মেঘে মেঘে বেলা যায়, টাঙ্গাইলে হোমিওপ্যাথি যেমন দেখেছি

মেঘে মেঘে বেলা যায়

টাঙ্গাইলে হোমিওপ্যাথি

যেমন দেখেছি

-আওলাদ হোসেন

কবে ডাক্তার হবেন? কিভাবে ডাক্তার হবেন? কেন ডাক্তার হবেন?

করটিয়ার হোমিও সাম্রাজ্যের অধিপতি ডা. রেজাউল করিম দীর্ঘ সাধনার পর হ্যানিম্যান কর্তৃক প্রাণীত হোমিওপ্যাথিক অর্গানন অব মেডিসিন বইটির প্রকৃত অনুবাদ ও সহজ ব্যাখ্যা ৬০০ পৃষ্টা, মূল্য ৫০০/- টাকা, ২০১৫ খ্রি. অক্টোবর মাসে বইটি প্রকাশিত ও প্রচারিত হওয়ার পর ইচ্ছে ছিল একটি ধারাবাহিক আলোচনা প্রকাশ করব এবং বিশিষ্ট জনদের নিয়ে আলোচনা সভা বা বিজ্ঞান সেমিনার করব, কিন্তু নানা কারনে তা আর হয়ে ওঠেনি, কারন দেশের যে অবস্থা তাতে জ্ঞানীর কদর ভারতে থাকতে পারে কিন্তু আমাদের দেশে তা হতে পারেনা, নিষেধ, কারণ মহাত্মা হ্যানিম্যান ডাক্তার ও বৈজ্ঞানিক ৬ নং সূত্রে বলেছেন সংস্কার মুক্ত হওয়া কঠিন অনেকেই বলেন, কুসংস্কার মুক্ত হওয়া দুইটি দুই জিনিষ। আর ১ নং সূত্র হচ্ছে মিশন যার একমাত্র ব্রত হবে একনিষ্ঠভাবে কাজ করা এখানে হোমিওপ্যাথি চর্চা করা, অনুবাদ গ্রন্থটি সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত করার মত। ঢাকা চট্টগ্রামে জ্ঞানের চর্চা হয় টাঙ্গাইলে ডা. জি মওলা উদার মনের লোক আমাকে ভালোবাসতেন, আমি তার নেতৃত্বও দেখেছি। করটিয়ার জ্ঞানী হোমিওপ্যাথকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপনার এত জ্ঞান সব ইংরেজী বই আপনি এর প্রকাশ ঘটালেন না কেন? প্রশ্নটি হয়তো নতুন ছিলোনা তাই তিনি মনে মনে হয়তো হেসেছেন অথবা অন্যকিছু ভেবেছেন, তবে মনে মনে অবশ্যই বলেছেন আপনি আর কয়দিন, কত এলো আর কত গেল কেউতো টিকলো না, কেউ ৭ দিন কেউ ১৫ দিন কেউ এক মাস। আমাকে প্রথমেই জিজ্ঞেস করলেন, কি শিখতে চান? আমি বললাম হোমিওপ্যাথি। তিনি অর্গানন অব মেডিসিন বইটি দেখিয়ে বললেন, এই বইটি পড়তে হবে (ইংরেজি)। শুরু হল নতুন করে যাত্রা। দীর্ঘ ৮/৯ বছর ঐ বইটিই পড়েছি। এতে আমার বন্ধু বান্ধব বিরাগ ভাজন হলেন। যারা দোকান দিলেন তারাও আমাকে দোকান দিতে বললেন। আমি অত্যন্ত মনোযোগের সাথে ক্লাস করেছি। শিক্ষকদের প্রতি আমি সবসময় দুর্বল। গাইড্যান্স পেলে অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারি। করটিয়া একটি জ্বলন্ত প্রমাণ। আমার লেখা চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত ও প্রচারিত হোমিও চেতনা নামক পত্রিকায় নিয়মিত প্রকাশিত হত। আমি তাদেরকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করি। দূরে অবস্থানের জন্য যোগাযোগ নেই কিন্তু পত্রিকাটি আমাকে বিমোহিত করে যদি আমার নতুন লেখা প্রবন্ধগুলো ছাপা হত বা হয়। আমি যা চেয়েছি তা পেয়েছি, কিন্তু ডাক্তার হতে পারিনি। কারণ বয়স, সারাক্ষণ পড়তে হয়, অর্গানন ভিত্তিক চিকিৎসা দেওয়া, সর্বোপরি সারাক্ষণ একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ ডাক্তারের অধীনে বোতল ধোয়ার কাজ, অন্তত: ২/৪ বৎসর শিক্ষা করা যা আমার