হেফাজতঃ প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি স্বংশয়

হেফাজতঃ প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি স্বংশয়
রণেশ মৈত্র
সভাপতিম-লীর সদস্য, ঐক্য ন্যাপ

গত ৪ নভেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসে সম্ভবত: একটি মোড় ঘোরার দিন। গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, বাহাত্তরের সংবিধান, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী  একনিষ্ঠ আমার মত ৮৬ বছর বয়সী পোড় খাওয়া মানুষকেও প্রবীন একজন সাংবাদিককেও, দ্বিধাহীন চিত্তেই বলি, ঐ মোড় ঘোরার বিষয়টিকে নিয়ে খোলামেলা লিখতে অনেক ভাবতে হচ্ছে। মনে পোষণ করা বক্তব্যে এবং নিব্ধটির শব্দচয়নে যেন সতর্কতা অবলম্বন করতে হচ্ছে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা বলতে তাত্ত্বিক ক্ষেত্রে, সাংবিধানিক ব্যাখ্যায় যে চিত্রটি সামনে ভেসে ওঠে সেই চিত্রটি আজ অনেকটাই অপমৃত। নানা আইনের বিধান কলমের গতিকে করে ফেলছে সংকুচিত।

এতৎসত্ত্বেও বিবেকের একটি তাড়না আছে। আছে দেশ, মানুষ ও মুক্তিযুদ্ধের প্রতি দায়বদ্ধতা। এ জীবনে তা উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। কারণ বিবেকটি গড়ে উঠেছে ক্রমান্বয়ে ১৯৪৮ ও ১৯৫২‘র ভাষা আন্দোলন, বন্দীমুক্তি ও মানবাধিকার আন্দোলন, সাম্প্রদায়িকতা-বিরোধী আন্দোলন, স্বায়ত্বশাসনের আন্দোলন, শিখা সংঘ, ছাত্র ইউনিয়ন, আওয়ামী লীগ, ন্যাপ করে বেড়ে উঠতে ধারাবাহিকভাবে সংগঠিত অসংখ্য আন্দোলন, একুশ দফা, ছয় দফা, এগার দফার আন্দোলন, ৬৯ এর গণ অভ্যূত্থান, একাত্তরের মহান মুক্তির মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা। তবুও সতর্ক হতেই হচ্ছে।

৪ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের একটি বিশেষ দিন অত্যন্ত তাৎপর্য্য বহনকারী দিন। এই দিনে, ১৯৭৩ সালে, প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা জাতির জনক শেখ মুজিবরের রহমানের নেতৃত্বে অনুমোদিত বাহাত্তরের ঐতিহাসিক সংবিধানটি প্রথম কার্যকর করা হয়েছিল। সেই থেকে দিবসটি “সংবিধান দিবস” হিসেবে পরিচিত যদিও সেই ঐতিহাসিক পরিচিতিটি, আরও অনেক পরিচিতির মতই, এখন প্রায় বিস্মৃতির অতলে স্থান করে নিয়েছে।

যা হোক, এমন একটি ঐতিহাসিক দিনে এবার ২০১৮ সালে এসে (অর্থাৎ বাহাত্তরের সংবিধান কার্য্যকর করার ৪৫ বছর পারে) আমরা দেখলাম হেফাজতে ইসলাম নামক ‘অরাজনৈতিক’ এবং ইসলামী সংগঠনটির আমীর আল্লামা শাহ আহমেদ শফি তাঁর সৃষ্ট সংগঠন দেশের কওমী মাদ্রাসাগুলির সর্বোচ্চ সংস্থা “আল-হাইয়াতুল উলয়া লিল জামিয়াতুল কওমিয়া বাংলাদেশ’ নামক সংগঠন কর্তৃক ঢাকা মহানগরীর ইতিহাস সৃষ্টিকারী সোহ্ওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত কওমী শিক্ষক-শিক্ষার্থী-আলেমদের শুকরানা মাহফিল।

