বাথটাবে তারকাদের মৃত্যু

জিম মরিসন

বিশ্বজুড়ে লাখো কোটি দর্শককে কাঁদিয়ে মাত্র ২৭ বছর বয়সে মৃত্যু হয় জিম মরিসনের। প্যারিসে নিজের অ্যাপার্টমেন্টে বাথটাবে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় তাকে। হার্ট অ্যাটাকে তার মৃত্যু হয় বলে জানা যায়। তার পুরো নাম জেমস ডগলাস মরিসন। ৮ ডিসেম্বর, ১৯৪৩-এ জন্ম নেওয়া মরিসন কেবল একজন গায়কই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একাধারে একজন সংগীতশিল্পী, গীতিকার, লেখক, চলচ্চিত্র পরিচালক এবং কবি। তিনি বেশি পরিচিত ছিলেন আমেরিকান রক ব্যান্ড দ্য ডোরসের প্রধান গায়ক ও গীতিকার হিসেবে। তাকে রক সংগীতের অন্যতম অগ্রদূত হিসেবে গণ্য করা হয়। তিনি বেশকিছু কবিতার বই রচনা করেন এবং একটি তথ্যচিত্র, একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও তিনটি মিউজিক ভিডিওর নির্মাতা। তার মৃত্যু মানুষকে নাড়িয়ে দিয়েছিল।

ববি ক্রিস্টিনা

ববি ক্রিস্টিনা ব্রাউন হলেন খ্যাতিমান গায়িকা হুইটনি হাউস্টনের মেয়ে। মার্কিন রিয়েলিটি টিভি শোর খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব ছিলেন ববি ক্রিস্টিনা ব্রাউন। মায়ের মতো গায়িকা হিসেবেও তার পরিচিতি ছিল। মাত্র ২২ বছর বয়সে মারা যান। মা হুইটনি হাউস্টনের মতো তার মৃত্যুও বাথটাবে ডুবেই হয়েছে বলা যায়। প্রায় পাঁচ মাস কোমায় ছিলেন তিনি। এরপর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বাবা মা বিখ্যাত হওয়ায় ছোটবেলা থেকেই বার বার পত্রিকার শিরোনাম হয়েছিলেন। তার মৃত্যু যেন সবাইকে ফের মনে করিয়ে দিয়েছে তাঁর মা হুইটনি হিউস্টনের শেষের দিনগুলোর কথা। ২০১২ সালে লস অ্যাঞ্জেলেসের একটি হোটেলের বাথরুমে পাওয়া গিয়েছিল হুইটনির হাউস্টনের মৃতদেহ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছিল, জলভর্তি বাথটাবে ডুবেই মৃত্যু হয়েছিল তার।

জুডি গারল্যান্ড

জুডি গারল্যান্ড ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের নামি-দামি অভিনেত্রী ও সংগীত তারকা। ১৯২২ সালের ১০ জুন জন্ম নেওয়া জুডি অল্প বয়সেই গান আর অভিনয়ে পরিচিতি পান। লাস্যময়ী এই জুডি গারল্যান্ড গান এবং অভিনয়ের মাধ্যমে জয় করেছিলেন বিশ্বজুড়ে অগণিত মানুষের হৃদয়। ১৯৬৬ সালে মাত্র ৪৪ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। ১৯৩৯ সালের ধ্রুপদী চলচ্চিত্র দ্য উইজার্ড অব অজ-এ অভিনয় করে বিশ্বজোড়া খ্যাতি পান। পরবর্তীতে এটি পৃথিবীর ইতিহাসে সেরা ১০টি চলচ্চিত্রের তালিকায় স্থান পায়। এই সুন্দরী অভিনেত্রী ও গায়িকা নিজে অস্কার না পেলেও অর্জন করেন বহু নামি-দামি পুরস্কার। কিন্তু তার মেয়ে লিজা মিনেলি অস্কার জয় করেন ঠিকই। লন্ডনে ভাড়া করা বাসার গোসলখানার বাথটাবে পাওয়া যায় জুডি গারল্যান্ডের লাশ।

এলভিস প্রিসলি

বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে জনপ্রিয় গায়কদের একজন এলভিস প্রিসলি। তার গাওয়া প্রথম একক গান ১৯৫৬ সালের জানুয়ারিতে মুক্তি পেয়েই আমেরিকান টপচার্টের শীর্ষে স্থান করে নেয়। এর পরে তিনি টেলিভিশনে গান শুরু করেন। কণ্ঠশিল্পীর পাশাপাশি তিনি একজন চলচ্চিত্র অভিনেতাও ছিলেন। তার ব্যান্ডদলের নাম ছিল দ্য ব্লু মুন বয়েজ। এ দলের সদস্য সংখ্যা ছিল তিনজন। ১৯৫৮ সালে তিনি বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। ২ বছর পর তিনি সেনাবাহিনী ছেড়ে আবার সংগীত জগতে ফিরে আসেন কিছু তুমুল জনপ্রিয় গানের মাধ্যমে। তিনি জীবনের শেষদিকে এসে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছিলেন বলে জানা যায়। ১৯৭৭ সালের ১৬ আগস্ট হঠাৎ তাকে বাথরুমে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। রহস্যজনক মৃত্যুর কারণ হিসেবে মাদকদ্রব্যকেই অভিহিত করেন অনেকে।

