২৭ রজব ঘুমন্ত নগরীর কাহিনী

২৭ রজব ঘুমন্ত নগরীর কাহিনী
আওলাদ হোসেন

প্রতি বৎসর এই মাসে এই দিনে আমার একটি লেখা প্রকাশিত হয়ে থাকে এবং কিছুটা উন্নততর চিন্তা যোগ দেয়ার চেষ্টা করি। ট্রেন ছেড়ে যাচ্ছে। আগেই খবর জেনে নিন অন্যথায় পরকালে সবই পর মনে হবে। মক্কা ঘুমিয়ে পড়েছে। রাতের অন্ধকারে তাঁর এক বান্দাকে মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত ভ্রমণ করিয়েছেন, যিনি মহিমান্বিত, যাতে নিদর্শন সমূহ দেখাতে পারেন, তিনি শোনেন এবং দেখেন। এর ব্যাখ্যা করা কঠিন অন্যত্র বলা হয়েছে ফা আওহা ইলা আবদেহী মা আওহা। …. মাজাগাল বাছারু ওয়ামা তাগা, লাকাদ রাআ মিন আয়াতি রাব্বিহিল কুবরা। এর ব্যাখ্যা করা আরও কঠিন। তার পর শেষে লেখা আছে হাযা নাজিরুম মিনান নুজুরেল উলা। …. আফা মিন হাদিসে তাজাবুন। ওয়া তাদহাকুনা ওয়ালা তাবকুন, ওয়া আনতুম সামেদুন ওয়াস্জুদ লিল্লাহে ওয়া আবদুন (সেজদা)। আমরা শবে বরাত আর শবে কদর যথাযথভাবেই পালন করে থাকি। ১২ রবিউল আওয়াল কেও ঠিকমত পালন করে থাকি কিন্তু লায়লাতুল মিরাজকে আমরা পালন করিনা। কারণ কি? অনেকেই বলে থাকেন এই রাত্রে নবীজি (দ:) আল্লাহর দিদার লাভ করেন। অথচ উপরে যে আয়াত সমূহ উল্লেখ করেছি তা সত্য এবং একে কেন্দ্র করেই সমস্ত ঘটনা আবর্তিত হয়েছে। নবীজি (দ:) যদি বলতেন গত রাত্রে আমি আল্লাহর সংগে দেখা করে পুনরায় ঐ রাত্রেই ফিরে এসেছি তা হলে কি অবস্থা হোত। রাজকীয় মেহমান আপ্যায়ন করা হয়েছে। হুরেরা সারি ধরে সংর্বধনা দিয়েছে বা ফেরেস্তারা তা বল্লেও বা কি অবস্থা হোত? মুসানবী (আ:) আল্লাহর সাথে দেখা করতে চেয়ে ছিলেন তূর পাহাড়ে তা সম্ভব হয় নাই। আল-কুরআনে প্রথমেই শর্ত দেয়া হয়েছে গায়েবে বিশ্বাস করতে হবে অর্থাৎ আল্লাহকে দেখা যাবে না, অদেখা অবস্থায় বিশ্বাস করতে হবে। অর্থাৎ প্রথম শর্তের কোন ব্যত্যয় ঘটেনি। আর দেখা যদি হয়েই যেত তাহলে দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমানের পার্থক্য ঘুচে যেত, স্রষ্টা ও সৃষ্টি ওলট পালট হয়ে যেত। আধ্যাত্মিকভাবে মনে করি রাসুলে পাক (দ:) আর কিছু বলার থাকত না এটা শুধুই (অনুমান)। কারণ আল্লাহ পাকের কাছে সবই সম্ভব কিন্তু সুন্নতাল্লাহ কথাটি ভুলে গেলে চলবে না। অনেকেই হয়তো বলবেন আমরা আয়াতের সবই মেনে নিয়েছি এ নিয়ে আর কাহিনী জোড়া দেয়ার কি আছে? ঞরসব ংঢ়ধপব ধহফ ংঢ়ববফ সম্বন্ধে আপেক্ষিকতায় কেমন হয় বর্তমান ঝপরবহপব কত দূর অগ্রসর হয়েছে তা পরীক্ষা করা দরকার অন্যথায় সৃষ্টি কর্মে এত নিয়ম কানুন দেয়া থাকতো না। সবাই আওলিয়া হয়ে যেত। পরীক্ষার জন্য শয়তান সাথেই আছে।
