আজ ৮৫ বছরে পা দিলেন মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলনের অকুতভয় সৈনিক রণেশ মৈত্র

 

 

আজ ৮৫ বছরে পা দিলেন মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলনের অকুতভয় সৈনিক রণেশ মৈত্র
॥উৎপল মির্জা॥

আজ ৪ অক্টোবর। পাবনার প্রধান বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, ভাষা সৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, প্রখ্যাত সাংবাদিক ও কলামিষ্ট রণেশ মৈত্রের ৮৫তম জন্মদিন। ১৯৩৩ সালের এ দিন তিনি রাজশাহী জেলার নহাটা গ্রামে তাঁর মাতামহের কর্মস্থলে জন্ম গ্রহন করেন। তাঁর বাবা প্রয়াত রমেশ চন্দ্র মৈত্র ছিলেন একজন আজীবন শিক্ষক। তিনি শিক্ষকতা করতেন সাঁথিয়া উপজেলার ভুলবাড়িয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। মা প্রয়াত ননী বালা মৈত্র ছিলেন একজন গৃহিনী।

শিক্ষা ও পারিবারিক জীবন
রণেশ মৈত্র গ্রামের ঐ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে পঞ্চম থেকে সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত আতাইকুলা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষাগ্রহণ করে ১৯৪৭ সালে তাঁরা সপরিবারে চলে আসেন পাবনা শহরে। ভর্তি হন গোপাল চন্দ্র ইনষ্টিটিউশনে অষ্টম শ্রেণীতে। ১৯৫০ সালে ঐ স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন। অতঃপর দু’বছর এডরুক কোম্পানীতে অফিস সুপার পদে চাকুরী করে ১৯৫২ সালের জুলাই মাসে ভর্তি হন পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে। সেখান থেকেই এইচএসসি এবং ১৯৫৯ সালে বি,এ পাশ করেই তিনি পাকশী চন্দ্রপ্রভা বিদ্যা পীঠে ইংরেজী ও বাংলার শিক্ষক হিসেবে দু’বছর দায়িত্ব পালন করেন। সে বছরেই তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন নাটোর শহরের প্রয়াত সুধীর নাথ তালুকদার ও প্রয়াত শিশির কনা তালুকদারের প্রথমা কন্যা পূরবী মৈত্রের সাথে। তাঁর সহধর্মিনী ছিলেন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। যিনি ২০০০ সালে অবসর গ্রহণ করেন। পারিবারিক জীবনে তিনি পাঁচ সন্তানের জনক। বড় ছেলে কমিউনিটি প্রকৌশলী প্রবীর মৈত্র ও বড় মেয়ে রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী মধুমিতা মৈত্র অষ্ট্রেলিয়া প্রবাসী। ছোট ছেলে প্রলয় মৈত্র এবং দুই মেয়ে মালবিকা মৈত্র ও কচি ঢাকায়। সবাই বিবাহিত ও প্রতিষ্ঠিত।

রাজনীতি, মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলন
গোপাল চন্দ্র ইনষ্টিটিউশনের ছাত্র থাকাকালে ১৯৪৮ সালে শৈশবেই তিনি ভাষা আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করেন এবং ১৯৫২ সালে ছিলেন ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক। অতঃপর বামপন্থী ছাত্র-সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের তিনি পাবনাতে প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৫ সালে তিনি মওলানা ভাষানীর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগে যোগ দেন অতঃপর ভাষানীর নেতৃত্বেই তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ন্যপ-এ যোগ দেন। ন্যাপে ১৯৯৩ সালে পর্যন্ত জেলা কমিটির সম্পাদক-সভাপতি, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সহ-সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৩ সালে ন্যাপে সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গণফোরাম গঠন করেন। ২০১১ পর্যন্ত ঐ দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন। অতঃপর তিনি গণঐক্য কমিটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। বর্তমানে তিনি ঐক্য ন্যাপের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং পাবনা জেলা সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।১৯৫২ থেকে ১৯৭১ এর অসহযোগ আন্দোলন পর্যন্ত সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম নেতৃস্থানীয় সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে তিনি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হিসেবে কঠিন দায়িত্ব পালন করেন।

add2সাংবাদিকতা, আইনপেশা, পাবনা প্রেসক্লাব ও পুর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক সমিতি গঠন।
১৯৫৩ সালে তিনি সাংবাদিকতার জগতে প্রবেশ করেন এবং আজও তা অব্যাহত রাখছেন। তাঁর স্ত্রী পূরবী মৈত্র পাবনা জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি। তাঁরই অনুপ্রেরনায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ল পাশ করে ১৯৬৯-এ পাবনা জজকোর্টে আইন পেশায় যুক্ত হন। ১৯৭৫ সালে তিনি পাবনা জেলা আইনজীবী সমিতির সম্পাদক পদেও নির্বাচিত হন। ১৯৬১ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান মফস্বল সাংবাদিক সম্মেলনের অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা এবং ঐ সম্মেলনের প্রাক্কালে ১৯৬১ সালের ১ মে পাবনা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠা করে তার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক পদ অলংকৃত করেন। এ সম্মেলনে তিনি পুর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন।

সাংবাদিকতার পাশপাশি তিনি দেশের প্রায় প্রতিটি প্রথম শ্রেনীর দৈনিকে কলাম লিখে দেশব্যাপী ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেছেন। তার লেখা দুটি বই রুদ্ধ চৈতন্যে বিপন্ন বাংলাদেশ এবং রুদ্ধ চিন্তায় আচ্ছন্ন রাজনীতি পাঠক মহলে ব্যাপকভাবে সমাদ্রিত হয়। তার সাতাত্তুর তম জন্ম দিনে প্রকাশিত স্মারক গ্রন্থ : নি:শঙ্ক পথিক রণেশ মৈত্র-তার জীবনের উপর বিভিন্ন জনের এক বর্ণিল চিত্রগাঁথা।

গনতান্ত্রিক আন্দোলন ও কারাবাস
নিপিরিত নির্যতিত ও শোষিত মানুষের পক্ষে প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের একজন সক্রিয় সংগঠক ও অন্যতম নেতা হওয়ায় নরুল আমিন থেকে শুরু করে জিয়ার আমল পর্যন্ত ১০ দফায় ১৩/১৪ বছর বিনাবিচারে কারাজীবন যাপনে বাধ্য হন। জেল খানাতেই তিনি জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের সান্নিধ্য পান।

রণেশ মৈত্র সোভিয়েত ইউনিয়ন, বুলেগোরিয়া, ভারত, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও অষ্ট্রেলিয়া সফর করেন।


কাগজ টুয়েন্টিফোর বিডি ডটকম এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।


  • প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। কাগজ২৪-এর সম্পাদকীয় নীতি/মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য কাগজ২৪ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!