সিপাহী-জনতার বিপ্লবকালীন সময়ে জাতির উদ্দেশ্যে স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এর ভাষণ সমূহ

অনলাইন ডেস্ক  কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

৭ নভেম্বর ১৯৭৫ প্রত্যুষে জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণ:

প্রিয় দেশবাসী,
আসসালামু আলাইকুম।
আমি মেজর জেনারেল জিয়া বলছি, বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জনগণ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বিডিআর, পুলিশ আনসার এবং অন্যান্যদের অনুরোধে আমাকে সাময়িকভাবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের চীফ মার্শাল ‘ল’ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর ও সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করতে হয়েছে। এই দায়িত্ব ইনশাল্লাহ আমি সুষ্ঠুভাবে পালন করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করবো।
আপনারা সকলে শান্তিপূর্ণভাবে যথাস্থানে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করুন। দেশের সর্বত্র অফিস, আদালত, যানবাহন, বিমানবন্দর, মিল-কারখানাগুলো পূর্ণভাবে চালু থাকবে। আল্লাহ আমাদের সকলের সহায় হোন।
খোদা হাফেজ
বাংলাদেশ জিন্দাবাদ
https://www.bnpbd.org/page/details/527


৭ নভেম্বর ১৯৭৫ অপরাহ্নে জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণ:

প্রিয় দেশবাসী,
আসসালামু আলাইকুম,
বাংলাদেশের জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে ও নিরাপত্তা বিধানে অংশগ্রহণকারী সেনা, নৌ, বিমান, বিডিআর, পুলিশ, আনসার বহিনীর ভাইদের এবং মুক্তিযোদ্ধা ও প্রাক্তন সৈনিকদের আমি অভিনন্দন জানাচ্ছি সশস্ত্র বাহিনীর ভাইদের স্ব স্ব কর্তব্যস্থলে প্রত্যাবর্তনের জন্য আমি অনুরোধ জানচ্ছি। মহত্তর উদ্দেশ্য সাধনে সর্বান্তকরণে সমর্থন জ্ঞাপনের জন্য এবং আল্লাহতালার উপর অবিচল আস্থা স্থাপনের জন্য আমি দেশপ্রেমিক জনসাধারণের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
আল্লাহতালা আমাদের সকলের সহায় হোন।
খোদা হাফেজ
বাংলাদেশ জিন্দাবাদ
https://www.bnpbd.org/page/details/528


১১ই নভেম্বর ১৯৭৫ জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণ:

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
প্রিয় দেশবাসী
আসসালামু আলাইকুম।
সেনাবহিনী, নৌবহিনী, বিমানবহিনী, বিডিআর, পুলিশ, আনসার, ছাত্র, শ্রমিক ও সর্বস্তরের জনগণে অভূতপূর্ব সংহতির বহিঃপ্রকাশের মধ্য দিয়ে গত ৭ নভেম্বর এক ইতিহাস রচিত হয়। ঐ ঘটনাবহুল দিনে আমি রেডিও বাংলাদেশের মাধ্যমে আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছিলাম। আমি সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, দেশে সামরিক আইন জারি আছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় সময়ের অতিরিক্ত সরকার সামরিক আইন বলবৎ না রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আজ জাতির সামনে সবচেয়ে বেশি যা প্রয়োজন তা হচ্ছে জনগণের মধ্যে ঐক্যবোধ, সামরিক বাহিনীর মধ্যে একতা এবং প্রশাসন ও জনগণের মধ্যে সম্প্রীতি। আমি রাজনীতিবিদ নই। আমি একজন সৈনিক। কতিপয় মহলের বিভিন্ন প্রচারণার সঙ্গে আমার নাম জড়িত দেখে আমি বিস্মিত হয়েছি। আমি পরিষ্কারভাবে বলে দিতে চাই যে, রাজনীতির সঙ্গে আমার কোন সম্পর্ক নেই এবং আমার সরকার সম্পূর্ণ নির্দলীয় ও অরাজনৈতিক।
স্বার্থান্বেষী মহল ভুয়া পরিচয় দিয়ে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে সামরিক বাহিনীর নামে জনগণকে হয়রানী করারও প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তারা জনগণের মধ্যে নিরাপত্তার অভাব ও হতাশা সৃষ্টির হীন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
সমাজের সর্বস্তরের জনগণের কাছে আমার আজ বিশেষ অনুরোধ, আপনারা এই ষড়যন্ত্রকারীদের উপর সজাগ দৃষ্টি রাখবেন। আমি প্রতিটি নাগরিককে এই সময়ে সরকারকে সহায়তা করার আহ্বান জানাই। দেশে সামরিক আইন বলবৎ থাকা সত্ত্বেও স্বার্থান্বেষী মহল সামিরিক আইনের বিরুদ্ধে তৎপর হয়ে ওঠার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। দেশের প্রশাসনকে সুষ্ঠুভাবে কাজ করতে না দেয়াই এদের উদ্দেশ্য। আমাদের প্রিয় দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্তকারীদের অসৎ উদ্দেশ্য সম্পর্কে দেশবাসী সজাগ থাকবেন বলে আমি আশা করি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, দেশপ্রেমিক প্রতিটি নাগরিক রাষ্ট্র বিরোধীদের এই হীন ষড়ন্ত্র নস্যাৎ করে দেবেন।
আমার সামরিক বাহিনীর সহকর্মীবৃন্দ ও আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা আপনাদের কল্যাণ এবং স্বার্থ রক্ষা করে একটি আধুনিক এবং দক্ষবাহিনী হিসেবে বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীকে গড়ে তোলা। গত ১৪ আগস্ট পর্যন্ত আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর দূরবস্থা সম্পর্কে আপনারা সবাই অবগত আছেন স্বাদীনতার পর ঐদিন পর্যন্ত যে কাজ করে চলেছে। অবশেষে, আমি সর্বস্তরের জনগণ এবং সশস্ত্র বাহিনীর বীর সেনানীদের অনুরোধ জানাচ্ছি যে, তাঁরা যেন কোন স্বার্থান্বেষী মহলের প্ররোচনায় বিভ্রান্ত না হন। জাতির এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে দেশপ্রেমিক জনগণকে রাষ্ট্রবিরোধী যে কোন মহলের চাপের শিকার না হওয়ার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। আমি আশাবাদী আপনারা আমাকে এবং আমার সহকর্মীবৃন্দকে সর্বান্তকরণে সহযোগিতা ও সহায়তা দান করবেন।
খোদা হাফেজ
বাংলাদেশ জিন্দাবাদ
https://www.bnpbd.org/page/details/532


