১৯ এ চলে গেছেন যাহারা

২০১৯ সালে রাজনীতি, ব্যবসা, ছাত্র, চলচ্চিত্র, সঙ্গীত, নাটকসহ নানা অঙ্গনের বহু গুণী মানুষ মৃত্যুবরণ করছেন এমন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের একটি তালিকা | এ বছরটিতে চিরদিনের জন্য চলে গেছেন তাঁদের তালিকা অনেক দীর্ঘ। চিরপ্রস্থানে যাওয়া এই বিশিষ্টজনেরা নিজ নিজ ক্ষেত্রে চিরস্মরণীয় অবদান রেখে গেছেন।

সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম (১ জানুয়ারি ১৯৫২—৩ জানুয়ারি ২০১৯)
তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ষষ্ঠ সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি কিশোরগঞ্জ-৩ ও কিশোরগঞ্জ-১ আসন থেকে একাধিক বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ২০১৫ সাল থেকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন। তিনি বীরমুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।

তিনি ফুসফুসের ক্যান্সারে ভুগছিলেন। নভেম্বর ২০১৮ সালে তার ফুসফুসের ক্যান্সার ৪র্থ ধাপে পৌঁছে। ২০১৯ সালের ৩রা জানুয়ারি থাইল্যান্ডের ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। ৬ জানুয়ারি ঢাকার বনানী কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।

আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল (১ জানুয়ারি ১৯৫৬—২২ জানুয়ারি ২০১৯)
বাংলা গানের প্রখ্যাত গীতিকার, সুরকার ও বীরমুক্তিযোদ্ধা ৬৩ বছর বয়সে রাজধানীর বাড্ডায় নিজ বাসায় মৃত্যুবরণ করেন।  ৭০ এর দশকের শেষ লগ্ন থেকে আমৃত্যু চলচ্চিত্রসহ গানের জগতে সক্রিয় ছিলেন।

আল মাহমুদ (১১ জুলাই ১৯৩৬—১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯)
মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ যিনি আল মাহমুদ নামে অধিক পরিচিত ছিলেন| আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, ছোটগল্প লেখক, শিশুসাহিত্যিক এবং সাংবাদিক ছিলেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন প্রবাসী সরকারের দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে । তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠিত সরকার বিরোধী সংবাদপত্র দৈনিক গণকণ্ঠ (১৯৭২-১৯৭৪) পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। সম্পাদক থাকাকালীন সময়ে সরকারের বিরুদ্ধে লেখার কারণে এক বছরের জন্য কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়।

তিনি ১৯৭৫ সালে শিল্পকলা একাডেমীর গবেষণা ও প্রকাশনা বিভাগের সহপরিচালক পদে নিয়োগ পান। দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালনের পর তিনি পরিচালক হন। পরিচালক হিসেবে ১৯৯৩ সালে অবসর গ্রহণ করেন।

লোক লোকান্তর (১৯৬৩), কালের কলস (১৯৬৬), সোনালি কাবিন (১৯৭৩), মায়াবী পর্দা দুলে উঠো (১৯৭৬) কাব্যগ্রন্থগুলো তাকে প্রথম সারির কবি হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করে। ১৯৯৩ সালে বের হয় তার প্রথম উপন্যাস কবি ও কোলাহল।

১৯৬৮ সালে ‘লোক লোকান্তর’ ও ‘কালের কলস’ নামে দুটি কাব্যগ্রন্থের জন্য তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন।

মুহম্মদ খসরু (১৯৪৬—১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯)
খসরু বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থার (বিসিক) নকশা কেন্দ্রে আলোকচিত্রী হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘পাকিস্তান চলচ্চিত্র সংসদ’-এর প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে খসরু অন্যতম। পরবর্তীতে ১৯৬৮ সাল থেকে চলচ্চিত্র বিষয়ক পত্রিকা ‘ধ্রুপদি’ সম্পাদনা করা শুরু করেন যার সর্বশেষ সংকলন প্রকাশিত হয় ২০০৬ সালে। এছাড়ও তিনি চলচ্চিত্র বিষয়ক আরও একটি পত্রিকা ‘চলচ্চিত্র’ সম্পাদনা করেছেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইন্সটিটিউটের প্রশিক্ষক হিসাবেও কাজ করেন। ১৯৭৫ সালে ভারত-বাংলাদেশের যৌথ প্রযোজনার পালঙ্ক ছবিটিতে খসরু ভারতীয় চলচ্চিত্রকার শ্রী রাজেন তরফদারের সাথে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। বাংলাদেশে সর্বপ্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি নির্মাণ শুরু করার পেছেনেও তার অবদান রয়েছে।

