সফল বাবা-মাকে ইমপ্রুভ শিক্ষা পরিবারের স্যালুট
বিভাস কৃষ্ণ চৌধুরী, টাঙ্গাইল, বিশেষ প্রতিনিধি । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
“পড়া লেখা শেষে চাকরী নাই” ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকদের মন থেকে এই হতাশা দুর করতে স্থানীয় সফল বাবা-মাকে সংবর্ধনা দিলেন ইমপ্রুভ শিক্ষা পরিবার। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীরা স্যালুট জানান সফল এই বাবা-মাকে। প্রথমবারে বেছে নেওয়া হয় টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল ইউনিয়নের শুভকি গ্রামের সফল বাবা-মা শামছুল হক ও রওশনআরাকে। যাদের জ্যেষ্ঠ সন্তান মেজর ইলিয়াছ রাসেল, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। যিনি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এডিসির দায়িত্বে আছেন। কনিষ্ঠ সন্তান রিফাত হাসান (কুরআনে হাফেজ)। পল্লী চিকিৎসক হয়ে তার অল্প আয়ে দুটি সন্তানকেই আদর্শ শিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন এই সফল বাবা-মা। বৃহস্পতিবার ইমপ্রুভ শিক্ষা পরিবার কর্তৃক পরিচালিত ইমপ্রুভ চাইল্ড কেয়ার স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, দোয়া ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সফল এই বাবা-মাকে সংবর্ধণা ও স্যালুট দেওয়া হয়। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের হতাশা দুর ও সন্তানদের পড়ালেখার প্রতি উৎসাহ বাড়াতে প্রতিষ্ঠানটির ভিন্ন এই আয়োজন। সংবর্ধিত হয়ে মুগ্ধ হন মেজর রাছেলের সফল বাবা-মা। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ক্রেস্ট তুলে দেন দেলদুয়ার উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহাদত হোসেন কবির ও টাঙ্গাইল জেলা শিক্ষা অফিসার (প্রাক্তন) আনন্দ কুমার সরকার।
মফস্বলে শিক্ষার হার বদ্ধি, নৈতিক শিক্ষা অর্র্জনসহ সাধারণ ঘরের শিশুদের শিক্ষা নিশ্চিত করতে উপজেলার পাথরাইলে ২০০০ ইং সালে প্রতিষ্ঠিত ব্যতিক্রমি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান “ইমপ্রুভ শিক্ষা পরিবার”। প্রতিনিয়ত ব্যতিক্রমি সব কার্যক্রম করে শিক্ষায় একধাপ এগিয়ে থাকছে প্রতিষ্ঠানটি। শিশুদের ঝড়ে পড়া রোধে বিনা বেতন,অর্ধবেতন এমনকি উপবৃত্তিও দিয়ে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। ইমপ্রুভ শিক্ষা পরিবারের দেড় যুগ পুর্তি উপলক্ষে ইমপ্রুভ শিক্ষা পরিবার ২০১৭ সালকে চ্যালেঞ্জিং ইয়ার ঘোষনা করে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ।
দিনব্যাপি অনুষ্ঠানে প্রথম পর্বেই ছিল শিক্ষনীয় অধিকাংশ প্রদর্শণ। শুরুতেই উপস্থাপক বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় উপস্থাপনা করেন। প্রতিটি বিষয়ই শিক্ষার্থীরা আরবী বা সংস্কৃত পরে ইংরেজি ও বাংলায় অনুবাদ করে শোনায়।
স্কুলে পড়ালেখা করেও নৈতিক শিক্ষা অর্জন করা যায় তার প্রমান দিলেন শিক্ষার্থীরা। কোমলমতি শিশুরা জানাযা নামাজ প্রদর্শণ করে দেখালেন উপস্থিতিদের। এদিকে সনাতন ধর্মবলম্বি শিশুরা ঠাকুরের ওপর নির্ভর না করে নিজেদের সরস্বতি পূজা যেন নিজেরাই করতে পারে এজন্য বিদ্যালয় শিক্ষক শিক্ষিকারা হিন্দু ছাত্রছাত্রীদের পূজাও শিখিয়েছেন নিখুতভাবে। শিক্ষার্থীরা সরস্বতি পূজা প্রদর্শণ করলেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে চেতনা, ভাষা আন্দোলন ও স্বাধিনতার ইতিহাস শিশুরা যেন ভুলে না যায় তার জন্য নিয়মিত চলছে চর্চা। উপস্থিতিদের সামনে বিদ্যালয়ের শিশুরা ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস প্রদর্শণ করে অভিভুত করলেন অতিথিদের।
দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয় বার্ষিক দোয়া মাহফিল দিয়ে। এর পর ক্রীড়া প্রতিযোগীতা শেষে বিজয়ী ও মেধাবিদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মো. রেজাউল করিম তার বক্তব্যে প্রতিষ্ঠানের সার্বিক দিক তুলে ধরেন। শিক্ষার্থীদের উদ্যেশে তিনি বলেন,প্রতিষ্ঠানটি সৃষ্টি হয়েছে সৃজনশীলতার জন্য। বর্তমানে পঞ্চাশ শতাংশ শিক্ষার্থীরা এ+ পচ্ছে। এটাকে শত ভাগ এ+ নিশ্চিৎ করতে কাজ করছে কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীর পড়ার মান বজায় রাখতে প্রতি নিয়ত হোম ভিজিট, মোবাইল কমোনিকেশন, রাতে পড়ার টেবিলে শিক্ষার্থীরা আছে কি না সেজন্য রাতেও শিক্ষার্থীদের বাড়ি পরিদর্শন করে থাকে প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকরা। তিনি আরো বলেন, পাঠ্য বই ও সার্টিফিকেট নির্ভর পড়ালেখা ভাবনা ছেড়ে সৃজনশীল শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ারও আহবান জানান।
টাঙ্গাইল জেলা শিক্ষা অফিসার (অবসরপ্রাপ্ত) আনন্দ কুমার সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দেলদুয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহাদত হোসেন কবির, পাখরাইল ইউপি চেয়ারম্যান হানিফুজ্জামান লিটন, একই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজ খাঁন খাসহ ইমপ্রুভ শিক্ষা পরিবারের স্কুল,কোচিং ও কলেজ একাডেমীর শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এসময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহাদত হোসেন কবির প্রতিষ্ঠানের ব্যতিক্রমি সব আয়োজনের প্রসংশা করেন।



