প্রধানমন্ত্রীর কাছে ছাত্রলীগ নেতা রিমনের আকুতি

বিশেষ প্রতিনিধি । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

নিজ দলের সাবেক ছাত্রলীগ নেতার প্রতিহিংসার শিকার হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আকুতি জানিয়েছন বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদ এর জিএস (সাধারণ সম্পাদক) মো. আবু তাহের (রিমন)।

গত বছরে অক্টোবরে একই কলেজের সাবেক জিএস মো. রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ নিজে পদে থাকতে না পেরে প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে কলেজ থেকে পুলিশ দিয়ে ডেকে নিয়ে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় ফাঁসিয়েছেন বলে দাবি বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদের এই সাধারণ সম্পাদকের।

মিথ্যা মামলার দায় মাথায় নিয়ে প্রতিমাসেই কোর্টে হাজিরা দিতে দিতে ছাত্রত্ব খোয়াতে বসা এই ছাত্রনেতা সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বরাবর একটি খোলা চিঠি লিখেছেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমার সাথে মো. রিয়াজ উদ্দিনের রাজনৈতিক বিরোধ। তিনি প্রভাব খাটিয়ে আধিপত্য বজায় রাখতে নিজের সিন্ডিকেটের লোকজনকে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদে রাখতে চেয়েছিলেন। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ থাকায় কলেজের শিক্ষক এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাকে বর্জন করে।

খোলা চিঠিতে রিমন আরও লিখেন, হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদের জিএস থাকতে না পেরে ২০১৭ সাল থেকে আমার বিরুদ্ধে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র শুরু করে। বিভিন্ন সময় নিজের ক্যাডার বাহিনী দিয়ে আমাকে হুমকি ধমকি দিতে থাকে। মাননীয় নেত্রী, রিয়াজ উদ্দিন কোনোভাবেই আমার জনপ্রিয়তার সঙ্গে পেরে উঠতে না পেরে, মিথ্যা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন তথ্য দিয়ে কিছু ভুঁইফোড় নিউজ পোর্টালে টাকার লেনদেনের মাধ্যমে আমার বিরুদ্ধে নিউজ করাতে শুরু করে।

সবশেষে তিনি চিঠিতে লিখেন, মমতাময়ী নেত্রী, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একমাত্র অভিভাবক আপনি। তাই আপনার কাছে আকুল আবেদন, আপনি আমার আশ্রয়স্থল, অকালে আমার বাবাকে হারিয়েছি। আমার মতো অসহায়ের সহায় আপনি। মো. রিয়াজ উদ্দিনের চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র ও প্রতিহিংসার হাত থেকে মুক্তি পেতে এবং সামাজিকভাবে সুষ্ঠু সুন্দরভাবে বাঁচতে আপনার কাছে ন্যায়বিচার ও অপূরণীয় ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার সুযোগ প্রদানে একান্ত সহযোগিতা ও সহমর্মিতা কামনায় সদয় মর্জি কামনা করছি।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে আবু তাহের রিমন বলেন, ‘আমরা খুব সাধারণ পরিবার থেকে উঠে এসেছি। রাজনীতি করতে এসেছি বাবার মুখে বঙ্গবন্ধুর গল্প শুনতে শুনতে। কিন্তু রাজনীতি করতে এসে যখন নিজেই মিথ্যা মামলায় ফেঁসে গেলাম তখন বুঝেছি কি কারণে বঙ্গবন্ধু তেইশ বছর জেলে কাটিয়েছেন।’ রিমন বলেন, আমার মতো একটি নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে সন্তানের রাজনীতি করার কোনো সাধ্য নেই। শুধু জাতির পিতার আদের্শর সৈনিক বলেই সেন্ট্রাল ল’ কলেজের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠাণে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা আমাকে বঙ্গবন্ধু আইন ছাত্র পরিষদের সভাপতি নির্বাচিত করেছেন।

ঢাকা মাহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জুবায়ের আহমেদ এর কাছে রিমনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছাত্রলীগের একজন নিবেদিত কর্মী হিসেবে রিমনের বেশ সুনাম আছে। জনপ্রিয়তার জন্য ও সেন্ট্রাল ল’ কলেজের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছে। বাংলাদেশ হামিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদ এর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও দারুনভাবে পালন করছে। কোনো অনৈতিক কাজের সঙ্গে সে জড়াতে পারে বলে আমি বিশ্বাস করি না। আমি যতদুর জানি সে সততার সঙ্গে রাজনীতি করে।

রিমনের নৈতিক চরিত্রের বিষয়ে একটি প্রত্যয়নপত্র পদান করেন বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক কলেজের অধ্যক্ষ ডা. সালেহা খাতুন। প্রত্যয়ণপত্রে ওই অধ্যক্ষ লিখেন, ‘সে (মোঃ আবু তাহের রিমন) উত্তম চরিত্রের অধিকারী এবং কোন প্রকার রাষ্ট্রবিরোধী, অনৈতিক কর্মকান্ড ও মাদকের সাথে জড়িত নয়।’

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশে হোমিওপ্যাথিক বোর্ডের চেয়ারম্যান ডা. দিলীপ কুমার রায় বলেন, আমি রিমনকে বহুুদিন ধরে জানি ও চিনি। সে ছাত্রলীগের রাজনীতির একজন নিবেদিত কর্মী। অর্থনৈতিকভাবে একটি সাধারণ পরিবারের সন্তান হয়েও রাজনীতির জন্য তার যে ত্যাগ একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ হিসেবে আমার চোখে অশ্রু চলে আসে। তার নৈতিক স্থলন হতে পারে আমি বিশ্বাস করি না। সে অনুপ্রবেশকারী বা সুবিধাবাদী নয় ত্যাগি ছাত্রনেতা। আমি যতদূর জানি পারিবারিকভাবেই রিমনের বাবাও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের মানুষ ছিলেন।

মাদক মামলার বিষয় জানতে চাইলে এই ছাত্রলীগ নেতা বলেন, আমাকে কলেজ থেকে ডেকে নিয়ে যায় ওয়ারী থানার এক পুলিশ সদস্য। একটু সামনে নিয়ে গিয়ে জোড় করে পুলিশ ভ্যানে তুলে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে আমার হাত থেকে ফোন কেড়ে নেয়। পরে থানা হাজতে আটকে রাখলে আমি আর কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। পরে জানতে পারি আমাকে মাদক মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। কে বা কারা আপনাকে ফাঁসিয়েছে এই প্রশ্ন করলে রিমন বলেন, আমার আগে যিনি হোমিও কলেজের জিএস ছিলেন রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ। তিনি পদ না পেয়েই আমার পেছনে লেগে যান। এই ষড়যন্ত্র তার।

এই বিষয়ে হোমিও কলেজের সাবেক জিএস মো. রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি কাউকে ফাঁসানোর কেউ না। আর অন্য একজনকে ফাঁসিয়ে আমার লাভ কী?’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!