বাংলাদেশে চলচ্চিত্র সংস্কৃতির বিকাশে দীর্ঘ ৫০ বছর নিরবচ্ছিন্ন অবদানের জন্য হীরালাল সেন আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হন। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সুবর্ণ জয়ন্তী পদক পান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ আজীবন সম্মাননা ২০১৭ পান।

শাহনাজ রহমতউল্লাহ (২ জানুয়ারি ১৯৫২—২৩ মার্চ ২০১৯)
সংগীতশিল্পী শাহনাজ রহমতউল্লাহ ২০১৯ সালের ২৩ মার্চ মৃত্যুবরণ করেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। ১৯৯২ সালে একুশে পদক দেওয়া হয় তাকে। ১৯৯০ সালে ‘ছুটির ফাঁদে’ ছবিতে গান গেয়ে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন। ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’, ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’, ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে’, ‘আমার দেশের মাটির গন্ধে’, ‘একতারা তুই দেশের কথা বল রে আমায় বল’, ‘আমায় যদি প্রশ্ন করে’, ‘যদি চোখের দৃষ্টি’, ‘সাগরের তীর থেকে’ তার গাওয়া জনপ্রিয় গান।

টেলি সামাদ (৮ জানুয়ারি ১৯৪৫—৬ এপ্রিল ২০১৯)
চলচ্চিত্রের শক্তিশালী অভিনেতা টেলি সামাদ মারা গেছেন ৭ এপ্রিল । মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর । তিনি হৃদরোগ, ক্যানসার ও বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছিলেন । চার দশকে প্রায় ৬০০ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন এই অভিনেতা ।

সালেহ আহমেদ (১৯৩৬—২৪ এপ্রিল ২০১৯)
অভিনেতা সালেহ আহমেদ আর ২৪ এপ্রিল রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা অসুখে ভুগছিলেন এই অভিনেতা । তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর । ধারাবাহিক ‘অয়োময়’ নাটক এবং ‘আগুনের পরশমণি’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে অভিনয় জগতে তার পদচারণা । সালেহ আহমেদ পেয়েছেন স্বাধীনতা পদক ।

মাহফুজ উল্লাহ (১০ মার্চ ১৯৫০—২৭ এপ্রিল ২০১৯)
মাহফুজ উল্লাহ ছিলেন লেখক, সাংবাদিক, টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব ও পরিবেশবিদ। বাংলাদেশে তিনিই পরিবেশ সাংবাদিকতার সূচনা করেন।

মাহফুজ উল্লাহ সাপ্তাহিক বিচিত্রার জন্মলগ্ন থেকেই এ পত্রিকার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। মাঝে চীন গণপ্রজাতন্ত্রে বিশেষজ্ঞ হিসেবে, কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপদূতাবাসে কাজ করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ এবং সাংবাদিকতা বিভাগে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা করেন। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের নেতৃস্থানীয় বাংলা ও ইংরেজি দৈনিকে কাজ করেছেন। রেডিও ও টেলিভিশনে অনুষ্ঠান উপস্থাপনাসহ একাধিক টক শো অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে সংবাদ ও রাজনীতি নিয়ে নানামুখী বিশ্লেষণ করতেন। মৃত্যুর পূর্বে তিনি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

তিনি সেন্টার ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট নামে একটি পরিবেশবাদী সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।  তিনি আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত একজন সক্রিয় পরিবেশবিদ ছিলেন। এছাড়ও তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের এবং আন্তর্জাতিক পরিবেশবাদী সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার-এর আন্তর্জাতিক পরিচালনা পর্ষদের প্রথম বাংলাদেশী সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন।

বিভিন্ন বিষয়ে মাহফুজ উল্লাহ বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় ৫০-এর অধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। যার মধ্যে বেশ কিছু পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে সহায়ক গ্রন্থ হিসেবে সংগ্রহিত আছে। তার গ্রন্থসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল: (বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জিয়া: রাজনৈতিক জীবনী), (যাদুর লাউ), (যে কথা বলতে চাই), (অভ্যুত্থানের ঊনসত্তর), (পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন: গৌরবের দিনলিপি ১৯৫২-৭১), (উলফা ও অ্যাসোসিয়েশন ইন আসাম), (বেগম খালেদা জিয়া: হার লাইফ, হার স্টোরি)।

