আজ সেই ওয়ান ইলিভেন। দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চলমান অসহিষ্ণুতার কারণে সহিংসতা, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর চরম ব্যর্থতা এবং পশ্চিমাদের চাওয়ার ফল হিসেবে ২০০৭ সালের ১/১১ তে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা চলে আসে সেনা সমর্থিত অরাজনৈতিক সরকারের হাতে।

ফখরুদ্দীন আহমদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার দ্রুততম সময়ে দেশবাসীকে একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন উপহার না দিয়ে তারা উল্টো ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ বাস্তবায়ন করে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে দেশের রাজনীতি থেকে বিদায়ের চেষ্টা শুরু করে বলে অনেকেই মনে করেন।

ফখরুদ্দীন আহমদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে দেশের রাজনীতিকে নেতৃত্বশূন্য করার চেষ্টা চালিয়েছেন। ‘সেনা-সমর্থিত’ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ ও জরুরি অবস্থা জারির ছয় মাসের মধ্যে ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই ভোররাতে শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করা হয়। খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয় ৩ সেপ্টেম্বর। অবশেষে নির্বাচনের মাধ্যমে ২০০৯ সালের শুরুতে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ।

ফখরুদ্দিন আহমদ এবং মইন ইউ আহমেদ এখন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। সেসময় মঈন ইউ আহমেদকে সহযোগিতা করা একাধিক সাবেক সেনা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তার ঠিকানাও হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিদেশ।

২০০৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে জয়লাভ করে ৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। ক্ষমতার পালাবদলের পর ফখরুদ্দীন আহমদ বেশ কিছুদিন সরকারি বিশেষ নিরাপত্তায় দেশেই ছিলেন।

এরপর ১/১১ কর্মকাণ্ডের কিছু বিষয় খতিয়ে দেখতে গঠিত সংসদীয় কমিটি ফখরুদ্দীনকে জেরার জন্য তলব করছে মর্মে খবর প্রকাশের কিছুদিনের মধ্যে সপরিবার তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। আগে থেকেই মার্কিন নাগরিক ফখরুদ্দীন যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড স্টেটের পটোম্যাকে যে দুটি বাড়ির মালিক তার একটিতে এখন তিনি স্ত্রীসহ থাকছেন। অন্য বাড়িতে থাকে তার মেয়ের পরিবার।

খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়ায় ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ বিষয়ে গবেষণা ও শিক্ষকতা করছেন তিনি। ২০০৯ সাল থেকে সেখানে অবস্থান করলেও তিনি সাধারণত: বাংলাদেশী কমিউনিটির সামনে আসেন না বলে প্রবাসীরা দাবি করেছেন।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরও ১/১১ এর সময়ের সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদ সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সেসময়ই ঘটে আলোচিত ‘পিলখানা হত্যাকাণ্ড‘।

পরে অবসর নিয়ে অনেকটা নীরবে ২০০৯ সালের জুন মাসে দেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান তিনি। বর্তমানে নিউইয়র্কের জ্যামাইকার একটি বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় সাধারণ জীবনযাপন করছেন মইন ইউ আহমেদ। প্রথমে ফ্লোরিডায় ছোট ভাই ও ছেলের কাছে থাকলেও পরে ‘থ্রোট ক্যানসার’ ধরা পড়লে চিকিৎসার জন্য তিনি নিউইয়র্কে চলে যান। ক্যানসারের জন্য কেমোথেরাপি ও বোনম্যারো অস্ত্রোপচারের পর এখন অনেকটাই সুস্থ তিনি।

১/১১ সময়ের বিভিন্ন ঘটনা তদন্তে কমিশন গঠনের দাবি উঠেছিল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে। জাতীয় সংসদেও মন্ত্রী-সাংসদরা একই দাবি তুলেছিলেন। ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে ছাত্র-শিক্ষক নির্যাতন ঘটনার তদন্ত করেছিলেন। ব্যবস্থা নিতে সুপারিশও জমা দিয়েছিলেন ২০১১ সালে, কিন্তু সেই সুপারিশ প্রকাশিত হয়নি।

মাহবুব এইচ শাহীন/প্রকাশক ও সম্পাদক/কাগজ২৪