অর্গানন অব মেডিসিন

অর্গানন অব মেডিসিন
সুত্রের ব্যাখ্যা (ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য)
-আওলাদ হোসেন

হোমিও ছাত্র-ছাত্রী কি পড়বেন? কোন বই পড়বেন? ডাক্তারি বিদ্যার বই। প্রথমে অর্গাননঃ-

১নং সুত্রের ব্যাখ্যা- ডাক্তারের কাজ রোগীকে আরোগ্য করা। ডা. হ্যানিম্যান ওষুধ আবিষ্কারের পর বলেছেন দেহাভ্যন্তরের কোন রোগসত্তাকে খুজে পাওয়া যায় না। নিদানগত পরিবর্তন রোগের ফল। আগে মানুষ অসুস্থ হয়, তারপর নিদানগত পরিবর্তন শুরু হয়। জীবনীশক্তির বিশৃঙ্খলার জন্য মানুষ অসুস্থতাবোধ করে (সুত্র:৯)

২নং সুত্র- আদর্শ আরোগ্য হতে হবে দ্রুত, শান্ত ও স্থায়ী অথবা অল্প সময়ে, সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য এবং সবচেয়ে নির্র্দোষভাবে।

৩নং সুত্র-(১) রোগ সম্পর্কে জ্ঞান (২) ঔষধ সম্পর্কে জ্ঞান (৩)ঔষধ
নির্বাচন (৪) ঔষধ প্রস্তু (৫) যথার্থ মাত্রা (quantity) (৬) পুনঃপ্রয়োগ বাঁধা (৭) বাঁধা
অপসারণ (৮) প্রকৃত ডাক্তার।

রোগ-রোগী-ওষুধ- ডাক্তারের কাছে রোগী এসে বলল-জ্বর, ওষুধ দাও-ডাক্তারের কম্পাউন্ডার ২টাকার নাপা দিয়ে দিল। হোমিও দোকানে কী জ্বর? কার জ্বর? কেমন লাগে? ঠান্ডায় জ্বর/ বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর/গুতা খেয়ে জ্বর/ দুশ্চিন্তায় জ্বর/ ১০০ রকমের জ্বর/ ওষুধ কোনটি দিবেন?

তার সংগে যদি প্রশ্ন করেন আর কি? আর কি, আর কি? পানি পিপাসা কেমন, ঘন্টা খানেক পরে রোগী আমার মায়ের অসুখ-তাহলেতো কথাই নেই।

ওষুধ-Bell, NV, Puls, Arn, R/T. Bryo লক্ষণ অনুসারে দিয়ে দিলেন কাজ হবে। রোগ সম্বন্ধে জ্ঞান, রোগে কি আরোগ্য করতে হবে?

Organon এর জ্ঞান থাকতে হবে। যেমন:-
৫নং সুত্র- অচির রোগ ও চির রোগ- উত্তেজক কারণ ও মৌলিক কারন। দৈনন্দিন জীবনে যা ঘটে থাকে, অনিয়ম, বন্যা, খরা ইত্যাদি। চির রোগের ক্ষেত্রে মায়াজম ডা. হ্যানিম্যানের আবিষ্কার।

Chronic Disease গ্রন্থে ডা. হ্যানিম্যান বিস্তাারিত লিখেছেন তাহলে দেখা গেল রোগ সমন্ধে জ্ঞান-অচির রোগ, চির রোগ, পরবর্তীতে বিভিন্ন সুত্রে এর বর্ণনা আছে। এলোপ্যাথিতে যেমন টিউমার, বেদনা, জ্বর, ভাঙ্গা-চোরা ইত্যাদি pathology এবং Surgical নির্ভর। হোমিওতে রোগ লক্ষণ নির্ভর, নাম ভিত্তিক কোন ওষুধ নাই।
(ক) ওষুধ সম্বন্ধে জ্ঞান-এলোপ্যাথি pharmacy, chemicals ইত্যাদি Laboratories ভিত্তিক ওষুধ।