২৭ এপ্রিল ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। এর আগে গত ২ এপ্রিল অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে প্রথমে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ও পরে থাইল্যান্ডে নিয়ে যাওয়া হয়।

আনিস
আনিসুর রহমান আনিস একজন বাংলাদেশি চলচ্চিত্র, টেলিভিশন ও মঞ্চ অভিনেতা ছিলেন যিনি আড়াই শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন। তিনি কৌতুক চরিত্রে অভিনয়ের জন্য পরিচিত ছিলেন।

আনিসুর রহমান আনিস ১৯৬০ সালে বিষকন্যা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্রাঙ্গনে পা রাখেন। কিন্তু ১৯৬৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এইতো জীবন চলচ্চিত্রটি হল তার প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র। তার অভিনীত সর্বশেষ চলচ্চিত্র যেমন জামাই তেমন বউ। চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি টেলিভিশন ও মঞ্চে অভিনয় করেছিলেন। তিনি বাংলাদেশের থিয়েটারাঙ্গনে নবাব সিরাজদ্দৌলা মঞ্চনাটকে গোলাম হোসেন চরিত্র রূপায়নের জন্য পরিচিত।

আনিসুর রহমান আনিস ২৯ এপ্রিল ৭৮ বছর বয়সে রাজধানীর টিকাটুলির অভয় দাস লেনের নিজ বাসায় তিনি ইন্তেকাল করেন।

সুবীর নন্দী (১৯ নভেম্বর ১৯৫৩—৭ মে ২০১৯)
গুণী কণ্ঠশিল্পী সুবীর নন্দী ৭ মে ৬৬ বছর বয়সে মারা যান । গানের স্বীকৃতি হিসেবে পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। শ্রোতাপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে- ‘দিন যায় কথা থাকে’, ‘আমার এ দুটি চোখ পাথর তো নয়’, ‘পৃথিবীতে প্রেম বলে কিছু নেই’, ‘আশা ছিল মনে মনে’, ‘হাজার মনের কাছে প্রশ্ন রেখে’, ‘বন্ধু তোর বরাত নিয়া’, ‘বন্ধু হতে চেয়ে তোমার’, ‘কত যে তোমাকে বেসেছি ভালো’, ‘পাহাড়ের কান্না দেখে’, ‘আমি বৃষ্টির কাছ থেকে কাঁদতে শিখেছি’, ‘একটা ছিল সোনার কইন্যা’, ‘ও আমার উড়াল পঙ্খীরে’।

খালিদ হোসেন (৪ ডিসেম্বর ১৯৩৫—২২ মে ২০১৯)
খালিদ হোসেন ছিলেন নজরুলগীতি শিল্পী এবং নজরুল গবেষক। তিনি নজরুলের ইসলামী গান গাওয়ার জন্য সুপ্রসিদ্ধ। তার ছয়টি নজরুলগীতির অ্যালবাম এবং ১২টি ইসলামী গানের অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে। সঙ্গীতের অবদানের জন্য ২০০০ সালে তিনি বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদকে ভূষিত হন। এছাড়াও তিনি নজরুল একাডেমি পদক, শিল্পকলা একাডেমি পদক, কলকাতা থেকে চুরুলিয়া পদকসহ বহু সম্মাননা লাভ করেছেন।

তিনি সঙ্গীত প্রশিক্ষক ও নিরীক্ষক হিসেবে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশের সকল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ও বাংলাদেশ পাঠ্যপুস্তক বোর্ড দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি নজরুল ইনস্টিটিউটে নজরুলগীতির আদি সুরভিত্তিক নজরুল স্বরলিপি প্রমাণীকরণ পরিষদের সদস্য।

খালিদ হোসেন ২০১৯ সালের ২২ মে ঢাকার জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) মৃত্যুবরণ করেন।

মমতাজউদদীন আহমদ (১৮ জানুয়ারি ১৯৩৫—২ জুন ২০১৯)
বাংলাদেশের প্রখ্যাত নাট্যকার, অভিনেতা ও ভাষাসৈনিক মমতাজ উদ্দীন আহমদ। তিনি স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ। নাটকে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৭৬ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ও ১৯৯৭ সালে একুশে পদক লাভ করেন। ২ জুন না ফেরার দেশে চলে যান তিনি।

হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ (১ ফেব্রুয়ারি ১৯৩০—১৪ জুলাই ২০১৯)
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১৪ জুলাই রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। গত ৪ জুলাই দুপুরে এরশাদকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়।

এরশাদ বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান ও রাজনীতিবিদ। তিনি জাতীয় পার্টি নামক রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন যা পরবর্তীতে বেশ কিছু উপদলে বিভক্ত হয়।

৩০ মে ১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হবার পর, এরশাদের রাজনৈতিক অভিলাষ প্রকাশ হয়ে পড়ে। ২৪ মার্চ ১৯৮২ সালে এরশাদ রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তারের নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন। ১১ ডিসেম্বর ১৯৮৩ সাল নাগাদ তিনি প্রধান সামরিক প্রশাসক হিসেবে দেশ শাসন করেন। ঐ দিন তিনি দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতা রাষ্ট্রপতি বিচারপতি এ.এফ.এম আহসানুদ্দিন চৌধুরীর কাছ থেকে নিজের অধিকারে নেন। ১৯৯০ সালে গণবিক্ষোভের চাপে এবং সেনাবাহিনীর সমর্থনের অভাবে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সময় এরশাদ ছুটিতে রংপুর ছিলেন। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ না করে তিনি পাকিস্তান চলে যান। পাকিস্তান থেকে আটকে পড়া বাঙালিরা যখন ১৯৭৩ সালে দেশে ফিরে আসে তখন তিনিও প্রত্যাবর্তন করেন।

বাবর
চলচ্চিত্র অভিনেতা, প্রযোজক ও পরিচালক বাবর মারা যান ৬ আগস্ট। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। তার অভিষেক ঘটেছিল আমজাদ হোসেন পরিচালিত ‘বাংলার মুখ’ সিনেমায় নায়ক চরিত্রে । খলনায়ক হিসেবে রাজ্জাক প্রযোজিত ও জহিরুল হক পরিচালিত ‘রংবাজ’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। পরিচালক হিসেবে ‘দয়াবান’, ‘দাগী’, ‘দাদাভাই’সহ বেশ কিছু ব্যবসাসফল ছবি উপহার দিয়েছেন।

ড. মিজানুর রহমান শেলী (২ জানুয়ারি ১৯৪৩—১২ আগস্ট ২০১৯)
মিজানুর রহমান শেলী সাবেক মন্ত্রী, রাজনীতি বিশ্লেষক, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ ছিলেন।

তিনি বেসরকারি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং এশিয়ান অ্যাফেয়ার্সের সম্পাদক ছিলেন। এছাড়া প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইনান্সের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সাপ্তাহিক সচিত্র স্বদেশ এর উপদেষ্টা সম্পাদক এবং ইংরেজি দৈনিক বাংলাদেশ টাইমস ট্রাস্টের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ছাড়াও বিভিন্ন পত্রিকা ও সাময়িকীতে নিয়মিত লিখতেন তিনি। তিনি সমাজবিজ্ঞান ও রাজনীতি বিষয়ক বই ছাড়াও কবিতা, উপন্যাস ও ভ্রমণ কাহিনী লিখেছেন। ২০০৮ সালে বাংলা একাডেমির নিকট থেকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ লাভ করেছিলেন।

মিজানুর রহমান শেলী ২০১৯ সালের ১২ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।

রিজিয়া রহমান (২৮ ডিসেম্বর ১৯৩৯—১৬ আগস্ট ২০১৯)
রিজিয়া রহমান স্বাধীনতা উত্তর কালের বাংলাদেশের একজন নারী ঔপন্যাসিক ছিলেন। ষাটের দশক থেকে গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, রম্যরচনা ও শিশুসাহিত্যে তার বিচরণ। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলো হল ঘর ভাঙা ঘর, উত্তর পুরুষ, রক্তের অক্ষর, বং থেকে বাংলা এবং অভিবাসী আমি ও নদী নিরবধি নামে দুটি আত্মজীবনী। উপন্যাসে অবদানের জন্য তিনি ১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০১৯ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করে। এছাড়াও তিনি যশোর সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার (১৯৮৪), হুমায়ুন কাদির স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৪), আসফ-উদ-দৌলা রেজা স্মৃতি পুরস্কার (১৯৮৪), বাংলাদেশ লেখক সংঘ সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৫), কমর মুশতারি সাহিত্য পদক (১৯৯০), অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৫), নাসিরউদ্দীন স্বর্ণপদক।