লেনি ব্রুস

লেনি ব্রুস ছিলেন প্রখ্যাত কমেডিয়ান। গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে আছে তার অগণিত ভক্ত। এই অভিনেতার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছিল ভক্তকুলে। এই জনপ্রিয় কমেডিয়ান লেনি ব্রুসের মৃত্যুও হয় বাথরুমে। তিনি গত শতাব্দীর ৫০ ও ৬০-এর দশকে রাজনীতি, সমাজনীতি, ধর্ম, গর্ভপাত, বর্ণবাদ ইত্যাকার বিষয় তুলে ধরেছিলেন। সমাজের নানা অসংগতি বিষয়ক তার কমেডি ব্যাপক আলোচনার বিষয় হয়েছিল তার সময়। স্বাভাবিকভাবেই তিনি এক শ্রেণির মানুষের সমালোচনারও শিকার হয়েছিলেন। তৈরি হয়েছিল শত্রু। অনেকবার পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছিল। হলিউড হিলসের নিজ বাড়িতে ১৯৬৬ সালের ৩ আগস্ট বাথরুমে কমোডের পাশে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় তাকে। ফরেনসিক রিপোর্টে জানা যায়, মাত্রাতিরিক্ত মরফিন গ্রহণের ফলে তার মৃত্যু হয়।

সুপারস্টার শ্রীদেবী

বাথটাবে মৃত্যুর সারিতে সর্বশেষ যুক্ত হয় বলিউডের ফিমেল সুপারস্টার খ্যাত অভিনেত্রী শ্রীদেবী। তবে হৃদরোগ কিংবা ড্রাগের প্রভাবে নয়, দুবাইতে বলিউডের কিংবদন্তি অভিনেত্রী শ্রীদেবী ‘দুর্ঘটনাবশত জলে ডুবে’ মারা গেছেন বলেই তার ফরেনসিক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়। দুবাই শহরের একটি বিলাসবহুল হোটেলের বাথরুমে গত বছর ২৪ ফেব্রুয়ারি রাতে শ্রীদেবীকে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। তার স্বামী বনি কাপুর বাথটাবে স্ত্রীকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। শুরুতে এই মৃত্যুকে ঘিরে ক্রমশ নানা রহস্য দানা বাঁধছিল। তিনি ঠিক কীভাবে, কোন পরিস্থিতিতে মারা গেছেন তা নিয়ে অনেক জল্পনা-কল্পনা তৈরি হয়েছিল জনমনে। তবে সব আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে দুবাইয়ের নামি পত্রিকা খালিজ টাইমস ও গালফ নিউজ উভয়েই রিপোর্ট করে শ্রীদেবীর ময়নাতদন্ত রিপোর্টে জলে ডুবে মৃত্যুর কথাই বলা হয়েছে। এই মৃত্যুর পেছনে কোনো ‘ক্রিমিনাল মোটিভ’ খুঁজে পাওয়া যায়নি বলেও খালিজ টাইমস দাবি করে। ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী শ্রীদেবী তামিল, তেলেগু, হিন্দি, মালয়ালম এবং কিছুসংখ্যক কন্নড় চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন। তিনি হিন্দি চলচ্চিত্রে প্রথম নারী সুপারস্টার বিবেচিত হন। বিনোদন শিল্পে তার অবদানের জন্য ২০১৩ সালে ভারত সরকার তাকে দেশটির চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মশ্রী পদকে ভূষিত করে। ভারতীয় চলচ্চিত্রের শতবর্ষপূর্তি উপলক্ষে ২০১৩ সালে সিএনএন-আইবিএনের এক জরিপে তিনি ‘১০০ বছরে ভারতের সেরা অভিনেত্রী’ হিসেবে নির্বাচিত হন।

হুইটনি এলিজাবেথ হাউস্টন

.হুইটনি এরিজাবেথ হাউস্টনকে বলা হয় তার সময়ের বিপুল জনপ্রিয় একজন গায়িকা। ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি এক হোটেলে নিজের স্যুইটের বাথটাব থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয় তাকে। ততক্ষণে মৃত ছিলেন হুইটনি এলিজাবেথ হাউস্টন। এর মাত্র দুই দিন আগে তিনি জীবনের শেষ অনুষ্ঠানে পারফর্ম করেছিলেন। ১৯৯২ সালে রোমান্টিক থ্রিলার বডিগার্ড-এ লিড রোলে অভিনয় করেও প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন তিনি। তার গাওয়া এই ছবির ‘আই উইল অলওয়েজ লাভ ইউ’ কোনো নারী কণ্ঠের একক অ্যালবাম হিসেবে বেস্ট-সেলিং মর্যাদা পায় এবং ‘রেকর্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে গ্রামি অ্যাওয়ার্ড জেতেন। পপ সম্রাজ্ঞী হুইটনি হাউস্টনের বয়স হয়েছিল মাত্র ৪৮ বছর। কিংবদন্তি এই সংগীত শিল্পী একাধারে অভিনেত্রী, মডেল এবং প্রযোজক হিসেবেও সুনাম অর্জন করেন। ২২টি আমেরিকান মিউজিক অ্যাওয়ার্ড জয়ী হুইটনি জায়গা করে নিয়েছেন গিনিস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডেও। উৎস-বাংলাদেশ প্রতিদিন। সূত্র-বাংলাদেশ প্রতিদিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!