উর্ধ্বাকাশ সম্বন্ধে সর্বাধুনিক বৈজ্ঞানিক গবেষনার ফলাফল এবং জ্যোতি: পদার্থবিদ্যা সম্বন্ধে কিছুটা আলোকপাত করা যায়। সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরুত্ব, চাঁদ থেকে পৃথিবীর দূরত্ব সম্পন্ধে আমরা জানি। আলোকবর্ষ সম্বন্ধে আমাদের জ্ঞান আছে। তবে ধংঃৎড়হড়সরপধষ টহরঃ (অট) সম্বন্ধে জানা যায় অর্থাৎ সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্বকে অট. বলা হয়। তাহলে নিকটতম তারার দূরত্ব হচ্ছে ২,৬৮০০০ অট. এধষধীর ষরমযঃ ুবধৎং হিসেবে পৃথিবী থেকে দূরত্ব হচ্ছে ৬০ মিলিয়ন লাইট ইয়ার (১ লাইট ইয়ার= ৬০ সে: ী ৬০ মি: ী ২৪ ঘন্টা = সেকেন্ডে গতি- ১,৮৬,০০০ মাইল। ছায়াপথের পরিমান হচ্ছে একশ বিলিয়ন। তাহলে দেখা যাচ্ছে তারাদের দেশ পার হয়ে যদি আল্লাহর রাজত্বে পৌঁছে থাকেন তবে কত কোটি কোটি মাইল তিনি পাড়ি দিয়েছিলেন এবং তাতে কত কোটি কোটি বৎসর লেগেছিল- কম্পিউটারে এ সংখ্যা ধারণ করতে অক্ষম। এখানেও সে একই প্রশ্ন কে বিশ্বাস করলো আর কে বিশ্বাস করলো না। নবীজি (দ:) যখন বল্লেন (আয়াতটি প্রথমেই উল্লেখ করেছি) আবু বকর (রা:) কোনরূপ জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াই বিশ্বাস করলেন আল্লাহর পক্ষে সবই সম্ভব। দুনিয়া যেমন অবস্থায় রেখে গিয়েছিলেন ফিরে এসেও তেমনি অবস্থায় দেখতে পেলেন। অলৌকিক ভাবেই এটা সম্পন্ন হয়েছিল। তিনি আল্লাহর নিদর্শন সমূহ দেখতে গিয়েছিলেন, আল্লাহ্কে দেখার জন্য নয়। কারণ মূসা আ. দেখতে চেয়ে আল্লাহ্ পাককে দেখতে পাননি। নবীজি (দ:) কে বুঝতে কষ্ট হয়নি। তবে জীবনের একটি বাস্তব অধ্যায় যে আকাশের দিকে আমরা সারাক্ষণ চেয়ে থাকি, যে সূর্যের দিকে আমরা সারাক্ষণ চেয়ে থাকি, যে চন্দ্রের দিকে আমরা সারাক্ষণ চেয়ে থাকি, কিছুই খুঁজে পাইনা, সেখানে এ সমস্ত পথ পাড়ি দেয়া যেটাকে বোরাক (বার্ক) বলা হয় এবং যার গতি যত দূর দৃষ্টি যায় সেই পর্যন্ত, কোন বিজ্ঞান কি এর কোন সাধান দিতে পারবে? নিশ্চই না। এই দিনে এই সময়ে এই কথাটি স্মরণ করার জন্যই আমি কিছু লিখে থাকি। যাতে আমাদের ঐতিহ্য ভূলে না যাই। নাস্তিকদের কল্যানার্থে মাইথোলজি থেকে কিছু তথ্য উদ্বৃতি হিসেবে দিতে চেয়ে ছিলাম, কিন্তু যখন দেখলাম এ্যাপোলোকে দেবতা এবং সূর্য যে এখন হাতের কাছে তারই যে অবস্থান, আগুনের যে সামুদ্রিক ঢেউ তাকে সহজেই বুঝতে পারা যায়, মুসলমানের কাছে সে রহস্য নয় তবে স্রষ্টার বিরাট একটি কাজ রাব্বানা মাখালাকতা হাযা বাতিলা। আরও দেবতাদের পরিচয়ে দেয়া যায়, তাদের বর দেয়া সুফল কুফল ইত্যাদির কথা উল্লেখ করে কোনটির কি কাজ বুঝানো