পক্ষে সম্ভব ছিলনা। উপরন্তু রোগীর সাথে প্রতারণা না করা অথবা প্রতারক বা প্রতারিত রোগীর সঙ্গে কথাবার্তা বা গালমন্দ শোনা। এখানে বলে রাখা ভাল, ছাত্র ভালো ছিলাম না কিন্তু কোনো শিক্ষক ভাল পড়াতেন তা বুঝতাম, যেমন বোকা ছিলাম বাজারের হিসাবও বুঝতাম না কিন্তু কম দিলে বুঝতাম, এখানেও আমি অর্থনীতির ছাত্র ছিলাম এবং কার্যক্ষেত্র ছিল হিসাব সংক্রান্ত। এখন বলতে হচ্ছে কিছুটা প্রাসাঙ্গিক কথা, ডা. রেজাউল করিম বললেন, টাঙ্গাইল গিয়েছি, বলেছিও কিন্তু যারা অর্গানন পড়ার পয়োজন মনে করেনা তাদের সঙ্গে আলাপ করে কোনো লাভ হবে মনে করিনি। অর্গাননের ব্যাখ্যা পাওয়া যায়না ফলে বইটি দুর্বোধ্য রয়ে গেছে। বুঝতে গেলে প্রকৃত শিক্ষক প্রয়োজন। যেমন, ১ সূত্রের পাদটিকায় ডা. হ্যানিম্যান কি বলেছেন? শুরু হল চমক, দিনের পর দিন পড়ে যেতে হয়। অর্গানন জানা বাধ্যতামূলক, এই বই না পড়ে কারো চিকিৎসা দেয়া উচিত নয়। আমি নিজেই দেখেছি ১ থেকে ৭ সূত্র পর্যন্ত বুঝানো যায়, যখনই ৯, ১০,১১ ইত্যাদি সূত্র অদৃশ্য জীবনী শক্তি, অদৃশ্য রোগ শক্তি, অদৃশ্য ঔষধ শক্তি ইত্যাদি পড়ানো শুরু হয় তখন গরু মোটাতাজা করনের বোতাল বিক্রী ছাড়া পথ থাকেনা, যার একটি অন্যতম হচ্ছে মূল আরক বিক্রী করা। এখানেও গঠনতন্ত্রহীনতা, ডা. হ্যানিম্যান যা বলেছে তা বাদ দেওয়া। ডা. গোলাম মওলা তার অনুশীলনীতে অনেক কিছু শিখানো হয় দীর্ঘদিন ধরে। অর্গানন শিখে ভেবেছিলাম এইবার কাজ হবে। সূত্রের ব্যাখ্যা করতে পারবো, প্রকৃত হোমিওপ্যাথি ইংরেজী অর্গাননসহ পড়াতে পারবো। কিন্তু ডা. রেজাউল করিম বলেছিলেন, পারবেন না। পেরেছি ঠিকই সাপ্তাহিক ইনতিজার পত্রিকার সম্পাদক এ বি এম আব্দুল হাই এর বদান্যতায় প্রতি সপ্তাহে আমার লেখা চলতে থাকে এবং দুইটি বই প্রকাশিত হয়। ১. কল্পলোকে বিচরণ ২. আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ভাষায় জীবন দর্শন। ধর্ম চর্চা এবং হোমিওপ্যাথি দুইট বিষয়ই স্থান পায় এবং সংঙ্গে ঢাকার কলামিষ্টদের অনুকরনে ৭০/৭৫ বৎসর পর গনতন্ত্রের বর্তমান অবস্থা, প্রধান দুই দল (সাধারনত সব দেশেই দুই দলই প্রদান থাকে) জনগনকে কি উপহার দেন ইত্যাদি সঙ্গে অশিক্ষিতের মত সংলাপ উন্নত দেশের তুলনায় মূর্খতা পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলছে তা নিয়ে মনোবেদনা প্রকাশ মাত্র। চাকুরী জীবনে টাকায় মাথা বিক্রি আর ভয় দেখিয়ে কাজ আদায় করা অসম্ভব ছিল। এটা অবশ্য প্রতিটি বাঙ্গালীর গর্ব। পরাশক্তিরা বুঝলে হয় তবে জ্ঞানের দক্ষতার- চাতুর্যতার মোসাহেবীর চামচাগিরি করার কোনো বিকল্প নেই এবং পত্রিকায় দৈনিক এই সমস্ত ঘটনা ঘটেই চলেছে। বাধা দেওয়ার কেউ নেই, প্রতিবাদ করার কেউ নেই, সবই মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ, চরিত্র বদলানো কোন ক্রমেই সম্ভব না আর এ সবই ডাবল স্ট্যান্ডার্ড। তবে পার্শবর্তী দেশের রাজা যায় রাজা আসে কিন্তু নীতির পরিবর্তন হয়না, আমাদের হুশ হবে কবে? জনগনের সমর্থন চিরস্থায়ী হবে কবে? দেশের