এম এস ইসলাম এর লেখা ছোট গল্প- জীবনের রঙ্গমঞ্চে

জীবনের রঙ্গমঞ্চে
(ছোট গল্প ৩)

গতকালের জিএমসিসি গোল্ডকাপ ফুটবলের ফাইনাল ঘিরে দিনভর দৌড়ঝাঁপ, চিৎকার-চেঁচামেচি আর উত্তেজনায় শরীরের বারোটা বাজে। রোদের তাপে সেদ্ধ আর এসির ঠান্ডায় জমে বরফ – দুইয়ের সংমিশ্রণে এমন অবস্থা যে, শরীরটা নিজেরটাই মনে হচ্ছিল না। দুপুরে ভেবেছিলাম, আধপেটা খেয়ে যদি একটু ঘুমিয়ে নিতে পারি, তাহলে হয়তো শরীর আর আত্মা দুটোই কিছুটা স্বস্তি পাবে।

কিন্তু বিধি বাম! ঠিক তখনই হাজির তাসিনের টিচার! বাধ্য হয়ে মহুয়ার রুমে গিয়ে আশ্রয় নিলাম। গিয়ে দেখি, মহুয়ার সিলিং ফ্যান সাহেব তো নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে! হাওয়ার কোনো বালাই নেই।

তবু ক্লান্তির কাছে হার মেনে গরম শরীরে শুয়ে পড়লাম। ঘেমে নেয়ে একাকার হলেও ঘুম তো ঘুম- তার আলাদা কোনো যুক্তি নাই। চোখ বুজতেই যেন এক মায়াবী ঘুম এসে ছায়া ফেলল আমার ওপর।

হঠাৎই অদ্ভুত এক ঠান্ডা স্পর্শে ঘুমের মধ্যেই চমকে উঠলাম। দেখি—আমার আদরের ছোট্ট মেয়ে মহুয়া, তার ছোট্ট হাতে টেবিল ফ্যান টেনে এনে আমার মাথার কাছে সেট করে দিয়েছে। নিঃশব্দে চালু করে দিল।
ফ্যানের নরম বাতাসে কপাল জুড়িয়ে এল। সেই মুহূর্তে যেন অনুভব করলাম—ভালোবাসা আর মমতার ভাষা কোনো শব্দে হয় না, হয় অনুভবে।
চোখের কোণে এক ফোঁটা অদৃশ্য জলরেখা লুকিয়ে রেখে আবার মিষ্টি ঘুমের দেশে ভেসে গেলাম।

ঘণ্টা দুয়েক পর হঠাৎ খাটের তলায় যেন ভূমিকম্প শুরু হলো। আতকে উঠে দেখি—তাসিন!
ভ্রূ কুঁচকে তাকাতেই সে খিটখিটে হাসি দিয়ে পালিয়ে গেল, যেন বড় কোনো যুদ্ধ জিতে ফেলেছে!

ভেবেছিলাম এ যাত্রা বুঝি শেষ… হায়! ১৫-২০ মিনিটের মধ্যেই আবার খাট দুলছে!
চোখ খুলতেই দেখি—তাসিন, মুখে বিশাল এক হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমার চোখের পলক পড়ার আগেই এমন অট্টহাসি দিল যে মনে হলো পুরো পৃথিবী থরথর করে কাঁপছে!
রাগ আর হাসির মাঝখানে ঝুলে থেকে মনে হলো—দোষ কোথায়? ওর হাসিতে এমন একটা প্রাণচাঞ্চল্য আছে, যা হাজার ক্লান্তির ভেতরেও প্রাণে ঝরনা বইয়ে দেয়।

শেষমেশ হাল ছেড়ে ওদের মাকে ডাকলাম। বললাম,
– “এই দুইটা ছোট্ট হীরার টুকরা দিয়ে আমার ঘুমের লঙ্কাকাণ্ড করছো, এজন্য তোমাকে একটা মেডেল দেব।”

বউ আমার আরেক কাঠি সরস! চোখ টিপে বলল,
– “মেডেল দিবা ঠিক আছে, কিন্তু খালি মেডেল না… সোনার মেডেল দিতে হবে, বুঝছো?”

আমি হেসে বললাম,
– “এবার বুঝেছি, জীবনে মেডেল, মেডেলির চেয়ে বেশি কষ্টের জিনিস!”

শেষমেষ ঘুমের আশা ছেড়ে দিয়ে জীবন নামক রঙ্গমঞ্চের এই মধুময় বিশৃঙ্খলার মধ্যে হাসতে হাসতে ডুবে গেলাম।
হ্যাঁ, হয়তো বিশ্রাম পেলাম না, কিন্তু যে নির্ভেজাল ভালোবাসা পেলাম—তা যে কোনো স্বর্গীয় ঘুমের চেয়েও অনেক, অনেক দামি!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!