২৩ নভেম্বর ১৯৭৫ জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণ:

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
প্রিয় দেশবাসী,
আসসালামু আলাইকুম।
গত ৭ ও ১১ নভেম্বর বেতর ও টেলিভিশনের মাধ্যমে আমি আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছিলাম। তখন থেকে আমি গর্বের সঙ্গে লক্ষ্য করছি জনসাধারণ কিভাবে সশস্ত্র বাহিনীর সাথে তাদের সংহতি প্রকাশ করছে। স্বতঃস্ফূর্তভাবে সামরিক আইন প্রশাসনের সাথে সহযোগিতা করছে।

এই ঘটনা সত্ত্বেও রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় এবং অসৎ উদ্দেশ্য প্রণোদিত কিছু লোক বিভ্রান্তিকর প্রচারণায় নিয়োজিত হয়েছে। এই সমস্ত ব্যক্তি তাদের হীনস্বার্থ সিদ্ধির উদ্দেশ্যে এখনো সামরিক বাহিনী ও প্রশাসনের নাম ব্যবহার করে চলেছে।

আমার প্রিয় দেশবাসী। আভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ক্ষেত্রে আমাদের নীতি পুনরায় ঘোষণা করছি। আমাদের সরকার সম্পূর্ণ নির্দলীয় ও অরাজনৈতিক। সামরিক বাহিনী সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করাই আমাদের উদ্দেশ্য। এই উদ্দেশ্য সাধনে আমাদের প্রশাসনকে দৃঢ় ও কার্যকরী রাখতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমাদের এই উদ্দেশ্য হাসিলে  প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে এমন কোন হস্তক্ষেপ তা যে কোন মহল থেকেই আসুক না কেন আমরা তা বরদাস্ত করব না। আমাদের এই উদ্দেশ্য সাধনের জন্য একটি সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করতে আমরা বদ্ধপরিকর। এই পরিবেশ সৃষ্টির জন্য মৌলিক প্রয়োজন দেশে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখা। বেআইনী অস্ত্রধারীরাই এই শান্তি ও শৃঙ্খলার সবচেয়ে বড় শত্রু। প্রতিটি শান্তিকামী নাগরিকের কাছে আমাদের আবেদন, তাদের উপযুক্ত শাস্তি প্রদানে আপনারা সহযোগিতা করুন।

পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে আমাদের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক প্রশাসক জোটনিরপেক্ষ নীতির কথা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় উল্লেখ করেছেন, আমরা আমাদের সকল বন্ধুদের আশ্বাস দিচ্ছি তাদের সঙ্গে আমাদের বর্তমান সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব।

আমি পুনরায় ঘোষণা করছি, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো প্রতি বিদ্বেষ নয়Ñএই নীতি আমরা অনুসরণ করে চলব।

গত কয়েক মাস আমাদের জনগণ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন। সামরিক বাহিনী ও সামরিক আইন প্রশাসনের প্রতি আপনাদের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থনের জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।

আমাদের দেশপ্রেমিক জনগণ ভাল করেই জানেন, কারা দেশের বন্ধু ও কারা দেশে শত্রু। কারা দেশের স্বার্থ ও কারা দেশের স্বার্থবিরোধী কাজে লিপ্ত। এ সম্পর্কের আমাদের জনগণ সজায় রয়েছে। জনসাধারণের কাছে আমার আবেদন, যারা হিংসাত্মক ও নাশকতামূলক কাজে লিপ্ত এবং যে সমস্ত বহিঃশক্তি আমাদের ধ্বংস করার অপচেষ্টায় নিয়োজিত তাদের উপর সতর্ক দৃষ্টি রাখুন।