এই মাহফিল আয়োজনের পটভূমিটি হলো কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার সর্বোচ্চ স্তরে তাদের দেওয়া সনদের সরকারী স্বীকৃতির জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা জানাতে। মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংস্থায় চেয়ারম্যান আল্লামা শাহ আহমেদ শফি। প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সভাপতি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “আমাকে যখন আল্লামা শফি বললেন, এই বিল পাশ করায় তিনি সংবর্ধনার আয়োজন করবেন। আমি বললাম, আমার জন্য না, এটা হবে আল্লাহের কাছে সে জন্যে শুকরিয়া আদায় করতে চাই।”

প্রধানমন্ত্রী সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে পৌঁছে মঞ্চে উঠে কওমী আলেমদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। আলেমদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘কওমী জননী’ উপাধি দেন গোপালগঞ্জের গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসার মহাপরিচালক ও কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের গওহরডাঙ্গার চেয়াম্যান মুফতি রুহুল আমিন। তিনি প্রয়াত প্রখ্যাত আলেম শামসুল হক ফরিদপুরীর ছেলে। উপাধি প্রদানকালে তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, “আপনি ১৪ লাখ শিক্ষার্থীর জননীর ভূমিকা পালন করেছেন। আমি আজকে এই কওমী সমুদ্রে ঘোষণা করতে চাই, আজ থেকে কওমী জননী উপাধি দিলাম। আপনার এই মাতৃত্বের ভূমিকা না থাকলে এই দেশে সাহাবাদের শত্রু ওলামায়ে কেরামের শত্রু, জামায়ত-মওদুদীরা তা হতে দিত না।”
এ সময় রুহুল আমিন প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বলেন, “আমরা আপনার কাছে দাবী রাখবো, বিশেষ করে আপনার পরবর্তী প্রজন্ম, আমার ভাই সজীব ওয়াজেদ জয় ভাইকেও ওলামায়ে কেরামদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট করে দিয়ে যাবেন।”
মাহফিলে কওমীর স্বীকৃতি দেওয়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রীকে ক্রেষ্ট উপহার দেন শাহ আহমেদ শফি। অপরপক্ষে সংসদে পাস হওয়া কওমী স্বীকৃতি আইনের বিলের একটি কপি আহমদ শফির হাতে তুলে দেন।
অত:পর প্রধানমন্ত্রী সকল নেতৃমন্ডলীও দেশবাসীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “পাক-ভারত উপমহাদেশে কওমি মাদ্রাসার মধ্য দিয়ে মুসলমানরা শিক্ষা গ্রহণ শুরু করে। কওমি মাদ্রাসা শুরু যাঁরা করেছিলেন তারা বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনও শুরু করেছিলেন। যারা সত্যিকার ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করে তারা কখনও জঙ্গীবাদী সন্ত্রাসী হতে পারে না। এ সময় তিনি তাঁর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমার ময়দান ও কাকরাইল মসজিদের জায়গা দেওয়া, ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা, ও.আই.সি‘র সদস্যপদ গ্রহণ পৃভৃতি ঘটনার কথা উল্লেখ করেন।

দোয়া কামনা
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ২২ মিনিটের বক্তৃতায় দু’বার পিতা-মাতা ও ভাইদের উল্লেখ করে আবেগ প্রবণ হয়ে পড়েন। অত:পর সকলের দোয়া চেয়ে বলেন, “দোয়া চাই, সামনে নির্বাচন আছে। আল্লাহ্ রাব্বুল আল আমিন যদি ইচ্ছা করেন, নিশ্চয়ই আবার তিনি জনগণের খেদমত করার সুযোগ আমাকে দেবেন। আর যদি আল্লাহ্ না চান-দেবেন না। কোন আফসোস থাকবে না। কারণ আমি সব কিছু আল্লাহর উপর ছেড়ে দিয়েছি।”

