিতে ফাতুল্লাহ সিরাজি বঙ্গাব্দকে ছয়টি কাল বা ঋতুতে ভাগ করেন। এগুলো হলো—গ্রীস্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত। তবে সেসময় প্রবর্তিত ক্যালেন্ডারের সঙ্গে বর্তমান ঋতুরচক্রের বিশেষ ফারাক পরিলক্ষিত হয়। মোঘল সাম্রাজ্যের সময় পুরো রাজ্যজুড়েই এই দিনপঞ্জি প্রয়োগ করা হয়। মোঘল আমলের পতনের সঙ্গে সঙ্গে এর ব্যবহার বন্ধ হয়ে যায়।

বঙ্গাব্দের প্রচলন সম্রাট আকবরই করেছেন—তার পক্ষে অত্যন্ত শক্ত যুক্তি উপস্থাপন করেছেন ভারতবর্ষীয় বিখ্যাত পণ্ডিত ডক্টর মেঘনাদ সাহা। তিনি একটি গাণিতিক হিসাবও করে দেখিয়েছেন নিজের মতামতের পক্ষে। রাত পোহালেই আমরা ১৪২২ বঙ্গাব্দে পা রাখব। সম্রাট আকবর ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে অর্থাৎ হিজরি ৯৬৩ সনে বঙ্গাব্দের হিসাব শুরু করেন। বর্তমানে কত বঙ্গাব্দ চলছে, তার হিসাবটা যদি করতে হয়, তাহলে করা যাবে এভাবে ৯৬৩ + ২০১৭ – ১৫৫৬ = ১৪২৪ বাংলা সন।

যুক্তি যা-ই থাকুক, এখানে বলে রাখা ভালো, প্রথম প্রবর্তিত দিনপঞ্জিটি এখনও ভারতে অনুসরণ করা হলেও বাংলাদেশে অনুসরণ করা হয় এর পরিমার্জিত ও পরিবর্তিত রূপ। কারণ খুব ধীরে হলেও বছরের ঋতুবৈচিত্র্য তার পূর্বের সময় থেকে সরে গেছে। ফলে ওই দিনপঞ্জিটি প্রায় এখন অচলই বলা চলে। নতুন করে দিনপঞ্জিটি সময়োপযোগী করতে বাংলা একাডেমির পৃষ্ঠপোষকতায় মুহাম্মদ শহিদুল্লাহর নেতৃত্বে একটি কমিটি কাজ শুরু করে। এই কমিটি ১৯৬৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি নতুন পরিমার্জিত দিনপঞ্জিটি উপস্থাপন করে। আর ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে মুহাম্মদ শহিদুল্লাহর নেতৃত্বে প্রণীত দিনপঞ্জিটি বাংলাদেশ সরকার গ্রহণ করে।

ইংরেজি গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের মতই এই ক্যালেন্ডারেও বছরে তিনশ’ ৬৫ দিন রাখা হয়। তবে যেহেতু সূর্যের চারপাশে পৃথিবী তার পরিভ্রমণ শেষ করে তিনশ’ ৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা, ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডে, তাই এই বাড়তি সময় সমন্বয় করতে প্রতি ইংরেজি চার বছর (অধিবর্ষে) পরপর ফেব্রুয়ারি মাসের শেষে একদিন অতিরিক্ত যোগ করে নেওয়া হয়। নতুন করে পরিমার্জনের সময় বঙ্গাব্দের দিনপঞ্জিতেও এ সমস্যা দেখা দেয়। ফলে বাংলা একাডেমি কিছু সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্ধান্তগুলো হলো—বছরের প্রথম পাঁচমাস অর্থাৎ বৈশাখ থেকে ভাদ্র পর্যন্ত প্রতিটা মাস একত্রিশ দিনে হবে, পরবর্তী সাত মাস অর্থাৎ আশ্বিন থেকে চৈত্র পর্যন্ত প্রতিটা মাস ত্রিশ দিনে হবে এবং প্রতি অধিবর্ষে ফাল্গুন মাসে একদিন করে যোগ হবে।

