মারজানের মা বললেন ছেলে দেশের ক্ষতি করছে, বিচার হয়ে গেছে খুশি হইছি

 

 

অনলাইন ডেস্ক । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডি.কম

নব্য জেএমবি নেতা নুরুল ইসলাম ওরফে মারজানের ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মৃত্যুকে তার কৃতকর্মের শাস্তি বলে মনে করছেন তার মা সালমা খাতুন। তবে মারজানকে যারা জঙ্গি বানিয়েছে তাদের বিচার চাওয়ার পাশাপাশি ছেলের বউ ও তাদের সন্তানকে ফেরত দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

একই ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত জেএমবির আরেক জঙ্গি সাদ্দাম হোসেনের স্বজনরা দাবি করছে, ৯ মাস আগে শ্বশুরবাড়ি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থেকে পুলিশ পরিচয়ে কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার সাদ্দামকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এরপর থেকে তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বেড়িবাঁধ এলাকায় পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে মারজান ও সাদ্দাম নিহত হয়।

মারজানের মা সালমা খাতুন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘দেশের ক্ষতি করছে আমার ছেলে, আমার ছেলে অপরাধ করছে, তাই যা হওয়ার হয়ে গেছে। ছেলের বিচার হয়ে গেছে খুশি হইছি’। কিন্তু, আমার ছেলে একটা নিষ্পাপ শিশু রাইখে গেল, আমার ব্যাটার বউটা জেলের ভেতরে রয়েছে। দেখার মানুষ কেউ নেই।

গুলশান হামলার পর সারা দেশে জঙ্গিবিরোধী অভিযানের মধ্যে গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর পুলিশ আজিমপুরের একটি বাড়িতে অভিযানে গেলে আরো দুই জঙ্গির স্ত্রীর সঙ্গে গ্রেপ্তার হন মারজানের স্ত্রী আফরিন আক্তার প্রিয়তি ওরফে ফাতেমা ফেরদৌসী (২২)। ২০ ডিসেম্বর রাতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাঁর কন্যাসন্তানের জন্ম হয়। প্রিয়তি ও তাঁর মেয়েকে ফেরত দিতে সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন মারজানের মা।

মারজানের বাবা নিজাম উদ্দিন বলেন, সকাল ৮টার দিকে প্রতিবেশীদের মাধ্যমে ছেলের মৃত্যুর খবর জানতে পারি। এখন মারজান যদি অপরাধী হয়, তাহলে সরকার তার বিচার করছে। তবে ছেলের মুখ থেকে শুনতে পারলাম না যে সে সত্যি জঙ্গির সঙ্গে জড়িত কি না। এখন সরকার যদি আমার ছেলের লাশ বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করে, তাহলে দাফনের ব্যবস্থা করব। আর না দিলে আমার সামর্থ্য নেই যে ঢাকায় গিয়ে ছেলের লাশ নিয়ে আসব।

নিজাম উদ্দিন আরো জানান, ১০ ভাইবোনের মধ্যে মারজান ছিল দ্বিতীয়। পড়ালেখা করত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগে। গত বছরের জানুয়ারিতে গ্রামের বাড়িতে এসে খালাত বোন প্রিয়তিকে বিয়ে করে চট্টগ্রাম চলে যায়। এরপর থেকে পরিবারের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল না।

সাদ্দামের ভাই মিজানুর রহমান জানান, সাদ্দামের নামে দুটি মামলা রয়েছে। একটি জাপানি নাগরিক হত্যা, অন্যটি কাউনিয়ায় মাজারের খাদেম হত্যা। যার ওয়ারেন্ট এসেছে তাঁদের বাড়িতে।   তিনি আরো জানান, গত বছরের ১৪ এপ্রিল গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার দহবন্দ ইউনিয়নের গোপালচরণ এলাকার শ্বশুরবাড়ি থেকে পুলিশ পরিচয়ে সাদ্দামকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে তার আর কোনো খোঁজ তাঁরা পাননি। সুন্দরগঞ্জ থানায় গেলে পুলিশ জানায়, তারা সাদ্দামকে আটক করেনি। জিডি করতে চাইলে পুলিশ জিডিও নেয়নি।

বাবা তাজু আলম জানান, সাদ্দামকে তুলে নেওয়ার তিন মাস পর তার স্ত্রীর প্রথম ছেলে হয়। সন্তান হওয়ার পর থেকে সাদ্দামের স্ত্রী-সন্তানসহ তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন কোথায় চলে গেছে তা জানেন না তিনি। তাজু আরো জানান, ছয় ছেলেমেয়ের মধ্যে পঞ্চম সাদ্দাম ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে লালমনিরহাট সরকারি কলেজে ইতিহাস বিভাগে স্নাতক (সম্মান) প্রথমবর্ষের ছাত্র ছিল। বাড়ি থেকে কলেজে যাতায়াত করত। লেখাপড়া করা অবস্থায় ২০১৪ সালের ২৭ ডিসেম্বর বিয়ে করে ফারজানাকে। তাজু বলেন, ‘আমার ছেলে জঙ্গি কি না জানি না। ছেলের লাশ ফেরত চাই। ’

সাধারণ কৃষক পরিবারের সন্তান সাদ্দামের জঙ্গি হয়ে ওঠার বিষয়ে গ্রামবাসীও কিছুই জানে না। প্রতিবেশী আনছার আলী ও কছিরন জানান, সাদাসিধে ও ভদ্র ছেলে ছিল সাদ্দাম। সে কী করে জঙ্গি হলো বুঝতে পারছে না তারা। স্থানীয় মেম্বার আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা অনেক দিন ধরে সাদ্দামের কোনো খবর পাচ্ছিলাম না। ’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!