পিষ্ট হলো ম্যাজিস্ট্রেট বানানোর স্বপ্নও।’

অনলাইন ডেস্ক । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

প্রতিদিন আমি নিজে মহাখালীতে গিয়ে মেয়েকে বাসে উঠিয়ে দিয়ে আসি। মাঝেমধ্যেই মেয়েকে কলেজ থেকেই আনতে যেতাম। অন্যদিনের ন্যায় আজও সকালের নাস্তা সেরে রিকশাযোগে বাসা থেকে বেরিয়ে মহাখালীতে যাই। বিআরটিসি বাসে উঠিয়ে দেই। সকাল থেকেই ভেতরটা কেমন যেন খচখচ করছিল। মেয়েকে ফোনও করি। বলি- মা নিতে আসবো? দিয়া বলেছিল না বাবা তোমাকে কষ্ট করে আসতে হবে না, আমি নিজেই চলে আসতে পারবো। আর ফেরা হলো না দিয়ার। বাসে পিষ্ট হলো আমার আদরের দিয়া। পিষ্ট হলো আমার মেয়েকে ম্যাজিস্ট্রেট বানানোর স্বপ্নও।’

রোববার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানাধীন বিমানবন্দর সড়কের এমইএস বাসস্ট্যান্ডে মিরপুর ফ্লাইওভারের মুখে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের ওপর জাবালের নূর পরিবহনের একটি বাস উঠে গেলে মারা যায় দিয়া খানম মিম।

মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের ছুটে আসেন বাবা জাহাঙ্গীর আলম। মেয়ের মরদেহ দেখার পর দিশেহারা বাবা জরুরি বিভাগে এ কথাগুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

পুলিশ ও আত্মীয়-স্বজন সূত্রে জানা গেছে, নিহত দিয়া শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। তার বাড়ি মহাখালীর দক্ষিণপাড়ায়। ছুটি হয়ে যাওয়ায় শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের ১৫/২০ জন শিক্ষার্থী এমইএস বাসস্ট্যান্ডে মিরপুর ফ্লাইওভারের মুখে দাঁড়িয়েছিল। দুপুর আনুমানিক সোয়া ১২টায় জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাস ওই ফ্লাইওভারের মুখেই দাঁড়িয়ে যায়। কিন্তু পেছন থেকে একই পরিবহনের দ্রুতগতি সম্পন্ন আরেকটি বাস ওভারটেক করে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বাসটির সামনে টার্ন নিয়ে ঢুকতেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। নিমিষেই দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের ওপর উঠে যায় বাসটি। কেউ নিচে চাকার নিচে পিষ্ট হয় কেউ বা ধাক্কায় ছিটকে পড়ে যায়।

ট্রাফিক পুলিশ ও ক্যান্টনম্যান্ট থানা পুলিশ জানিয়েছে, রেডিসন ব্লু হোটেলের সামনের বিমানবন্দর সড়কে ওই দুর্ঘটনায় ১৫ জন শিক্ষার্থী হতাহত হয়েছে। এদের মধ্যে শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম মিম ও বিজ্ঞান বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আব্দুল করিম রাজীবকে গুরুতর অবস্থায় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

মেয়ে দিয়া খানম মিমের দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার খবরেই ছুটে আসেন বাবা জাহাঙ্গীর আলম। কিন্তু হাসপাতালে এসে শোনেন ততক্ষণে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে দিয়া। মরদেহের সামনে দাঁড়ানো বাবা বারবার মূর্ছা যান। ধরে বাইরে বসানোর পর জ্ঞান ফেরে তার। শুরু করেন ফের আহাজারি।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘মেয়েকে কলেজে পাঠানোর পর থেকেই আমার খারাপ লাগছিল। এখন বুঝলাম কেন এমন হচ্ছিল। যদি আগে বুঝতাম এমন করে দুর্ঘটনায় আমার মেয়ে মারা যাবে তবে একা ফিরতেই দিতাম না।’

তিনি বলেন, ‘আমার ইচ্ছের কবর হয়ে গেল। দুই বোন এক ভাইয়ের মধ্যে দিয়াই ছিল সবার ছোট। ওর ইচ্ছে ছিল ম্যাজিস্ট্রেট হবে। কিন্তু ওর মৃত্যুতে সে ইচ্ছেরও মৃত্যু হলো। কলেজ থেকে বাসায় ফেরার আর অপেক্ষা শেষ হবে না।’

পাশেই কান্নায় অসুস্থ হয়ে পড়া দিয়ার বান্ধবী রূপা বলেন, ‘এভাবে দিয়া চলে যাবে বুঝিনি। হাসিখুশি দিয়া ছিল আমার বেস্ট বন্ধু। কিন্তু কী থেকে কী হয়ে গেল। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছি না।’ উৎস-জাগোনিউজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!