রিজিয়া রহমান সাহিত্য পত্রিকা ‘ত্রিভুজ’-এর সম্পাদক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন জাতীয় জাদুঘরের পরিচালনা বোর্ডের ট্রাস্টি ও জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্রের কার্য পরিচালক হিসেবে। তিন বছর বাংলা একাডেমির কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

রিজিয়া রহমান ২০১৯ সালের ১৬ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন।

মোজাফফর আহমদ (১৪ এপ্রিল ১৯২২—২৩ আগস্ট ২০১৯)
তিনি ১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপনা ছেড়ে দিয়ে সম্পূর্ণভাবে রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে যান। ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে নিজ জেলা কুমিল্লার দেবিদ্বার আসনে মুসলিম লীগের শিক্ষামন্ত্রীকে পরাজিত করে তাক লাগিয়ে দেন রাজনীতির ময়দানের সবাইকে।  আওয়ামীলীগের বিরোধিতা সত্ত্বেও ১৯৫৭ সালের ৩রা এপ্রিল পূর্ববঙ্গ প্রাদেশিক পরিষদে ন্যাপ এর প্রতিনিধি নেতা হিশেবে অধ্যাপক মোজাফফর আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার ছয় সদস্যের যে উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করেছিল, তাদের মধ্যে একজন ছিলেন অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ।

তাঁর লেখা বই ‘সমাজতন্ত্র কি এবং কেন’ ও ‘প্রকৃত গণতন্ত্র তথা সমাজতন্ত্র সম্পর্কে জানার কথা মাওবাদী সমাজতন্ত্র ও কিছু কথা’।

বাংলাদেশ সরকার ২০১৫ সালে অধ্যাপক মোজাফফর আহমদকে স্বাধীনতা পদক দেওয়ার ঘোষণা দিলে তিনি তা সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করেন।

তার প্রয়াসে মদনপুরে তার প্রতিষ্ঠিত উপমহাদেশের একমাত্র শিক্ষায়তন ‘সামাজিক বিজ্ঞান পরিষদ’।

দীর্ঘদিন যাবৎ বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ২০১৯ সালের ২৩ আগস্ট ৯৭ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।

কালিদাস কর্মকার (১০ জানুয়ারি ১৯৪৬—১৮ অক্টোবর ২০১৯) চিত্রশিল্পী।
অক্টোবর মাসে বিদায় নিয়েছেন চিত্রশিল্পী কালিদাস কর্মকার। গত ১৮ অক্টোবর ইস্কাটনের বাসায় অচেতন অবস্থায় তাকে পাওয়া যায়। পরে পরিবারের সদস্যরা ল্যাবএইড হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

হুমায়ূন সাধু
তরুণ নাট্য নির্মাতা ও অভিনেতা হুমায়ূন সাধু। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৫ অক্টোবর তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। সিনেমা নির্মাণের স্বপ্ন দেখছিলেন তিনি।

সাদেক হোসেন খোকা
বীরমুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিবিদ, সাবেক মন্ত্রী এবং রাজধানী অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সর্বশেষ মেয়র। তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সহ-সভাপতি ছিলেন এবং অবিভক্ত ঢাকার শহর বিএনপির সভাপতি ছিলেন দীর্ঘদিন।

সাদেক হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন ও মনোবিজ্ঞানে এম.এ. সম্পন্ন করেন। ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

স্বাধীনতার পরে, তিনি ফুটবল নিয়ে কাজ করেন। তিনি ঢাকা মহানগর ফুটবল সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে এবং বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদে পদোন্নতি লাভ করেছিলেন।

১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথম সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন এবং তিনি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব লাভ করেন। পরবর্তীতে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালেও তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন এবং ২০০১ সালে তিনি মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব লাভ করেন। তিনি সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে ২০০২ সালে অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০০৪ সালে তিনি মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন, এর আগে তিনি একই সাথে মেয়র ও মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

সাদেক হোসেন খোকা ৪ নভেম্বর ২০১৯ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে স্লোয়ান ক্যাটারিং ক্যানসার সেন্টারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।

