সেলিনা জাহান প্রিয়ার অনু গল্প – ভাই বোন ও শিলা বৃষ্টি

ভাই বোন ও শিলা বৃষ্টি
——————–  সেলিনা জাহান প্রিয়া

চৈত্র মাসে শেষের দিকে সকাল নয়টা বা ১০টা হবে। সুজন পড়ছে তার নিজ রুমে আর বোন বারান্দায় গিয়ে কিছু ভেজা কাপড় রাখছে এমন সময় আকাশ খুব অন্ধকার করলো। তাই বড় বোন যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে সে তার ছোট ভাই যে কলেজে পড়ে তাকে ডেকে বলছে —–
— এই সুজন শিলা বৃষ্টি পড়ে।
— আমাকে ডাক কেন? আমি কি শিলার নাকি বৃষ্টির প্রেমিক!!
— কাকে ভাল লাগে বল?
— একটাকেও না।
— আরে আয় জানালায় দেখবি?
— আমাকে বোকা বানিও না। ওদের মায়ের কড়া নিষেধ উত্তর দক্ষিণ যাওয়া।
— আরে পাগল আজ শিলা বৃষ্টি পড়ছে।
— আপা এই ঝড় বাদলের দিনে লিখা পড়া করে কি হবে? ওদের কে বল একটু
নাচ গান করতে।
— আরে সুজন শিলা বৃষ্টি নাচ গান করেই পড়ছে।
— এই সাত সকালে ওদের কোন কাজ নাই। মানুষ দেখায়। মেয়ে গুলো বড্ড ফাজিল। আপু জানালা দিয়ে ভিডিও কর। একটা ধামাকা গান দিয়ে ফেইস বুকে আপ লোড দেই। বুঝবে মজা। নাচ কাকে বলে।
— ভিডিও তো করছি। বল কত দিবি। তোকে দিতে চাই।
— আপা সত্যি তুমি জিনিয়াস। শিলা বৃষ্টির ভিডিও। কি দারুন!! বাহ তুমি ভিডিও কর। আমাকে দেখলে পালাবে। আমি বিকাশ থেকে তোমাকে ৫০০ টাকা লোড দিচ্ছি।
— সুজন টাকা তাড়াতাড়ি দে। দারুন পড়ছে শিলা বৃষ্টি আর বাতাসে নাচ্ছে।
—- আপা টাকা দিয়ে দিয়েছি। ভিডিও টা ভাল করে কর।
—- টাকার জন্য ধন্যবাদ। এমন ভাই ঘরে ঘরে চাই। তা কাকে পছন্দ বল দেখি।
—- আপা শিলা সুন্দর কিন্তু নাক একটু বোচা। বৃষ্টি দারুন কিন্তু খুব অভিমানি।
—- বাহ! আমার ভাইয়ের দারুন অভিজ্ঞতা। শিলা না বৃষ্টি চিন্তা করে বল। দেখি। এখনি সময় যাকে চাস তাকেই পাবি।
— শিলা এখন খুব বেশি নেচে নেচে পড়ছে বারান্দায়।
— আপা তুমি ভিডিও কর। আমাকে দেখলেই পালাবে। তুমি একটু লুকিয়ে থাক

— আরে বৃষ্টি আজ খুব নাচে খুব পড়ে। দারুন লাগে।
— আপা শিলা বৃষ্টি কি পাগল হয়ে গেল নাকি। এত কেন নেচে নেচে পড়ছে।
—- মনে হয় আমার ভাইয়ের প্রেমে দুই বোন এক সাথে পড়ছে।
—- আপা তুমি পছন্দ কর। আমার জন্য।
—- শিলার সমস্যা নাক বোঁচা আর বৃষ্টি অভিমানি। মনে হয় অভিমানিই ভাল।
—- আপা তুমি যা বল আমার বৃষ্টি কে খুব ভাল লাগে।
—- আজ তোকে তাই বৃষ্টি এনে দিব।। দেখবি অভিমানি তোকে ভিজাবে ভালবেসে।
—- আপা তুমি পারবে অভিমানির বৃষ্টি তে আমাকে নামাতে।
—- হা বেশ পাড়ব। পছন্দ ঠিক আছে তো।
—- হা আপা ঠিক আছে।
—- তাহলে চোখ বাঁধ আমার কালো ওড়না দিয়ে। দেখি তোকে আজ কে বেশি ভাল বাসে।
—- আমি কিন্তু চোখ বাঁধলাম আপু।।
—- বাঁধ বাঁধ। আমি আজ তোকে বৃষ্টির কাছে নিয়ে যাব শিলার সামনে দিয়ে।
—- ওকে আপু আমি রেডি।
সুজনের বোন সুজন কে একটা ছাতা দিয়ে চোখ বেঁধে ছাদে নিয়ে যায়। সুজনের বোন ছাতা নিয়ে এক দৌরে ঘরে চলে আসে। সুজনের মাথায় এক সাথে আকাশ থেকে শিলা আর বৃষ্টি পড়ছে। সুজন বোকার মত দাঁড়িয়ে আছে আপুর দিকে চেয়ে। এবার আপা বলল একটা বললে আরেকটা বুঝিস কেন? আমি বলেছি শিলা বৃষ্টি পড়ছে আর তুই ভাবলি পাশের বাসার বোঁচা শিলা আর টেরা বৃষ্টি।
—- আপু এটা তুমি একটা কাজ করলা।
—- ঠিক করেছি। দেখ এবার শিলা বৃষ্টি কি?
—- শিলা বৃষ্টি কি তা তো দেখতে পাচ্ছি। ঐ যে এই বৃষ্টির মধ্যে হালকা হালকা শিলা
পড়ছে। আর আমি একসাথে দুই শিলা দুই বৃষ্টি দেখছি।
— কি ভাবে তুই দেখছিস। ওদের জানালা তো বন্ধু।
— আপু ওরা ছাদে বৃষ্টি তে ভিজতেছে। সাথে নয়ন ভাই এসেছে।
— কি বলিস আমি আসছি।
— হ্যাঁ আসো।
— কি রে নয়ন কোথায়? দেখছি শিলা আর বৃষ্টি কে।
— আপা নয়ন ভাই আকাশ থেকে কান্না করছে শ্যালা শ্যালা বলে।
— তবে রে দাড়া। আসছি বাদর।
হা হা হা আপু আমি একা ভিজব কেন। তাই তোমাকে নিয়েই আজ বৃষ্টিতে ভিজলাম। হা হা হা। দেখিস আবার শিলা না চোখ লাগে! যে ভাবে বৃষ্টি পড়ছে।
—- চোখ লাগবে না! বোন বিয়ে দিব আগে। তোমাকে দেখে সব শিলা যাবে গলে। তবেরে সুজন মাইর আছে … কপালে। দেখ বৃষ্টি তোকে দেখছে।।
—- আপু দেখতে দাও আজ আমি বৃষ্টিতে শুধু বৃষ্টির জন্য।।
—- হা হা হা তাই। ভিজ আজ মনের সুখে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!