যেভাবে কুলি থেকে শত কোটি টাকার মালিক!

 

 

অনলাইন ডেস্ক  কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

ছিলেন কুলি। দিনমজুর। এরপর ফেরি করে সবজিও বিক্রি করেন তিনি। হঠাৎ করে তার কাছে দেখা দেয় যেন আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ। সেই কুলি এখন শত কোটি টাকার মালিক। স্ত্রী ও সন্তানকে হত্যার দায়ে এখন কারাগারে।

পুরো নাম শেখ মো. আবদুল করিম। মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুরের হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান এই করিম। রাজধানীর কাকরাইলের জোড়া মার্ডারের পর আবদুল করিম এখন আলোচনায়। অভাব-অনটনের কারণে লেখাপড়া বেশিদূর হয়নি তার। প্রাথমিকের গণ্ডি পেরোনোর আগেই শ্রমজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন। ত্রিশ বছরের ব্যবধানে পাল্টেছেন নিজের আর্থিক অবস্থান। দেশের বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে আছে তার সম্পত্তি।

করিমকে চিনেন এমন একজন পুরানা পল্টনের এক বয়স্ক নারী জানান, ঠেলার অভাবে মাথায় করে সবজি বিক্রি করতো করিম। তার পরনে থাকতো আধ ময়লা লুঙ্গি ও পুরনো শার্ট। একবার ঈদের আগে ওই নারীর কাছ থেকে চেয়ে একটি শার্ট নিয়েছিলেন। ওই বয়স্ক নারী জানান, তার স্বামীর পুরনো একটি শার্ট দিয়েছিলেন করিমকে। জোড়া মার্ডারের পর চিনতে পেরেছেন সেই করিমই আজকের ফিল্ম নির্মাতা শেখ মো. আবদুল করিম।

সূত্রমতে, সবজি বিক্রির এক পর্যায়ে কুলি হিসেবে কাজ শুরু করেন পুরান ঢাকার শ্যামবাজারে। সেখানে সবজি গাড়িতে উঠানো-নামানোর কাজ করতেন। ওই সময়ে সনাতনধর্মাবলম্বী এক ব্যক্তির আড়তে কাজ করতেন। তখনই বিয়ে করেন মুন্সীগঞ্জের ধার্মিক পরিবারের মেয়ে শামসুন্নাহারকে।

কাজ করতে গিয়ে অল্পতেই আড়তের মালিকের বিশ্বস্ততা অর্জন করেন। আড়তের মালিক একসময় দেশ ছেড়ে চলে যান। সেই থেকে ওই আড়তের মালিক হিসেবে করিমকেই চিনেন আশেপাশের লোকজন। ওই আড়তই পাল্টে দেয় করিমের ভাগ্য। একে একে জড়িত হতে থাকেন নানা ব্যবসায়। এরমধ্যে বিভিন্নস্থানে জমি কেনাবেচা করতেন করিম। বিশেষ করে কাগজপত্রে সমস্যা থাকলেই করিমের আগ্রহ বেড়ে যেতো। তুলনামূলক অল্প দামে জমি কিনে কৌশলে কাগজপত্র ঠিক করে তা আবার বিক্রি করে দিতেন। এ জন্য একটি দালালচক্র রয়েছে তার। ওই চক্রকে কমিশন দিয়েই এসব কাজ করাতেন করিম। এরমধ্যেই শস্যবীজ আমদানির ব্যবসাও শুরু করেন। মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুরে করেছেন কোল্ড স্টোরেজ।

অল্পদিনের মধ্যেই ঢাকার বিভিন্নস্থানে বাড়ি কিনেন তিনি। এরমধ্যে কাকরাইল ও পল্টন এলাকাতেই রয়েছে তার চারটি বাড়ি। সূত্রমতে, তার অন্তত ১১টি বাড়ি রয়েছে ঢাকায়। পলওয়েল মার্কেটে রয়েছে কয়েকটি দোকান। এসব বাসা ও দোকান থেকে প্রতি মাসে প্রায় কোটি টাকা ভাড়া আদায় হয় করিমের।

কয়েক বছর আগে রাঙ্গামাটিতে ১০০ বিঘা জমি কিনেছেন শেখ মো. আবদুল করিম। গাজীপুরের জয়দেবপুরে রয়েছে তার ৯০ বিঘা জমি। এরমধ্যেই ঝুঁকে যান ফিল্ম জগতে। ছোট ছেলে শাওনের নামে শাওন কথাচিত্র নামে শুরু করেন ফিল্মের ব্যবসা। অফিস নেন কাকরাইলে। সেখানে জমতো তার অন্যরকম আড্ডা। রাত গভীর হলেই অন্য জগতে বিচরণ করেন করিম। নায়িকা হতে আগ্রহী তরুণীরা শিকার হতেন করিমের।

ঢাকাই চলচ্চিত্রের কিছু নায়িকাকে নিয়ে দেশের বাইরেও উড়াল দিয়েছেন করিম। সূত্রমতে, কয়েক মাস আগেও রাঙ্গামাটিতে করিমসহ চলচ্চিত্রের পরিচিত কয়েক মুখকে একটি রিসোর্টে দেখা গেছে। সেখানে আলোচিত এক নায়িকা ছিলেন করিমের সঙ্গে। ২০১১ সালে এক নায়িকাকে নিয়ে দীর্ঘদিন একটি রিসোর্টে ছিলেন। ওই সময়েই নির্মাণ করেন ‘বন্ধু তুমি শত্রু তুমি’ নামের ফিল্ম। এছাড়াও শেখ মো. আবদুল করিম প্রযোজনা করেছেন আরো অনেক চলচ্চিত্র।

নায়িকা হতে এসেই করিমের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে গোপালগঞ্জের মোকসেদপুরের শারমিন জাহান মুক্তার। তার আগে আরো একটি বিয়ে করেন করিম। করিমের ঘনিষ্ঠরা জানান, বিয়ে ছাড়া চলচ্চিত্রের ও চলচ্চিত্রের বাইরের অনেক নারীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল করিমের। মূলত নারী নেশায় মত্ত করিম। নারীদের পেছনে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা ব্যয় করেন তিনি।

মুক্তাকে বিয়ের পরই একে একে শুরু হয় নানা ঝামেলা। সৃষ্টি হয় পারিবারিক অশান্তি। মুক্তা চাইতেন করিমের সম্পত্তি অন্যদিকে করিমের প্রথম স্ত্রী শামসুন্নাহার চাইতেন করিমকে নারীনেশা থেকে ফেরাতে। এরমধ্যেই কলহ বাড়তে থাকে। করিমের প্রথম স্ত্রী শামসুন্নাহারের তিন ছেলের মধ্যে দুই ছেলে দেশের বাইরে থেকে লেখাপড়া করেন। মুক্তার বিলাসিতার পথে শামসুন্নাহারকে বাধা মনে করতো।

শেষ পর্যন্ত গত ১লা নভেম্বর শামসুন্নাহার ও তার ছেলে শাওনকে হত্যা করা হয় কাকরাইলের বাসায়। এ ঘটনায় শেখ মো. আবদুল করিম, শারমিন মুক্তা ও তার ভাই জনিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সূত্র: মানবজমিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!