সেই শ্যামল কান্তি ভক্ত আবারও

 

 

 

সেই শ্যামল কান্তি ভক্ত আবারও

রণেশ মৈত্র
সভাপতিমন্ডলীর সদস্য, ঐক্য ন্যাপ।

 

আবার, আবার, আবারও লিখতে বসতে বাধ্য হতে হলো নারায়নগঞ্জের জননন্দিত প্রাধন শিক্ষক সবার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে নিয়ে। এমনটি ঘটবে তা কল্পনাও করিনি। তবে মনে ভয় ভীতি ছিল। বিশেষ করে যখন সংবাদ মাধ্যমে দেখলাম, শ্যামল বাবুকে গত বছর অন্যায় অপদস্থ-অপমানিত করার কারণে উচ্চ আদালতের নির্দেশ গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশ মোতাবেক এম.পি. সেলিম ওসমানের বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত মামলা দায়ের এবং চার্জশীট দাখিল হলেও তাঁকে তৎক্ষণাৎ জামিন দিয়ে দেওয়া হলো তখনই শংকিত বোধ করেছিলাম এই শ্যামল বাবুকেই হয়তো এর শিকার হতে হবে।
যে অজুহাতে গত বছর লাঞ্ছিত হয়েছিলেন শ্যামল কান্তি ভক্ত, একজন সম্মানিত প্রধান শিক্ষক, সেই অজুহাত বা অভিযোগ অসত্য বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি ঐ সময়েই বিবেচনা করে সেলিম ওসমানের কৃপালোভী তৎকালীন স্কুল পরিচালনা কমিটিকে বাতিল করে দিয়ে অবৈধ ও মিথ্যা অজুহাতে বরখাস্তকৃত প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে তাঁর দায়িত্বে পুনর্বহাল করেন। কিন্তু তাঁকে সেলিম ওসমান যেভাবে কান ধরে ওঠ বস করিয়ে অপমানিত করলেন এবং অত:পর তাঁর গুন্ডাবাহিনীকে দিয়ে যে বর্বরোচিতভাবে পেটালেন তাতে গুরুতর আহত হয়ে শ্যামল কান্তি ভক্ত হাসপাতালে ভর্তি থাকায় তিনি কাজে পুনর্বহাল আদেশ পাওয়ার অনেক দিন পরে স্কুলে গিয়ে যোগ দান করেছিলেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এহেন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হন ঐ এম.পি।
অত:পর আদালতের নির্দেশে গঠিত পুলিশী দতন্ত কমিটি তাদের তদন্ত প্রতিবেদনে সেলিম ওসমান উপরোক্ত অপরাধগুলি করেন নি এবং তিনি নির্দোশ বলে রিপোর্ট পাঠালেন উচ্চ আদালত ঐ রিপোর্টকে আস্থায় না নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে তার মাধ্যমে তদন্ত করান অভিযুক্ত ঐ এম.পি‘র বিরুদ্ধে। এই প্রক্রিয়াগুলি আমাদের দেশে অত্যন্ত সময় সাপেক্ষ। তাই দীর্ঘ দিন পরে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি যখন সেলিম ওসমানকে দায়ী করে প্রতিবেদন দাখিল করলেন তারপর অনিচ্ছকৃত নারায়ন গঞ্জের পুলিশ মামলা দায়ের করলেন সেলিম ওসমানের বিরুদ্ধে এবং অবশেষে চার্জশীটও দাখিল করলেন তাঁর বিরুদ্ধে।
এই মামলা দায়ের ও চার্জশীট দাখিলের পর আদালতে হাজির হয়ে তৎক্ষণাৎ জামিন পেয়ে গেলেন সেলিম ওসমান। তাই সেলিম ওসমানের রাগটা আসলে উচ্চ আদালতের উপর কিন্তু সেটা তাঁর ক্ষমতার আওতায় না আসায় ঝাল যে মস্ত করে ঝাড়বেন শ্যামল কান্তি ভক্তের উপর সেটাই মনে মনে আশংকা করছিলাম। সেই আশংকা অবশেষে সত্য ও প্রমাণিত হলো অস্বাভাবিক দ্রুততায়।
বস্তুত: নারায়নগঞ্জের পুলিশের ভূমিকা বহুকাল যাবত প্রশ্নবিদ্ধ। সেখানকার পুলিশ সুপার থেকে বন্দর থানার ওসি এবং অন্যান্য পুলিশ কর্মকতা যেন চাকুরী করেন সেলিম ওসমানের-রাষ্ট্রের নয়। জনগণের তো নয়ই।
