গোপালপুরে থানায় যৌন হয়রানির মামলা দিয়ে স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়েছে এক শিশুর

 

 

 

মো. সেলিম হোসেন, গোপালপুর, টাঙ্গাইল । কাগজটোয়েন্টিফোরডটকম

উপজেলা নির্বাহী অফিসারের হস্তক্ষেপে থানায় মামলা হলেও পুলিশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর এক ছাত্রীর যৌন হয়রানি মামলার আসামীকে গ্রেফতার করছেনা বলে অভিযোগ উঠেছে। নিরাপত্তার অভাবে ওই স্কুল ছাত্রী স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিলেও পুলিশ অধিকতর তদন্তের নামে কালক্ষেপন করছে। গতকাল বৃহস্পতিবার গোপালপুর প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের বিরুদ্ধে এ গুরুতর অভিযোগ আনেন ওই অসহায় ছাত্রী ও তার বাবামা। এ সময়ে স্থানীয় ইউপি মেম্বারসহ শতাধিক গ্রামবাসি উপস্থিত ছিলেন।
ওই স্কুল ছাত্রীর মা কল্পনা আক্তার এবং বাবা দিন মজুর আবুবকর সিদ্দীক অভিযোগ করেন গত ৪ ডিসেম্বর স্কুলে একা পেয়ে তার ১১বছরের শিশু আঞ্জুমান আরাকে যৌন হয়রানি করেন স্কুলের দপ্তরী লুৎফর রহমান। শিশু আঞ্জুমান কেঁদেকেটে বিচার দেন স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামের নিকট। প্রধান শিক্ষক ওই শিশুর অভিযোগ শোনার দায়িত্ব দেন সহকারি শিক্ষক নাজমিন নাহারকে। ওই শিক্ষিকা দপ্তরী লুৎফর রহমানের ভাই হওয়ায় তাকে অভিযোগ থেকে রক্ষার চেষ্টা করেন। বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার জন্য ওই শিশুকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন। ওই দিন বিকালে দপ্তরী লুৎফরকে ওই শিশুর বাড়িতে ডেকে নিয়ে জুতা পেটা করা হয়। কিন্তু শিশুটি তার জীবনের ঘটে যাওয়া তিক্ত ঘটনা মেনে নিতে না পেরে অপমানে কান্নাকাটি শুরু করলে স্থানীয়ভাবে বিষয়টি পুনরায় বিষয়টি মিমাংসার চেষ্টা চলে। গোপনে খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিলরুবা শারমীন উপজেলা শিক্ষা অফিসার রফিকুল ইসলামের মাধ্যমে শিশুর বাবা আবুবকর সিদ্দীদকে অফিসে ডেকে পাঠান। তিনি থানায় মামলা নেয়ার ব্যাপারে সহযোগিতা করেন।
গত ৬ ডিসেম্বর ওই শিশুর বাবা আবুবকর সিদ্দীক গোপালপুর থানায় দপ্তরী লুৎফর রহমানকে আাসামী করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দেন। তদন্তকারি দারোগা ইয়াসির আরাফাত গত ৭ ডিসেম্বর ওই শিশুর জবান বন্দী নেন। জবান বন্দীতে ওই শিশু যৌন হয়রানির বিবরণ দেন। কিন্তু ঘটনার তিন সপ্তাহ পরও পুলিশ আসামী গ্রেফতার করেনি। আাসামী লুৎফর নিয়মিত স্কুলে যাচ্ছে। হাজিরা খাতায় দস্তখত দিচ্ছে। অথচ পুলিশ বলছে আাসামী পলাতক।
আসামী ও তার আত্মীয় স্বজনরা নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানোর দরুন ওই শিশুটির স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, ওই দপ্তরীর বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। স্কুলের গভর্নিং বড়ির সভাপতি হারুন অর রশীদ জানান, শিশুটি তাদের নিকট যৌন হয়রানির জবাবন্দী দিয়েছেন। থানায় মামলা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ রাজনৈতিকভাবে একটি মহল দ্বারা প্রভাবান্বিত হয়ে অধিকতর তদন্তের নামে আাসামী গ্রেফতারে টালবাহানা করছে। তিনি আরো জানান, আাসামী গ্রেফতার না হলে আগামী ১ জানুয়ারী বই উৎসব বর্জন করবে স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা।
মির্জাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হালিমুজ্জামান তালুকদার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান পুলিশ এখানে পক্ষপাতিত্ব মূলক ভূমিকা নেয়ায় শিশুটির পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তদন্তকারি দারোগা ইয়াসির আরাফাত জানান, বিষয়টি তদন্ত চলছে। আসামী গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে। তদন্তের স্বার্থে এর চেয়ে বেশি কিছু বলা যাবেনা। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গোপালপুর সার্কেল আহাদুজ্জামান মিয়া জানান তিনি বৃহস্পতিবার সরেজমিন তদন্তে যাবেন। পরে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!