সেনাপ্রধান এবং ৱ্যাব ডিজিকে ধন্যবাদ

সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমদ এবং ৱ্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমদ বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিয়ে যে উৎসাহব্যঞ্জক বক্তব্য দিয়েছেন তা প্রশংসনীয়। তাঁদের ধন্যবাদ। দেশের এ যাবৎ কালের ইতিহাসে এমন স্পষ্ট, বস্তুনিষ্ট ও সাহসী কথা কেউ শুনেনি। শুধু হিন্দুদের জন্যে নয়, দেশের জন্যে এটি একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত।

সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেছেন, ’সারাদেশের সংখ্যালঘু এলাকায় সেনাবাহিনী গিয়ে আশ্বস্ত করছে, ভোটাররা যেন নির্ভয়ে ও নির্বিঘ্নে তাদের ভোটকেন্দ্রে আসতে পারে এবং যার যার ভোট প্রদান করতে পারে। এজন্য সেসব এলাকাগুলোতে নির্বাচনের আগেপরে সেনাবাহিনী টহল থাকবে। তিনি বলেন, ‘বিগত নির্বাচনগুলোতে কিছু না কিছু সহিংসতা হয়েছে। এবারও সহিংসতা হয়েছে, তবে সে সংখ্যা খুবই কম।

ৱ্যাবের ডিজি বেনজীর আহমদ বলেছেন, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাকারীদের কঠোর হস্তে দমন করা হবে। তিনি বলেন, দেশ গঠনে সবার ভূমিকা আছে। ঠাকুরগাঁওয়ে তিনি বলেন, হিন্দুদের ওপর অত্যাচার জাতির জন্যে কলংকজনক। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার এবার বাড়তি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

এত উচ্চ পদের কর্মকর্তাদের এমত স্পষ্ট কথাবার্তা দেশবাসী আগে শুনেনি।

এটিকে বলে, সমস্যা স্বীকার করে নিয়ে তা সমাধানের ব্যবস্থা নেয়া।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি সতর্ক হয়, তাহলে অন্তত: নির্বাচনকালীন সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধ হতে বাধ্য। এবার এরা সতর্ক, সেনাপ্রধানের ভাষ্যমতে সামান্য নির্যাতন হলেও, ব্যাপক আকারে কিছু ঘটবে না বলেই আশা করা যায়।

সেনাপ্রধান বলেছেন, এবারো সামান্য কিছু অত্যাচারের ঘটনা ঘটেছে। এমত সত্য উচ্চারণ কিন্তু আমরা রাজনীতিকদের মুখে শুনিনি? শোনা উচিত ছিলো। ফেনীতে বেশক’টি হিন্দু বাড়ীতে আগুন দেয়া হয়েছে, এটি করেছেন আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন বাবুল, তিনি গ্রেফতার হয়েছেন। ঠাকুরগাঁওয়ে সংখ্যালঘু ‘র আটটি বাড়ী ভস্মীভূত হয়েছে, ৱ্যাব তা পুনর্নির্মাণ করে দিয়েছেন। পিরোজপুরে হিন্দু চেয়ারম্যানকে রামদা দিয়ে কোপানো হয়েছে। মিরেসরাইয়ে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের এক নাবালিকা গণধর্ষিত হয়েছে। আরো টুকটাক
ঘটনা ঘটছে, রাজনীতিকরা চুপ, কেন?

রাজনীতিকরা মাঝেমধ্যে যে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে কথা বলেন না তা নয়, তাঁরা শুধু বলার জন্যে বলেন। এদের ‘মুখে শেখ ফরিদ, বগলে ইট’? অধ্যাপক আবুল বারাকাতের বইতে স্পষ্ট বলা আছে, সিংহভাগ হিন্দু জমি আওয়ামী লীগের দখলে, তারপর বিএনপি’র অবস্থান। এই দুই দলের প্রাক্তন সেনা কর্মকর্তারা কেউকেউ যে জোরপূর্বক হিন্দু সম্পত্তি দখল করেননি তা নয়, তবে তাঁরা তা করেছেন, রাজনৈতিক হবার পর। সত্যমিথ্যা মিথ্যা জানিনা, সদ্য কর্নেল (অব:) ওলি’র বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে, তিনি এমপি থাকাকালে জোরপূর্বক হিন্দু সম্পত্তি দখল করেছেন। এ লেখা যখন প্রকাশিত হবে তখন নির্বাচনটি সম্পন্ন হয়ে যাবে। আশা করবো, তখনো সবকিছু শান্তিপূর্ণ থাকবে। নুতন বছরে নুতন সরকার গঠিত হবে। স্বাগত ২০১৯। স্বাগতম নুতন সরকার। নির্বাচন এলেই দেশে ভয়ভীতি, মারামারি, কাটাকাটি, সংখ্যালঘু নির্যাতন, ভোটচুরি, বিদেশীদের আনাগোনা, পর্যবেক্ষক ইত্যাদি প্রশ্ন আসে। দেশের ৪৭ বছরের ইতিহাসে আমরা একটি সুষ্ঠূ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারিনি, এটি লজ্জাস্কর। এ ব্যর্থতা রাজনীতিকদের। নুতন সরকার এ দিকটায় নজর দিলে ভবিষ্যতে জাতি কলঙ্কমুক্ত হবে। ইংরেজী নববর্ষে সবাইকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

লেখক- শিতাংশু গুহ, ২৯শে ডিসেম্বর ২০১৮, নিউইয়র্ক (নির্বাচনের ঠিক পূর্বাহ্নে)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!