দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রথম শহীদ আবরার ফাহাদ: রিজভী

অনলাইন ডেক্স । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

ছাত্রলীগের হাতে মির্মমভাবে নিহত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রথম শহীদ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

মঙ্গলবার রাজধানী নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

রিজভী বলেন, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার যুদ্ধে, দেশের মাটি, পানি রক্ষার যুদ্ধে প্রথম শহীদ আবরার ফাহাদ। তিনি ফেনী নদীর নাম ‘আবরার নদ’ করারও দাবি জানান।

তিনি বলেন, ফেসবুকে দেশবিরোধী চুক্তির বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস দেয়ার অপরাধে নারকীয় কায়দায় রাতভর নির্যাতন চালিয়ে ছাত্রলীগের ক্যাডাররা খুন করেছে বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে। আবরার ফাহাদের মতো নিরীহ নিরপরাধ দেশপ্রেমিক মেধাবী ছাত্রকে হত্যার মাধ্যমে ছাত্রলীগ প্রমাণ করেছে যে, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জান-মালের কোনো নিরাপত্তা নেই।

বিএনপির এ নেতা বলেন, ছাত্রলীগের খুন, ধর্ষণ, সন্ত্রাসী কার্যক্রম, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাত্রলীগের ক্যাডারদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। ছাত্রলীগের অতীত ঐতিহ্যকে ম্লান করে দিয়ে এর ডাকনাম এখন হয়ে পড়েছে চাপাতিলীগ। ছাত্রলীগ নামক এই দানব জঙ্গি লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা না করলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়ার পরিবেশ ফিরবে না। শিক্ষার্থীদের জীবনের নিরাপত্তা থাকবে না।

রিজভী বলেন, শহীদ আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় সোমবার রাতে চকবাজার থানায় যে মামলা হয়েছে সেখানে আসামি হিসেবে ১৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। রহস্যজনকভাবে ১৯ জনের মধ্যে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্তের নাম নেই।

‘শেরেবাংলা হলের ২০১১ নম্বর রুম তথা টর্চার সেলটি কার? তাকে বাঁচাতে বুয়েট প্রশাসন উঠেপড়ে লেগেছে। নির্লজ্জ বুয়েট প্রশাসন এই হত্যাকাণ্ডকে সামান্য অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু বলে বিবৃতি দিয়েছে। তারা খুনিদের আড়াল করতে সিসিটিভিতে ধারণকৃত ২০ মিনিটের ভিডিও এডিট করে মাত্র দেড় মিনিটের একটি ক্লিপ দিয়েছে আন্দোলনরত ছাত্রদের।’

বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তির অসঙ্গতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তুলে ধরায় আবরার ফাহাদকে খুন করা হয়েছে। আবরারকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় সারা জাতি স্তব্ধ ও বিমূঢ় হয়ে পড়েছে। এই অমানবিক নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ভাষা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাকে জীবন দিতে হলো, কারণ এদেশের ষোল কোটি মানুষকে অন্ধকারে রেখে পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে চুক্তি করার ঘটনায় প্রতিবাদ করার জন্য।

রিজভী বলেন, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাব্বানী বলেছে- আবরার হত্যার দায় ছাত্রলীগের নয়। সেটা আমরাও বলি। প্রকৃত অর্থে এটার দায় তাদের, যারা তাদেরকে দানব বানিয়েছে এবং দানব হওয়ার সুযোগ দিয়ে ব্যবহার করেছে বিরোধী শক্তিকে রক্তাক্ত করতে এবং ভোটারদের ভোট কেড়ে নিতে।

‘বাস পোড়ানোর মিথ্যা অভিযোগে যদি বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দের নামে মামলা হয় তবে আবরার হত্যার জন্য ক্ষমতাসীনদের শীর্ষ নেতাদের নামে মামলা হবে কিনা তা জাতি জানতে চায়।’

রিজভী বলেন, দেশের মাটি, পানি, সম্পদ অন্যের হাতে চলে যাবে, অথচ এটির বিরুদ্ধে সমালোচনা করলে তাকে অকথ্য টর্চার করে হত্যা করা হবে- এই হচ্ছে বর্তমান সরকারের নীতি। এই নীতির বাস্তবায়নে যতদিন এরা ক্ষমতায় থাকবে ততদিন জনপদের পর জনপদ বিরোধী নেতাকর্মীদের পুড়িয়ে, থেঁতলিয়ে, পিটিয়ে, গুলি করে হত্যা করতে থাকবে। কারো ক্ষমতার প্রতি তীব্র আবেগ, এদের বিবেককে বিবশ করে দিয়েছে।

তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকারের মাটি বিক্রি, পানি বিক্রি, দেশ বিক্রির অমানবিক নষ্টবুদ্ধির বিরুদ্ধে সবাইকে মৃত্যুপণ যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হবে। ক্ষমতাসীনদের মূঢ় অহমিকার বিরুদ্ধে সবাইকে প্রতিরোধে সামিল হতে হবে। আমরা আবরার ফাহাদকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা, ধিক্কার ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং প্রকৃত হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি করছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!