সংঘে রাজ্য পরিচালনার সংঙ্গে সবই আবর্তিত ফাঁকি দেওয়ার উপায় নেই। হোমিওপ্যাথিতেও স্রষ্টাকে স্বীকার করতে হয় চিরস্থায়ী নিয়মনীতির কারণে। হঠাৎ কিছু আসেও না কিছু যায়ও নাই। অন্যান্য অনুশীলনী ক্লাসও চলছে কিন্তু দুই পয়সার ডাক্তার হওয়ার জন্য অথবা বড় বড় বই না পড়ে পথ রুদ্ধ করে দিয়ে কেরানী বা কমাউন্ডার হওয়া যায়। কিন্তু প্রকৃত ডাক্তার হওয়া যায়না। টাঙ্গাইলের হোমিও কলেজের অনেকেই/ ভাল শিক্ষক ও নামকরা ডাক্তার। তাদের নাম স্বল্প পরিসরে উল্লেখ করে কাউকে খাটো করতে চাইনা, রেজাল্টও ভালো। অধ্যক্ষ বিনয়ী, বিরাট মনের মানুষ, অনেক দক্ষ এবং বিচক্ষণ। তবে স্বীকৃতীর জন্য সাধনা করতে হয়। টাঙ্গাইল শহর ছাড়া সখিপুর ও গোপালপুরে ভাল হোমিওপ্যাত আছেন। উত্তরাধীকার সূত্রে অনেকেই ভালো ব্যবসা করেন। ছোট বেলায় দেখেছি অনেক হোমিওপ্যাথ আদালত রোডে বসতেন অল্প পয়সার সাধারণ মানুষ চিকিৎসা পেত। এক সময় করটিয়ার জমিদার বাড়ী হোমিওপ্যাথির চর্চা কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিল, কিন্তু ব্যক্তিগত যোগযোগ না থাকায় বিস্তারিত উল্লেখ করা গেলো না। অনেক রুপকথা জড়িয়ে আছে যা উল্লেখ করা গেলো না। আমার ইচ্ছে ছিল অর্গনন অব মেডিসিন বইটি প্রচার করার এবং প্রতিষ্ঠিত সত্য পরিনত করা। হোমিওপ্যাথি বলতে অর্গানন বইটি বুঝায়। যেমন, আমার পরিচিত অনেক লোক যারা হোমিওপ্যাথিতে প্রায় আধা দীক্ষিত, তারা আমাকে বার বার অনুরোধ করেন এ তত্ব প্রকৃত পক্ষে কিভাবে বাস্তবে প্রয়োগ করা যায় সে সম্পর্কে আরো কিছু নির্দেশনা প্রকাশ করার জন্য এবং প্রশ্ন করেন, আমরা কিভাবে অগ্রসর হবো। আমি বিস্মিত হই যে, অর্গানন অব মেডিসিন খুব সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকার পর আরোও বিশেষ নির্দেশনার জন্য আশা করা হয়Ñ ডা. হ্যানিম্যান। যারা অর্গানন বাদ দিয়ে চিকিৎসা দেন তাদের যুক্তিটি কি? অন্যত্র লিখেছেন, যখন আমরা রোগটি আবিস্কার করি, আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ ঔষধ অনুসন্ধান করা Ñ ডা. হ্যানিম্যান। ডা. কেন্ট বলেছেন প্রথমেই আরোগ্য কৌশল শিক্ষা দিতে নেই। প্রথমে বিজ্ঞান শিক্ষা দিতে হবে এবং তারপর কৌশল নিয়মনীতি আগে, তারপর অভিজ্ঞতা। আমার দীর্ঘ ৭/৮ বৎসর যেকোন প্রশ্নের উত্তরে ডা. রেজাউল করিম বলতেন আগে অর্গানন পড়েন, তাই পড়ছি এবং দোকান দিতে পারিনি। যদি কেউ অনুগ্রহ করে করটিয়া যান এবং তার সংঙ্গে দেখা করেন আমার কথার সত্যতা অবশ্যই পাবেন। সময়তো শেষ মেঘে মেঘে বেলা যায় পুরাতনের বিদায় নতুনের আগমন। সফলতা কবে আসবে? আর স্বীকৃতিই পড়ে রইলো।


প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। কাগজ২৪-এর সম্পাদকীয়নীতি/মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য কাগজ২৪ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্যকোনও ধরনের কোনও দায় নেবেনা।


কাগজটুয়েন্টিফোর বিডি ডটকম এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!