তাই যখন প্রথম শ্যামল কান্তি ভক্তের কান ধরে ওঠবস করানো হলো, যখন সেলিম ওসমানের পেয়ারা হেফাজত কওমী মাদ্রাসার লোকেরা স্থানীয় মসজিদের মাইক থেকে ঘোষণা দিয়ে “ইসলাম অবমাননার” মিথ্যা ও সর্বাধিক কার্যকর অভিযোগে শ্যামল কান্তি ভক্তকে অভিযুক্ত করে প্রচার করে তাঁকে আক্রমণ ও বেপরোয়া মারধর করানো হলো প্রকাশ্য দিবালোকে তখনই সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নারায়নগঞ্জের অফিসার ইন-চার্জ ও পরবর্তীতে সেখানকার পুলিশ সুপার বলেছিলেন, ফৌজদারী আইনে সেলিম ওসমান কোন অপরাধ করেন নি। ঐ অফিসাররা বদলি হয়ে গেলেও কার্যত: দেখা যাচ্ছে, উত্তরাধিকার সূত্রে নারায়নগঞ্জের পুলিশ কর্মকর্তারা রাষ্ট্রের বা জনগণের নয়, সেলিম ওসমানের কর্মচারী ও তাঁর আজ্ঞাবাহী হিসেবেই নিষ্ঠার সাথেই কাজ করে চলেছেন।
এর প্রমাণ, গত ২৪ মে সেখানকার আদালত প্রাঙ্গনের ভয়াবহ দৃশ্য যার বিস্তারিত বর্ণনা ২৫ মে তারিখে দৈনিক সংবাদে যথার্থভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। দেখা যাক ২৫ মে তারিখে “লাঞ্ছনার শিকার সেই শিক্ষক শ্যামল কান্তি কারাগারে” শীর্ষক প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে সংবাদ কি উল্লেখ করেছে। ঐ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে-
এম পি সেলিম ওসমানের হাতে লাঞ্ছিত শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে তাঁর স্কুলেরই একজন শিক্ষিকার কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ দায়ের করা মামলায় কারগারে পাঠিয়েছেন আদালত। আদালতের গ্রেফতারী পরোয়ানা জারীর পর পুলিশ তাঁকে জেলা জজ প্রাঙ্গণ থেকে বের হতে দেয় নি। পরে তিনি বিকেল সাড়ে চারটায় আদালতে আত্মসমর্পণ করলে আদালত তাঁকে কারাগারে প্রেরণ করেন। এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় নারায়নগঞ্জের সিনিয়র আইনজীবীরা বলছেন, এ ধরণের মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারী করার ঘটনা বিরল।
এরপর আদালত প্রাঙ্গন থেকে তাঁকে বের হতে না দিয়ে কয়েক ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রসেস করে গ্রেফতার করা আরও নজিরবিহীন ঘটনা। প্রধান বিচারপতি যে বলেছেন, “নিম্ন আদালতকে সরকার কবজায় নিয়েছে” এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারী ও আত্মসমর্পণে বাধ্য করার ঘটনা।
গত ২৪ মে বুধবার দুপুরে নারায়নগঞ্জের সিটি জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট অশোক কুমার দত্তের আদালতে শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের মামলার শুনানী অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় আদালতে সশরীরে উপস্থিত ছিলেন অভিযুক্ত শ্যামল কান্তি ভক্ত। শুনানী শেষে আদালত তাঁর বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারী করেন। শ্যামল কান্তি ভক্ত আদালত কক্ষ থেকে বের হয়ে নারায়নগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেনের চেম্বারে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি আদালত কক্ষ থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ তাঁকে গ্রেফতারের চেষ্টা করে।