প্রথম দিককার বঙ্গাব্দের ক্যালেন্ডারে অধিবর্ষ হিসাব করা হতো, বছরের সংখ্যা থেকে ৭ বিয়োগ করে সেই বিয়োগফলকে ৩৯ দিয়ে ভাগ করে। যদি ভাগশেষে শূন্য অথবা চার দিয়ে বিভাজ্য কোনও সংখ্যা হতো, তাহলে সেই বছরটি হতো অধিবর্ষ। অধিবর্ষে চৈত্র মাসের সাথে একদিন যোগ করে মাসটিকে একত্রিশ দিনে গণনা করা হতো। এতে প্রতি ঊনচল্লিশ বছরে দশবার করে অধিবর্ষ আসত।

বাংলাদেশে প্রবর্তিত নতুন দিনপঞ্জিতে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি শুরু হওয়া ফাল্গুন মাসে অতিরিক্ত একদিন যোগ করা হয়। এই সমন্বয়ের ফলে যে বছরটি গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে অধিবর্ষ, বাংলা ক্যালেন্ডারেও তা অধিবর্ষ হিসেবে গণনা করা হয়। যেমন—২০১৬ সাল ছিল ইংরেজি অধিবর্ষ। সে হিসাবে ১৪২২ সনটিও ছিল বাংলা অধিবর্ষ। এই সমন্বয়ের কারণে এখন আর অধিবর্ষ গণনায় কোনও গাণিতিক হিসাব মেলাতে হয় না।

ভারত উপমহাদেশে পঞ্জিকা-সংস্কার উদ্যোগ প্রথমে নেওয়া হয় মহারাষ্ট্রে। লোকমান্য বালগঙ্গাধর তিলক, শঙ্করবালকৃষ্ণ দীক্ষিত (দ্র. The Indian Calender, Robert Sewel & Sankara Balkrishan Dikshit : M. B. Das Publishers, Delhi, 1995), ভেংকটেশ বাপুশাস্ত্রী কেতকর, যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধি, ড. মেঘনাদ সাহা ও ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ প্রমুখ। শহীদুল্লাহ্ বাংলা একাডেমীর পঞ্জিকা সংস্কার কমিটির প্রধান ছিলেন। তাঁর সংস্কারের পর বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত একটি টাস্কফোর্স শহীদুল্লাহ্ কমিটির সংস্কার প্রস্তাবনার উন্নয়ন সাধন করেন। তা নিম্নরূপ :
১। সাধারণভাবে বাংলা বর্ষপঞ্জির বৈশাখ থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত প্রতিমাসে ৩১ দিন এবং আশ্বিন থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত প্রতিমাসে ৩০ দিন গণ্য করা হবে।
২। গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জির অধিবর্ষে যে বাংলা বছরের ফাল্গুন মাস পড়বে সেই বাংলা বছরকে অধিবর্ষ গণ্য করা হবে।
৩। অধিবর্ষে ফাল্গুন মাস ৩১ দিনে গণ্য হবে।
৪। আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী রাত ১২টায় তারিখ পরিবর্তিত হবে।

