রাজনীতিবিদদের ক্লান্তি নেই -শাহ মুহাম্মাদ ইমরান
রাজনীতিবিদদের ক্লান্তি নেই
-শাহ মুহাম্মাদ ইমরান
খবরের কাগজে দেখলাম পুরুষদের ১০০ মিটারে দৌড়ে বিশ্বের সেরা স্প্রিন্টার, উসাইন বোল্ট অসুস্থ।
বিশ্বের দ্রুততম মানুষটির সিঁড়ি বেয়ে উঠতেও কষ্ট হয় এখন। আটটি অলিম্পিক্স সোনা, ১১টি বিশ্ব খেতাব আর তিনটি বিশ্বরেকর্ড এখনও বোল্টের দখলে—১০০ মিটার (৯.৫৮ সেকেন্ড), ২০০ মিটার (১৯.১৯ সেকেন্ড)এবং৪×১০০ মিটার রিলে (৩৬.৮৪ সেকেন্ড)।
ব্রিটেনের সংবাদ মাধ্যমে বলা হয়েছে, বোল্ট এখন বেশির ভাগ সময় বাড়িতেই থাকেন। সমস্যার কথা নিজেই জানিয়েছেন উনি সাক্ষাৎকারে। সন্তানদের সঙ্গে দিন কাটে তার। সকালে সন্তানদের স্কুলে নিয়ে যান। সিনেমা দেখেন। কখনও কখনও সন্তানদের সঙ্গে খেলেন। একেবারে হরিপদ কেরানী ধরনের জীবন যাপন।
কাজী নজরুল ইসলামের পুরনো ভিডিও তে দেখেছি, কলম ধরতে পারছেন না, গান গাইতে পারছেন না, বাঁশি বাজাতে পারছেন না। চারদিকে তাকিয়ে দেখছেন বার্ধক্য আর অসুস্থতায় সব হারিয়ে ফেলেছেন । এই সময় তাঁর মনের অবস্থা কেমন ছিল, বুঝতে অসুবিধা হয় না। এ বড় দুঃখের সময়, যখন গায়ক গাইতে পারেন না, লেখক লিখতে পারেন না, দৌড়বীর হাঁফিয়ে ওঠেন। বেঁচে থাকার ইচ্ছেটাই চলে যায়। যে-কাজ আমি করতে পারি, সেটাই যদি আমার থেকে দূরে সরে যায়, তা হলে বেঁচে থেকে হবে কী! এমন ঘটনা অনেকের জীবনেই ঘটে। ঘটে না শুধু আমাদের দেশের রাজনীতিবিদদের জীবনে। এঁরা ষাটে তরুণ, আশিতে যুবক। সবসময় চাঙ্গা। চুরি করে চাঙ্গা, ভোটে জিতে চাঙ্গা, ভোটে হেরে চাঙ্গা, এমনকী প্রতিদন্দ্বি প্রার্থীর অর্ধেকের কম ভোট পেলেও গলা বাজি থামে না। এদের সকল ব্যর্থতার দায় প্রতিপক্ষের, নিজেদের কোন ভুল নেই। দলের কারও ভুল নেই, এরা সাধু শুদ্ধ মানুষের দল, আর প্রতিপক্ষ ষড়যন্ত্রের নায়ক, ব্যর্থতার কারণ প্রতিপক্ষ। নিজেদের ব্যর্থতার কারণ খোজেনা, কথা বার্তায় উদ্ধত, অসংযত, অথর্ব।
উসাইন বোল্ট হাঁফালেও রাজনীতিবিদদের কিন্তু ক্লান্তি নেই। আমি সেদিনের অপেক্ষায় আছি, যেদিন ভূরি ভূরি মিথ্যে বলতে গিয়ে নেতার গলা বুজে আসবে। অগ্নী যুগের বিপ্লবী, বিদ্রোহী কবি কাজি নজরুল ইসলাম যেমন অসহায় তাকিয়ে ছিলেন, এঁরা তেমন মাইকের দিকে বোবা হয়ে তাকিয়ে থাকবেন। গলা দিয়ে মিথ্যে বেরোবে না। জনতার করতালিতে মুখরিত হবে চারপাশ। সবাই চেঁচিয়ে উঠবে, ‘চুপ চুপ।’ কবে যে আসবে এই দিনটা!?