এই সময় এডভোকেট শাখাওয়াত হোসেন সহ বেশ কয়েজন আইনজীবী পুলিশের সঙ্গে তর্ক করে সে মুহুর্তে তাঁকে গ্রেফতার থেকে রক্ষা করেন। তাঁরা পুলিশকে বলেন, ওয়ারেন্ট বের হলেই কাউকে গ্রেফতার করা যায় না। ওয়ারেন্ট কোর্ট থেকে থানায় যেতে হবে। সেখানে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা একজন এস আইকে দায়িত্ব দেবেন ওয়ারেন্ট তামিল করতে। এরপর তাঁকে গ্রেফতার করতে হবে।
অত:পর উল্লেখিত আইনজীবীরা শ্যামল কান্তি ভক্তকে একটি আদালত কক্ষে নিয়ে যান। এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমরা জানতাম একটি ওয়ারেন্ট প্রসেসিং করতে কয়েকদিন সময় লাগে। ভেবেছিলাম শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে আদালত প্রাঙ্গন থেকে বের করে আমরা উচ্চ আদালতে চলে যাব। কিন্তু ৫/৭ শত পুলিশ পুরো আদালত প্রঙ্গন ঘিরে ফেলে। শ্যামল কান্তি ভক্ত যেখানেই যাচ্ছিলেন বিপুল সংখ্যক পুলিশ তাঁকে অনুসরণ করতে থাকে। তার প্রেফতারি পরোয়ানা জারীর আদেশ হওয়ার পর আদালত থেকে বের হওয়ার প্রতিটি গেটে ঢোকার বা বের হওয়ার উপায় ছিল না। আমরা বিষয়টি জানতে পেরে শ্যামল কান্তি ভক্তকে আত্মসমর্পণের পরামর্শ দেই।
তিনি সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট অশোক কুমার দত্তের আদালতেই আত্মসমর্পন করলে আদালত তাঁকে জেল হাজতে পাঠান। জনপ্রতিনিধি, সরকারী দলের নেতার প্রভাবে আদালত এভাবে ওয়ারেন্ট ইস্যু, তার প্রসেসিং এবং জামিন না দিয়ে জেল হাজতে পাঠানো প্রভৃতি অস্বাভাবিক দ্রুততার সাথে করেছে।
বস্তুত:ই নারায়ণগঞ্জের পুলিশ ও নিম্ন আদালত যা ঘটালেন শ্যামল কান্তি ভক্তকে নিয়ে তা এক নজির বিহীন ইতিহাসই বটে। তবে এটাই শেষ কথা নয়।
দৈনিক সংবাদে একই দিনে ঐ সংবাদের পাশে এক কলাম শিরোনামে “আপোষ করার জন্য সেলিম ওসমান লোক পাঠিয়েছিলেন” শিরোনামে আরও একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে যা প্রণিধান যোগ্য। ঐ খবরে বলা হয়-
শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের স্ত্রী সবিতা হাওলাদার জানিয়েছেন, শ্যামল কান্তি ভক্তের সঙ্গে আপোষ রফা করার জন্য এম.পি সেলিম ওসমান লোক পাঠিয়েছিলেন। আপোষ করলে ঘুষ গ্রহণের মামলা তুলে নেওয়া ও শ্যামল কান্তি ভক্তের পরিবারকে মোটা অংকের টাকা টাকার আর্থিক সহযোগিতা দানের আশ্বাস দেয়া হয়েছিল।
বুধবার রাতে টেলিফোনে সবিতা হাওলাদার সংবাদকে জানান, গত ১৪ মে সেলিম ওসমানের মামলার কয়েকদিন আগে এম পি সেলিম ওসমানের পক্ষে নগরীর কিল্লারপুল এলাকায় অবস্থিত বিবি মরিয়ম স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জসিম উদ্দিন শ্যামল কান্তির নগর খানপুর এলাকার বাসায় গিয়েছিলেন।