উপসংহারে, বাংলাদেশ এবং পশ্চিম বাংলায় বাংলা সন-তারিখে যে অসামঞ্জস্য দেখা দিয়েছে, সে প্রসঙ্গটি উল্লেখ করা দরকার। এই অসামঞ্জস্যের ফলে নববর্ষ, রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তি দুই অঞ্চলে একদিন আগে পরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর দায় বাংলাদেশের নয়। শহীদুল্লাহ্র সংস্কারে বিশ্ববিখ্যাত জ্যোতির্পদার্থবিদ মেঘনাদ সাহার সংস্কার প্রস্তাবকেই বাংলা একাডেমীর পঞ্জিকা সংস্কারে গ্রহণ করা হয়েছিল। পরবর্তীকালে ভারতে ড. সাহার প্রস্তাবের কিছু সংশোধন করে এস.পি. পাণ্ডে কমিটি ১৪ই এপ্রিলে পহেলা বৈশাখ নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। ভারত সরকার কর্তৃক গৃহীত পাণ্ডে শীর্ষক কমিটির রিপোর্টে বলা হয় “The Year shall start with the month of vaisaka when the sun enters niranayana mesa rasi which will be 14th April of the Gregorian calendar. (Indian Journal of History of sciences 39.4(2004) 519-534). বাংলা একাডেমীর টাস্কফোর্সও একই তারিখে পহেলা বৈশাখ নির্দিষ্ট করেছেন এবং বাংলাদেশে সরকারিভাবে তা চালু হয়েছে। কিন্তু ভারতে সেখানকার পঞ্জিকাকারদের ব্যবসায়িক স্বার্থে পান্ডে কমিটির রিপোর্ট কার্যকর হয় নি।

বঙ্গাব্দের বারো মাসের নামকরণ করা হয়েছে নক্ষত্রমন্ডলে চন্দ্রের আবর্তনে বিশেষ তারার অবস্থানের উপর ভিত্তি করে। এই নাম সমূহ গৃহীত হয়েছে জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ক প্রাচীন গ্রন্থ ‘সূর্যসিদ্ধান্ত’ থেকে। বাংলা মাসের এই নামগুলি হচ্ছেঃ –
১। বৈশাখ – বিশাখা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
২। জ্যৈষ্ঠ – জ্যেষ্ঠা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
৩। আষাঢ় – উত্তর ও পূর্ব আষাঢ়া নক্ষত্রের নাম অনুসারে
৪। শ্রাবণ – শ্রবণা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
৫। ভাদ্র -উত্তর ও পূর্ব ভাদ্রপদ নক্ষত্রের নাম অনুসারে
৬। আশ্বিন – অশ্বিনী নক্ষত্রের নাম অনুসারে
৭। কার্তিক – কৃত্তিকা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
৮। অগ্রহায়ণ(মার্গশীর্ষ) – মৃগশিরা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
৯। পৌষ – পুষ্যা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
১০। মাঘ – মঘা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
১১। ফাল্গুন – উত্তর ও পূর্ব ফাল্গুনী নক্ষত্রের নাম অনুসারে
১২। চৈত্র – চিত্রা নক্ষত্রের নাম অনুসারে

তবে সম্রাট আকবর কর্তৃক প্রবর্তিত তারিখ-ই-ইলাহী-র মাসের নামগুলি প্রচলিত ছিল পারসি ভাষায়, যথা: ফারওয়াদিন, আর্দি, ভিহিসু, খোরদাদ, তির, আমারদাদ, শাহরিযার, আবান, আযুর, দাই, বহম এবং ইসক্নদার মিজ।

বাংলা সাত দিনের কথাঃ
বাংলা সন অন্যান্য সনের মতোই সাত দিনকে গ্রহণ করেছে এবং এ দিনের নামগুলো অন্যান্য সনের মতোই তারকামন্ডলীর উপর ভিত্তি করেই করা হয়েছে।

১। শনিবার হচ্ছে শনি গ্রহের নাম অনুসারে
২। রবিবার হচ্ছে রবি বা সূর্য দেবতার নাম অনুসারে
৩। সোমবার হচ্ছে সোম বা শিব দেবতার নাম অনুসারে
৪। মঙ্গলবার হচ্ছে মঙ্গল গ্রহের নাম অনুসারে
৫। বুধবার হচ্ছে বুধ গ্রহের নাম অনুসারে
৬। বৃহস্পতিবার হচ্ছে বৃহস্পতি গ্রহের নাম অনুসারে
৭। শুক্রবার হচ্ছে শুক্র গ্রহের নাম অনুসারে