যায় কিন্তু মুসলমান এক আল্লাহর এবাদতই করে অন্য কারো নয় এটুকুই যথেষ্ট। যদি পূণ্য কাজের বদৌলতে আমরা জীবনে একবার নবীজির (দ:) সুন্নত পালন করার সুযোগ আল্লাহ পাক আমাদেরকে দিতেন ঘুমেই হোক তাহলে হয়তো আমাদের জীবন ধন্য হোত। কিন্তু নিশ্চই আমাদের কোন ডট. ডট. এর কারনে তা আর হচ্ছে না। এ ব্যাপারে আলেম ওলামারা কি ভাবেন তা জানার আগ্রহ রইল। মক্কার লোকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর নবীজি (দ:) কে দিতে হয়েছিল। আশা ছিল সবাই ঈমান আনবে। কিন্তু মানব চরিত্র শয়তান কর্র্তক আল্লাহ প্রদত্ত শক্তির বদৌলতে কার কপালে যে কখন কি ঘটে যায় তা বলা যায় না। শয়তান খেদানোর দোয়া পড়ে নেয়াই উত্তম। মেরাজের ঘটনায় মানুষ ঊর্ধ্বাকাশ সম্বন্ধে যা জেনেছে এ্যাসট্রোফিজিক্স এখনও সমুদ্রের পাড়ে নূরি কুড়ানোর মত অবস্থা এ থেকে আমাদের মুক্তি নেই। ওয়ামা অতিতুম মিনাল এলমে ইল্লা কালিলা। সরকারী বেসরকারী পর্যায়ে দিনটি পালন করা যায় বিজ্ঞান+ধর্মকে বিশ্লেষণ করার জন্য। পরাশক্তিকে নমস্কার জানানোর জন্য মুসলমানেরা পৃথিবীতে জন্ম গ্রহণ করে নাই। শক্তি ঘুর্ণয়মান, সূর্য চন্দ্রের পরিবর্তনে রাত্রি দিনের আবর্তনে, যাকে ইচ্ছা মর্যাদা দান করেন যাকে ইচ্ছা হীন অপদস্থ করেন সকল মঙ্গলই আপনার হস্তে। আপনি সর্বশক্তিমান। রাষ্ট্র শক্তি ৪ খলিফার পর কেউ মুমিনের হাতে না এসে মুসলমানের হাতে প্রত্যাবর্তিত হয়েছে, সেটা ইতি হাস যা হাতছাড়া হযে গেছে এখন শৃগাল দেখেই ভয় পাই, ঠ্যাং কাপে, ঠ্যাং গাতায় পড়েছে। আল্লাহর কাছে সব জাতিই সমান। অতএব মদ, নারী আর অলসতা আকাশ থেকে ছিটকে ফেলে দিয়েছে অনেক আগেই, কিন্তু কে শোনে কার কথা। একজন অপরজনকে পারলেই ভাল। এজে নিজে বাঁচলে বাপের নাম কিন্তু শত্র“তা নয়।
বন্ধুজন হবে কি সময় একটু ফিরে তাকানো বৎসরে একটি বার আল্লাহ পাক রাসূলে পাক (সা:) কে স্বশরীরে উর্ধ্বাকাশ ভ্রমণ করিয়ে যে সম্মানে ভূষিত করেছেন বিজ্ঞানের এই যুগে যেন একখন্ড বিদ্যুৎ চমকানো গধমহবঃরপ ঋরবষফ. আল্লাহর একত্ববাদ ও অলৌকিকত্ব এখানে বস্তুবাদী পৃথিবীকে দেখিয়ে দিয়েছে একটু আলোর ঝিলিক। এই সুযোগ (আধ্যাত্মিক সাধনা) আর হবে না। কিন্তু বাঙালিকে নিয়ে বড় ভয়! ঘুমন্ত নগরীর মত নিজের প্রকৃত পরিচয় প্রলোভনে, সংগদোষে, ভয়ে, ত্রাশে, মিথ্যা তর্কে বিতর্কে, রাজনীতির চাকচিক্যে হারিয়ে না যায়।

  • প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। কাগজ২৪-এর সম্পাদকীয় নীতি/মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য কাগজ২৪ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!