জসিম উদ্দিন শ্যামল কান্তি ভক্ত ও তাঁর স্ত্রী সবিতা হাওলাদারকে বলেন, এম পি সেলিম ওসমানের সংঙ্গে আপোষ হয়ে গেলে শ্যামল কান্তি ভক্তের কোন ঝামেলা থাকবে না। তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা তুলে নেওয়া হবে। তাঁর পরিবারকেও মোটা অংকের আর্থিক সহয়োগিতা করা হবে। ফলে তাঁরা বেশ ভাল থাকতে পারবেন। না হলে তাঁদের অনেক ঝামেলায় পড়তে হবে।
জবাবে শ্যামল কান্তি ও তাঁর স্ত্রী সবিতা জসিম উদ্দিনকে জানান, এম.পি. সেলিম ওসমানের বিরুদ্ধে মামলা তাঁরা করেন নি-করেছে সরকার। এছাড়া যেখানে একজন শিক্ষককে কানে ধরে ওঠ বস করানো হয়েছে দুই হাতে শ্যামল কান্তি ভক্তকে সেলিম ওসমান চড় মেরেছেন সেখানে আপোষ কিসের? এর পর জসিম উদ্দিন চলে যান।
সবিতা বলেন, ঐদিন আপোষ হয় নি বলেই আজ এভাবে শ্যামলকে জেলে যেতে হলো। অথচ দুদিন আগে সেলিম ওসমান দিব্যি জামিন পেয়ে গেলেন।
তা হলে কি দাঁড়ালো?
সেলিম ওসমানের আপোষ প্রস্তাব না মানার ফলে ঐ তথকথিত ঘুসের মামলাটা (শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে) রীতিমত তাজা হয়ে উঠলো এবং বাঘের মত ঝাঁপিয়ে পড়লো নিরীহ নিরাপরাধ গোবেচারা শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের উপর। সে মামলাও আবার দুর্নীতির অভিযোগে এবং তা দায়ের করানো হলো তাঁরই স্কুলের এক শিক্ষিকাকে দিয়ে। সেই মামলায় হাজিরা দিতে গেলেন শ্যামল কান্তি। আদালতে পৌঁছে গেল ঐ মোকর্দমার চার্জশীট। হাকিম অশোক কুমার দত্ত কোন এক ঈশারায় নড়ে চড়ে বসলেন কারণ তাঁর সামনে হাজির হয়েছেন শিক্ষক শ্যামল কান্তি আর মহাশক্তিমান এম.পি ওসমানের ইঙ্গিতে বা নিদের্শে পুলিশ জমা দিয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির চার্জ শীট। আর যায় কোথা? সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতারী পরোয়ানা।
শিক্ষক শ্যামল কান্তি ঘটনার আকস্মিকতায় দিশেহারা। তিনি তো ঐ চার্জশীটের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। চাইলেন আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে গিয়ে তাঁর আইনজীবীদের সাথে পরামর্শ করে করণীয় র্নিধারণ করতে। আইনী সহায়তা ও পরামর্শ গ্রহণের অধিকার তাঁর মৌলিক অধিকার – সংবিধান স্বীকৃত অধিকার।
না। শ্যামল কান্তি সে অধিকার প্রয়োগ করার ন্যূনতম সুযোগ টুকুও পেলেন না। নিমেষেই কেড়ে নেওয়া হলো তাঁর ঐ অধিকারটুকু। যেতেই দেওয়া হলো না তাঁর আইনজীবীর কাছে। শত শত পুলিশ ঘিরে ধরলো তাঁকে যেন এক ভয়াবহ দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী আত্মগোপন থেকে হঠাৎ আদালতে এসেছে। আবার হয়তো হঠাৎই আদালত প্রাঙ্গন থেকে বেরিয়ে পালিয়ে উধাও হয়ে যাবে- চলে যাবে আত্মগোপনে- আর কোথাও তাকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। ফলে দেশ ভয়াবহ সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের কবলে পড়লে দেশের বা অন্তত:পক্ষে নারায়ণগঞ্জের আইন শৃংখলা পরিস্থিতিও ভেঙ্গে পড়বে। তাই তাঁকে ধরার জন্য হাজারের কাছাকাছি পুলিশ ঐ আদালত প্রাঙ্গন ঘিরে ফেললো।