সূর্যের ভিন্ন অবস্থান নির্ণয় করা হয় আকাশের অন্যান্য নক্ষত্রের ওপর বিচার করে। প্রাচীন কালের জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সূর্যের বার্ষিক অবস্থান অনুসারে আকাশকে ১২টি ভাগে ভাগ করেছিলেন। এর একটি ভাগকে তাঁরা নাম দিয়েছিলেন রাশি। আর ১২টি রাশির সমন্বয়ে যে পূর্ণ আবর্তন চক্র সম্পন্ন হয়, তার নাম দেওয়া হয়েছে রাশিচক্র। এই রাশিগুলোর নাম হলো মেষ, বৃষ, মিথুন, কর্কট, সিংহ, কন্যা, তুলা, বৃশ্চিক, ধনু, মকর, কুম্ভ ও মীন। সূর্যের বার্ষিক অবস্থানের বিচারে, সূর্য কোনো না কোন রাশির ভিতরে অবস্থান করে। এই বিচারে সূর্য পরিক্রমা অনুসারে, সূর্য যখন একটি রাশি থেকে অন্য রাশিতে যায়, তখন তাকে সংক্রান্তি বলা হয়। এই বিচারে এক বছরে ১২টি সংক্রান্তি পাওয়া যায়। একেকটি সংক্রান্তিকে একেকটি মাসের শেষ দিন হিসেবে গণ্য করা হয়। যেদিন রাত্রি ১২টার মধ্যে সূর্য্য ০ ডিগ্রি দ্রাঘিমাংশে প্রবেশ করে তার পরদিনই ১ বৈশাখ (পয়লা বৈশাখ) হয়। যেদিন রাত্রি ১২টার মধ্যে সংক্রান্তি হয় তার পরদিনই মাসের প্রথম দিন। মূলত একটি সংক্রান্তির পরের দিন থেকে অপর সংক্রান্ত পর্যন্ত সময়ই হচ্ছে সৌর মাস। সূর্য পরিক্রমণ অনুসারে সূর্য প্রতিটি রাশি অতিক্রম করতে একই সময় নেয় না। মাস ভেদে সূর্যের একেকটি রাশি অতিক্রম করতে সময় লাগতে পারে, ২৯, ৩০, ৩১ বা ৩২ দিন। সেই কারণে প্রতি বছর বিভিন্ন মাসের দিনসংখ্যা সমান হয় না। এই সনাতন বর্ষপঞ্জি অনুসারে বছর ঋতুভিত্তিক থাকে না। ক্রমশ মূল ঋতু থেকে পিছিয়ে যেতে থাকে।

এসবের ওপর ভিত্তি করে আবার লেখা হয়েছে পঞ্জিকা। পঞ্জিকায় প্রতিটি রাশি অনুসারে ব্যক্তির সারা বছরের ভাগ্যফল, স্বাস্থ্য, চাকরি, ব্যবসা কেমন যাবে এবং এ থেকে প্রতিকারের কী উপায়! গ্রহ নক্ষত্রের আবস্থান অনুসারে আবহাওয়া বিচার, জোয়ার-ভাটা, সূর্যগ্রহণ, চন্দ্রগ্রহণ, অমাবস্যা-পূর্ণিমার সময় তারিখ, শুভদিনের নির্ঘণ্ট, বৈষ্ণবব্রত তালিকা, একাদশীর তালিকা, বিবাহলগ্ন, বর-কনের মিলনচক্র, উপনয়ন অন্নপ্রাশন গর্ভধারণ শৌচাদি প্রায়শ্চিত্ত ব্যবস্থা আবার প্রতিদিনের সূযোদয় সূর্যাস্তলগ্ন, শুভযাত্রা, শুভকর্ম, কোথায় কোন উৎসব রাশিফল এসব পঞ্জিকায় খুঁজে পাওয়া যায়। তাছাড়াও হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজার বিধি, শবদাহ ব্যবস্থা, দশবিধ সংস্কারসহ বিভিন্ন স্তব স্তোস্ত্র।

