মেহেদির রঙ তখনও শুকায়নি!

 

 

অনলাইন ডেস্ক । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

মেহেদির রঙ তখনও শুকায়নি হাত থেকে। কিন্তু এর আগেই স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের যৌতুকের লালসার শিকার হতে হয়েছে নওগাঁর হাবিবা খাতুনকে। বিয়ের মাত্র দুই মাসের মাথায় স্বামী ও শাশুড়ির নির্যাতনের শিকার হয়ে নওগাঁ সদর হাসপাতালে অপরিসীম যন্ত্রণায় ছটফট করছেন তিনি। ভারী বস্তুর আঘাতে তার মাথা ও পিঠে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। খাবার দেওয়া হচ্ছে নাক দিয়ে। শরীরের কোনো অংশই যেমন কাজ করছে না, তেমনি কথাও বলতে পারছেন না তিনি। শুধু শুয়ে শুয়ে মাঝে মাঝে একটু চোখ মেলছেন। তাই সন্তানের এই করুণ পরিণতি দেখে তার বাবা-মা প্রশ্ন করছেন সবাইকে কী দোষ ছিল হাবিবার।

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মিলন বাদশা জানিয়েছেন, হাবিবার অবস্থা আশঙ্কাজনক। তার শরীরের বেশ কিছু অঙ্গের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না। এ অবস্থায় আদৌ তাকে বাঁচানো যাবে কি-না সংশয় আছে। আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তার বিষয়ে কিছু বলা যাবে না।

পরিবারের দাবি, যৌতুকের দাবিতে হাবিবার ওপর এমন পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছে তার স্বামী তানভীর হাসান অভি ও শাশুড়ি সৈয়দা তাহমিনা। চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে না পারায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল থেকে হাবিবাকে বাড়িতে নেওয়া হয়। এরপর অচেতন মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে দুঃসহ জীবন কাটছিল পরিবারটির। অবশেষে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যার পর হাবিবাকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদিকে হাবিবার বাবা হাফিজুর রহমান বাদী হয়ে মামলা করার পর অভি ও তার বাবা শামসুজ্জোহা খান বিদ্যুৎকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

মামলা সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২৩ আগস্ট নওগাঁ সদরের হাট নওগাঁ মহল্লার হাবিবার সঙ্গে বিয়ে হয় একই এলাকার অভির। বিয়ের মাত্র দুই মাসের মধ্যে বাবার বাড়ি থেকে ২ লাখ টাকা নিয়ে আসতে হাবিবাকে চাপ দিতে থাকে অভি ও তার পরিবার। কিন্তু গৃহশিক্ষকের কাজ করা হাফিজুর রহমানের পক্ষে তা দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব ছিল না। এক পর্যায়ে গত ৩০ নভেম্বর বিকেলে হাবিবার বাবার কাছে খবর পাঠানো হয়, তার মেয়ে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু পরে তারা জানতে পারেন, হাবিবা বেঁচে আছেন এবং তাকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করেছে। কিন্তু সেখানে ভর্তির চার দিন পরই অচেতন হাবিবাকে রেখে পালিয়ে যায় অভির পরিবার।

এরই মধ্যে হাবিবার স্বজনরা রাজশাহীতে গেলে হাসপাতালের নির্ধারিত ঠিকানায় মেয়েকে খুঁজে না পেয়ে নওগাঁর স্থানীয় কাউন্সিলর মজনু হোসেনের মাধ্যমে অভির বাবা শামসুজ্জোহার শরণাপন্ন হন। তাদের সহযোগিতায় ছয় দিন পর রাজশাহীতে অভির এক আত্মীয়ের বাসায় অচেতন অবস্থায় হাবিবাকে পাওয়া যায়। হাসপাতাল থেকে অভির পরিবার পালিয়ে যাওয়ার পর সেই আত্মীয়রাই হাবিবাকে নিজেদের কাছে এনে রেখেছিলেন।

এরপর হাফিজুর রহমান তার মেয়েকে রামেক হাসপাতালে নিলে হাবিবাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। দীর্ঘ ১৬ দিন লাইফ সাপোর্টে রাখার পর তাকে চিকিৎসকরা বার্ন ইউনিটে ভর্তির পরামর্শ দেন। সেখানে তিন দিন থাকার পর বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয় হাবিবাকে।

হাফিজুর রহমান জানান, মেয়েকে বাড়ি নিয়ে আসার পর নিউরোলজি বিশেষজ্ঞ মিলন বাদশার কাছে চিকিৎসা শুরু করেন তারা। কিন্তু এখনও হাবিবার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। আমি মেয়ের এমন অবস্থার জন্য যারা দায়ী, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

হাবিবার মা সফুরা আখতার বলেন, ৩০ নভেম্বর মেয়ের খবর পাওয়া মাত্রই চিকিৎসার কথা বলেছিলেন তারা। কিন্তু রাজশাহীতে নেওয়ার পর থেকে মোবাইল ফোনে অভির পরিবার থেকে জানানো হয়, তাদের মেয়ে সুস্থ আছে। কিন্তু মিথ্যা সান্ত্বনা দিয়ে দিনের পর দিন হাবিবাকে চিকিৎসা না করিয়ে মেরে ফেলতে চেয়েছিল তারা।

এদিকে নওগাঁ সদর মডেল থানার ওসি তরিকুল ইসলাম জানান, মামলা হওয়া মাত্রই অভিযুক্ত অভি ও তার বাবা শামসুজ্জোহা খানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরেক আসামি অভির মা সৈয়দা তাহমিনাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

সূত্র: দৈনিক সমকাল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!