কি বলেন নারায়গঞ্জের পুলিশ সুপার? সেলিম ওসমান যেদিন আদালতে যান, জামিন প্রার্থনা করেন- সেদিনও কি আদালত প্রাঙ্গনে শত শত পুলিশ দিয়ে ঘিরে ফেলেছিলেন? না কি সেলিম ওসমানের নিরাপত্তার দায়িত্ব গ্রহণ করে স্যার স্যার বলে সম্মোধন করেছিলেন। একজন সম্মানিত শিক্ষককে এভাবে হেস্তনেস্ত ও লোকচক্ষুতে তাঁকে হেয় প্রতিপন্ন করতে দুর্নীতির এক মিথ্যে মামলায় অভিযুক্ত অবস্থার এত বিশাল আয়োজন? বাংলাদেশ কি তবে শ্যামল কান্তির ভয়ে এতটাই ভীত?
মাননীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বিষয়টি দেখে নারায়ণগঞ্জের পুলিশের ভূমিকা সম্পর্কে দেশবাসীকে বিবৃতি মারফত জানাবেন আশা করি। আর ঐ পুলিশ কর্মকর্তাদেরকে হয় শাস্তির নয়তো পুরস্কারের ব্যবস্থাও করবেন এমনটাও আশা করি।
আদালতকে আমি সম্মান করি। আইনের পেশায় ৩০ বছর নিয়োজিত ছিলাম। এখন অবসরে। কিন্তু নারায়নগঞ্জের ঐ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট এটা কি করলেন? তিনি কি আদৌ Judicial mind apply করেছেন? বিচারকসুলভ নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে বিষয়টি দেখে নিস্পৃহভাবে এ পরোয়ানা জারী ও পরে তাঁকে জেল হাতে পঠিয়েছেন? যে ধারায় মোকর্দমা তা কি জামিন আযোগ্য না কি পেছনে ঐ এমপি যিনি “মহাপরাক্রমশালী” সে কারণে?
মাননীয় আইন মন্ত্রী এই বিচারকের সম্পর্কে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেবেন আশা করি।
আর ঐ শিক্ষিকা? যিনি ঘুসের মামলা দায়ের করলেন? তিনি কি জানেন মিথ্যা মামলা দায়ের করা কত বড় অপরাধ? কত বেশী শাস্তিযোগ্য অপরাধ? আর যদি বলেন মিথ্যা না-তাঁর অভিযোগ পূরোপূরি সত্য তবে বলবো না আপা। তাতেও কিন্তু আপনার রেহাই নেই। ঘুষ যে দেয় – ঘুষ যে নেয় উভয়েই কিন্তু সম অপরাধী। শ্যামল কান্তি আপনার কাছ থেকে ঘুষ নিয়েছেন যদি প্রমাণিত হয় এবং তাঁর শাস্তি হয় তাহলে ঘুষ দেওয়ার অপরাধে সমান শাস্তির হাত থেকে রেহাই পাওয়ার আপনারও কোন পথ থাকবে না। তাই পরিণতিগুলো ভেবে চিন্তে অগ্রসর হবেন আশা করি।
বিপদে যদি পড়েন আপনার প্রিয় এম.পি সেলিম ওসমান তখন কিন্তু আপনার পাশে দাঁড়াবেন না। আপনাকে বিপদে ফেলে রেখে তিনি দিব্যি পালিয়ে যাবেন।
শ্যামল কান্তি ভক্ত চিনি না কিন্তু খুবই চেনা মনে হয় তাঁকে।
নির্যাতন সইতে হবে শ্যামল বাবু।
তবে জিতবেন শেষে। ওরাও হারবে-কিছুটা সময় লাগতে পারে মাত্র। মিথ্যার পরাজয় ও সত্যের জয় অবস্যম্ভাবী।
শ্যামল কান্তি ভক্তকে নিয়ে গত বছর কয়েকটা নিবন্ধ সিডনী থেকে লিখেছিলাম। ভেবেছিলাম শেষ হলো । ওনাকে নিয়ে আর হয়তো লিখতে হবে না। দেশে ফিরে এলাম। দু‘মাস যেতে না যেতেই ওনাকে নিয়ে আবারও লিখতে শুরু করতে হলো।
কিন্তু লেখনীই শুধু নয় সারা দেশের রাজপথগুলি ছাত্র ও শিক্ষক সমাজের গর্জনে কেঁপে উঠুক।


 

 

 

  • প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। কাগজ২৪-এর সম্পাদকীয় নীতি/মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য কাগজ২৪ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!