বিড়ালের মুখ থেকে নবজাতককে বাঁচালেন গার্মেন্ট শ্রমিক

 

 

অনলাইন ডেস্ক  কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

রাস্তার পাশের ডাস্টবিনে বিড়ালের থাবার নিচে কেঁদে ওঠে এক নবজাতক। শব্দ শুনে এগিয়ে যান পথচারী গার্মেন্ট শ্রমিক রেখা।

কাছে গিয়ে দেখেন, পলিথিনে প্যাঁচানো রক্তাক্ত এক নবজাতক। তিনি শিশুটি উদ্ধার করে ছুটে যান হাসপাতালে। এভাবেই শেষ মুহূর্তে রক্ষা পায় পরিত্যক্ত এক নবজাতক করুণতম পরিণতি থেকে।

গতকাল রবিবার দুপুরে গাজীপুর মহানগরের ব্যস্ততম ঢাকা-জয়দেবপুর সড়কের তিন সড়ক এলাকার স্প্যারো গার্মেন্টের সামনে নবজাতকটিকে কুড়িয়ে পান গার্মেন্ট শ্রমিক রেখা আক্তার (৩৮)। পরে শিশুটির দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি নিজেই। রেখা বলেছেন, শিশুটিকে মানুষ করতে চান নিজের সন্তান পরিচয়ে। এরই মধ্যে তিনি মেয়ের নাম রেখেছেন ‘রাবেয়া আক্তার’।

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার চরনবীপুর গ্রামের মৃত আবদুল মতিনের স্ত্রী রেখা জানান, তিনি গাজীপুর শহরের লক্ষ্মীপুরা এলাকার তাজউদ্দীনের বাসায় ভাড়া থাকেন। চাকরি করেন স্প্যারো গার্মেন্টে সুইং অপারেটর পদে।

গতকাল দুপুরে নবজাতকটিকে যখন উদ্ধার করেন তার আগেই বিড়ালটি পলিথিন ছিঁড়ে ফেলেছিল। বিড়ালের নখের আঁচড় ও কামড়ে শিশুটির মুখ ও শরীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে রক্ত ঝরছিল। তিনি শিশুটিকে দ্রুত গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসকরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শিশুটিকে তাঁর জিম্মায় দিয়ে বলেন ঢাকায় নিয়ে যেতে। সন্ধ্যার পর রেখা শিশুটিকে বাসায় এনে গরম ছেঁক দেন ও দুধ কিনে খাওয়ান।

এখন নবজাতকটি অনেকটাই সুস্থ দাবি করে রেখা বলেন, ২০০৮ সালে তাঁর স্বামী আবদুল মতিন মারা গেছেন। তাঁর একমাত্র ছেলেটি প্রতিবন্ধী। তাই শিশুটিকে নিজের মেয়ের মতো মানুষ করতে চান। ইতিমধ্যে তিনি শিশুটির নাম রেখেছেন রাবেয়া।

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক প্রণয় ভূষণ দাস জানান, হাসপাতালে আনার সময় শিশুটির শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। সঙ্গে সঙ্গে অক্সিজেন দেওয়া হয়। তার মুখ, বাঁ চোখ, নাকসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে বিড়ালের দাঁত ও নখের আঁচড়ের ক্ষতচিহ্ন ছিল। তাকে ঢাকা মেডিক্যালে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।

বিষয়টি জয়দেবপুর থানার পুলিশ ও জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।

জয়দেবপুর থানার ওসি মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, এ ব্যাপারে জয়দেবপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। শিশুটির মা-বাবাকে খুঁজে বের করা হবে। তাদের না পাওয়া পর্যন্ত শিশুটি রেখা আক্তারের জিম্মায় থাকবে।

এদিকে খবর পেয়ে বহু শ্রমিক শিশুটিকে দেখতে হাসপাতালে ভিড় জমায়। অনেকে শিশুটির চিকিৎসায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসে। আবার কেউ ধিক্কার জানায় শিশুটির জনক-জননীকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!