যুগান্তকারী
মাহফিলে শাহ্ আহমেদ শফির লিখিত বক্তব্য পড়ে শুনান কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের সহকারী মহাসচিব মুফতি নূরুল আমিন।
লিখিত ঐ বক্তব্যে শাহ্ আহমেদ শফি বলেন, কওমী সনদের স্বীকৃতির দাবীটি দীর্ঘ দিনের। অতীতে এ দাবী আদায়ের লক্ষ্যে দেশের শীর্ষ ওলামায়ে কেরাম বহু আন্দোলন করেছেন। ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে বারবার, কিন্তু এই ন্যায্য দাবীটি পূরণ হয় নি। তিনি বলেন, কওমী আন্দোলনের ন্যায্য দাবীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে এবং শত বাধা উপেক্ষা করে সংসদে কওমি সনদের আইন পাশ করে প্রধানমন্ত্রী যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছেন। নি:সন্দেহে ওলামায়ে কেরামদের প্রতি এটি তাঁর দরদপূর্ণ মনোভাবের বহি:প্রকাশ।

তবে হেফাজত নীতি আদর্শে অটল হেফাজতের আমীর শাহ্ আহমেদ শফি বলেন, “আমি দ্বিধাহীনভাবে বলতে চাই, আমার কোন রাজনৈতিক পরিচয় নাই। রাজনৈতিক কোন প্লাটফর্ম ও দলের সঙ্গে আমার এবং হেফাজতে ইসলামের নীতিগত কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। তাই আমার কর্মকৌশল ও সিদ্ধান্তকে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোন থেকে দেখার কোন সুযোগ নেই। তিনি দাবী করেন, হেফাজতে ইসলামের নীতি ও আদর্শের ওপর তিনি অবিচল থাকবেন।

আহমদ শফি বলেন, তাঁর বক্তব্য-বিবৃতিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপব্যাখ্যা ও মিথ্যাচার হচ্ছে। এ ব্যাপারে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য তিনি সবাইকে আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রীর এ সংক্রান্ত বক্তব্য
পরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ বিষয় শেখ হাসিনা বলেন, “এই অপপ্রচার বন্ধ করার জন্য ইতি মধ্যে আমরা সাইবার ক্রাইম আইন করেছি। কেউ যদি এ ধরণের মিথ্যা অপপ্রচার করে, সাথে সাথে সেই আইন দ্বারা তাদের বিচার করা হবে। আইনের মাধ্যমে তাদের বিচার করে উচিত শিক্ষা দিয়ে দেব যাতে তারা কোনভাবে এ ধরণের অপপ্রচার চালাতে না পারে।

স্বাধীনতা পদক ও অন্যান্য দাবী
আল হাইয়াতুল উলমার সদস্য মওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ প্রধান মন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, “একটা আরজ করতে চাই বাংলাদেশের কোন আলেমকে আজ পর্য্যন্ত স্বাীধনতা পদক দেওয়া হয় নি। আহমদ শফি সাহেব, যিনি যে কওমের এই যে খেদমত করেছেন, সমস্ত ওলামায়ে কেরামকে একত্রিত করে যে সেবা করেছেন, আমি মনে করি উনি স্বাধীনতা পদক পেতে পারেন। এটিকে বিবেচনায় নিয়ে এই বছরের স্বাধীনতা পদকের ব্যাপারে বিবেচনা করবেন বলে আশা করি।”
এছাড়া আলেমদের বিরুদ্ধে ‘হয়রানিমূলক’ সব মামলা প্রত্যাহার, বিদ্যালয়গুলোতে দ্বিনীয়াত বা ধর্ম বিষয়ে পাঠদানের দায়িত্বে থাকা হিন্দু শিক্ষকদের বাদ দিয়ে সদ্য স্নাকোত্তরের ডিগ্রী পাওয়া আলেমদের নিয়োগ দেওয়া, ইমামদের জন্য মাসে পাঁচ হাজার ও মুয়াজ্জিনদের জন্য তিন হাজার টাকা মাসিক ভাতা দেওয়ার দাবী তুলেছেন আলেমরা। এছাড়া তাঁদের পূর্ব ঘোষিত ১২ দাবীর অপূর্ণ দফাগুলি পূরণ সত্বরেই করার দাবীও উচ্চরিত হয়।