(খ) যে বস্তুুর ওষুধ গুণ যত পরীক্ষায় পাওয়া যাবে অর্থাৎ সুস্থ দেহে যে লক্ষণ
উৎপন্ন করবে অসুস্থ দেহ তা প্রয়োগ করতে হবে হোমিওপ্যাথি।

সুত্র ৬- পান্ডিত্য বলতে রোগী, আত্মীয়-স্বজন ডাক্তর নিজে পরীক্ষা করে রোগ নির্ণয় করবেন। রোগী দেখেই বলবেন না কোন ওষুধ দিবেন বা কিসের রোগী প্রবাদ বলতে কিছু নেই। এইবার সুত্রের বাংলা উল্লেখ করা হলো। মূলসূত্র পড়লে ব্যাখ্যা বুঝতে সুবিধা
হবে। অদৃশ্য শক্তি দেখা যায় না, কিন্তু জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রমাণ দিয়ে যায় তাঁর উপস্থিতি। কি হবে বলা যায় না কিন্তু যা হয় তা নিজের আহত্ত্বে না কারণ কি?

সুত্র- ১, চিকিৎসকের মহৎ এবং একমাত্র কাজ পীড়িতকে সুস্থ করা, আরোগ্য, যেহেতু একেই বলা হয়।

সুত্র-২, আরোগ্যের সর্বোচ্চ আদর্শ হচ্ছে স্বাস্থ্যের দ্রুত, শান্ত এবং স্থায়ী পুনরুদ্ধার অথবা সবচেয়ে অল্প সময়ে, সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য এবং সবচেয়ে নির্দোষভাবে, সহজে বোধগম্য নীতিভিত্তিক ব্যাধিকে এর সামগ্রিক পরিসরে অপসারণ এবং আরোগ্য করা।

সুত্র-৩, চিকিৎসক যদি স্পষ্টভাবে বুঝে রোগে কী আরোগ্য করতে হবে, অর্থাৎ প্রত্যেক স্বতন্ত্র রোগে কী আরোগ্য করতে হবে(রোগ সম্পর্কে জ্ঞান, লক্ষণ ), যদি সে স্পষ্টভাবে বুঝে ঔষধে কী আরোগ্য হয়, অর্থাৎ, প্রত্যেক স্বতন্ত্র ঔষধে কী আরোগ্য হয় (ঔষধের আরোগ্য ক্ষমতা সম্পর্কে জ্ঞান ), এবং যদি সে জানে, ঔষধে যা আরোগ্য হয় তা কিভাবে রোগীর মধ্যে সে সন্দেহাতীতভাবে যে রোগচিত্র আবিষ্কার করেছে তার সাথে স্পষ্টভাবে বর্ণিত নীতি অনুসারে সমন্বয় করতে হবে, যাতে আরোগ্য নিশ্চিতভাবে আসন্ন হয়- তবে সমন্বয় এমনভাবে করতে হবে যেন ঔষধটির ক্রিয়াধারা অনুসারে উপযোগিতার দিক দিয়ে উপস্থিত রোগীর ক্ষেত্রে তা সর্বাধিক উপযুক্ত হয় ( ঔষধ নির্বাচন, ঠিক নির্দিষ্ট ঔষধটি), এ-ছাড়াও ঔষধের সঠিক প্রস্তুতপ্রণালী ও রোগীর জন্য আবশ্যকীয় পরিমাণ (যথার্থ মাত্রা) সম্পর্কে তার যদি জ্ঞান থাকে এবং যদি মাত্রা পুনঃ প্রয়োগের যথার্থ সময় সে বুঝে; পরিশেষে প্রত্যেকটি রোগীর ক্ষেত্রে আরোগ্যের বাঁধাগুলো যদি সে জানে এবং কিভাবে তা অপসারণ করে আরোগ্য স্থায়ী করা যায় সেই বিষয়ে যদি সে সচেতন হয়, তাহলে সে-ই বুঝে কিভাবে ন্যায় ও যুক্তিসঙ্গতভাবে চিকিৎসা করতে হয় এবং সেই এ-আরোগ্যকলার সত্যনিষ্ট ব্যবহারবিদ।