মইন উদ্দীন খান বাদল (২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২—৭ নভেম্বর ২০১৯)
মইন উদ্দীন খান বাদল মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনীতিবিদ ছিলেন। তিনি চট্টগ্রাম-৭ ও চট্টগ্রাম-৮ আসনের সাংসদ ছিলেন।

বাদল ৬০ এর দশকে ছাত্রলীগের সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯৭১ সালে ভারতে প্রশিক্ষণ নেন এবং মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। চট্টগ্রাম বন্দরে অস্ত্র বোঝাই জাহাজ সোয়াত থেকে অস্ত্র খালাস ও প্রতিরোধের অন্যতম নেতৃত্বদাতা তিনি। মুক্তিযুদ্ধের পর জাসদ হয়ে বাসদ ও পরে আবারো জাসদে যোগ দেন। ১২ মার্চ ২০১৬ সালে জাসদের জাতীয় কাউন্সিলে আবার দুই ভাগ হয়। হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বাধীন অংশটি ইসির স্বীকৃতি পায়। বাংলাদেশ জাসদ নামে আলাদা দলের অংশটি স্বীকৃতি পায় নাই অংশের কার্যকরী সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন মইন উদ্দীন খান বাদল। ১৪ দল গঠনেও তার ভূমিকা ছিল।

মইন উদ্দীন খান বাদল একাদশ জাতীয় সংসদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য ছিলেন।

মঈন উদ্দীন খান বাদল ২০১৯ সালের ৭ নভেম্বর ভারতের বেঙ্গালুরুতে নারায়ণ হৃদ্‌রোগ ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

রবিউল হুসাইন (৩১ জানুয়ারি ১৯৪৩—২৬ নভেম্বর ২০১৯)
রবিউল হুসাইন স্থপতি ও কবি। ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক তিনি ২০১৮ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন। এছাড়া, তিনি ২০০৯ সালে কবিতায় অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। তিনি শিল্প-সমালোচক, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক ও সংস্কৃতিকর্মী হিসেবেও পরিচিত। ১৯৭১ সালে সংগঠিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।

তিনি বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি এবং একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী সদস্য ছিলেন।

তার নকশায় তৈরি উল্লেখযোগ্য স্থাপনার মধ্যে রয়েছে, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা পরিষদ ভবন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তি ও স্বাধীনতা তোরণ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ফটক, ভাসানী হল, বঙ্গবন্ধু হল, শেখ হাসিনা হল, খালেদা জিয়া হল, ওয়াজেদ মিয়া সায়েন্স কমপ্লেক্স, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়াম ও একাডেমিক ভবন কমপ্লেক্স।

রবিউলের কবিতা, উপন্যাস, শিশুতোষ ও প্রবন্ধ সম্পর্কিত ২৫টির বেশি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।

রবিউল ২০১৯ সালের ২৬ নভেম্বর মঙ্গলবার ৭৬ বছর বয়সে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।

মাহফুজুর রহমান খান (১০ মে ১৯৪৯—৬ ডিসেম্বর ২০১৯) জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত চিত্রগ্রাহক।
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত চিত্রগ্রাহক মাহফুজুর রহমান খান ৬ ডিসেম্বর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিলে ৭০ বছর। চলচ্চিত্রে চিত্রগ্রহণের জন্য ৯বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার সহকারী চিত্রগ্রাহক হিসেবে ১৯৭০ সালে ‘দর্প চূর্ণ’ ও ১৯৭১ সালে ‘স্বরলিপি’ চলচ্চিত্রে কাজ করেন।

অধ্যাপক অজয় রায় (১ মার্চ ১৯৩৫—৯ ডিসেম্বর ২০১৯)
অজয় রায় বাংলাদেশি পদার্থবিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞান লেখক এবং মানবাধিকার কর্মী ছিলেন।

তিনি ১৯৫৯ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগে শিক্ষকতা করেছেন। অতঃপর ১৯৬৬ সালে ইংল্যান্ডের লীডস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬৭ সালে সেখানেই করেন পোস্ট ডক্টরেট। ১৯৬৭ সালে শিক্ষক হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পুনরায় যোগদান করেন।