৫ মের মিথ্যাচার (!)
শুকরানা মাহফিলে প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মুহাম্মদ জয়নুল আবেদীন স্বাগত বক্তব্যে দেন। তিনি কওমী স্বীকৃতি উদ্যোগের অন্যতম সমশ্চয়ক ছিলেন। মেজর জেনারেল জয়নুল আবেদীন বলেন, “আমি একজন সামান্য সমশ্চয়ক হিসেবে এই মাহফিলকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

সর্বোচ্চ স্তরে সর্বোচ্চ ডিগ্রী কিন্তু নীচে?
বিন্দুমাত্র সংস্কার ছাড়াই মাদ্রাসা শিক্ষার সর্বোত্র স্তরকে আইনি স্বীকৃতি, মূল ধারার পাঠ্য বইএ পরিবর্তন আনাসহ বিভিন্ন ধরণের সুবিধা ও ছাড়া একেবারে সর্বোচ্চ স্তরের স্বীকৃতি দানকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অসংগতি দেখছে বিশেষজ্ঞরা।

এছাড়া হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবীর কিছু বিষয় সরকার নমনীয়তা দেখিয়েছেন স্বাভাবিক দ্রুততায়। এই সুযোগে তাদের পক্ষ থেকে কিছু নতুন চাওয়া-পাওয়া সামনে এসেছে। ২০১৬ সালে হেফাজতের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর অবস্থানে ছিল। কিন্তু এখন সরকারের সঙ্গে এই ধর্মভিত্তিক সম্পর্ক দিনে দিনে বেশ ঘনিষ্ট হয়ে উঠেছে। ঢাকা সহ বিভিন্ন জেলায় ২০১৩ সালের মে যে ‘ঢাকা অবরোধ’ কর্মসূচীতে লক্ষ লক্ষ কওমী শিক্ষার্থী ও আলেমকে জড়ো করেছিল তাতে সন্ত্রাসী কারবার ঘটানোর ফলে ৮৩ টি মামলা দায়ের করা হলেও সেগুলির বেশী ভাগই গতিহীন অবস্থায় পড়ে আছে ফাইল বন্দী হয়ে। কারণটি মূলত: রাজনৈতিক।

ঐ ঘটনার দেড় বছর পর গত ১৯ সেপ্টেম্বর সংসদে দাওরায়ে হাদিসকে স্নাকোত্তর সমমানের আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এজন্যই শেকারানা দিবসের আয়োজন। আর তার কারণে ঐ দিন (৪ নভেম্বর) দেশব্যাপী অনুষ্ঠিতব্য জে.এস.সি. পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করে তারিখ পরিবর্তন করে লক্ষ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রীকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়। ফলে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকবৃন্দ ক্ষুর্ব্ধ।

এর আগে ২০১৭ সালে মূলধারার প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্য বইএ ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয় কওমি মাদ্রাসা ভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের দাবী অনুযায়ী। এর প্রতিবাদে আন্দোলন ও সমালোচনা হলেও সরকার তা গ্রাহ্য করে নি।

নানা পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এবং টেলিভিশনে সরাসরি গোটা অনুষ্ঠান দেখে নিবন্ধটি লিখতে বসে উপরের কথাগুলি প্রয়োজনীয় বলে উল্লেখ করলাম যা প্রিয় পাঠক-পাঠিকাদের স্মৃতিতে হয়তো নতুন করে ধাক্কা দেবে।

এছাড়াও সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনে স্থাপন করা ‘জাস্টিসিয়া’ নামক শিল্পসম্মত মূর্তিটি হেফাজতের দাবীতেই তাৎক্ষণিকভাবে সরিয়ে ফেলা হয়। হেফাজত বলেছিল, ওটি দেবী মূর্তি সুতরাং ইসলাম-বিরোধী। কিন্তু সময় নিয়ে খতিয়ে দেখা হলো বস্তুত:ই ওটা দেবী মূর্তি কি না। আসলে আদৌ ওটি কোন দেবী মূতিও ছিল না। যদি তা হতোও তবুও কি তা ভাঙতে হবে? তবে কি মন্দির, প্রতিমা প্রভৃতি ভেঙ্গে ফেলা সঙ্গত কাজ হিসেবেই হেফাজত বিবেচনা করে। সম্ভবত: তাই। কারণ কদাপি হেফাজত এগুলির প্রতিবাদ বা নিন্দা জানায় না। বরং বৌদ্ধ মন্দির ও মূর্তি রাউজানে ভাঙ্গার দায় তো এলাকাবাসী তাদের ঘাড়েই দিয়েছিল।