পঞ্জিকা লেখাহয় চন্দ্রমাসের হিসেবে। একটি পঞ্জিকা রচনায় অনেক আচার্যের সহযোগিতা প্রয়োজন। কারণ প্রতিটি তিথি, ক্ষণ যোগ খুটে খুটে হিসেব করে বের করতে হয়। হিসেবে সামান্য গড়মিল হলে সব হিসেবই ভেস্তে যেতে পারে।

পঞ্জিকার ইতিহাসও নেহায়েত কম নয়। স্নার্ত ও সংস্কৃত পন্ডিত রঘুনন্দন ভট্টাচার্য সম্পাদিত ‘নবদ্বীপ’ পঞ্জিকাটি বের হয়েছিল ষোল শতকে। তার পরে রাজা কৃষ্ণ চন্দ্রের সময়ে এর গণনার দায়িত্ব পালন করেন যথাক্রমে রামচন্দ্র বিদ্যানিধী এবং বিশ্বম্ভর জ্যোতিষার্ণব। এ পঞ্জিকাটি বেশকিছুদিন বন্ধ থাকে। পরে ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে পঞ্জিকাটি মুদ্রিত আকারে প্রকাশিত হতে থাকে। এটিই প্রথম মুদ্রিত পঞ্জিকা। ১২৯৭ বঙ্গাব্দ থেকে প্রকাশিত হয় বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা। দেশভাগের পর ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকারের তত্ত্বাবধায়নে পঞ্জিকাগুলোর সংস্কার কার্য শুরু হয়। এই পঞ্চাঙ্গ শোধন সমিতির সভাপতি ছিলেন বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা। অন্যদিকে বাংলা সনের পুরোনো নিয়মে মাসের হিসেব নির্দিষ্ট করা যায় না বলে ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে বাংলা একাডেমীর উদ্যোগে একটি সংস্কার কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির সভাপতি ছিলেন ড. মুহম্মদ শহিদুল্লাহ। বাংলা মাস ২৯ ও ৩২ দিনের পরিবর্তে প্রথম পাঁচমাস ৩১ দিনের এবং পরবর্তী ৭ মাস ৩০ দিনের করা হয়। তবে ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে সরকারিভাবে খ্রিস্টিয় সনের পাশাপাশি বাংলা সাল লেখার রীতি চালু হলে শুরু হয় এই গণনা পদ্ধতি।

পঞ্জিকা সংস্কারের জন্যে ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ সরকার সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় টাস্ক ফোর্স গঠন করে। তাদের সুপারিশ দেয় বৈশাখ থেকে ভাদ্র পর্যন্ত প্রতিমাস ৩১ দিনে এবং আশ্বিন থেকে চৈত্র পর্যন্ত প্রতিমাস ৩০ দিনে। তবে গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জির অধিবর্ষে ফাল্গুন মাস ৩১ দিনে গণনা করা হয়্। আর তারিখ পরিবর্তনের সময় হবে আন্তর্জাতিক রীতি অনুসারে রাত ১২টায়। ১৪০২ সালের বৈশাখ থেকে এ নিয়ম কার্যকর করা হয়।

এক সময় মানুষ পঞ্জিকার ওপর নির্ভর করেই সব কাজকর্ম পরিচালনা করত। প্রযুক্তির এই যুগে পঞ্জিকার চাহিদা আনেক ক্ষেত্রে কমে এলেও গ্রাম বাংলার মানুষ এখনো পঞ্জিকার ওপর নির্ভর করেই দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন ।

উৎস- বাংলাপিডিয়া, বাংলাদেশ জাতীয় জ্ঞানকোষ ও উইকিপিডিয়া

সম্পাদনায়- মাহবুব এইচ শাহীন/প্রকাশক ও সম্পাদক/কাগজ২৪

One thought on “বাংলা সন ও পঞ্জিকার ইতিহাস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!