তিনি আমৃত্যু সম্প্রীতি মঞ্চের সভাপতি, বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং এশিয়াটিক সোসাইটির বিজ্ঞান বিভাগের সম্পাদক ছিলেন। তাছাড়া শিক্ষা আন্দোলন মঞ্চের সভাপতি এবং দক্ষিণ এশীয় মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী সংগঠনের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যও ছিলেন। তিনি মুক্তমনার উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য এবং মুক্তান্বেষার সম্পাদক ছিলেন। কলামিস্ট হিসবেও তিনি দৈনিক সমকালে লেখালেখি করতেন। মৃত্যুর পূর্বাবধি তিনি বাংলা একাডেমির ৩ খণ্ডে ‘বাংলা ও বাঙালির ইতিহাস’ গ্রন্থেও সম্পাদক হিসেবে কাজ করছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে অধ্যাপক অজয় রায়ের স্বাধীনতা যুদ্ধের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ততা ছিলো। গণহত্যা শুরুর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসস্থল ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি প্রাথমিকভাবে কুমিল্লার সোনামুড়া বর্ডারে যুদ্ধের ট্রেনিং গ্রহণ করেন এবং একাধিক অপারেশনে অংশগ্রহণ করেন।

একুশে পদক (২০১২), বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (২০১১), এশিয়াটিক সোসাইটির ফেলোশিপ (২০০৯), বাংলা একাডেমি ফেলোশিপ (২০০৮), ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অফ ম্যাথমেটিকাল ফিজিক্স অ্যান্ড অ্যাপ্লায়েড ফিজিক্স কর্তৃক সম্মাননা ও বিজ্ঞানে তাঁর সামগ্রিক অবদানের নিরিখে প্রদত্ত, ২০০৮। এছাড়াও বিভিন্ন পুরস্কার পেয়েছেন।

অজয় রায় ২০১৯ সালের ৯ ডিসেম্বর ৮৪ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।

পৃথ্বী রাজ-
তরুণ শিল্পী, সুরকার, সংগীত পরিচালক পৃথ্বী রাজ। গত ১৫ ডিসেম্বর নিজের স্টুডিও জিলাপিতে কাজ করার সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান এই তরুণ।

স্যার ফজলে হাসান আবেদ (২৭ এপ্রিল ১৯৩৬—২০ ডিসেম্বর ২০১৯)
স্যার ফজলে হাসান আবেদ ছিলেন একজন বাংলাদেশি সমাজকর্মী এবং বিশ্বের বৃহত্তম বেসরকারি সংগঠন ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা। সামাজিক উন্নয়নে তাঁর অসামান্য ভূমিকার জন্য তিনি র‌্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কার, স্প্যানিশ অর্ডার অব সিভিল মেরিট, এ্যালান শন ফেইনস্টেইন ওয়ার্ল্ড হাঙ্গার পুরস্কার (১৯৯০), ইউনিসেফ মরিস পেট পুরস্কার (১৯৯২), সুইডেনের ওলফ পাম পুরস্কার (২০০১), দারিদ্র বিমোচন ও দরিদ্র মহিলাদের ক্ষমতায়নের জন্য-শোয়াব ফাউন্ডেশন “সামাজিক উদ্যোক্তা” পুরস্কার (২০০২), গ্লেইটসম্যান ফাউন্ডেশন পুরস্কার (২০০৩), জাতীয় আইসিএবি (২০০৪), জাতিসংঘ উন্নয়ন সংস্থার মাহবুব-উল-হক পুরস্কার (২০০৪), সামাজিক উন্নয়নে অসামান্য ভূমিকার জন্য-গেটস ফাউন্ডেশনের বিশ্ব স্বাস্থ্য পুরস্কার (২০০৪), হেনরি আর. ক্রাভিস পুরস্কার (২০০৭), প্রথম ক্লিনটন গ্লোবাল সিটিজেন পুরস্কার (২০০৭), পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন আজীবন সম্মাননা পুরস্কার (২০০৭), ডেভিড রকফেলার পুরস্কার (২০০৮), দারিদ্র বিমোচনে বিশেষ ভূমিকার জন্য ব্রিটেন কর্তৃক ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে “নাইটহুডে” ভূষিত, এন্ট্রাপ্রেনিওর ফর দ্য ওয়ার্ল্ড পুরস্কার (২০০৯), ওয়াইজ পুরস্কার (২০১১), সেন্ট্রাল ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি ওপেন সোসাইটি পুরস্কার (২০১৩), লিও তলস্তয় আন্তর্জাতিক স্বর্ণপদক (২০১৪), বিশ্ব খাদ্য পুরস্কার (২০১৫) ও ইয়াইদান পুরস্কার ( নেদারল্যান্ড, ২০১৯) লাভ করেছেন।

