পরিচয় থাকার পরও বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন- সাইফুলের স্ত্রী

সৈয়দ মেহেদী হাসান, শরীয়তপুর প্রতিনিধি । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

‘সাইফুল জঙ্গি বা নির্দোষ যেটাই হোক না কেন, সরকার সেটা স্পষ্ট করে প্রকাশ করুক। কারণ আমরা এ অপবাদ থেকে মুক্তি চাই। নাম পরিচয় থাকার পরও আমার স্বামীকে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করেছে। এখন আমার চাওয়া-পাওয়ার আর কিছু নেই। শুধু সাইফুল জঙ্গি নাকি নির্দোষ−সেটা যেন রায়ে উল্লেখ থাকে।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন গুলশানে হোলি আর্টিজানে হামলায় নিহত সাইফুল চৌকিদারের স্ত্রী সোনিয়া বেগম। সাইফুল হোলি আর্টিজানে পিৎজা শেফ হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

শরীয়তপুরের নড়িয়ার কলুকাঠি গ্রামে গত কাল মঙ্গলবার কথা হয় নিহত সাইফুলের স্ত্রী সোনিয়া বেগমের সঙ্গে।

সোনিয়া আরো বলেন, ‘সাইফুল যে জঙ্গি না, সে নিরপরাধ, এটা সরকার অনেক আগেই নিশ্চিত হয়েছে। নিশ্চিত হওয়ার পরও আমার এবং আমার তিন শিশু সন্তানের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হয়েছে। এই তিন বছরে সরকার বা কোনও জনপ্রতিনিধি, কেউ আমাদের খোঁজ নিতে আসেনি।’

অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘সাইফুল যখন মারা যায়, তখন আমি ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। ওই অবস্থায় স্বামীর লাশ পাওয়ার জন্য অনেক ছোটাছুটি করেছি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশ্বাসে লিখিত আবেদন করেছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শারীরিক, মানসিক আর আর্থিক হয়রানি ছাড়া আর কিছুই জোটেনি। দাফনের আগে শেষবারের মতো মুখটাও দেখতে পারিনি। তাকে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করেছে।’

এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘আমার সেই ছেলের বয়স এখন তিন বছর। দুই মেয়ে সামিয়া ও ইমনি ৬ষ্ঠ ও ৪র্থ শ্রেণিতে পড়ে। সঙ্গে বৃদ্ধ মা ও শাশুড়ি। কীভাবে মেয়েদের পড়ালেখা করাই, কীভাবে সংসার চলে, কেউ তো কোনও খবর নিতে আসেনি। উপরন্তু অনেকেই মনে করে আমার স্বামী জঙ্গি ছিল। না হলে সরকার আমাদের খোঁজখবর নেবে না কেন? এ কারণে আমি চাই সাইফুলের বিষয়টি যেন রায়ে পরিষ্কার থাকে।’

উল্লেখ্য, গত ২০১৬ এর ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালায় জঙ্গিরা। এতে নিহত হয় তিন বাংলাদেশি নাগরিকসহ ২০ জন। অন্যদের মধ্যে ৯ জন ইতালির, ৭ জন জাপানের এবং একজন ভারতীয়। এছাড়া জঙ্গিদের হামলার শুরুতেই দুই পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন। রেস্তোরাঁর ভেতরে রাতভর জিম্মি ছিলেন অন্তত ২৪ জন, যাদের প্রায় ১১ ঘণ্টা পর পরদিন সকালে সেনা কমান্ডো পরিচালিত ‘অপারেশন থান্ডার বোল্টে’র সময় উদ্ধার করা হয়। এছাড়া রাতের বিভিন্ন সময় উদ্ধার করা হয় আরও অন্তত ৭ জনকে। অপারেশন থান্ডার বোল্টের পর রেস্তোরাঁ থেকে ৫ জঙ্গিসহ ৬ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এছাড়া পালাতে গিয়ে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আরেক রেস্তোরাঁকর্মী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!