সুত্র-৪, একইরুপে তিনিই স্বাস্থ্যসংরক্ষক যদি তিনি জানেন কী কী জিনিস স্বাস্থ্য নষ্ট করে এবং রোগ উৎপাদন করে এবং সুস্থ জনগোষ্ঠী থেকে এ-সব কারণসমূহ কিভাবে দূর করতে হয়।

সুত্র- ৫, আরোগ্যের জন্য চিকিৎসকের সহায়ক প্রয়োজনীয় বিষয় হলো অচির রোগের সম্ভাব্য উত্তেজক কারণের বিবরণী, আর চিররোগে পুরা ইতিহাসের অত্যাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ, যা তাকে এর মৌলিক কারণ আবিস্কার করতে সক্ষম করে, যা সাধারণত ক্রনিক মায়াজম হতে উদ্ভুত। এ-পর্যবেক্ষণে রোগীর নিরুপণযোগ্য দৈহিক ধাত(বিশেষ করে চিররোগে), তার নৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিমূলক বৈশিষ্ট্য, তার পেশা, তার জীবনপ্রণালী এবং অভ্যাসসমূহ, তার সামাজিক ও পারিবারিক সম্পর্ক, তার বয়স, যৌন কার্যক্রম ইত্যাদি, বিবেচনায় নিতে হবে।

সুত্র-৬, সংষ্কারমুক্ত পর্যবেক্ষক- যিনি অবাস্তব কল্পনার অসারতা সম্পর্কে ভালভাবে জানেন যে তা কখনো অভিজ্ঞতার সমর্থন লাভ করতে পারে না- বিষয়বস্তু অনুধাবনের ক্ষমতা যার খুব বেশী, তিনি প্রতিটি স্বতন্ত্র রোগে দেহ ও মনের স্বাস্থ্যগত পরিবর্তন ব্যতীত আর কিছুই পর্যবেক্ষণ করেন না (রোগসংক্রান্ত বৈশিষ্ট্যসমূহ, দুর্ঘটনা, লক্ষণ) যা বাহ্যিকভাবে ইন্দ্রিয়সমূহের মাধ্যমে হৃদয়ঙ্গম করা যায়। অর্থাৎ, সে শুধু দেখতে পায় সাবেক সুস্থ অবস্থা থেকে রুগ্ন ব্যক্তির বর্তমান বিচ্যুতিসমূহ যা স্বয়ং রোগী কর্তৃক অনুভূত হয়, আশপাশের লোকজন কর্তৃক উল্লেখিত হয় এবং চিকিৎসক কর্তৃক পর্যবেক্ষিত হয়। ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য এ-সকল উপসর্গ ব্যাধিকে এর সামগ্রিক পরিসরে প্রকাশ করে, অর্থাৎ, তারা একসাথে ব্যাধির একমাত্র সত্য এবং বোধগম্য চিত্র গঠণ করে।

সুত্র- ৭, প্রকৃতপক্ষে যে ব্যাধিতে কোন উত্তেজক অথবা রোগ বজায় থাকার কারণ (উপলক্ষ কারণ) অপসারণ করতে হয় না সেক্ষেত্রে রোগলক্ষণ ছাড়া আমরা আর।

সুত্র-৮, ইহা বিশ্বাসযোগ্য নয় কিংবা পৃথিবীতে কোন অভিজ্ঞতা দ্বারা প্রমাণ করাও যাবে না যে রোগলক্ষণ অপসারণ করার পর এবং ব্যাধির বোধগম্য যে সকল লক্ষণ চিকিৎসক সংগ্রহ করতে পারে তা সম্পূর্ণভাবে দূর করার পর রোগীর সুস্বাস্থ্যের অন্তরালে আর কিছু থাকতে পারে কিংবা ব্যাধি অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকতে পারে।