২০১৪ ও ২০১৭ সালে ফরচুন ম্যাগাজিনের “বিশ্বের ৫০ সেরা নেতার তালিকা”য় তাঁর নাম অন্তর্ভুক্ত হয়। অশোকা তাঁকে বৈশ্বিক সেরাদের একজন হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। তিনি স্বনামধন্য গ্লোবাল অ্যাকাডেমি ফর সোশ্যাল অন্ট্রপ্রনোরশিপের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। বাংলাদেশে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দারিদ্র বিমোচন এবং দরিদ্রের ক্ষমতায়নে বিশেষ ভূমিকার স্বীকৃতি স্বরূপ ২০০৯ সালে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে সবচেয়ে সম্মানিত অর্ডার অব সেন্ট মাইকেল অ্যান্ড সেন্ট জর্জের নাইট কমান্ডার উপাধিতে ভূষিত করে। ২০১৯ সালে নেদারল্যান্ডের রাজা তাঁকে নাইটহুড উপাধিতে ভূষিত করেন।

তিনি অসংখ্য সম্মানসূচক ডিগ্রিতে ভূষিত হয়েছেন, তন্মধ্যে রয়েছে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট অব হিউমেন লেটার্স (২০০৭), কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অব লজ (২০০৮), অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অব লেটার্স (২০০৯) ও প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অব লজ (২০১৪)।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি ইংল্যান্ডে চলে যান। সেখানে তিনি ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের যুদ্ধের পক্ষে সমর্থন আদায়, তহবিল সংগ্রহ ও জনমত গঠনের লক্ষ্যে অ্যাকশন বাংলাদেশ এবং হেলপ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭২ সালের ১৭ জানুয়ারি তিনি দেশে ফিরে আসেন। ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে স্বাধীন বাংলাদেশের দরিদ্র, অসহায়, সবহারানো মানুষের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কল্পে ‘Bangladesh Rehabilitation Assistance Committee’ বা সংক্ষেপে ব্র্যাক প্রতিষ্ঠা করেন।

১৯৭৩ সালে সাময়িক ত্রাণকার্যক্রমের গণ্ডি পেরিয়ে ব্র্যাক যখন উন্নয়ন সংস্থা হিসেবে কাজ শুরু করে, তখন ‘BRAC’-এই শব্দসংক্ষেপটির যে ব্যাখ্যা গ্রহণ করা হয়, সেটি হল ‘Bangladesh Rural Advancement Committee’। বর্তমানে ব্যাখ্যামূলক কোনো শব্দসমষ্টির অপেক্ষা না রেখে এই সংস্থা শুধুই ‘BRAC’ নামে পরিচিত।

শ্বাসকষ্ট ও শারীরিক দূর্বলতা জনিত কারণে ২০১৯ সালের নভেম্বরের শেষের দিকে হাসপাতালে ভর্তি হন। ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত অবস্থায় ওই বছরের ২০ ডিসেম্বর শুক্রবার রাতে ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।

তালুকদার মনিরুজ্জামান (১ জুলাই, ১৯৩৮—২৯ ডিসেম্বর ২০১৯)
তালুকদার মনিরুজ্জামান একজন বাংলাদেশি শিক্ষায়তনিক ব্যক্তি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ছিলেন। তিনি ২০০৬ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে মনোনীত হয়েছিলেন।

তালুকদার মনিরুজ্জামান ১৯৬৬ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত তিনি সেখানে শিক্ষকতা করেন এবং ১৯৭৪ সালেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। ২০০৬ সালে তিনি সেখান থেকে অবসরগ্রহণ করেন।

তিনি লেখালেখির সাথেও যুক্ত ছিলেন। তিনি নয়টি গ্রন্থ রচনা করেছেন।

তালুকদার মনিরুজ্জামান ২০১৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে ৮১ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।

বরগুনায় রিফাত শরীফকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা, ফেনীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যা, এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করে।

এছাড়া, ছেলেধরার গুজবে দেশে বেশ কয়েকটি আলোচিত ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ছিল রেণু হত্যাকাণ্ড।

তথ্যসূত্র- বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকা ও উইকিপিডিয়া।

সম্পাদনায়- মাহবুব এইচ শাহীন/ সম্পাদক/কাগজ২৪

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!