আমাদের অঙ্গীকার পালনের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে আমরা অনেক রাজবন্দীদের মুক্তি দিয়েছি এবং আরও অনেকে পর্যায়ক্রমে মুক্তি পাবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় কোন কোন মহল আমাদের এই সদিচ্ছাকে দুর্বলতা বলে ধরে নিয়েছেন এবং আমাদের সদিচ্ছাকে নস্যাৎ করার জন্য তৎপর হয়ে উঠেছেন। সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রচেষ্টাকে বানচাল করার জন্য তারা তাদের উদ্দেশ্য প্রকাশ্যে ব্যক্ত করেছেন। নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। কোন কোন মহল তাদের অতীত হীন কার্যকলাপের কথা ভুলে গিয়ে দেশের সার্বভৌমত্ব বিরোধী চক্রের সঙ্গে হাত মেলানোর চেষ্টায় লিপ্ত। বহিঃশক্তির সহায়তায় এই মহল পুনরায় তৎপর হওয়ার সুষ্পষ্ট আভাস দিয়েছে।

প্রিয় দেশবাসী,
এরা কারা আমাদের তা বলে দিতে হবে না। আপনারা তা জানেন। আপনারা জানেন তারা কি করতে চায় এবং তাদের অনুপ্রেরণা কোথা থেকে আসে। জনগণের জানমালের ক্ষতিসাধনের জন্যই তারা তৎপর। আমরা দেশে আর বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে দেব না, আর রক্তপাত সহ্য করব না। এরা হচ্ছে রাষ্ট্রবিরোধী চক্র। এদের পেছনে জসমর্থন কতটুকু তা সবার জানা আছে। আপনারা জানেন নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য তারা সামরিক বাহিনীর সম্পূর্ণভাবে ঐক্যবদ্ধ এবং জনগণের ইচ্ছার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আমাদের সামরিক বাহিনী রাজনীতির উর্ধ্বে জাতীয় সার্বভৌমত্ব এবং স্বাধীনতা রক্ষাই এদের একমাত্র লক্ষ্য। যারা দেশের স্বার্থবিরোধী চক্রান্তে লিপ্ত তাদের সম্বন্ধেও  সামরিক বাহিনী সজায়। দেশের প্রশাসন ব্যবস্থায় যারা জড়িত তাদের প্রতি আমাদের উপদেশ, আপনরা নির্ভয়ে এবং দৃঢ়তার সঙ্গে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করুন। কোন মহলের হস্তক্ষেপ আপনারা বরদাস্ত করবেন না। জনগণ আপনাদের সঙ্গে। দেশের স্বার্থবিরোধী কাজে লিপ্ত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার ব্যাপারে আপনারা জনগণের সাথে সহায়তা করুন।
এইসব ব্যক্তিদের কঠোর হস্তে দমন করুন। দেশপ্রেমিক নাগরিকদের সহায়তায় বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারের জন্য আপনাদের জোর প্রচেষ্টা চালাতে হবে। উদ্দেশ্যমূলকভাবে গুজব রটিয়ে এবং প্রচারপত্র ছড়িয়ে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল আমাদের প্রচেষ্টাকে বানচাল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। আমাদের জনগণ এদের পরিচয় সম্বন্ধে যথেষ্ট সচেতন। আপনারা একতাবদ্ধ থাকুন। ইনশাআল্লাহ স্বার্থান্বেষী মহলের অপচেষ্টা আমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না।
পরিশেষে, আমি আপনাদের জোর দিয়ে বলতে চাই যে, সামরিক বাহিনী ও জনগণ এবং প্রশাসন ও জনগণের মধ্যে সম্পূর্ণ একাত্মতা বজায় আছে। আমরা যদি এরূপভাবে একতাবদ্ধ থাকি, তাহলে কোন বিদেশী শক্তি বা প্রভাব আমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আমি আপনাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, আমরা সাড়ে সাত কোটি মানুষের একটি জাতি এবং আমরা যথেষ্ট শক্তিশালী। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের স্বার্থে প্রতিটি নাগরিকই একটি সৈনিক। আমাদের স্বাধীনতাবিরোধী চক্রান্তে লিপ্ত বিদেশী চরদের হুঁশিয়ার করে দেয়া হচ্ছেÑতাদের সমস্ত অপচেষ্টা বাংলাদেশের বীর জনগণ নস্যাৎ করে দেবে। আমাদের মাটিতে মীরজাফরের কোন স্থান নেই। সামরিক বাহিনী, বিডিআর, পুলিশ, আনসার এবং মুক্তিযোদ্ধাসহ সকল দেশপ্রেমিক নাগরিকের প্রতি আমাদের আহ্বান, মীরজাফর এবং বিদেশী দালালদের খুঁজে বের করুন এবং তাদের উপযুক্ত শাস্তি প্রদানে সক্রিয় সহায়তা করুন। আল্লাহ আমাদের সহায়।
খোদা হাফেজ
বাংলাদেশে জিন্দাবাদ।
https://www.bnpbd.org/page/details/569

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!