২০১৩ সালের ৫ মে তারিখের সন্ত্রাসী ঘটনার দায়েরকৃত মামলাগুলি কেন ঘুমন্ত অবস্থায় থাকবে? অাকস্মাতৎ প্রত্যাহারের লক্ষ্যে?
তাদের আবদার আল্লামা শাফিকে স্বধীনতা পদকে ভূষিত করা হোক। যৌক্তিকতা হিসেবে নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির উত্তর অত্যন্ত প্রয়োজন।

এক. আল্লাম শাফি বয়স্ক মানুষ অনেক কিছু স্বচক্ষে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে তাঁর। সেই অভিজ্ঞতা থেকে তিনি কি পাকিস্তান সরকার কর্তৃক বাঙালি শোষণের প্রতিবাদ করেছিলেন? বাঙালিদের উপর অত্যাচার নির্য্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন?

তিনি কি ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন এবং তাঁর সঙ্গী সাথীদেরকেও মুক্তিযুদ্ধে শরীক হতে উদ্যোগী হয়েছিলেন? একটি বারও কি তিনি এবং হেফাজতিরা “জয়বাংলা” “জয় বঙ্গবন্ধু” শব্দটি উচ্চারণ করেছেন?

তাঁরা কি জাতীয় সংঙ্গীত গেয়ে প্রতিদিন কওমী মাদ্রাসাগুলির ক্লাস শুরু করেন? জাতীয় পতাকা জাতীয় দিবসগুলিতে উত্তোলন করেন?
এ প্রশ্নগুলির জবাব হেফাজতীদের কাছে মুক্তিযুদ্ধের অনুসারী সকলের। সমগ্র দেশবাসীর।

এগুলির উত্তর না পেলে কি হিসেবে তাঁরা চিহ্নিত হবেন?
এবারে আমি সর্বজন শ্রদ্ধে শিক্ষক অধ্যাপাক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর বক্তব্যে ৫ নভেম্বর তিনি চিঠি লিখেছেন –“এভাবে কওমি শিক্ষার সর্বোচ্চ স্তরকে স্নাকতোত্তরের সমমান দেওয়া ঠিক হয় নি। কারণ বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে উচ্চশিক্ষা স্তরে যেতে হয়। এছাড়া কওমি শিক্ষা একেবারেই স্বতন্ত্র শিক্ষাব্যবস্থা। এর সঙ্গে স্নাকতোত্তরের সমমানের স্বীকৃতি দেওয়ার কোন মানে হয় না। আমি মনে করি এটা স্নাকতোত্তর ডিগ্রীকে অবমূল্যায়ন করবে।

“এখানে সরকার ছাড় দিচ্ছে-এটা উচিত হয় নি। এই ছাড়ের প্রভাব অন্যত্রও দেখতে পাচ্ছি। তাদের চাওয়া অনুযায়ী প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবইএ পরিবর্তন আনা হলো। শিক্ষাক্ষেত্রে এ ধরনের রাজনীতি আনা ঠিক নয়। এটা ক্ষতিকর। আমার মনে হয় এ ধরণের দাবী বাড়বে। এমন জায়গায় যাবে, যেখানে সরকার দাবী মানতে বাধ্য হবে। ছাড় দেওয়ার কারণে বাংলাদেশের মূল ভিত্তিকে নড়বড়ে করবে।
অতএব আমি ভীতিগ্রস্ত-আমরা সংকিত।

লেখক
রণেশ মৈত্র
সাংবাদিকতায় একুশে পদক প্রাপ্ত


  • প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। কাগজ২৪-এর সম্পাদকীয় নীতি/মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য কাগজ২৪ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না।

কাগজ টুয়েন্টিফোর বিডি ডটকম এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!