সুত্র-৯, মানুষের সুস্থ অবস্থায় অদৃশ্য জীবনীশক্তি (একনায়কতন্ত্র), সুক্ষ চালিকা শক্তিই জড়দেহকে (সুসংগঠিত প্রাণীদেহে) জীবন্ত রাখে, অসীম কর্তৃত্বে শাসন করে এবং দেহের সকল যন্ত্রাংশকে প্রশংনীয় , সুশৃঙ্খল জৈব ক্রিয়া কলাপে সচল রাখে, এমনকি অনুভুতি ও ক্রিয়াকলাপের দিক থেকেও, যাতে আমাদের অন্তঃবাসী বিবেকপ্রাপ্ত মন আমাদের অস্তি ত্বের মহৎ লক্ষ্য সাধনের নিমিত্তে স্বাধীনভাবে এ-জীবন্ত সুস্থ যন্ত্রটিকে নিয়োগ করতে পারে। এই জীবনী শক্তি রোগশক্তির বিরুদ্ধে আমাদের দেহের একমাত্র রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা।

সুত্র- ১০, জড়দেহটি, জীবনীশক্তি ছাড়া কোন প্রকার অনুভুতি, ক্রিয়াকলাপ, ও আত্মরক্ষার যোগ্য হয় না, জড়দেহটি শুধুমাত্র অবস্তুগত সত্তার (জীবনীশক্তি) মাধ্যমে সকল অনুভূতিপ্রাপ্ত হয় এবং সকল প্রকার জৈব কার্যাবলী সম্পাদন করে। সুস্থ এবং অসুস্থ অবস্থায় এটি জড়দেহটিকে জীবিত রাখে।

সুত্র-১১, মানুষ যখন পীড়িত হয়, এটি অপার্থিব স্বয়ংক্রিয় (স্বতঃ ক্রিয়) জীবনীশক্তি, তার দেহে সর্বত্র বিদ্যমান, যা প্রথমত জীবনের প্রতি বৈরী রোগ উৎপাদন শক্তির Materia Pecces! (বস্তুগত ব্যাধি) : ব্যাথি সম্পর্কে বস্তুগত ধারণার বিপরীতে হ্যানিম্যান মনে করেন যে, ব্যাধি অদৃশ্য বা Dynamic.

অদৃশ্য- প্রভাব কর্তৃক বিশৃঙ্খলিত হয়, এটি শুধুমাত্র জীবনীশক্তি, এটি বিশৃঙ্খলিত হয়ে এমন একটি অস্বাভাবিক অবস্থায় পরিণত হয় যা দেহটিকে এর বিরক্তিকর অনুভূতিসমূহে সজ্জিত করে এবং বিশৃঙ্খলিত কার্যকলাপে উদ্বুদ্ধ করে, যাকে আমরা ব্যাধি বলি। যেহেতু স্বয়ং এর মধ্যেই একটি শক্তি অদৃশ্য অবস্থায় আছে এবং যা কেবল দেহের উপর এর ক্রিয়া দ্বারাই বোধগম্য হয়, এর রোগসংক্রান্ত বিশৃঙ্খলা অনুভূতিসমূহে এবং দেহের ঐসব অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কার্যকলাপে রোগ প্রকাশের মাধ্যমেই কেবল নিজেকে প্রকাশ করে যা পর্যবেক্ষক এবং চিকিৎসকের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য হয়, অর্থাৎ রোগলক্ষণসমূহের মাধ্যমে এবং অন্য কোনভাবেই এটি স্বরুপে নিজেকে প্রকাশ করতে পারে না। হোমিওপ্যাথিতে বস্তুকে যত বেশী উন্মুক্ত ও নিরাকার শক্তিতে পরিনত করা যায় তত বেশী শক্তিশালীভাবে কাজ করে যেমন-শততমিক থেকে ৫০ সহস্রতমিক। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে অদৃশ্যশক্তি কি? ডা. হ্যানিম্যান বস্তুকে সূক্ষ্মশক্তিতে পরিনত করে বিজ্ঞানে বিশেষ স্থান লাভ করেছেন। পরিবর্তিত শক্তি প্রমাণ ভেষজকে জানতেই অর্গানন, আর বস্তুবাদী হলেতো সদৃশ থাকে না।

অর্গানন দূর্বোধ্য, ব্যাখ্যা বুঝিয়ে দিলে সহজ ও আনন্দদায়ক হবে। কে বুঝলেন আর কে বুঝলেন না ই-মেইল ইনতিজার দেয়া হলো। news.intizar@gmail.com.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!